নাটোর ও পাবনায় একদিন

প্রান্ত ভাই উনার বিয়ের দাওয়াত দিয়েছে এক মাস আগে। উনি আমাদের কমিউনিটির অনেক ভাই ব্রাদারকেই দাওয়াত দিয়েছে। উনাদের বাড়ি পাবনা। ঢাকা থেকে একদিনে পাবনা গিয়ে আবার ঢাকা ফেরা কষ্টকর হবে। সেই চিন্তা থেকে তৌহিদ ভাই অফার দিল উনার বাসায় আগের দিন বেড়াতে যাওয়ার জন্য। উনার বাড়ি নাটোর।

তৌহিদ ভাই এর আগে উনাদের বাড়ির কিছু ছবি শেয়ার করছিল। অনেক সুন্দর লাগছিল। তখনই উনাকে জানিয়েছিলাম উনাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখন দাওয়াত পেয়ে না করি কিভাবে? সবাই মিলে প্ল্যান করলাম কিভাবে যাবো, কি করব ইত্যাদি। মিজান ভাই বলল একটা খাসি কিনতে। এরপর মেজবানের মত রান্না করতে। সবাই রাজি হলো। তৌহিদ ভাই খাসি কিনে নিল। প্ল্যান হলো রাতে খাসি দিয়ে খাওয়া হবে।

২৫ তারিখ সকালে আমরা নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সাইদুর ভাই, লিমন ভাই, মিজান ভাই যায় রাজীব ভাইয়ের গাড়িতে করে। ইফতি ভাই ও সুমন ভাই যায় তৌহিদ ভাইয়ের গাড়িতে করে। ফয়সাল ভাই উনার ড্রাইভার নিয়ে যায় আলাদা গাড়িতে। আমি যাই অন্তু ভাই এর গাড়িতে। উনি রাতে ঘুমায়নি, তাই আমি ড্রাইভ করি। চন্দ্রা হাইওয়েতে উঠে আমরা নাস্তা করেই নেই। এক্সপ্রেস ওয়েতে উঠার পর স্পিড কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না। এক্সিলারেশনে একটু প্রেস করলেই ১০০+ উঠে যায়। অথচ রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় স্পিড গান নিয়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। ৮০ কিলোমিটার পার আওয়ারের আসে পাশেই ড্রাইভ করার চেষ্টা করেছি। এরপরও এক জায়গায় পুলিশে দেখি হাই দিলো। কাছে গিয়ে দেখলাম আমাদের না। পেছনের গাড়িকে। কি যে ভয় পেয়েছি। ভাবলাম এই বুঝি পুলিশকে চা খাওয়ার টাকা দিতে হবে! মাশাহ আল্লাহ, ওরা ভালোই চা নাস্তা খেতে পারে।

এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হওয়ার পর টাঙ্গাইলে দাঁড়ালাম। সবাই মিলে চা খেলাম। এরপর আবার রওনা দিলাম। অ্যারিস্ট্রোক্যাট রেস্টুরেন্টে আবার বিরতি দিলাম। রেস্ট নিয়ে, জুস খেয়ে বের হয়ে পড়লাম আবার। অন্তু ভাই ড্রাইভ করছিল। নাটোর পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় একটা বেজে গেলো। এত সুন্দর রাস্তা। চলন বিলের মাঝখান দিয়ে একেবারে সোজা একটা রোড। এত সুন্দর রোড বাংলাদেশে কমই আছে। আমি ভেবেছি গাড়িতে উঠে একটু ঘুমাবো। কিন্তু এক্সাইটমেন্টের কারণে ঘুম চলে গেছে।

তৌহিদ ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দেখি আমাদের জন্য বিশাল আয়োজন। বাহিরে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে টেবিল বিছিয়েছে। তার উপর নানা রকম পিঠা, জুস, ডাব ইত্যাদি। সব কিছু থেকে একটু একটু খেলাম। এরপর হাঁটতে বের হলাম। ঐ দিকে বসত বাড়ি কম হওয়ায় প্রচুর আবাদি জমি। দেখতে অসাধারণ লাগে। আমাদের বাড়িও গ্রামে। কিন্তু এমন খোলামেলা নয়। তাই ভালোই লাগছিল। একটা পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে আড্ডা দিলাম আমরা। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফিরে এলাম।

পিঠা বিলাস!
^_^
পুকুর পাড়

ফেয়ার পথে মটরশুঁটি খেলাম। কাঁচা মটরশুঁটি খেতে ভালোই লাগে। তৌহিদ ভাইয়ের মামাতো ভাই আমাদের জন্য পেয়ারা নিয়ে আসল। একেবারে তাজা পেয়ারা। বাড়িতে এসে দেখি খাসি জবাই হয়েছে। বড় সড় খাসি। প্রায় ২০ কেজি মাংস হলো। এদিকে বাড়িতে ঢুকে দেখি আমাদের জন্য দুপুরের খাবার প্রস্তুত। এত পদের তরকারি দিয়ে সম্ভবত এই প্রথম খেতে বসব। সবাইকে বলছিলাম যে তৌহিদ ভাই যে স্ট্যন্ডার্ড সেট করল, তা ব্রেক করা কঠিন হয়ে যাবে।

