ইন্ডিয়ার দিল্লি – আগ্রা – কাশ্মীর ভ্রমণ

কাশ্মীরের গল্প শুনলে সবারই জীবনে একবার হলেও কাশ্মীর ভ্রমণ করতে যাওয়ার ইচ্ছে জাগবে। ইন্ডিয়াতে এর আগে কলকাতা, দার্জেলিং, মেঘালয় ঘুরা হয়েছে। এটি এমন একটা দেশ, যে দেশের এক এক একটা রাজ্য এক এক রকম। এগুলোর মধ্যে সবার মতে কাশ্মীর সবচেয়ে সুন্দর।

কাশ্মীর বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ভালই দূরে। সরাসরি কোন ট্রান্সপোর্ট নেই। ট্রেন হোক বয়া এয়ার, দিল্লী হয়ে যেতে হয়। ট্রেনে প্রচুর সময় লাগে, তাই আমরা এয়ারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ঢাকা থেকে দিল্লী এবং দিল্লী থেকে শ্রীনগর আলাদা আলাদা টিকেট কিনে নিয়েছি। ঢাকা থেকে দিল্লী টিকেট নিয়েছে ১৫ হাজার করে জন প্রতি। এয়ার ভিস্তারার ফ্লাইট UK 182। সকাল 10.15 এর ফ্লাইট। একটু কম বেশি পাওয়া যাবে সময়ের উপর নির্ভর করে। দিল্লী থেকে শ্রীনগর এর টিকেট নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার করে। Go Fast এর G8 267 ফ্লাইটে। টিকেট এমন ভাবে কেটেছি যেন এক দিনে দিনেই শ্রীনগর চলে যাওয়া যায়। মাঝ খানে প্রায় ৩ ঘণ্টার গ্যাপ রেখেছি। এর কম গ্যাপ থাকলে ফ্লাইট মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এয়ার ভিস্তারা মোটামুটি ভালোই। অন্তন্ত বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য বেস্ট। আমরা ৭ এ জানুয়ারি রওনা দেই। সকাল ৭টার দিকেই এয়ারপোর্টে চলে যাই। টিকেট কেনার সময় বলে দিয়েছে যেন ৪ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে থাকি। আমাদের বাসা থেকে এয়ারপোর্ট বেশি দূরে না। তাই কম সময়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাই। বোর্ডিং পাস, ইমিগ্রেশন শেষ করার পর প্রচুর সময় হাতে। বসে বসে কিছু কাজ করে নিলাম।

নির্দিষ্ট সময় থেকে ১৫ মিনিট লেট করেছে ফ্লাই করতে। ক্যাপ্টেন বলে দিয়েছে এই সময়টা ওরা কভার করারা চেষ্টা করবে। ফ্লাইটে ওদের নন ভেজ আইটেম গুলো হালাল না। তাই আমরা ভেজ আইটেম নিয়েছি খাওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট সময় আমরা দিল্লী পৌঁছাই। দিল্লী বিমান থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম ওরা র‍্যান্ডমলি কয়েকজনের করোনা টেস্ট করে। র‍্যান্ডমলি আমাকেও নিল করোনা টেস্ট করার জন্য। বেশি সময় লাগেনি। প্রায় ১০ মিনিট লেগেছে। এরপর ইমিগ্রেশন শেষ করে ডমিস্টিক টার্মিনালে গেলাম। গিয়ে শুনলাম Go Fast এর ফ্লাইট গুলো টার্মিনাল ২ থেকে পরিচালনা করা হয়। টার্মিনাল ৩ এ ছিলাম। মোটামুটি ভালোই দূরত্ব। আলাদা আরেকটা বিল্ডিং। খুঁজে বের করে বোর্ডিং পাস নিলাম। বোর্ডিং এরিয়াতে চেক ইন করতে গেলাম। আমাদের দেশের ইন্টার্ন্যাশনাল ফ্লাইটের চেকইন থেকেও বেশি সিকিউর চেক ইন! ঢুকে হালকা নাস্তা খেয়ে নিলাম। যারা হালাল খাবার খেতে চান, একটু চেক করে খেলে ভালো হবে। বেশির ভাগ নন ভেজ ফুড স্টল হালাল না।

আকাশে সূর্যডুবি
আকাশে সূর্যডুবি

Go Fast অনেক দেরি করেছে। নির্দিষ্ট সময় থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা দেরি করেছে। পরে দেখলাম Go Fast এর বেশির ভাগ ফ্লাইটই দেরি করে। তাই সুযোগ থাকলে Go Fast এর টিকেট না কেনাই ভালো হবে। আমরা বিকেলের পরিবর্তে সন্ধ্যার পর ল্যান্ড করেছি।

কাশ্মীর আসার পূর্বে কিছু ভিডিও দেখে নিলাম। সবাই বলল এখানে অনেক দামাদামি করতে হয়। নেমেই টের ফেলাম। এয়ারপোর্ট থেকে শ্রীনগর শহরের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিলে ১০০০ রুপি চাইলো। একটু সামনে হেটে গেলে শেয়ারিং ট্যাক্সি পাওয়া যায়। শেয়ারিং এ গেলে পার পারসন ১৫০ রুপি করে নিবে। সরকারি বাসও পাওয়া যায়। যদিও সন্ধ্যার পর পাওয়া যায় না।

শ্রীনগর ডাল লেকে আগে থেকে আমরা এয়ারবিএনবি এর মাধ্যমে একটা হাউজবোটে রুম বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম $16 প্রতি রাতের জন্য। তো তাই এয়ারপোর্ট থেকে আমরা সরাসরি ডাল লেকে চলে যাই। এখানে এসে প্রথমে একটা দোকান থেকে সিম নেই। সিম ২৮ দিনের প্যাকেজ ৭০০ রুপি নিয়েছে। যার মধ্যে প্রতিদিন দেড় জিবি ডেটা ও আনলিমিটেড লোকাল কল রয়েছে। ইন্ডিয়ানদের জন্য যদিও তা ৫০০ রুপি। সিম নিয়ে আমাদের হাউজবোটের উঠার জন্য ঘাটে গেলাম। ঘাট থেকে ওরা ছোট নৌকা, যাকে ওরা শিখারা বলে, তাতে করে হাউজবোটে নিয়ে যায়।

রাতের ডাল লেক
রাতের ডাল লেক

বাংলাদেশে কাপ্তাই লেকে অথবা হাওরেও হাউজবোট রয়েছে। আমাদের দেশের গুলোতে করে এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় যাওয়া যায়। এখানের গুলো ফিক্সড। হোটেলের সাথে খুব একটা পার্থক্য নেই। একটাই পার্থক্য, এগুলো পানির উপরে ভাসমান।

হাউজবোটে যাওয়ার পর চা খেলাম। অস্থির চা বানিয়ে দিল। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাতের খাবার খেলাম। চিকেন কারি, ডাল, মটরশুঁটি ও আলু মিক্স করে ভাঁজি। খাবার কোয়ালিটি মোটামুটি ছিল। অনেক ঠাণ্ডা লাগছিল। রুমে হিটার আছে, তার জন্য এক্সট্রা রুপি দিতে হবে বলল। ৪ ঘণ্টার জন্য ৫০০ রুপি। যদিও বেডে হিটেড বিছানা ছিল। তাই ঘুমানোর সময় খুব একটা সমস্যা হয়নি। উল্টো গরমই লেগেছে।

