অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে ক্যারিয়ার

কেন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট

পৃথিবীতে যত গুলো স্মার্টফোন রয়েছে, তার 71.62% হচ্ছে অ্যান্ড্রোয়েড ডিভাইস। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এগুলো বলার কারণ হচ্ছে যেখানে ব্যবহারকারী সংখ্যা বেশি, সেখানে রেভেনিউ জেনারেট করার সুযোগও বেশি। আর তাই যে কেউ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ ডেভেলপ করে স্মার্ট রেভিনিউ জেনারেট করতে পারে। 

কিভাবে ক্যারিয়ার গড়া যায়

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া খুব সহজ। কারণ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নিজে নিজে বা বন্ধুদের সাথে টিম করে ডেভেলপ করা যায়। তৈরি করা অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে আপলোড করা যায়। প্লে স্টোরে আপলোড করার পর যে কোন ব্যবহারকারীই ঐ অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারে। অ্যাপ বিক্রি বা অন্যান্য উপায় টাকা উপার্জন করা যায়।   যেখান থেকে স্মার্ট একটা রেভেনিউ জেনারেট হয়। এ ছাড়া জব করতে চাইলে দেশে এবং বিদেশে রয়েছে প্রচুর সুযোগ। রয়েছে রিমোট জব করার সুবিধে। 

কিভাবে শিখব

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সাধারণত দুই ভাবে তৈরি করা যায়। ন্যাটিভ উপায় এবং ক্রসপ্লাটফর্ম উপায়। ন্যাটিভ উপায় অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করতে হলে শিখবে হবে জাভা অথবা কটলিন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সাথে দরকার হবে XML সম্পর্কে ধারণা। অ্যাপ যেহেতু অ্যান্ড্রোয়েড স্টুডিও ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, তাই অ্যান্ড্রোয়েড স্টুডিওর খুঁটিনাটি জানা থাকলে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সহজ হয়। ক্রসপ্লাটফর্ম উপায় অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করার জন্য রয়েছে অনেক গুলো ফ্রেমওয়ার্ক। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রেমওয়ার্ক গুলো হচ্ছেঃ

  • Flutter
  • React Native
  • Ionic
  • Xamarin 
  • PhoneGap ইত্যাদি। 

এগুলোর যে কোন একটা শিখেই যে কেউ অ্যাপ তৈরি করতে পারবে। 

শিখব কিভাবে

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের শেখার জন্য রয়েছে প্রচুর টিউটোরিয়াল। যা গুগলে গিয়ে একটু সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। ইউটিউবে অনেক গুলো ফ্রি কোর্স রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম যেমন udacity.com, udemy.com, coursera.org ইত্যাদি। এসব সাইটে ফ্রি এবং পেইড দুই ধরণের কোর্সই পাওয়া যায়। নিজ পছন্দ মত যে কোন কোর্স দেখে শিখে নেওয়া যাবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট। যেহেতু অনলাইনে অনেক গুলো কোর্সই পাওয়া যায়, সেহেতু কোন একটা কোর্স বুঝতে কষ্ট হলে আমি পরামর্শ দিব অন্য কোন কোর্স খুঁজে নিতে। কারণ একেক জন ইন্সট্রাকটর একেক ভাবে শেখায়। তাই নিজের জন্য যেটা সহজ মনে হয়, সেখান থেকেই শেখা উচিৎ। সব গুলো কোর্সের ব্যাসিক স্ট্রাকচার প্রায় একই। তাই যেকোন কোর্স করেই অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শেখা যাবে। এছাড়া যখন কোন কোর্স করব, তখন 

শুধু ভিডিও না দেখে ভিডিওর পাশাপাশী প্র্যাকটিস করা জরুরি। মুভি বা সিরিজের মত ভিডিও দেখে গেলে কখনোই শেখা হবে না। গিটহাবে অনেক গুলো অ্যাপের সোর্স কোড রয়েছে। মাঝে মাঝে ঐ সোর্স কোড গুলো দেখেও অনেক কিছু শেখা যাবে। শেখা যাবে অন্যরা কিভাবে একটা অ্যাপ তৈরি করেছে, আমার কিভাবে করা উচিৎ ইত্যাদি। 

