ঢাকা থেকে কক্সবাজার সলো বাইক ট্যুর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন

রবিবার সন্ধ্যা থেকে কেমন খারাপ লাগছিল। কোথাও ঘুরতে যেতে খুব ইচ্ছে করছিল। সন্ধ্যায় যখন কফি খেতে বের হয়েছি, তখন একবার ইচ্ছে করছিল বাসস্যান্ড গিয়ে টিকেট কেটে নেই। এরপর ব্যাকপ্যাক নিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য রওনা দেই। পরে আবার কি মনে করে চিন্তা বাদ দিলাম।

রাত ১২টার দিকে আবার ঘুরতে বের হওয়ার ইচ্ছেটা বেড়ে গেলো। তখন বাসে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যেতে হলে নিজের বাইক। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাকপ্যাক রেডি করে বের হয়ে পড়ি। প্রায় রাত একটার দিকে রওনা দেই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।

ঢাকা থেকে বের হতে কাচপুর ব্রিজের এখানে সর্বদা জ্যাম পড়ে। অনেকক্ষণ এখানে জ্যামে থাকতে হয়। বাইক হওয়াতে মাঝে মাঝে বাস ট্রাকের মাঝ দিয়ে বের হওয়া যায়। বাইক বেশিক্ষণ চালালে হাত পা ব্যাথা করে। ব্যাথা করলে কোথাও দাঁড়াই। কখনো অকটেন নেওয়ার জন্য, কখনো চা খাওয়ার জন্য একটু থেমে এক সময় পৌঁছে যাই কুমিল্লা। কুমিল্লা থেমে চা খেয়ে আবার রওনা শুরু করি। রাতে অনেক কুয়াশা পড়ে। কিছুই দেখা যায় না ঠিক মত। কুয়াশায় জামা প্যান্ট ও ভিজে যাওয়ার যোগাড়।

ফরজের আজান দেয় যখন, তখন ফেনি থেকে চট্রগ্রামের পথে। এখানে রাস্তাও নষ্ট। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে নেই। এরপর আবার রওনা দেই। পথে দেখি একটা এক্সিডেন্ট করা মানুষকে পুলিশ তুলে নিচ্ছে। অপ্রকৃতিস্থ কোন মানুষ ছিল বুঝা যাচ্ছিল। তাই বলে এভাবে এক্সিডেন্ট করে রাস্তার পাশে পড়ে থাকাটা কেমন বীভৎস একটা দৃশ্য। অনেক কুকুরও এমন পড়ে থাকতে দেখি। কোন বাস বা ট্রাকের নিচে পড়ে মারা যায়। কি যে কষ্ট লাগে। বাসে করে যাওয়ার সময় এসব চোখে পড়ে না।

ফেনি পার হয়ে এক জায়গায় সকালের নাস্তা করে নেই। চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার রাস্তাটায় উঠার অনেক গুলো পথ রয়েছে। অনেক গুলো মোড়। কোনটা দিয়ে যেতে হবে তা কখনো গুলল ম্যাপে দেখে কখনো মানুষকে জিজ্ঞেস করে যেতে থাকি। কর্ণফুলি ব্রিজে উঠার পর একেবারে সোজা রাস্তা। কর্ণফুলি ব্রিজটা আমাদের দেশের সুন্দর ব্রিজ গুলোর একটা। চট্রগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লেন হলেও এরপর থেকে সিঙ্গেল লেন। বাস গুলোও কেমন অস্বাভাবিক ভাবে চালায়। যখন বাসে থাকি, তখন খুব ভালো লাগে। মনে হয় আরে, আমাদের ড্রাইভারটি কত এক্সপার্ট। সব গুলো গাড়িকে কিভাবে ওভারটেক করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু বাইকে থাকায় বুঝি যা কত ভয়ঙ্কর। একটু এদিক সেদিক হলেই যে কারো প্রাণ চলে যেতে পারে।