দ্বিতীয় দিন

সকালে নাস্তা খেলাম হাউজবোটেই। আমাকে জিজ্ঞেস করছিল কি খাবো। অপশনে ছিল ব্রেড, ডিম অমলেট ও খিচুড়ি। আমি খিচুড়ি দিতে বললাম। কিন্তু প্লেইন খিচুড়ি ছিল। পরে বলার পর চিকেন কারির ঝোল এনে দিয়েছিল। খুব একটা ভালো লাগেনি খেতে।

এরপর আমরা গুলমার্গে যাওয়ার জন্য বের হলাম। ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়া যায়। ২-৩ হাজার রুপি লাগে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে গেলে। আমরা দুইজন। তাই শেয়ারে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। এয়ারবিএনবি এর হোস্ট বলে দিল কিভাবে যেতে হবে গুলমার্গ। আমরা বলছিলাম বাসে যাবো। বলল বাসে যাওয়া ঠিক হবে না, অনেক সময় লাগবে। শেয়ার ট্যাক্সি করে যেতে বলল। উনার সাজেশন অনুযায়ী জন্য প্রথমে ডাল লেক থেকে বাটমালো এসেছি একটা অটোতে করে। অটো ১৫০ রুপি নিয়েছে। সেখান থেকে শেয়ার ট্যাক্সি করে টাঙ্গমারো এসেছি। ১০০ করে মোট দুইশ রুপি নিয়েছে। টাঙ্গমারো থেকে এরপর আরেকটা শেয়ারড ট্যাক্সি করে গুলমার্গ এসেছি। যা ৫০ রুপি করে মোট ১০০ নিয়েছে আমাদের দুইজন থেকে।

এখানে প্রায় প্রত্যেকটা যায়গায় আমাদের বলেছে যে কোন শেয়ারড ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না। পুরো ট্যাক্সি রিজার্ভ করে নিতে হবে। বিশ্বাস করেন।, বাংলাদেশেও অনেক ফ্রড আছে, বিভিন্ন জায়গায় বেশি রুপি নেয়। কিন্তু কোথাও এদের মত মিস ইনফরমেশন দিতে দেখিনি। যেমন ধরেন বাটমালো। অটো থেকে নামার সাথে সাথে কয়েকজন ট্যাক্সি ড্রাইভার এসে ঘিরে ধরল। কই যাবো জিজ্ঞেস করল। আমরা গুলমার্গ শেয়ার্ড ট্যাক্সি খুঁজছি, বলল যে কোন শেয়ার ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না। চাইলে রিজার্ভ করে যেতে পারব। আমাদের অটোওয়ালা হেল্প করল। কোথায় গেলে ট্যাক্সি পাবো, তা বলে দিল। এরপর সেখানে গিয়ে শেয়ার্ড ট্যাক্সি করে টাংমারো এসেছি। এখানে বিভিন্ন দালাল এসে বলল শেয়ার্ড ট্যাক্সি পাবো না, রিজার্ভ করে যেতে। এছাড়া বলল বুট জুতা, এবং জ্যাকেট রেন্ট নিতে। যার কিছুই আসলে দরকার হয় না।

ট্যাংমারো আসার পথে অনেক জায়গায় বরফ দেখা গিয়েছে। এখানে এসে দেখি স্নো পড়ছে। প্রথম স্নো ফল দেখা। স্নো বৃষ্টিরই একটা রূপ বলা যায়। অন্যরকম। কিছুটা তুলার মত। হাত দিয়ে ধরলে শরীরের তাপমাত্রায় গলে যায়।

টাংমারো থেকে গুলমার্গের রাস্তা অনেক আঁকাবাঁকা। এত সুন্দর। পাহাড়ি রাস্তা। পাহাড়ের উপড়ে নিচে প্রচুর পাইন গাছ। আর নিচে পুরোটাই বরপে সাদা হয়ে রয়েছে। গুলমার্গ রুম আগে বুক করিনি। ভাবলাম এখানে এসে করব। এখানে এসে রুম দেখতে যাবো, দালাল পিছু ধরল। যতই বলি আমরা নিজেরা নিজেরা ম্যানেজ করে নিতে পারব। কে শুনে কার কথা। আমাদের পেছনেই লেগে থাকল। একজন না, একের অধিক! কি যে বিরক্ত লাগছিল। বার বার বলতেছিল রুম পাবো না। তারা যে হোটেল দেখিয়েছে, সেখানেই উঠতে। আমি ভাবলাম অন্য আরেকটা হোটেলে উঠব। পরে যত গুলো হোটেলে গিয়েছি, আমার পেছন পেছন ওরা গিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে এখানে হোটেল কম। তো কয়েকটা হোটেল দেখে পছন্দ না হওয়াতে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ফিরে এলাম। এখানেই একটা হোটেল আছে। যার লাস্ট রুমটা আমরা বুক দিলাম। ভালো হত যদি অনলাইনে বুক দিয়ে আসতাম।

হোটেল বুক দিয়েছি ডিনার এবং ব্রেকফাস্ট সহ। হোটেল রুম ফি হচ্ছে ৪০০০ রুপি। আর ১০০০ রুপি হচ্ছে ডিনার এবং ব্রেকফাস্টের জন্য। রুমে ব্যাগ রেখে বের হয়ে পড়লাম। হোটেলের পাশেই পুরা এরিয়া স্নোতে ঢেকে রয়েছে। বিভিন্ন এক্টিভিটি করা যায়। তো তার জন্য বুট জুতা লাগে। বুট জুতা এখানে রেন্ট পাওয়া যায়। তবে বুট জুতা থেকে আরো ভালো অপশন হচ্ছে শু কভার কিনে নেওয়া। যা ব্যাকপ্যাকে ক্যারিও করা যাবে। এখানে একটা দোকান থেকে শু কভার কিনে নিলাম। যেটা রাবারের তৈরি। নিচে গ্রিপও রয়েছে। স্নোতে খুব সহজে হাঁটা যায়। জুতাও ভিজে না। এই কভার আরো আগে কিনলে ভালো হত। স্নোতে হেঁটে হোটেল রুম খুঁজতে গিয়ে জুতা, মোজা সব ভিজিয়ে ফেলছি ততক্ষণে। এ ছাড়া এর আগে ডাবল মোজা পরেও ঠাণ্ডা লাগছিল পায়ে। সারা শরীরের কোথাও ঠাণ্ডা না লাগলেও কেন জানি পায়ে ঠাণ্ডা লাগতেছিল। শু-কভার পরার পর আর ঠাণ্ডা লাগেনি।

গুলমার্গ
গুলমার্গ

স্নোতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম বিকেলে। এরপর ক্যাবল কারের টিকেট কিনলাম। অনলাইনে কেনা যায়। তবে শুধু মাত্র ইন্ডিয়ান কার্ড ব্যবহার করে কেনা যায়। তাই নিজে নিজে কিনতে পারিনি। এখানে একটা দোকানদারের হেল্প নিলাম। প্রতি টিকেটে ৬০রুপি করে এক্সট্রা নিয়েছিল।

