ফ্লাইট
ভুটান যাওয়ার জন্য ৬ তারিখ সকাল সাড়ে নয়টায় ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। আগের দিন বিকেলে ফোন করে জানানো হয় টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ফ্লাইট ক্যানসেল। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখে টিকেট কিনে রেখেছিলাম। টিকেট কেনার পর সময় গুলো কেন জানি যেতে চায় না। অপেক্ষা। এখন আবার ফ্লাইট ক্যানসেল। জানালো ৭ তারিখে রিসিডিউল করা হয়েছে।
চার দিন ঘুরার সময় নিয়ে টিকেট কেটেছিলাম। এখন সব এলো মেলো হয়ে যাবে। ৭ তারিখে যদি ফ্লাইট হয়, তাহলে ১০ তারিখে ফিরলে ঠিক মত ঘুরা হবে না। তিন দিন সময় থাকবে হাতে। আবার ১০ তারিখের পরের রিটার্ন ফ্লাইট হচ্ছে ১২ তারিখে।
৭ তারিখ সকাল সকাল রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। বাসা থেকে এয়ারপোর্ট আসতে মাত্র ১০ মিনিট লেগেছে! সম্ভবত সাড়ে ছয়টায় পৌঁছে গিয়েছি, ফ্লাইট সাড়ে নয়টায়। এত আগে আগে না আসলেও হতো। যাই হোক, কফি স্টল থেকে কফি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
চেকইন শুরু হলে বোর্ডিং পাস নিলাম। ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করে ইমিগ্রেশন পার হলাম। কয়েক দিন আগে ইন্দোনেশিয়াতে যাওয়ার সময় যে ইমিগ্রেশন অফিসার ছিল, আজও উনি। ইমিগ্রেশন শেষে অপেক্ষা, ফ্লাইটের জন্য। প্রায় দেড় ঘন্টার মত সময় হাতে আছে। সব ঝামেলা শেষ। তাই ভালো।
প্রথম দিন
ভুটানে একটা মাত্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, এবং তা পারতে। এদের রাজধানী হচ্ছে থিম্পুতে। পারো এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল হলেও ছোট। আর ছোট হলেও পরিপাটি। পুরা এলাক পাহাড়ি হওয়াতে কোন সমতল ভূমি নেই। ভুটানে ঢুকার পর একটা নদীর উপর দিয়ে বিমান ঢুকছিল। মনে হচ্ছিল যেন যে কোন সময়ই পাহাড়ের সাথে লেগে যাবে। নদীর উপর দিকে এঁকে বেঁকে এক সময় পারো এয়ারপোর্টে এসে নামল।
বিমান থেকে নামার পরই ঠান্ডার স্পর্শ পাওয়া যাবে। রোদ্দ্রউজ্জল দিন হওয়ার পরও কেমন ঠান্ডা। গায়ে হালকা শীতের জামা ছিল। এয়ারপোর্টের টার্মিনালে ঢুকে প্রথমেই জ্যাকেট পরে নিলাম। এরপর ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করে এগিয়ে গেলাম ইমিগ্রেশন করার জন্য। ইমিগ্রেশন অফিচার মর্নিং জানালো। আমি পাসপোর্ট আর ইমিগ্রেশন ফরম দেওয়ার পর কয়দিন থাকব জিজ্ঞেস করে ভিসা এবং অ্যারাইভাল সিল মেরে দিল। ইমিগ্রেশন শেষ!