ফোর সিজন নামক রেস্টুরেন্টে থেমে এরপর আবার হালকা কিছু নাস্তা করে নেই। রেস্টুরেন্টটি অনেক সুন্দর। এখান থেকে কক্সবাজার আর অল্প কিছু দূরত্ব। প্রচণ্ড টায়ার্ড লাগছে। ঘুমও পাচ্ছিল। ঘুম ঘুম অবস্থায় গাড়ি চালানো খুবি ভয়াবহ একটা জিনিস। ঘুম যেন না আসে এ জন্য মাঝে মাঝে থেমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার চালাই। দুইটা ভয়াবহ এক্সিডেন্ট হতে গিয়েও বেঁচে গিয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। একটি মেয়ে রাস্তা পার হয়ে অটোতে উঠবে। প্রথমে দাঁড়িয়ে ছিল। এরপর আবার কি মনে করে দৌড় দিল। খুব কাছের দূরত্বে ব্রেক করলে আরো বড় এক্সিডেন্ট হয়। এরপরও কিভাবে জানি বেঁচে যাই। প্রায় এগারোটার দিকে কক্সবাজার পৌছাই। রাস্তা থেকে সমুদ্রটা কেমন সুন্দর দেখাচ্ছিল। প্রচণ্ড টায়ার্ড। ঘুমাতে হবে। একটা হোটেলে উঠে ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

কক্সবাজার প্রথম দিন

বিকেলের দিকে উঠি। কিছুক্ষণ সমুদ্রের পাড়ে থেকে এরপর রেস্টুরেন্ট খুঁজি। বীচ পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে মারমেইড ক্যাফে চোখে পড়ে। সেখানে গিয়ে সী ফুড পাস্তা অর্ডার দেই। ঝিনুক, কাঁকড়া এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ছিল ঐটার মধ্যে। রাতে মারমেইড ক্যাফে সুন্দর লাগে। সুন্দর করে সাজানো। সব কিছুই খুব স্বাভাবিক জিনিস দিয়ে তৈরি করা। কিন্তু সুন্দর লাগছিল। খাবার কোয়ালিটি থেকে যদিও প্রাইস একটু বেশি। পরিবেশের জন্য তা মেনে নেওয়া যায়। পাস্তা শেষে কফি খেলাম। এর মধ্যে শাকিল ভাই কল দিল। উনি আসল এরপর। আমরা বসে গল্প করলাম। এরপর আস্তে আস্তে রওনা দিলাম বীচের দিকে।

এই সমুদ্র সৈকত আমার কেমন ভালো লাগে বুঝাতে পারব না। আমি সারাক্ষণ এখানে বসে থাকতে পারব। বসে ছিলামও। প্রায় একটা পর্যন্ত বসে ছিলাম বীচে। এরপর রুমে ফিরে এলাম।

কক্সবাজার দ্বিতীয় দিন

মেরিন ড্রাইভে ড্রাইভ করার সখ আমার অনেক দিনের। কি সুন্দর রাস্তা। এক পাশে সমুদ্র, এক পাশে পাহাড়। রাস্তাটাও একেবারে সোজা। বাংলাদেশের সুন্দর রাস্তা গুলোর একটা। কক্সবাজার বাইক নিয়ে আসার একটাই প্রধান কারণ। এই মেরিন ড্রাইভে বাইক ড্রাইভ করা। আজকের প্ল্যান ছিল মেরিন ড্রাইভে ড্রাইভ করা। সাজিন ভাই আমাকে রাতে মেসেজ দিয়েছিল বের হলে উনাকে জানাতে। আমি বের হয়ে উনাকে জানালাম। উনি বাইক নিয়ে আসল। আমরা মেরিন ড্রাইভ ধরে রওনা দিলাম টেকনাফের দিকে।

টেকনাফের এই রাস্তাটা এত সুন্দর। কি যে ভালো লাগছিল এখানে ড্রাইভ করে, বলে বুঝানো যাবে না। এই রাস্তায় মানুষজন ও অনেক কম। মাঝে মাঝে থেমে ছবি তুলেছি। ডাব বিক্রি করা দেখে ডাব খেয়ে নিয়েছি। এভাবেই এক সময় টেকনাফ পৌঁছে যাই। টেকনাফ পোঁছাতে খুব একটা সময় লাগেনি। প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা। কোন জ্যাম নেই, দেশের সব গুলো রাস্তা যদি এমন হতো!