স্নো স্নান
স্নো স্নান

সন্ধ্যার পর রুমে ফিরে এলাম। রাত না হতেই সবাই নিজ নিজ ঘরে ঢুকে যায়। খুব একটা মানুষ দেখা যায় না রাস্তায়। দুই একটা গাড়ি যেতে দেখছি শুধু। ৮টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর আর কি। ঘুম! রুমে হিটার ছিল। হিটেড বেড ছিল। এসব না থাকলে মনে হয় ঠাণ্ডায় জমে যেতাম।

তৃতীয় দিন

পরের দিন সকালে উঠে নাস্তা করে নিলাম। আলু পরটা, ডিম অমলেট, ব্রেড আর বাটার দিয়েছিল। এরপর চা। নাস্তা করে গন্ডোলা এর দিকে গেলাম। হোটেল থেকে 1.4km দূরত্ব। যাওয়ার পথটা সুন্দর। ডান পাশে গলফ কোর্ট সম্ভবত, যা এখন পুরোটাই স্নো এর নিছে। হাঁটার কারণে ঠাণ্ডা লাগার পরিবর্তে উল্টো গরম লাগছিল।

ক্যাবল কারের কাছা কাছি যাওয়ার পর এক দালাল পিছু নিল। অনেক কিছুই বলল। তাকে হায়ার করলে কি কি সুবিধে পাবো, এসব জানালো। ৫০০ রুপি দিলেই হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কি কি অফার দিয়েছে, বলি। প্রথম অফার ছিল ক্যাবল কারের বগিতে ৬ জন বসে। উনাকে হায়ার করলে আমাদের দুই জনের জন্য স্পেশাল ভাবে একটা বগিই ম্যানেজ করে দিবে। গাইড করে এটা সেটা দেখাবে। আরো কত কিছু। এত বেশি বিরক্ত করছিল। যত বলি আমাদের কিছু লাগবে না। তত আরো বেশি জোর করে এটা সেটা বলে। এর থেকে বড় কথা হচ্ছে এরা অনেক বেশি মিসগাইড করে। আমরা ক্যাবল কারে উঠার জন্য সেকেন্ড ফ্লোরে যেতে চাচ্ছিলাম। বলল এদিকে না, নিচেই বসতে। আমিও ভাবলাম হয়তো নিচ থেকেই আমাদের ঢেকে নিবে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম সবাই সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে যাচ্ছে। আমরাও উঠে গেলাম। ক্যাবল কারে উঠতে গিয়ে দেখলাম পুরো বগিতে আমরা দুইজন ই উঠেছি। আরো অনেক গুলো খালি। ট্রাভেলার খুব একটা নেই। এছাড়া উপরেও গাইড করার মত কিছু নেই। যেখানে যেখানে যাওয়া যাবে, সব মার্ক করা। যে দিকে যাওয়া যাবে না, সেখানে ফ্ল্যাগ দেওয়া। এই তো। খামাখা দালালরা বিরক্ত করে। ওদের ধৈর্য দেখে আমি অবাক। আমার পেছনে অন্তত আধাঘণ্টা লেগে ছিল!

গন্ডোলা ক্যাবল কার থেকে ভিউ
গন্ডোলা ক্যাবল কার থেকে ভিউ

 

 

কয়েকজন পানির দেখে অনেক দূর এসে নাস্তা করছে

ক্যাবল কারের দুইটা পেজ রয়েছে। দ্বিতীয় পেজ অনেক উপর পর্যন্ত যায়। কিন্তু খারাপ ওয়েদারের কারণে তা বন্ধ। ভাগ্য খারাপ। প্রথম পেইজের শেষে আমরা নেমে চারপাশে ঘুরলাম। অনেক সুন্দর যায়গা। কিছুক্ষণ ঘুরে আবার ফিরে এলাম নিচে। এরপর হাঁটতে লাগলাম হোটেলের দিকে। এক ট্যাক্সি ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল যাবো কিনা। বললাম যাবো। ২০০ রুপি চাইলো। আমি ৫০ রুপি বললাম। রাজি হলো। আমাদের হোটেলের কাছাকাছি নামিয়ে দেওয়ার পর যখন রুপি দিলাম, নিল না। অনেক রিকোয়েস্ট করলাম। এরপরও না!

গুলমার্গে প্রায় সব কিছু স্নোতে ঢাকা। স্নো দেখার জন্য পারফেক্ট প্লেস। আমাদের হোটেল থেকে নিচের ভিউ দেখা যাচ্ছিলঃ

গুলমার্গ
গুলমার্গ

হোটেলে গিয়ে চেকআউট করে বের হলাম। গন্তব্য পহেলগাম। সমস্যা হচ্ছে পহেলগাম যাওয়ার জন্য আগে শ্রীনগর আসতে হয়। সেখান থেকেও সরাসরি পহেলগাম আসা যায় না। ট্যাক্সি রিজার্ভ করে আসা যায়। দুইজনের জন্য ট্যাক্সি হায়ার করে আসলে অনেক রুপি লাগবে। শেয়ারে আসার প্ল্যান করলাম।

আমরা ১২টার দিকে রওনা দিলাম। পুরো রাস্তা তখনো স্নো পড়ে আছে। রাস্তা থেকে স্নো ক্লিন করার গাড়ি দিয়ে ক্লিন করেছে। এরপরও রয়ে গেছে অনেক স্নো। যার কারণে গাড়ি গুলো খুব সাবধানে চালাচ্ছিল। অনেকে আবার চাকায় চেইন বেঁধে ড্রাইভ করছিল।

টাংমারগ পোঁছে আরেকটা ট্যাক্সিতে উঠলাম। শেয়ার ট্যাক্সি ফুল হওয়ার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু সময় লাগল ফুল হতে। শ্রীনগর রওনা দিল কিছুক্ষণ পর। মন পড়ে রয়েছে গুলমার্গে। যায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। শ্রীনগর পৌঁছে আরেকটা ট্যাক্সিতে উথলাম Anantnag এর উদ্দেশ্যে। এটিও ফুল হতে সময় নিচ্ছিল। Anantnag পোঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। Anantnag এর আরেক নাম ইসলামাবাদ! বেশির ভাগ মানুষ ইসলামাবাদ বলেই ঢাকছিল।

Anantnag এসে শেয়ার্ড ট্যাক্সি পাইনি। এছাড়া সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে দেরিও করতে ইচ্ছে করেনি। আরো দুইজন যাত্রী এর সাথে, যারা Anantnag পর্যন্ত আমাদের সাথে আসছিল। চারজন মিলে ২০০০রুপি দিয়ে রিজার্ভ নিয়ে পহেলগাম চলে আসলাম। জানি না ঐ ছেলে দুইটা কোন ধরণের ধোঁকা দিয়েছে কিনা। আমাদের থেকে ১০০০ রুপি নিয়েছিল। আর তারা বলল তারা ১০০০ রুপি দিবে। যদিও তাতে কোন আক্ষেপ নেই।

