শূন্যতা

পৃথিবী থেকে একটা ভিডিও মেসেজ এসেছে। না দেখেই বলে দেওয়া যায় কে পাঠিয়েছে। ভেতরে কি আছে, তাও বলে দেওয়া যায়। কারণ প্রতিটি মেসেজের কথা প্রায় একই। পৃথিবীতে আমার জন্য দুইজন মানুষই অপেক্ষা করছে। একজন হচ্ছে মা, আরেকজন বাবা।

মেসেজে কি রয়েছে, তা জানা সত্ত্বেও প্লে দিলাম। আমি কেমন আছি, কত দূর আছি, এসব জানতে চেয়েছেন দুইজনই। মা বলল, বাবা, এবার ফিরে আয় পৃথিবীতে। অনেক তো খুঁজলি।

পৃথিবীতে আমার আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। অথচ ইরার সাথে কত গল্প করতাম পৃথিবী নিয়ে। সুন্দর একটা দ্বীপে আমরা থাকার কত পরিকল্পনা যে করেছি আমরা, যে দ্বীপের চার পাশে থাকবে নীল পানি। মাঝে মাঝেই সমুদ্রের নীচে সামুদ্রিক মাছের সাথে সাঁতার কাটতে চলে যাবো আমরা। সন্ধ্যাটা বীচে কাটাবো। আবহাওয়াটা ঠান্ডা হয়ে আসলে ঘরে গিয়ে ফিরব… আরো কত প্ল্যান। সব প্ল্যান ধুলিসাৎ করে দিয়ে ইরা মহাকাশে হারিয়ে গেলো। ইরার স্পেসশিপের ন্যাভিগেশন সিস্টেমে কোন সমস্যা হয়েছে, নাকি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গিয়েছে, পৃথিবীতে ফিরতে গিয়ে দূরে, আরো দূরে চলে গিয়েছে, তার কিছুই জানা যায় নি। সব ঠিক ছিল, একদিন দেখা গেলো হুট করেই গ্রিড থেকে হারিয়ে গেলো স্পেসশিপটি। আর কিছুই জানা যায় নি।

ইরাকে আমি মাঝে মাঝে ইরাবতী বলে ডাকতাম। ভালো লাগত। ইরাবতী একটা নদীর নাম। মিয়ানমানের প্রধান নদীর নাম। মাঝে মাঝে ইরাকে নদীর মতই মনে হতো আমার কাছে। গভীর কোন নদী।
ইরার স্পেসশিপ শেষ যে অবস্থানে দেখা গিয়েছিল, তার আশে পাশে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নি। এরপর একটি স্পেসশিপ নিয়ে আমি বের হয়ে পড়ি। সাথে একটা রোবট। সঙ্গী হিসেবে রোবটা মন্দ না। গল্প করে সময় গুলো পার করে দেওয়া যায়। যখন গল্প করতে ইচ্ছে করে না, তখন ইরার স্মৃতি মনে করে কাটিয়ে দেওয়া যায় সময় গুলো।

মা বাবার জন্য একটা মেসেজ ট্রান্সমিট করতে হবে। পৃথিবী থেকে আমি এখন অনেক অনেক দূর। পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে উনাদের আর দেখব কিনা, তাও জানা নেই। মাঝে মাঝেই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যখন ঘুমানোর জন্য একটু চেষ্টা করি, তখন মনে হয় যেন ইরা দূর থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। তখন পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে এই মহা বিশ্বের বিশাল শূন্যতায় ইরাকে খুঁজে বেড়াই।

2 thoughts on “শূন্যতা”

Leave a Reply