মেরিন ড্রাইভ – কক্সবাজার
মেরিন ড্রাইভ – কক্সবাজার

টেকনাফের শহরটা ছোট। তারপরও জ্যাম রয়েছে কিছুটা। আমরা ফেরার পথ ধলাম কক্সবাজার থেকে টেকনাফের মূল রোড দিয়ে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখার জন্য। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের এই রোডে প্রচুর গাড়ি চলে। রাস্তাও অনেক আঁকা বাঁকা। তাই একটু দেরি হচ্ছিল। পথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দাঁড়ালাম। ছোট বড় অনেক গুলো ক্যাম্প। প্লাস্টিক দিয়ে ঘর তৈরি করা। কিছু কিছু ঘরে সোলার রয়েছে। এই ক্যাম্পের ভেতরে দেখলাম ছোট খাটো দোকান ও রয়েছে। বাচ্চাদের খেলনা দোকানের মত কিছুটা। আবার বড় দোকানও রয়েছে যদিও। এদের খাবার দাবারে নাকি কোন সমস্যা হয় না। প্রচুর ত্রাণ পাচ্ছে। আবার অনেকে এসব বিক্রি ও করে দিচ্ছে। টেকনাফ বা কক্সবাজার নাকি এসব ত্রাণের খাবার কম টাকায় কিনতেও পাওয়া যায়। মেডিকেল সুবিধেও রয়েছে। অনেক সুযোগ সুবিধে থাকার পরও কেমন জানি কষ্টের জীবন। স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। অনেক গুলো ছোট বাচ্চা। এই পরিবেশে কিভাবে জানি বড় হবে। তাদের পড়ালেখা দরকার। আর কত কিছু দরকার। জানি না কি হবে এদের। এতটুকু জানি আমাদের দেশে এদের রাখলে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হবে। নিজ দেশে এদের ফিরে যাওয়া খুব জরুরি। আমরা যখন ক্যাম্প ঘুরতে যাই, তখন ভয়াবহ ঝড় উঠেছিল। সামনে আরো বড় ঝড় আসবে, বৃষ্টি হবে। এসব ঘর জানি না কেমন কাজ করবে তখন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

ক্যাম্প সব গুলো দেখতে পারিনি। ঝড় বাড়ার কারণে রওনা দেই কক্সবাজারের দিকে। পথে একটা হোটেলে ঢুকে মিষ্টি দিয়ে পরটা খেয়ে নেই। উখিয়ায় নূর হোটেল সম্ভব। গরম মিষ্টি। ঐখানে সবাই ঐ মিষ্টি দিয়ে পরোটা খাচ্ছিল, বিদেশীও ছিল। মিষ্টি আমি এমনিতে কম খাওয়ার চেষ্টা করি। এখানে ৫টা খেয়েছি। একটু ছোট সাইজ, অনেক দারুণ।

টেকনাফে লবন উৎপাদনের প্রজেক্ট

উখিয়ার ঐ দিক দিয়ে মেরিন ড্রাইভে আসা যায়। আমরা আবার মেরিন ড্রাইভে উঠলাম। মেরিন ড্রাইভে অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট রয়েছে। কলাতলীর এখানে সাজিন ভাইদের হোটেল আছে, সেখানে বাইক রেখে বীচ পাড়ে চলে এলাম। অনেক গুলো রেস্টুরেন্ট রয়েছে। স্যান্ডি নামক একটাতে বসে কোরাল বার-বি-কিউ খেলাম। অনেক সুন্দর করে বার-বি-কিউ করে দিয়েছিল। এভাবে করতে করতে রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেলো। হোটেলে ফিরে বাইক রেখে চলে গেলাম বীচে। প্রায় একটা পর্যন্ত থেকে এরপর রুমে ফিরে এলাম।