যে ট্যাক্সি ড্রাইভার নিয়ে আসছিল। সে হোটেল ঠিক করে দিল। ৭টা বেজে গিয়েছিল পহেলগাম আসতে। তাই আর যাচাই বাঁচাই করতে ইচ্ছে করেনি। এনার্জিও ছিল না। জানি এখান থেকে ট্যাক্সি ড্রাইভার একটা শেয়ার নিবে।

হোটেলে সব রেখে বের হয়ে পড়লাম খাওয়া দাওয়া করতে। এখানে এসে একতা রেস্টুরেন্টে কাশ্মীরি থালা অর্ডার দিলাম। কোপ্তা, কাবাব, রাইস সহ নানা আইটেম। ১৪৩০ রুপি নিয়েছিল। এটা নাকি এখানকার বিখ্যাত খাবার। আহামরি ভালো লাগেনি যদিও। মোটামুটি বলা যায়।

খাওয়া দাওয়া করে রুমে এলাম। ব্যাগে করে একটা ছোট কেটলি, টি-ব্যাগ নিয়ে এসেছি। চা তৈরি করে খেয়ে একটু রিলাক্স হলাম।

চতুর্থ দিন

পহেলগাম ঘুরার জন্য বের হয়েছি। এখানে ঘুরতে হলে ট্যাক্সি হায়ার করতে হবে। দুইজনের জন্য খুব একটা ইফিশিয়েন্ট না। ট্যাক্সি ঠিক করতে গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশি এক কাঁপল মিনি সুইজারল্যান্ড খ্যাত বাইসারান যাওয়ার জন্য ঘোড়া দাম ঠিক করছে। আমাদের আর দামাদামি করতে হয়নি। ১০০০ রুপি করে দুইটা ২০০০রুপিয় ঠিক করে নিলাম।

ঘোড়া রাইড
ঘোড়া রাইড

যাওয়ার রাস্তাটায় প্রচুর ময়লা। কাদামাখামাখি। কিন্তু চারপাশের ভিউ অসম্ভব সুন্দর। বড় বড় পাহাড়ের ছুঁড়ায় মুকটের মত বরফ বা স্নো। সকালের আলো পড়ে জ্বল জ্বল করছে।

 

পাহাড়ের উপর থেকে পহেলগাম

মিনি সুইজারল্যান্ড গিয়ে দেখলাম জায়গাটা আসলেই সুইজারল্যান্ডের মত। যদিও সুইজারল্যান্ড সরাসরি দেখা হয়নি এখনো। ভিডিও বা ছবিতে যতটুকু দেখলাম, সেরকম মনে হচ্ছিল।

মিনি সুইজারল্যান্ড

সকালের নাস্তা করিনি আমরা। ঐখানে নাস্তা পাওয়া যায়। আলু পরোটা, পাকড়া, চা ইত্যাদি খেয়েছি। দুইজনের ২২০ রুপি লেগেছে। কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে নিচে নেমে এলাম। ততক্ষণে ২টা ভেজে গেছে। নিচে ফিরে আসতে আসতে দেখি মেঘের কারণে সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। যাওয়ার সময়ও কি যে সুন্দর ওয়েদার ছিল।

আমাদের প্ল্যান ছিল বেহতাব ভ্যালি, আরু ভ্যালি ইত্যাদি দেখা। ওয়েদার খারাপ হয়ে যাওয়াতে আর যাওয়া হয়নি। হোটেলে ফিরে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। শ্রীনগর ফিরে যাবো।

হোটেল থেকে বের হওয়ার পর দেখি রাস্তার পাশে কি সুন্দর শিক কাবাব বিক্রি করে। দুইজন দুইটা খেয়ে দেখলাম অস্থির টেস্ট। রাস্তার পাশে খাওয়ার আগে একশ বার ভাবি। কিন্তু এরা খুবি পরিষ্কার। আমাদের সামনেই কয়েকবার ওদের কার্ট মুছে নিয়েছে। খেয়ে ভালো লাগার পর আরো দিতে বললাম। পরে ওরা জানালো ৩টা শিক, দুইটা রুটি ১০০ রুপি। দুই জনে মোট ছয়টা শিক কাবাব আর রুটি খেলাম। পাশেই আরেকটা কার্টে চা বিক্রি করছিল। চা খেয়ে রওনা দিলাম শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে।

পহেলগাম আসতে গাড়ি পেতে সমস্যা হয়েছে। গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে। যাওয়ার সময় কি সুন্দর সাথে সাথেই গাড়ি পেয়ে গেলাম। কোন অপেক্ষা করা লাগেনি। প্রথমে Anantnag এসেছি ১০০ করে ২০০ রুপি দিয়ে। Anantnag এ নেমে এক জনকে জিজ্ঞেস করলাম শ্রীনগরের শেয়ার্ড ট্যাক্সি স্ট্যান্ড কোথায়। বদমাইশ ব্যাটা বলে কোন শেয়ার্ড ট্যাক্সি নেই। একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে দেখিয়ে বলল উনার সাথে কথা বলতে। রিজার্ভ করে যেতে হবে।

আগের দিন সন্ধ্যার পরও আমি দেখেছি শ্রীনগর শ্রীনগর করে ঢাকছিল। তাই আমি চিন্তা না করে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড খোঁজার চেষ্টা করলাম। সামনে একজন বাদাম ওয়ালা দেখলাম কি সুন্দর বাদাম ভাজছে। তার থেকে ২০রুপির বাদাম কিনলাম। সাথে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় শ্রীনগরের শেয়ার্ড ট্যাক্সি। সে জানালো। পাশে আরেকজন ভদ্রলোক শুনে আরো ডিটেইলস জানালো কোথায় গেলে পাবো। আমরা আস্তে আস্তে হেঁটে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এসে পোঁছালাম। যে লোক আমাদের বলল কোথায় ট্যাক্সি পাবো, দেখলাম তিনি আমাদের দিকে আসছে। আমি হালকা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। উনি এসে বলল আমাদের কাছেই আসছে। জিজ্ঞেস করল বাংলাদেশে মেডিকেল পড়া নিয়ে। উনার মেয়ে নাকি বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়তে খুব ইচ্ছুক ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মোবাইল নাম্বার, ইমেইল রাখল। আমি বললাম কোন কিছু জানার থাকলে যেন আমাকে ইমেইল করে। তাহলে আমি তথ্য কালেক্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করব। উনি চায়ের দাওয়াত দিল। বললাম এখন না। আমাদের ট্যাক্সিতে উঠিয়ে উনি বিদায় নিল।

শ্রীনগর পৌছতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। উনি আবার ফোন দিয়ে খবর নিল। ঠিক মত পৌঁছিয়েছি কিনা, ইত্যাদি।

এয়ারবিএনবি এর মাধ্যমে রুম বুক দিয়েছি একটা। খুঁজে পেতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। যে লোকেশন দেওয়া, ঐখানে গিয়ে দেখি রুম জন্য যায়গায়। কিছুটা বিরক্ত হলাম। পরে যখন খুঁজে পেয়ে রুমে ঢুকলাম, মন ভালো হয়ে গেলো। এত সুন্দর পরিপাটি রুম। পরিবেশটাও অনেক নিরিবিলি। যে কেয়ারটেকার, তারাও দেখলাম অনেক হাসিখুশি। জিজ্ঞেস করল কিছু লাগবে কিনা, চা পানি ইত্যাদি। বললাম চা দিতে পারেন। খুব কম রুপিয় এত সুন্দর রুম পাবো আশা করিনি। ১৫ ডলার করে প্রতি রাত।