মটরশুটি ভক্ষণ
কি সুন্দর গ্রাম

শৌল মাছ, চিংড়ি মাছ, কই মাছ, টেংরা মাছ, মলা, পুঁটি, রুই, আলু ভাজি, উনাদের নিজেদের পালিত মুরগি, গরু সহ আরো কি কি জানি ছিল। এত কিছু মনেও থাকে না। খাওয়ার পর আবার দই। এত কিছু খেয়ে আর নড়ার মত শক্তি নেই কারো। রেস্ট দরকার। তাই রওনা দিলাম হোটেলের দিকে। এই দিকে খাসি রান্না করার জন্য বাবুর্চি চুলা বানাচ্ছিল বাহিরে। আবার ঐ এলাকায় মেজবানে ডাল খাওয়ায়। তাও বানাচ্ছিল।

দুপরের খাবারের একাংশ

হোটেলে ফেরার পথে একটু ঘুরাঘুরি করলাম। ঐখানে প্যারিস রোড নামে একটা সুন্দর রোড রয়েছে। একেবারে এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত সোজা রাস্তা। পুরোটাই দেখা যায়। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ থাকলাম। এরপর রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে।

প্যারিস রোডে আমরা

হোটেলে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। এরপর আবার উনাদের বাড়ি গেলাম। রাতের খাবার খাওয়ার উদ্দেশে। উনাদের বাড়িটা সুন্দর। হিন্দি মুভিতে কিছু বাড়ি দেখায় না যে চারপাশে থাকার ঘর, মাঝখানে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার যায়গা? তেমন। ঘর গুলোর মাঝের জায়গায় রাতের খাবারের আয়োজন করল। আমরা যাওয়ার পর বলল খাবার দিচ্ছে। গরম গরম খেয়ে নিতে। দুপুরেই এত মজা করে খেয়েছি, রাতে না খেলেও চলত। এরপরও খেতে বসলাম। বাবুর্চি অসাধারণ রান্না করল। সবাই কি যে মজা করে খেলো। এইবার শুধু খাসি কারি এবং ডাল। ঐ ডালের একটা নাম আছে। আমি ভুলে গিয়েছি।

খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম ঈশ্বরদী পারমানবিক চুল্লি দেখার উদ্দেশে। যদিও আমার চোখে ঘুম। আগের রাতে আমিও খুব একটা ঘুমাইনি। গাড়িতে বসে ঘুমাচ্ছি। পারমানবিক চুল্লি দেখেও কেমন জানি আগ্রহ পাচ্ছি না। অথচ কয়েক দিন আগেও এই চুল্লি দেখার জন্য ঢাকা থেকে যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম। চুল্লি গুলো এত বড়। কাছে যাওয়ার তো অনুমতি নেই। ব্রিজ থেকে সুন্দর ভিউ দেখা যায়। আবার ঐ ব্রিজেও দাঁড়ানোর অনুমতি নেই। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় যতটুকু দেখা যায়, ততটুকু দেখলাম। এর পাঁশেই রয়েছে রাশিয়ান পল্লী। যদিও আগে অন্য নাম ছিল। এখন রাশিয়ানরা থাকায় রাশিয়ান পল্লী নামেই চিনে সবাই। এখানের সব দোকানের সাইনবোর্ডে বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষায় লেখা। আমরা যখন গিয়েছি, তখন রাতের সাড়ে এগারোটা। প্রায় সব কিছুই বন্ধ। একটা চায়ের দোকান খোলা ছিল। চা খেয়ে রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশে।

পারমানবিক চুল্লি

পরের দিন ৯টার দিকে উঠে নাস্তা খেলাম। এরপর ফ্রেস হয়ে রওনা দিলাম পাবনায়। প্রান্ত ভাইয়ের বিয়ের প্রোগ্রামের উদ্দেশ্যে। প্রান্ত ভাই বিশাল আয়োজন করল। পরিচিত অনেক ভাই ব্রাদারের সাথে দেখা হলো। খাওয়া দাওয়া করলাম। সবাই মিলে আড্ডা দিলাম। এরপর রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।

প্রান্ত ভাইয়ের বিয়েতে আমরা সবাই

 

অন্তু ভাই রাজশাহী উনাদের বাড়িতে চলে যায়। আমি ফিরি তৌহিদ ভাইয়ের গাড়িতে করে। ফেরার পথে চলন বিলের রাস্তার সৌন্দর্য দেখে থামলাম আমরা। মিজান ভাই ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে এক চাষি থেকে ভুট্টা নিয়ে আসল কয়েকটা। সবাই মিলে খেলো। মজা লাগল দেখে আবার গেলো। এবার সাইদুর ভাইও যোগ দিল মিজান ভাইয়ের সাথে। এবার অনেক গুলো ভুট্টা নিয়ে এলো চাষি থেকে বলে। খুবি সুন্দর কিছু এক্সপেরিয়েন্স হলো এই ট্যুরে।

2 thoughts on “নাটোর ও পাবনায় একদিন”

Leave a Reply