আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সম্ভাবনা

ইতিমধ্যে সবাই জানি চতুর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন নিয়ে আসবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স। ইত্যিমধ্যে আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের অনেক সুবিধে ভোগ করছে। যা আসলে খুবি সামান্য। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আরো বড় পরিসরে সব জায়গায় এটি ব্যবহার করব। ইনশাহ আল্লাহ আপনি আমি এই রেভল্যুশনটা দেখে যাবো।

আমরা মানুষেরা জীবনের বেশির ভাগ অংশ শিক্ষা নিতেই পার করে দেই। এরপর যখন মোটামুটি এক্সপার্ট হয়ে উঠি, তখন টুপকরেই মারা যাই। আহারে। প্রতিটা মানুষকেই আলাদা আলাদা করে শিখতে হয়। আবার আমাদের কাজ করার ক্ষমতাও কম। ৩-৪ ঘন্টা কাজ করেই আমরা শ্রান্ত হয়ে যাই। যারা সুপারম্যান টাইপের, তারা হয়তো ৮-১০ ঘন্টা কাজ করতে পারে। যদিও যারা বেশি কাজ করে, তাদের কাজের কোয়ালিটি নিয়ে একটু সন্ধেহ থেকে যায়। সুপারম্যান হলে ভিন্ন কথা।

মেশিন কিন্তু এসব থেকে মুক্ত। যে কোন একটা মেশিনকে শিখাতে পারলে হাজার হাজার কোটি কোটি মেশিন কাজে লাগানো যাবে। একটা সফটওয়ার তো একবারই তৈরি করা হয় তাই না? এরপর যে কোন কম্পিউটারেই তো ব্যবহার করা যায়, তেমন আরকি। আবার মেশিন গুলোর তো আর রেস্ট নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে পারে। কোন অংশ নষ্ট হয়েছে? রিপ্লেস করে দিলেই হলো। আবার কাজ শুরু করে দিলো।

মেশিনকে শেখানোর জন্য প্রচুর ডেটার দরকার হয়। আর তাই এখন যার কাছে যত বেশি ডেটা, সে সবচেয়ে বেশি বড়লোক। ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজন এখন যতটা না বড়লোক, সামনে আরো বড়োলোক হবে। আমাদের জীবনের বেশির ভাগ জিনিসের জন্যই এসব গুটি কয়েক কোম্পানির কাছে ধরা থাকব। কারণ? তাদের কাছে থাকবে ট্রেইন্ড মেশিন। যেগুলো ব্যবহার আপনাকে করতেই হবে। যদি না করেন আপনি পিছিয়ে যাবেন। আপনার ব্যবশা পিছিয়ে যাবে। টিকে থাকার জন্যই তাদের কাছ থেকে সার্ভিস কিনতে হবে। আমরা যেমন এখন বিদ্যুত কিনি, গ্যাস কিনি তেমননি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সার্ভিসও কিনতে হবে।

ওয়েট! আসল কথা হচ্ছে অলরেডি আমরা কিনতেছি। ফেসবুকে এড দিচ্ছেন না? ঐটা একটা ট্রেইন্ড মেশিন। যেটা আপনার এডটা সঠিক ব্যবহারকারীকে দেখায়। গুগলের বিভিন্ন ক্লাউড সার্ভিস রয়েছে। যেমন গুগলের ম্যাপের কথাই চিন্তা করুন। ঐটা আমাদের বলে দেয় কোথায় কোথায় জ্যাম রয়েছে, কতটুকু লাগবে কোথাও যেতে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ইনফরমেশন তো আমাদের ফ্রি দিচ্ছে তাই না? ফ্রি বলতে আসলে আমাদের থেকেই ডেটা কালেক্ট করছে। আর বড় বড় কোম্পানির কাছে ঐ ডেটাগুলোকে সার্ভিস আকারে বিক্রি করছে। যেমন উবারের কথাই চিন্তা করুন। উবার কিন্তু গুগল ম্যাপ এপিআই ব্যবহার করছে। আর তার জন্য গুগলে পে করতে হচ্ছে অনেক অনেক টাকা। এই গুগল ম্যাপটাও একটা ট্রেইন্ড মেশিন।

সেলফ ড্রাইভিং কারের কথা চিন্তা করি। একটা গাড়িকে ট্রেইন করলেই তো হলো। বাকি কোটি কোটি গাড়ি ঐ গাড়ির সফটওয়ার দিয়েই তো চালানো যায় বা যাবে। এখন যে সবচেয়ে একুরেট একটা গাড়ি চালানোর মেশিন/সফটওয়ার ট্রেইন করতে পারবে, তার থেকেই তো সবাই কিনবে তাই না? সে যদি শুরু থেকেই নিজে একটা সফটওয়ার ট্রেইন করতে যায়, তখন তার একই সাথে সময় এবং রিসোর্স দুইটাই নষ্ট হবে। এ জন্যই সে কি করবে? যার কাছে সবচেয়ে এক্যুরেট ড্রাইভারলেস কারের সফটওয়ার রয়েছে, তার থেকেই সার্ভিস কিনে নিবে।

তিনটে উদাহরণ দিলাম। এবার আসি সম্ভাবনা বা আইডিয়া নিয়ে। আমরা চাইলেও গুগল ফেসবুকের মত হতে পারব না। ওদের মত বড় সড় সার্ভিস দিতে পারব না বা পারব না ওদের মত বড় কিছু ট্রেইন করতে। কিন্তু আমরা চাইলে ছোট ছোট কিছু মেশিনকে ট্রেইন করতে পারি। মেশিন বলতে এখানে সফটওয়ার হোক বা হার্ডওয়ার যে কোন কিছুকেই ট্রেইন করা যাবে। যেমন একটা মশা মারার রোবটকেও ট্রেইন করতে পারেন। ছোট্ট একটা ডিভাইস, যে বাসার সব কোণা থেকে সব মশা গুলোকে খুঁজে মেরে পেলবে। এমন একটা মেশিন ট্রেইন করতে পারলে আপনি যে কোন হার্ডওয়ার কোম্পানির কাছে আপনার ঐ সার্ভিসটা সেল করতে পারবেন। ছোট্ট একটা আইডিয়া মনে হলেও চিন্তা করে দেখুন সবার বাসায় একটা করে ডিভাইস, সেখানে চলছে আপনার ট্রেইন করা সফটওয়ার। যে কোন একটা সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই বিলিয়নে সহজেই পৌঁছে যাবেন। মশারটা একটা মাত্র উদাহরণ। এরকম হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে। যেমন হতে পারে যে কোন সবজি ক্ষেত্রে পোঁকা মারার মেশিন, পাঁকা ফল সংগ্রহ করার মেশিন, খাওয়া দাওয়ার সময় একটা কাজের লোক যেভাবে সব সার্ভ করে, তেমন একটা মেশিন আরো কত কিছু। ভালো ভাবে যে কোন একটা মেশিনকে ট্রেইন করলেই বিলিয়নিয়ার। আমি আইডিয়া বলে দেওয়ার কারণ? আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের প্রয়োগ সঠিক ভাবে করতে পারলে কাজ করার মত হাজার হাজার আইডিয়া পড়ে আছে। শুধু যে কোন একটা নিয়ে কাজ করা বাকি। পৃথিবীটাকে বদলে দেওয়া বাকি। আর পৃথিবীটাকে বদলাতে পারি, আমরাই।

Leave a Reply