ওরা চা দিয়ে গেলো। রুম হিটার চালু করে দিল। দুই জনের জন্য দুইটা গরম পানির ব্যাগ দিয়ে গেলো। এই ব্যাগ গুলোর উপর পা দিয়ে ঘুমাতে কি যে আরাম লাগছিল।

পঞ্চম দিন

শ্রীনগর ঘুরে দেখা হয়নি। আজকে সারাদিন রয়েছে ঘুরে দেখার জন্য। রুম থেকে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মধ্য দিয়ে নাস্তা খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট খুঁজছি। মন মত একটাও পাইনি। ভাবলাম অন্য কোথাও গিয়ে খেয়ে নিব। একটা অটো ঠিক করে পরীমহল চলে গেলাম। অটো ওয়ানওয়ে ঠিক করলাম। ভাবলাম যেখানে যাচ্ছি, ঘুরে সেখান থেকে অটো নিয়ে ফিরে আসা যাবে।
পরীমহল পাহাড়ের অনেক উপড়ে। যাওয়ার পথেই বুঝেই গেলাম এই অটো ছাড়া যাবে না। যদিও সে নিজ থেকেই অফার দিল দর্শনিয় জায়গা গুলো দেখিয়ে আনবে। তার জন্য ১০০০ রুপি দিতে হবে। আমি হিসেব করে দেখলাম খুব একটা বেশি চায় নি। আমি রাজি হয়ে গেলাম।

আবহাওয়া খুব একটা ভালো না। বৃষ্টি হচ্ছে। সব কিছু কেমন অন্ধকার। এছাড়া শীতকাল হওয়ার কারণে কোন ফুল নেই। কেমন ফ্যাকাসে সব কিছু। পরীমহল পাহারের উপড়ে। ওইখান থেকে কি সুন্দর ভিউ দেখা যায়। আপচুচ হচ্ছিল কেন সব কিছু এমন মেঘলা। ঘুরে বের হয়ে এলাম।

আমাদের শালিমার বাঘ মুগল গার্ডেনে নিয়ে গেলো। গার্ডেনে ঢুকে হতাশ। কোন ফুল নেই। সব ফ্যাকাসে। এরপর নিশাত গার্ডেনে নিয়ে গেলো। একই অবস্থা। এসব দেখার পর আর কিছু দেখতে ইচ্ছে করেনি। ভাবলাম চলে যাই। রুমে গিয়ে ঘুমাই!

সন্ধ্যার পর আবার বের হলাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। কাবাব খেলাম। একটু হাঁটাহাঁটি করে রুমে ফিরলাম। রুমের কেয়ারটেকার জিজ্ঞেস করল কিছু খাবো কিনা রাতে। বললাম চিকেন কারি এবং রাইস আর ডাল দিতে। দিয়ে গেলো। খেতে ভালোই লাগছিল। ওরা রাইস এত কম দিচ্ছিল যে পরে আবার চেয়ে নিতে হয়েছিল।

কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে দেখলাম বেশির ভাগ জায়গায় কিছুক্ষণ পর পরই আর্মি দাঁড়িয়ে থাকে। এছাড়া বেশির ভাগ দোকানের ফ্রিজ গুলোতে পাওয়ার লাইন নেই। কোক, পানি সাজিয়ে রাখছে। এত ঠাণ্ডা যে ফ্রিজ লাগে না।

ষষ্ঠ দিন

দিল্লী ফ্লাইট। একটু সকাল সকাল ফ্লাইট নিয়েছি যেন বিকেলে দিল্লী ঘুরা যায়। অটো করে এয়ারপোর্ট গিয়ে শুনি অটো ঢুকতে দিবে না। অন্য একটা ট্যাক্সিতে উঠতে হলো। ট্যাক্সিতে উঠতে না উঠতেই দেখি সামনে চেকপোস্ট। এক কিলো দূরে এয়ারপোর্ট। এখানেই চেকপোস্ট। ব্যাগ সহ সব কিছু স্ক্যান করে আবার ট্যাক্সিতে উঠলাম। এয়ারপোর্টে গিয়ে নামলাম। এই টুকু যাওয়ার জন্য ১০০ করে দুইজনের ২০০ রুপি নিল। স্ক্যান করার জন্য গাড়ি থেকে ব্যাগ যে ক্যারি করেছে, সেও কিছু নিল। যদিও আমরা ক্যারি করতে বলিনি। গাড়ি থেকে নামার পর পর নিজ থেকেই এসে নিয়ে গেলো।

বোর্ডিং পাস নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পর শুনি ফ্লাইট ক্যানসেল। রিজার্ভেশনে যেতে। রিজার্ভেশনে গিয়ে শুনি দিল্লীর ফ্লাইট ক্যানসেল নয়। সেইম কোডে আরেকটা ফ্লাইট রয়েছে, ঐটা ক্যানসেল। আবার বোর্ডিং পাসের জন্য দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পর শুনি দিল্লীর ফ্লাইটও ক্যানসেল। আবার রিজার্ভেশনে যেতে বলল। রিজার্ভেশন এবং যারা বোর্ডিং পাস দেয়, এরা এত স্লো কাজ করতে আমি এই প্রথমই দেখছি। রিজার্ভেশনে গিয়ে তাদের স্লো কাজ দেখে বিরক্ত হয়ে আবার বোর্ডিং পাস যেখানে দেয়, সেখানে এলাম। অনেকক্ষণ পর নিজের সিরিয়াল আসার পর তারা ফ্লাইট পরিবর্তন করে বিকেলের একটা ফ্লাইট দিল। ১২টার ফ্লাইট ৫টায়। এর উপর এতক্ষণ এক ধরণের হয়রানি। এমন জগন্য সার্ভিস! এর আগে Go Fast এর ফ্লাইট ডিলে হয় দেখে ইন্ডিগোতে টিকেট কিনলাম। এটারও সেইম সমস্যা।

শ্রীনগর এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি এতই কড়া যে ওরা পারে না যে উলঙ্গ করে সব চেক করে! ব্যাগের সব আইটেম খুলে খুলে চেক করেছে। সিকিউরিটি পার হয়ে ট্রানজিট এরিয়ায় বাকি সময় কাটালাম। কারণ এয়ারপোর্টের আসে পাশে কিছুই নেই যে বাহিরে থাকব।

সন্ধ্যার পর দিল্লী পৌছালাম। এয়ারবিএনবি এর মাধ্যমে রুম ঠিক করেছি। তার থেকে জেনে নিলাম কিভাবে মেট্রো করে তার প্লেসে যাবো। মেট্রোর জন্য টিকেট কেটে নিলাম। ট্যুরিস্টরা টেম্পোরারি টিকেট কাটতে হয়। মেট্রো পরিবর্তন করে অন্য আরেকটা মেট্রোতে উঠতে হবে। লাইন পরিবর্তন করার জন্য নেমেছি। দেখলাম ফুডকোর্ট। খাওয়া দাওয়া করলাম। এরপর আস্তে ধীরে রুমে এলাম। মেট্রো থেকে কাছেই। এখানেও সুন্দর একটা রুম। তিন রাতের জন্য বুক করে রেখেছি।