অ্যান্ড্রোয়েড গেম 

এতক্ষণ অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কথাই বললাম শুধু। গেমের কথা ভুলে যাচ্ছি। অ্যাপ মার্কেটের একটা বড় অংশ দখল করে রয়েছে গেম। এছাড়া অ্যাপ থেকে গেমে রেভিনিউও বেশি হয়ে থাকে। তো আমরা চাইলে যে কেউ এই গেম ডেভেলপমেন্ট শিখেও টাকা উপার্জন করতে পারি। অনেকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে। তবে গেম ডেভেলপমেন্ট অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মতই সোজা। 

অ্যাপের মত গেমও দুই ভাবে তৈরি করা যায়। ন্যাটিভ উপায় অথবা বিভিন্ন গেম ইঞ্জিন ব্যবহার করে। ন্যাটিভ ভাবে তৈরি করার জন্য জানতে হবে জাভা অথবা কটলিন।  গেম ইঞ্জিন ব্যবহার করে গেম ডেভেলপমেন্ট করতে চাইলে রয়েছে অনেক গুলো অপশন। 

  • Unreal Engine
  • Unity
  • Godot
  • GameMaker Studio
  • Amazon lumberyard ইত্যাদি। 

আমরা অনেকেই PUBG এর সাথে পরিচিত, যা তৈরি করা হয়েছে Unreal Engine ব্যবহার করে। Amoung Us খেলেছি অনেকেই। তৈরি হয়েছে Unity ব্যবহার করে। গেম ইঞ্জিনে একটা গেম তৈরি করার জন্য প্রায় সব কিছুই থাকে। গেম ডেভেলপমেন্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে যে কোন একটা গেম ইঞ্জিন ভালো ভাবে শিখে নিয়ে সুন্দর একটা ক্যারিয়ার গঠন করা যাবে। 

টাকা উপার্জনের উপায় 

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ হোক বা গেম, কয়েক ভাবেই এগুলো থেকে টাকা উপর্জন করা যায়। যেমনঃ 

  • পেইড অ্যাপ্লিকেশনঃ অনেক গুলো অ্যাপ ব্যবহার করতে গেলে আমরা দেখি কিনতে হয়। যখন কোন অ্যাপ কেনা হয়, তখন ঐ টাকা ডেভেলপারের একাউন্টে জমা হয়। 
  • ইনঅ্যাপ পার্সেসঃ কিছু কিছু অ্যাপ ফ্রিতে ডাউনলোড করা গেলেও দেখা যায় কিছু অংশ দেখতে চাইলে টাকা পে করতে হয়। ডেভেলপার এভাবেও অ্যাপ থেকে উপার্জন করতে পারে। 
  • অ্যাড দেখানোঃ বেশির ভাগ অ্যাপেই আমরা এড দেখতে পাই। অ্যাপে এড দেখানোর মাধ্যমেও ডেভেলপার টাকা উপার্জন করতে পারে। এছাড়া রয়েছে অ্যাফেলিয়েট মার্কেটিং, সাবস্ক্রিপশন বা সাস মডেল, ভার্চুয়াল প্রোডাক্ট ইত্যাদি। 

যে মডেলই হোক না কেন, প্রয়োজন হয়  এমন অ্যাপের যা অনেক মানুষের কাজে আসবে। যে অ্যাপ যত বেশি মানুষের কাজে আসবে, ঐ অ্যাপ থেকে তত বেশি টাকা উপার্জন করা যাবে। 

কিভাবে পাবলিশ করব 

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ পাবলিশ করার জন্য দরকার হয় গুগল প্লে ডেভেলপার একাউন্ট। যার জন্য প্রথমবার সাইনআপ করার সময় $25 পে করতে হয়। যা ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোন USD কার্ড ব্যবহার করে করা যায়। গুগল প্লে ডেভেলপার একাউন্ট খোলার পর অ্যাপ তৈরি করে পাবলিশ করা যায়। এরপর ঐ অ্যাপ থেকে নিজের পছন্দের রেভিনিউ জেনারেট পদ্ধতি ব্যবহার করে ইনকাম করা যায়।   

 

লেখাটি রবিবারে কালেরকন্ঠের টেকবিশ্বে প্রকাশিত হয়েছে। ইপেপার ভার্সন

1 thought on “অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে ক্যারিয়ার”

Leave a Reply