কক্সবাজার তৃতীয় দিন

ঘুম থেকে উঠেছি দুপুরের দিকে। চলে গেলাম সৈকতে। পানিতে গত দুইদিন নামি নাই। আজ ইচ্ছেমত সমুদ্রের পানিতে ঝাপ দিলাম। সমুদ্রের ঢেউ এর সাথে খেলা করলাম। আমার ইচ্ছে করে দূরে বহু দূরে চলে যেতে। কিন্তু একটু দূরে গেলেই লাইফ গার্ডরা হুইসেল দেয়। ফ্ল্যাগ নেড়ে কাছে আসতে বলে। এখনকার ঢেউ গুলো একটু বড় বড়। যত বড় ঢেউ, তার সাথে খেলা করতে কেন জানি তত বেশি ভালো লাগে। কখনো ঢেউ এর সাথে ভেসে যাওয়া, কখনো ঢেউ আসলে পানিতে ডুব দেওয়া, কখনো ঢেউ এর উপর উঠে যাওয়া, এসব করতে অনেক ভালো লাগে। কিছুক্ষণ সমুদ্রে থেকে চলে এলাম হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম মেরিন ড্রাইভের দিকে। ড্রাইভ করতে করতে চলে গেলাম ইনানী। এত সুন্দর রাস্তা। দুই পাশে এত সুন্দর। ভালো লাগে ড্রাইভ করতে।

ইয়ানীর ঐখানে ব্রিজের উপর অনেক গুলো ফটোগ্রাফার ছিল। ওরা বলল বাইকে আপনাকে সুন্দর লাগছে ছবি তুলে দেই? আমি বলি আমি তোমাদের ছবি তুলে দেই? ওরা হাসে। আমি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ওদের হাতে দিলাম। ওরা ছবি তুলে দিল। ওদের কিছু টাকা দিয়ে বললাম চকলেট খেতে। বলল নাহ, টাকা লাগবে না। একটু সেধে দিয়ে দিলাম টাকা। পথে অনেক গুলো জায়গায় ডাব বিক্রি করা হয়। কক্স বাজার এসে আমি পানি থেকে ডাবের পানি বেশি খেয়েছি।

ইয়ানী এর কোথাও

ইনানী থেকে ফিরে এলাম মারমেইড বীচ রিসোর্টে। মারমেইডের সম্ভবত তিনটে শাখা রয়েছে। একটা হচ্ছে সুগন্ধা পয়েন্টের বাম দিকে। বাকি দুইটা হচ্ছে হিমছড়ির পরে। ইনানী যাওয়ার পথে। মারমেইড বীচ রিসোর্টে গত সন্ধ্যায় টেকনাফ থেকে ফেরার পথে একবার গিয়েছি। আজ আবার এসেছি। রিসোর্টটি সুন্দর। রাতে বেশি সুন্দর ছিল। সব কিছু সুন্দর ভাবে লাইটিং করা ছিল।রিসোর্টে বসে কফি খেলাম। এরপর রওনা দিলাম হিমছড়িতে।

হিমছড়িতে ছিলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর গেলাম কলাতলির দিকে। হোটেলে বাইক রেখে বীচের দিকে গেলাম। সাজিন ভাই কল দিল। আমি নেমেছি সুগন্ধা পয়েন্টের দিক দিয়ে। উনি নেমেছিল কলাতলির দিক দিয়ে। বীচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উনার সাথে দেখা হল। এক সাথে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। এরপর সুগন্ধা পয়েন্টে এসে বারবিকিউ এর জন্য মাছ পছন্দ করলাম। বিশাল একটা কোরাল মাছ। প্রায় আড়াই কেজি হবে। শাকিল ভাইকে কল দিলাম। উনাকে বললাম আমাদের সাথে জয়েন করতে। উনি আসল। আমরা এক সাথে বারবিকিউ খেয়ে রওনা দিলাম বীচের দিকে। বাকি সময় সেখানেই কাটালাম। উনারা কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো। আমি রয়ে গেলাম। বীচের পাড়ে আমার ভালো লাগে। ছিলাম প্রায় সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। এরপর হোটেলে এসে ঘুম।

কক্সবাজার শেষ দিন

ঘুম থেকে উঠেছি সাড়ে বারোটার দিকে। ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে পড়লাম। গন্তব্য ঢাকা। বাড়ি ফিরতে হবে। খাওয়ার জন্য কলাতলি মোড়ে শালিক রেস্টুরেন্টে গেলাম। হাঁসের মাংস, শুটকি ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে রওনা দিলাম ঢাকার দিকে। আসার দিন খুব আনন্দ নিয়ে এসেছি। এখন যখনি গুগল ম্যাপে দেখি অনেক দূর পথ ড্রাইভ করতে হবে, তখন কেমন জানি ক্লান্তি লাগে। তার উপর দুপুরের কড়া রোদ। যদিও ড্রাইভ করার সময় গরম খুব একটা লাগে না। তারপর এক ধরণের ক্লান্তি লাগে। কিছুদূর এসে ডাব খেয়ে নেই। চা খেয়ে নেই। এভাবেই ড্রাইভ করতে থাকি।

