এবার কক্সবাজারে গিয়ে প্যারাসেইলিং করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর আগেও একবার যদিও করেছি। যতবার সুযোগ পাবো, ততবারই করতে ইচ্ছে করবে।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে খুব বিষণ্ণ লাগছিল। কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছিল। ওয়াইফাইকে বললাম চলো, কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি। বলল এখন? আমি বলি হ্যাঁ, এখন। ততক্ষণে এশার নামাজের আজান দিয়ে দিয়েছে। আমি বললাম মসজিদ থেকে এসে আমরা বের হব। আমাদের এখানে এশার জামাত ৯টায় হয়। আসতে আসতে সাড়ে নয়টা। এরপর আমরা রেডি হয়ে রওনা দেই আরামবাগের উদ্দেশ্যে। টিকেট কাটা নেই। হুট করে প্ল্যান, কাটব কখন। যেহেতু সোমবার, টিকেট নিয়ে চিন্তা করিও নি। আগে টিকেট কাটি নাই, কারণ জানা নেই কখন বসুন্ধরা থেকে আরামবাগ গিয়ে পৌঁছাব। সেইফ সাইড হচ্ছে গিয়ে টিকেট কাটা।
আরামবাগ গিয়ে টিকেট কেটে নিলাম। অনেক গুলো বাস সার্ভিস ছিল। আমরা সেন্টমার্টিন পরিবহনে উঠলাম। G সিরিয়ালে খালি ছিল। বাস এগারোটা ৪৫ এর দিকে স্টার্ট করল। আমরা রওনা দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে, হঠাৎ প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে।
বাসে উঠে সাজিন ভাইকে মেসেজ দিলাম যে আমরা কক্সবাজার আসছি। উনার মামার হোটেল রয়েছে। Hotel Amin International, বলল রুম রেডি রাখবে।
প্রথম দিন – মঙ্গলবার
কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল আটটা। হোটেলে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নিলাম। এরপর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ১২ টার দিকে বীচে গেলাম। বীচে নামার আগে ডাব খেতে ইচ্ছে করছিল। দুই জনে দুইটা খেয়ে নিলাম। ডাবের দাম কি যে বাড়া বেড়েছে। ঢাকা বলি আর কক্স, সব জায়গায় বেশি। সমুদ্র পাড়ে গিয়ে একটা টিউব নিয়ে নেমে পড়লাম পানিতে। বড় ঢেউ গুলো টিউব সহ আবার তীরের দিকে নিয়ে আসে। তীর থেকে একটু দূরে গেলে ঢেউ গুলো আর তেমন সমস্যা করে না। কারণ সৈকতের পাশে এসে ঢেউ গুলো ভেঙ্গে যায়। আর তখনই তাল রাখা যায় না। কয়েক বারই টিউব সহ আমাকে উল্টিয়ে ফেলে দিয়েছে। সমুদ্র আমার খুব ভালো লাগে। সমুদ্রের ঢেউ এর সাথে ডলফিনের মত লাফ দিতেও ভালো লাগে। অনেকক্ষণ পানিতে ছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা ইচ্ছে মত হাবুডুবু খেয়েছি।
নাঈমার প্যারাসেইলিং করতে ইচ্ছে করছিল। পানি থেকে উঠে প্যারাসেইলিং যারা করায়, তাদের ফোন দিলাম। আমি এর আগেও একবার করেছি। তো ফোন দেওয়ার পর তারা বলল ওজন ম্যাক্সিমাম ৭৫ কেজি হতে হবে। এর বেশি হলে প্যারাসেইলিং করা যাবে না। আমার ওজন ৭৫ থেকে একটু বেশি। তো চিন্তা করলাম যদি দুপুরের খাবার খাই, ওজন আরো বেড়ে যাবে। তাই না খেয়ে রওনা দিলাম প্যারাসেইলিং করতে।
যখন আমরা ঐখানে পৌঁছাই, তারা তখন লাঞ্চ করছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। রাইড দেওয়ার দুইটা অপশন। একটা হচ্ছে নরমাল, আরেকটা হচ্ছে সুপার ডুপার। সুপার ডুপারে ওরা পানি টাচ করাবে। তো নাঈমা করবে সুপার ডুপার, আমি নরমালটাই করব।
লাঞ্চ করা শেষে ওরা আসল। প্রথমে আমাকে করতে বলল। কারণ বাতাস যে কোন সময় কমে যেতে পারে। বাতাস কমে গেলে আমি আর করতে পারব না। প্যারাসেইলিং করা তেমন কঠিন কিছু না। প্রথম বার একটু ভয় লাগলেও এবার আর ভয় লাগেনি। স্কাইডাইভ করে ভয় অনেকটাই কেটে গিয়েছে। মোটামুটি ওরা অনেকক্ষণ ধরেই ঘুরিয়ে এনেছে। ল্যান্ডিংটাও অনেক স্মুথ ছিল। নাঈমা সুপার ডুপার করার কারণে পায়ের দিকে অনেকদূর ভিজে গিয়েছিল।
প্যারাসেইলিং শেষে আমরা ফিরে আসি ডলপিন মৌড়ের দিকে। এখানে শালিক নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে বসলাম খাবার খাওয়ার জন্য। অনেক ভিড় হয়। এর আগে এখানে খেয়ে কি যে তৃপ্তি পেয়েছি। এখন পুরাই কমার্শিয়াল হয়ে গিয়েছে। প্রাইস অনেক বেশি বাড়িয়ে ফেলছে। প্রাইসের সাথে খাবারের স্বাদ যদি ঠিক থাকত, তাও ভাল লাগত। কিন্তু খাবারের স্বাদও আগের মত পাইনি। এর আগে ওদের খাবার এতই ভালো লেগেছিল যে ব্লগে উল্লেখ করেছি। কিন্তু এবার খেয়ে খুব হতাশ হয়েছি।
খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে একটু রেস্ট নেই। সন্ধ্যার পর বের হই আবার। বীচে গিয়ে শুয়ে থাকি। ভালোই লাগে। হকার, ভিক্ষুক কম থাকলে আরো ভালো লাগত। ওরা প্রতি মিনিটে মিনিটে এসে যখন জিজ্ঞেস করে এটা লাগবে কিনা, ঐটা লাগবে কিনা, তখন আসলে বীচে শুয়ে থাকার যে মজাটা, ঐটা নষ্ট হয়। বীচে নতুন এডিশন হচ্ছে হিজড়া। লাস্ট টাইম জাফলং এদের খপ্পরে পড়েছিলাম আমরা। যদিও বেশির ভাগ সময়ই এরা সমস্যা করে না। বুঝা যায় না কখন সমস্যা করে বসে। তাই সব সময় একটা আতংক কাজ করে।
দ্বিতীয় দিন – বুধবার
সকালে ঘুম থেকে উঠি একটু দেরি করে। এরপর নাস্তা খেয়ে নেই। আজ একটু আগে আগেই সমুদ্র পাড়ে চলে যাই। টিউব নিয়ে নেমে পড়ি সমুদ্রে। সমুদ্রে লম্পজম্প করতে কি যে ভালো লাগছিল আমার, বলার বাহিরে। এক ঘণ্টার মত পানিতে থেকে উঠে আসি।
রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আমরা বের হই। গন্তব্য মহেশখালী। এ জন্য প্রথমে ৬ নং ঘাটে যেতে হয়। সেখান থেকে স্পিডবোটে করে চলে যাই মহেশখালী। সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে স্পিডবোটে করে যেতে অনেক ভালো লাগে। ঢেউ এর সাথে যখন স্পিডবোট উঠানামা করে, তখন প্রচুর থ্রিল কাজ করে।
মহেশখালী গিয়ে আমরা রিক্সায় করে চলে যাই আদিনাথ জেটির দিকে। ঐ জেটিটি খুব সুন্দর। বিশাল একটা জেটি। জেটিতে গিয়ে নেমে ছবি টবি তুললাম। এখান দিয়ে আমার এক কাজিন রমিজ মেসেজ দিয়েছিল। বলল তার সাথে যেন লাঞ্চ করি। তো আমরা এক সাথে লাঞ্চ করে রওনা দেই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। রমিজও কক্সবাজার আসবে একটা কাজে, এক সাথে আসি। আসার সময় মহেশখালী থেকে কিছু শুটকি কিনে নেই।
কক্সবাজার পৌঁছে বার্জিম মার্কেটের দিকে যাই। ঐ দিকে রাস্তার কাজ করাচ্ছে। ভয়াবহ অবস্থা। জানলে ভুলেও ঐ দিকে যাওয়ার চিন্তা করতাম না। বলা যায় পরে কেনা কাটা ছাড়াই ফিরে যাই হোটেলের দিকে। হোটেলে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট করি।
সন্ধ্যার পর সাজিন ভাই মেসেজ দেয়। উনার সাথে বের হয়ে কফি খাই। বলি ফিস বারবিকিউ খাবো। উনি মাছ কিনতে নিয়ে গেলো কক্সবাজারের ভেতরে। বলল এভাবে খুব কম খরচ হবে, ফ্রেস মাছ পাওয়া যাবে। মাছ কিনে শালিকে রেস্টুরেন্টে দিল বারবিকিউ করে দেওয়ার জন্য। ওরা খুব সুন্দর করে বারবিকিউ করে দেয়। খেতে ভালই লাগল।
খাওয়া দাওয়া করে আমরা বের হই। বীচে গিয়ে শুয়ে থাকি। অনেক রাত পর্যন্ত বীচে থাকি। নিরিবিলি বীচ ভালোই লাগছিল। ১২টার দিকে বীচে হকার, ভিক্ষুক ছিল না। আর পর্যাপ্ত পর্যটক থাকায় ভয়ও লাগেনি।
তৃতীয় দিন – বৃহস্পতিবার
আজ ঢাকা ফিরে যাবো। গতকাল বিমানের টিকেট কিনে নেই বিমান বাংলাদেশে। সাড়ে বারোটার দিকে ফ্লাইট। তো সকালে নাস্তা খেয়ে আমরা দশটার দিকে হোটেল চেকআউট করে বের হই। সুগন্ধা পয়েন্টের দিকে যাই কিছু কেনা কাটার জন্য। এভাবে সময় কেটে যায়।
এরারপোর্ট গিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসি। কক্সবাজার এয়ারপোর্টের ভেতর কোন কনফেকশনারি নেই। মানুষ যে একটা পানি কিনবে, সে সুযোগও নেই। কিছু কিনতে হলে বাহিরে বের হয়ে কিনতে হয়। এর উপর সাড়ে বারোটার দিকে আমাদের ফ্লাইটের সময় হলেও 1.45 এর দিকে আমরা বিমানে উঠতে পারি। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বসে থাকতে থাকতে সব বিরক্ত লাগছিল। এরপরও শুকরিয়া। ঠিক মত ঢাকায় পৌছাই।
কক্সবাজার আমার ভালো লাগে। বলতে পারি অনেক ভালো লাগে। তো এবার এই দুই দিন মোটামুটি ভালোই উপভোগ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ। কক্সবাজার এর আগে অনেক বারই যাওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে যে কয়টা লিখেছি, সেগুলো পড়তে চাইলেঃ
খুব সুন্দর জায়গা