রুমে এসে বের হলাম আবার। পরের দিনের প্ল্যান হচ্ছে আগ্রা যাওয়া। তাই আগ্রা যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেট কাটলাম। শ্রীনগর থেকেই ট্রেনেট টিকেট কেটে রাখলে ভালো হতো। রিটার্ন্ট টিকেট পাইনি। পাশেই ছিল সিলেক্ট সিটিওয়াক মল। গিয়ে দেখি খুবি সুন্দর এলাকা। গিয়ে ঘুরাঘুরি করলাম। কফি খেলাম। এরপর রুমে এলাম।

সপ্তম দিন

সকালে ঘুম থেকে উঠে করিম হোটেলে চলে গেলাম। গুগলে সার্চ দিয়েছিলাম দিল্লিতে কি কি ট্রাই করা যায়। ঐখানে করিম হোটেলের নাম ছিল। এখানে নাকি বাংলাদেশি প্লেয়াররা ইন্ডিয়া গেলে খেতে যায়। খুবি সাধারণ একটা রেস্টুরেন্ট। তাও আবার চিপা গলির ভেতর। জামা মসজিদের কাছে। যেখানে রুম নিয়েছি, সেখান থেকে হেঁটেই মেট্রোতে উঠা যায়। মেট্রোতে করে জামা মসজিদের কাছে চলে গেলাম। মেট্রো স্টেশন থেকে বের হয়েই দেখলাম রিক্সা। ইন্ডিয়ার রিক্সা গুলো একটু অন্যরকম। টেনে টেনে নিয়ে যায়। ওমা, এই রিক্সায় উঠার পর দেখি আমাদের দেশের টেসলা! ব্যাটারি চালিত। টেনে চালাবে চিন্তা করে ভাড়া বেশিতে রাজি হলাম। এখন দেখি পুরাই লস!

করিম হোটেলে সকালে নেহারি, পায়া এবং রুটি পাওয়া যায়। নেহারি আর রুটি অর্ডার দিলাম। দেশে নেহারি সাধারণত খাসির পা দিয়ে রান্না করা হয়। যেখানে মাংস বলতে শুধু মাত্র পায়ের লিগামেন্ট থাকে। এখানে খাঁসির মাংস দিয়ে পায়া রান্না করা হয়েছে। খুবি অল্প পরিমাণ। ৩২৫ রুপি প্রতি প্লেট। টেস্ট ভালোই ছিল। তবে ঘটা করে ঐখানে গিয়ে খাওয়ার মত ভালো না।

খাওয়া দাওয়া করে জামা মসজিদ দেখতে গেলাম। এখানে ঢুকতে সরকারি ভাবে কোন ফি না থাকলেও টিকেট কাউন্টার আছে এবং অনেকেই টিকেট কেটে ঢুকছে। এমনকি দেখলাম একটা বিদেশি গ্রুপকে ওয়ান টাইম তিন জোড়া জুতা দিয়ে ৯০০ রুপি চার্জ করল! বাটপার এভ্রিহোয়ায়!

জামা মসজিদ

জামা মসজিদ থেকে গেলাম রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লায়। জামা মসজিদ থেকে কাছেই। ৫০ রুপি দিয়ে অটো করে চলে গেলাম টিকেট কাউণ্টারে। এখানে ইন্ডিয়ান এবং সার্কভুক্ত দেশ গুলোর জন্য ৮০ রুপি করে টিকেট। আগে ৩৫ ছিল। এখন ৮০ করেছে। বিদেশিদের জন্য সম্ভবত 550 রুপি। সোমবারে এটা বন্ধ থাকে। এছাড়া রাতের দিকে এখানে লাইট শো হয়। গুগল করে কখন লাইট শো হবে, তা বের করে নেওয়া যাবে।

টিকেট কাউন্টার থেকে এন্ট্রি গেটে যাওয়ার জন্য অটো পাওয়া যায়। সেখানে আবার জন প্রতি ১০ রুপি করে টিকেট কেটে উঠতে হয়। রিটার্ণ টিকেট সহ কেটে নিলাম। এরপর অটো করে চলে গেলাম এন্ট্রি গেটে।

রেড ফোর্টে ঢুকার পর অনেক গুলো ভাসমান দোকান দেখা যাবে। কেন জানি এটা দেখে বিরক্ত লাগল। এত হিস্টোরিক একটা প্লেসের ভেতর এমন দোকান না বসালেও হত। যদিও বাকি অংশ গুলো খুব সুন্দর ভাবেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনেক বিশাল এরিয়া। সব ঘুরে দেখতে ভালোই টাইম লাগল।

রেড ফোর্ট থেকে বের হয়ে টিকেট কাউন্টারের সামনেই দেখলাম একটা মসজিদে জুমার খুৎবা দিচ্ছিল। ইচ্ছে ছিল জামা মসজিদে জুমা পড়ার। কিন্তু যেতে যেতে নাও পেতে পারি ভেবে এখানেই জুমা পড়ে নিলাম।

জুমা পড়ে চলে গেলাম ইন্ডিয়া গেটের দিকে। অটোতে করে গেলাম। ১৫০ রুপি নিল রেড ফোর্ট গেট থেকে। ইন্ডিয়া গেট মোটামুটি অনেক বড়। ছবিতে হয়তো ছোট দেখা যাবে। আর এখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে লড়াই করে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনার নামের খোঁদাই করে লেখা রয়েছে।

পাশেই ছিল ওদের ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল। ঐটা দেখে মনে হলো আমাদের ন্যাশনাল মেমোরিয়াল বেশি সুন্দর। মেমোরিয়াল থেকে বের হয়ে চলে গেলাম লোটাস টেম্পেলে। লোটাস টেম্পেল অনেক সুন্দর একটা স্ট্র্যাকচারাল বিল্ডিং। এর ভেতর কোন মুর্তি দেখিনি যদিও।

ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল

লোটাস টেম্পেল থেকে চলে গেলাম সিলেক্ট সিটিওয়াক মলে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম। যদিও তখন বিকেল হয়ে গিয়েছিল। এরপর কফি খেলাম স্টারবাক্সে গিয়ে। মেহেরাব ভাই তখন মেসেজ দিয়েছিল কই আছি। উনি জানালো একটা সুন্দর নেপালি রেস্টুরেন্ট আছে। ঐখানে ডিনার করতে যেতে। উবারে করে গেলাম। ভুল ক্রমে উবার একটু আগেই ড্রপ করে দিয়েছিল। পরে মেহেরাব ভাই এসে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের।

রেস্টুরেন্টটির নাম Thak Thakali। একটা থালাতে অনেক গুলো আইটেম একটু একটু করে সাজিয়ে সার্ভ করল খাবার। খেতে দারুণ লাগল। খাওয়া দাওয়া করে বের হলাম।