কক্সবাজার থেকে চট্রগ্রাম যাওয়ার রাস্তাটা বনের ভেতর দিয়ে। দুই পাশেই সবুজ গাছ। মন চায় কিছুক্ষণ নেমে বসে থাকি। কিন্তু বসে থাকলে তো আর ঢাকা পৌঁছা হবে না, তাই চলতে থাকি। গন্তব্যের দিকে।

চট্রগ্রামের কাছা কাছি এক জায়গায় জ্যাম। এরপর দেখলাম কোন ভিআইপি আসছে। সাইরেন বাজিয়ে। জ্যাম ছাড়ার পর আস্তে আস্তে যাচ্ছিলাম। পেছন থেকে পুলিশের গাড়ি এসে পায়ে লাগিয়ে দিল। আমি তাকালে বলে এরকম দুই একটা মরলে কিচ্ছু হবে না। VIP যাচ্ছে দেখা যায় না? হর্ণ না দিয়ে সরাসরি পায়ে লাগিয়ে দিয়ে আমাকে সংকেত দিল। আহারে। এটা আমার দেশ। পুলিশ সাধারণ মানুষের রক্ষক। ভিআইপি নামক ওরা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। পুলিশ বা তাদের সকলের বেতনটা দেওয়া হয় সাধারণ মানুষ গুলোর থেকে আদায়কৃত ভ্যাট ট্যাক্স থেকে। অথচ সাধারণ মানুষ গুলোর উপরই যত জুলুম হয়। যত অত্যাচার হয়। কি বলব, কাকে বলব এসব? জানি না। এই লেখা গুলো লিখি ভবিষ্যৎ এর জন্য। তখন কি দেখব আমরা খুব সভ্য একটা জাতিতে পরিণত হয়েছি? জানি না। কিন্তু আশা করতে দোষ কি?

মন খারাপ ছিল পুলিশের এই রকম আচরণ দেখে। কর্ণফুলী ব্রিজের উপর দেখলাম সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কি সুন্দর সে দৃশ্য। সব দুঃখ ভুলে গেলাম। কিছুক্ষণ থেকে আবার রওনা দিলাম। চট্রগ্রাম এরপর ফেনি। মাঝে দাঁড়িয়ে চা খেয়ে নিলাম। ফেনি পার হয়ে কুমিল্লার কাছাকাছি এসে দেখলাম বৃষ্টি শুরু হল। একটা সিএনজি স্টেশনে বসে বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করলাম। অনেকক্ষণই অপেক্ষা করতে হল। প্রায় দুই ঘণ্টা। এরপর আবার রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ পরই পুলিশ থামালো। চেক করবে। কি অদ্ভুত সব উপায় চেক করে। বাইকের কিট ধরে টান দেয়। লোগো উঠানোর চেষ্টা করে। হেলমেট, বাইক, ব্যাগ, সিট সবই চেক করল। সমস্যা হচ্ছে যারা চেক করছে, তাদের গায়ে কোন ইউনিফর্ম নেই। আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম উনারা কারা? বলল কমিউনিটি পুলিশ। পোশাক পরেনি। চেকিং শেষে আমাকে চা খাওয়ার অফার দিল। আবার বৃষ্টি হবে কিনা জানি না। আমি রওনা দিলাম।

কর্ণফুলীতে সূর্যাস্ত

কুমিল্লা থেকে দাউদকান্দির কাছা কাছি খুব সহজেই পৌঁছে গেলাম। এরপর থেকেই জ্যাম শুরু। গুগল ম্যাপে দেখলাম প্রায় এক ঘণ্টার একটা জ্যাম। বাইক নিয়ে মাঝে মাঝে এক পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এভাবে আস্তে আস্তে এক সময় বাসায় পৌঁছাই। রাতের ঢাকা কি সুন্দর, কত শান্ত। এররকম ঢাকা যদি সর্বদা থাকত, কি যে ভালো লাগত। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে কোন রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই নিজ বাসায় পৌঁছাতে পেরেছি।