আমি EBL এর ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম। কোন এটিএম থেকেই রুপি উঠাতে পারছিলাম না। রুপি যেগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম, সেগুলো শেষের পথে। পরে মেহেরাব ভাই এর হেল্প নিলাম। উনি কিছু রুপি দিল, উবার ঠিক করে দিল। রুমে ফিরে এলাম।

অষ্টম দিন

সকাল ৬টায় দিল্লি থেকে আগ্রার ট্রেন টিকেট কেনা ছিল। ভোর ৪টায় বের হয়ে গেলাম। উবার ডাকলাম রেল স্টেশনে যাওয়ার জন্য। ম্যাপে কোথায় আছে, কতটুকু আসছে এগুলোর আপডেট পাচ্ছিলাম। উবার ড্রাইভার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে কিছুদূর আসল। আর আসে না। আমি ভেবেছি কোন স্টোরে দাঁড়িয়ে কোন কিছু কিনছে। অনেকক্ষণও না আসায় কল দিলাম। কল রিসিভ না করে আবার আরেকটু আসল। এরপর এত স্লো আসতেছিল। আমি ভেবে নিয়েছি নিশ্চিত কোন কিছু খেতে খেতে ড্রাইভ করার কারণে আস্তে আস্তে আসছে। কাছা কাছি আসার পর আর আসে না। আমরাই হেঁটে গেলাম। গিয়ে দেখি ঐ বেটা ঘুমায়!

জিজ্ঞেস করলাম ড্রাইভ করতে পারে কিনা, আমরা উঠব কিনা। বলল উঠতে। উঠার পর মনে হলো অনেক বড় ভুল করে ফেলছি। আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছিল আর ঘুমাচ্ছিল। পুরাই চোখ বন্ধ করে ড্রাইভ করছিল। ভাবলাম নেমে যাই। আবার রাস্তার মাঝখানে নামাটাও সেফ না মনে করে আর নামি নাই। উনার সাথে কথা বলে, হাত তালি দিয়ে শব্দ করে কোন রকম ট্রেন স্টেশন এসেছি। কি যে ভয়টাই না পেয়েছিলাম রে ভাই!

স্টেশনে একটু আগে আসার কারণ হচ্ছে প্লাটফর্ম খুঁজে বের করা, বগি খুঁজে বের করা ইত্যাদি। টিকেটেই লেখা থাকে যদিও। এখানে এসে দেখলাম সহজেই সব খুঁজে বের করা যায়। সময় লাগেনি।

ট্রেনে ব্রেকফাস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের শুধু চা আর বিস্কিট দিয়েছিল। দিল্লি থেকে আগ্রা যেতে মাত্র ২ ঘণ্টা লাগে ট্রেনে। আগ্রা নেমে একটা অটোতে করে তাজমহল নেমে গেলাম। তাজমহলের টিকেট আমাদের (সার্ক) জন্য 535 করে। বউকে ইন্ডিয়ানদের মহিলা সিরিয়ালে পাঠিয়ে দিলাম। ৫০ করে ১০০ রুপি দিয়ে টিকেট কেনা হয়ে গেছে। একটু চালাক না হলে…!

তাজ মহলে ঢুকতে বলা যায় কিছুই নেওয়া যায় না। চকলেট ছিল ব্যাগে। সেগুলোও ফেলে দিয়েছিল। তাজমহলের ভেতরে ঢুকতে আরো ২০০ রুপি করে লাগে। তো ঐ টিকেট ভেতরেই পাওয়া যায়। টিকেট কেটে তাজ মহলের ভেতরে দেখলাম। কাছ থেকে দেখলাম এই তাজ মহল কত সুন্দর একটা আর্ট।

তাজমহল
তাজমহল

তাজ মহল দেখে বের হয়ে গেলাম আগ্রা ফোর্টে। আগ্রা ফোর্টের অনেক গুলো ঘরে ঢুকা গিয়েছিল। প্রতিটা অংশই অনেক নিখুঁত ভাবে তৈরি। অনেক আর্টিস্টিক।  এখানে অনেক গুলো কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এদের কি যে ভালো লাগে আমার কাছে। একটু খাবার দিলেই হাতে চলে আসে।

কাঠবিড়ালি
কাঠবিড়ালি

আগ্রা ফোর্ট দেখে বের হলাম। দুপুরের খাবার খেতে হবে। খাওয়ার জন্য গুগলে হালাল রেস্টুরেন্ট লিখে সার্চ দিলাম। বিরিয়ানি & কাবাব বাই জাহিদ নামে একটা রেস্টুরেন্ট সাজেস্ট করল। ঐখানে যাওয়ার জন্য অটো ঠিক করব। এক ঘোড়া ড্রাইভার বলল ১০০ রুপি দিলে নিয়ে যাবে। রাজি হয়ে গেলাম। ৫ কিলোর মত দূরত্ব। পরে বুঝলাম অল্প ভাড়া একটা ট্র্যাপ। ওরা মূলত লেদারের বিভিন্ন আইটেমের দোকানের সামনে নামিয়ে দেওয়া ওদের মূল লক্ষ্য। তাই যেতে যেতে লেদারের দোকানের অনেক প্রশংসা করছে। এরপর বলছে এখানে হোলসেল প্রাইসে, ফ্যাক্টরি প্রাইসে জিনিস পত্র পাওয়া যায়। আমাদের একটা স্টোরের সামনে নামিয়ে দিয়ে বলল ১০ মিনিট পর এসে নিয়ে যাবে। আমরা ঘুরে দেখতাম। আমি একটা মানিব্যাগ দেখালাম। ৮৫০ রুপি চাইছে। যেটা আমাদের দেশের যে কোন ব্র্যাডের দোকানেও ৫০০ রুপিয় পাওয়া যাবে। আরো দুই একটা দোকান ঘুরে দেখলাম। দেখে বের হয়ে ১০ মিনিট কি, ২০ মিনিট পরেও ঐ ঘোড়া নিয়ে আসেনি। পরে আরেকটা অটো নিয়ে চলে গেলাম রেস্টুরেন্টে।

এই অটো ড্রাইভার বলল আমাদের খাওয়া শেষ হলে আমাদের আবার নামিয়ে দিবে। আমি বললাম আপনার অপেক্ষা করতে হবে না। চলে যাইয়েন। আর আপনার ইচ্ছে হলে থাইকেন। এত ভালো ব্যবহার দেখাচ্ছিল যে ভাড়ার পাশা পাশী টিপসও দিলাম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হওয়ার পর দেখি ঐ অটোওয়ালা দাঁড়িয়ে। কোথাও যায়নি। জিজ্ঞেস করল কই যাবো। আমি বললাম বাস স্ট্যান্ড। আমরা একটা বাস স্টেশনের কথা বললাম। সেখানে নাকি বাস পাওয়া যাবে না। অন্য আরেক জায়গায় নিয়ে গেলো। কাউন্টারে আগ্রা থেকে দিল্লির বাস টিকেট ৫০০ করে ১০০০ নিবে জানালো। জিজ্ঞেস করলাম এসি বাস কিনা। বলল হ্যাঁ। অনলাইনে দেখলাম এসি বাসের দাম এমনি। তো কিনে নিলাম দুইটা টিকেট। বাস আসার পর দেখলাম ৫ সিটের বাস! তাও মানা গেলো। এরপর দেখলাম লোকাল বাসের মত যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে লোক উঠাচ্ছিল। আরো দেখলাম অন্য প্যাসেঞ্জাররা দুইটা টিকেট কিনেছে ৭০০ দিয়ে। এর মানে দাঁড়ালো অটো ওয়ালা শুধু মাত্র কমিশন নেওয়ার জন্য আমাদের একটা লোকাল বাসে তুলে দিল! এতক্ষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছে শুধুমাত্র আমাদের মুরগি বানানোর জন্য। দেড়টার দিকে বাসে উঠলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে দিল্লি পৌঁছালাম। যেখানে সর্বোচ্চ তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগার কথা ছিল।