 

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত ৪০০ কিলোমিটারের ও বেশি। একটানা ড্রাইভ করে যাওয়া আসলেই একটু রিস্কি, তাও আবার বাইকে করে। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। অনেক ড্রাইভারই ভালো। জ্যামের মধ্যে বাইক নিয়ে যেন যেতে পারি, তার জন্য জায়গা করে দিচ্ছিল। অনেকে আবার বলে দিচ্ছিল কোন দিক দিয়ে ফাঁকা আছে। বেশির ভাগ রাস্তাই চমৎকার। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় অসমতল। এমন অসমতল জায়গায় বাইক চালানো যায় না। কন্ট্রোল থাকে না। বাস ট্রাক বা প্রাইভেট কারের জন্য যেগুলো আসলে সমস্যা না। অনেক জায়গায় স্পিড ব্রেকার রয়েছে যে গুলো মার্ক করা নেই। দূর থেকেও দেখা যায় না। কিছু কিছু জায়গায় মোড়ের অল্প একটু আগে স্পিডব্রেকার রয়েছে, যেগুলোর কারণে আসলে এক্সিডেন্ট আরো বেশি হওয়ার কথা।  আমাদের দেশে এখন ১৬০ সিসি এর বেশি মোটরবাইক নিষিদ্ধ। আসলে আমাদের রাস্তা গুলো এর থেকে পাওয়ারফুল বাইকের জন্য উপযুক্ত না। হাইওয়েও না। হয়তো একদিন আরো সুন্দর রাস্তা হবে। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকলে ততদিনে হয়তো বুড়ো হয়ে যাবো। বাইক নিয়ে মধ্য রাতে বের হওয়ার ইচ্ছে থাকবে না। জানি না। ভবিষ্যৎ তো কত অনিশ্চিত। দেখা যাক অনিশ্চিত এই ভবিষ্যৎ এ কি অপেক্ষা করছে।

11 thoughts on “ঢাকা থেকে কক্সবাজার সলো বাইক ট্যুর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন”

  1. জাকির ভাই, আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভাল লাগল ।

    কক্সবাজার আমার অসম্ভব পছন্দের একটা জায়গা । আমার বউ আর আমি মিলে প্ল্যান করি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লং ট্যুর দেওয়ার । টিকেট করতে গেলে, ২জন প্ল্যান চেইঞ্জ করে কক্সবাজার চলে যায় । ঢেউ আর মেরিন রোডে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে প্রতিদিন ।

    খুব তাড়াতাড়ি মাস খানেকের জন্য কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান আছে ।

    Reply
  2. খুব ভালো বর্ননা দিয়েছেন ভাই। একদিন আমিও আপনার মত ভ্যাগাবন্ড হবো। দোয়া করবেন 🙂 !

    Reply
  3. মন খারাপ হলে আপনার মত আমিও বাইক নিয়ে এইদিক সেইদিক চলে যাই। সলো রাইডার মজাই আলাদা।
    আপনর লেখাটা পড়ে মন চাচ্ছে কালই চলে যাই।

    Reply
  4. খুবই অস্থির!!! ভাই রাতে রাস্তায় ভয় লাগে নাই একা একা?? আমার মোটরসাইকেল চালানোর বয়স খুব কম ১.৫ মাস তাও মাত্র ৮৬ কি.মি!!! ইনশাল্লাহ কোন একদিন আপনার মত রাইড দিবো 😎✌✌

    Reply
  5. একটা অফ টপিক প্রশ্ন করছি। আপনি এর আগে কোন একটি পোস্টে Udacity সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিলেন। আমার প্রশ্ন হলো,এ সকল অনলাইন ক্লাস ওয়েবসাইটে ফ্রি ক্লাস করার কোনো সুযোগ কি আছে? অর্থাৎ ক্রেডিট /ডেবিট কার্ড প্রদর্শন করা ছাড়াই?

    Reply
  6. apnar লিখা গুলি বরাবরের মতো ভালো লেগেছে।

    Reply
  7. ভাই আমিও আপনার মত বাইক দিয়ে কক্সবাজার যেতে চাই।। আপনার লেখা গুলি খুব ভালো লাগছে।।।

    Reply

Leave a Reply