দিল্লি পৌঁছে কিছু কেনাকাটা করলাম। একটা চায়ের দোকানে চা খেলাম। এত অসাধারণ চা আমি খুব কমই খেয়েছি। জামা মসজিদের পাশের করিম হোটেলে আবার গেলাম। এত ভিড়। আমরা কাবাব এবং খাসির কারি অর্ডার দিলাম। খাসির শিক কাবাব অর্ডার দিয়েছিলাম। কাবাব দিয়ে গেলেও রুটি দিয়ে যায়নি। যতক্ষণে রুটি এসেছে, ততক্ষণে কাবাব ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। খেতে তেমন একটা ভালো লাগেনি। খাসির জাহাঙ্গীরই অর্ডার দিয়েছিলাম। তাও ভালো লাগেনি। কাবাব ১০০ করে, খাসির জাহাংগেরি ৩৪০ করে সম্ভবত। করিম হোটেলের সকালের খাবার কিছুটা ভালো লাগলেও বিকেলে কাবাব এবং কারি, এ দুইটার একটাও ভালো লাগেনি। অন্য সব সাধারণ দোকানে এর থেকে ভালো খাবার পাওয়া যায়। এরপরও জানা নেই কেন এটা এত জনপ্রিয়! অথবা ভালো আইটেম আমরা চুজ করতে পারিনি।

পুরাণ ঢাকা – দিল্লি ভার্সন!

খাওয়া দাওয়া করে রুমে ফিরলাম। পরের দিন সকালে ঢাকার ফ্লাইট। সব গোছ গাছ করে নিলাম। দিল্লি ঘুরে ভালোই লাগছিল। আমাদের ঢাকার সাথে অনেক কিছুরই মিল আছে। তাই কেমন একটা হোম হোম ফিল হচ্ছিল। টিকেট আগে না কাটলে আরো দুই একদিন থাকা যেত।

নবম দিন

সকাল নয়টার দিকে বের হলাম। নাস্তা করার জন্য রুম থেকে বের হয়ে একটা অটোতে উঠলাম। ৯০০ মিটার দূরত্ব। সর্বোচ্চ ২০ রুপি নিবে। তাই না জিজ্ঞেস করেই উঠলাম। নামার পর আমি ৩০ রুপি দিলাম। বেটা ৫০ রুপির নিছে নিবেই না! সামান্য রুপি। তাই দিয়ে দিলাম। তবে পুরা ইন্ডিয়ায় এই অটো, ট্যাক্সি বা দালালদের হতে সাবধান। কোন না কোন ভাবে ওরা স্ক্যাম করবেই করবে। বিভিন্ন ব্লগে সবাই উল্লেখ করেছিল এসব। কিন্তু এরপরও তো বাঁচতে পারিনি। কয়েকবারই ধরা খেতে হলো। বাকি সব কিছু বলা যায় অনেক সুন্দর। যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সুন্দর। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে খরচও অনেক কম লাগে।

খাওয়া দাওয়া করতে যে রেস্টুরেন্টে গেলাম, গিয়ে দেখি তা বন্ধ। পরে উবার ডেকে এয়ারপোর্ট চলে যাই। হাতে তখনো প্রায় আড়াই ঘণ্টার মত সময়। 12.55 এ ফ্লাইট। আমরা সাড়ে দশটায় পৌঁছাই। বোর্ডিং পাস নেওয়া, ইমিগ্রেশন পার হওয়া এসব করতে করতেই দুই ঘণ্টা চলে গেলো। ইন্ডিগো এর স্টাফরা এত স্লো! সামান্য কয়েকজন লাইনে। এরপরও অনেক সময় লাগাচ্ছিল। নাস্তা করিনি। ভাবলাম ট্রানজিট এরিয়ায় কিছু খেয়ে নিব। এত সময় লেগেছিল যে খাওয়ার সুযোগ হয়নি। ইমিগ্রেশন শেষ করে, সিকিউরিটি গেট পাস হয়ে যখন ট্রানজিট এরিয়ায় ঢুকলাম, তখনি শুনছিলাম ঢাকার যাত্রীদের ঢাকছে। খাওয়া আর হলো না। এছাড়া ইন্ডিগো ফ্লাইটে কোন খাবার দেয় না। ভাগ্য ভালো ব্যাগে চকলেট ছিল। তাই খেলাম।

বিমান বাংলাদেশে ল্যান্ড করার পর পরই যখন নেট আসছিল মোবাইলে, সাথে সাথে ফুড পাণ্ডায় ঢুকে সাদা ভাত আর তরকারি অর্ডার দিলাম। বাংলাদেশি ভাত আর তরকারিকে কে না মিস করে?

যারা ইন্ডিয়ায় যাবেন, চেষ্টা করবেন Air Vistara এর ফ্লাইটে যাওয়ার। ইন্ডিয়ার ডমিস্টিক ফ্লাইটেও Air Vistara ফ্লাইটই বেটার। ইন্ডিগো, গো ফাস্ট, গো এয়ার এসব বাজেট এয়ারলাইন্স। অনেক কিছুই কম্প্রোমাইজ করে। সময় মত পৌঁছায় না। একটু আগে প্ল্যান করে টিকেট কেটে নিলে Air Vistara এর টিকেটই কম রুপি কেনা যাবে।

 

ঘুরাঘুরি নিয়ে অন্যান্য লেখা গুলোঃ দেশে বিদেশে

2 thoughts on “ইন্ডিয়ার দিল্লি – আগ্রা – কাশ্মীর ভ্রমণ”

  1. নভেম্বরে নাগপুর গিয়েছিলাম। মহারাষ্ট্র এর দিকে। নন টুরিস্টি এরিয়া হওয়াতে কোন খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি। ঢাকা থেকে কোলকাতা আর কোলকাতা থেকে নাগপুর ইন্ডিগোতেই গিয়েছিলাম। ফিরতি ফ্লাইটও ইন্ডিগো এর। ৩ টা ফ্লাইট-ই অন টাইম আর বোর্ডিং স্মুথ ছিলো।

    দিল্লিতে শুধু খাওয়ার জন্য একটা টুর দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো 😂

    Reply
    • ঠিক কি কারণে জানা নেই, ইন্ডিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এরিয়ায় ছেঁচড়া বেশি 🙁

Leave a Reply