আমার প্ল্যান ছিল পারোতে পরে ঘুরব। আগে থিম্পু এবং পুনাখা ঘুরে যাবো। পুনাখা যেতে হলে পারমিশন লাগে, আর তা পেতে হলে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে নিতে হয়। আমি পৌঁছেছি রবিবারে। রবিবারে তাদের ছুটির দিন। সুতারাং আমাকে থিম্পুতে একদিন থাকতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে খুঁজতে ছিলাম শেয়ার্ড ভাবে থিম্পু আসা যায় কিনা। ঐখানে ট্যাক্সি ছিল, কিন্তু একা ট্যাক্সি নিয়ে গেলে ১৫০০ রুপির মত দিতে হবে। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে জানালাম আমি শেয়ার্ড ভাবে যেতে চাচ্ছি। ওরা বলল এখান থেকে শেয়ার্ড ভাবে যাওয়া যাবে না। আমি ভাবলাম উনারা শেয়ার্ড ভাবে না গেলে আমি দেখি ম্যানেজ করতে পারি কিনা। একই ফ্লাইটে আসা দুইজন থিম্পুতে যাবে। তাদের সাথে যাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলাম, তারা রাজি হলো। বেঁকে বসল ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। এখান থেকে তারা শেয়ার্ড ভাবে যেতে দিবে না।
এয়ারপোর্টে এক ভদ্রলোকের সাথে কথা হয়েছে। মাননুন কাদের, সাউথটেক লিমিটেডের MD। ভুটানে সফটওয়ার বিজনেস আছে উনাদের। আমাকে কিছু টিপস দিল। যেমন বলল অনেক উঁচু জায়গা হওয়ার কারণে বাতাসে অক্সিজেন কম। আর তাই মাথা ব্যাথা করবে। আর তখন বেশি বেশি করে শ্বাস নিতে হবে। এছাড়াও বিমানে বসেও কিছুক্ষণ কথা হলো। বলল বিমান থেকে এভারেস্ট দেখা যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কোন পাশ থেকে দেখা যাবে। আমাকে দেখিয়ে দিল। ঢাকা থেকে ভুটান যেতে হাতের বাম পাশ থেকে দেখা যাবে। আর ফেরার পথে ডান পাশ থেকে। আমি গিয়ে আমার সিটে বসলাম। আমার সিটও বাম পাশে ছিল, উইন্ডো সিট। যদিও বিমানে যাত্রী অনেক কম ছিল, যে কোন জায়গায় চাইলেই বসা যেতো।
ট্যাক্সি ভাড়া না করে এয়ারপোর্ট থেকে পরে আমি হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদূর হাঁটার পরই একট্যা ট্যাক্সি পাশে এসে দাঁড়ালো। শেয়ার্ড ভাবে ৮০০ রুপি চাইলো থিম্পু যাওয়ার জন্য। আমি ৪০০ বললাম। শেষে রাজি হলো। প্রায় একটার দিকে থিম্পুতে পৌঁছালাম।
ভুটানের কারেন্সি হচ্ছে গুলট্রাম (ngultrum, nu)। ইন্ডিয়ান রুপি এবং গুল্ট্রামের মান একই। যে কোন জায়গায় একই সাথে ইন্ডিয়ান রুপি বা গুলট্রাম ব্যবহার করা যায়। ভুটান গিয়েই যেন মানি এক্সচেঞ্জের সমস্যা না পড়ি, তাই কিছু ইন্ডিয়ান রুপি নিয়ে গিয়েছিলাম।
পাহাড়ের পাশে দিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরে চলছি। পাহাড়ের কিছু কিছু অংশ এত সুন্দর, মনে হচ্ছিল কোন এক আর্কিটেক্টের ডিজাইনে সুন্দর করে তৈরি করা। কিছু কিছু এরিয়া গেম অফ থ্রোন্সের ড্রাগনস্টোনের মত।
থিম্পুতে পৌঁছানোর পরের কাজ হচ্ছে হোটেল খুঁজে নেওয়া। যেখানে ট্যাক্সি আমাকে নামিয়ে দিল, এখানেই প্রচুর হোটেল রয়েছে। এটাকে মিড টাউন বলে সম্ভবত। লা মেরেডিয়ানও ছিল আরকি পাশে। যদিও আমি সাধারণ একটা হোটেলে উঠলাম। নাম Hotel Ghasel, ৭৫০ রুপি একটা সিঙ্গেল রুম। এই হোটেলের বিশেষত্য হচ্ছে এদের রেস্টুরেন্ট পিউর ভেজ। আমরা যারা হালাল খাবার খুঁজি, তারা কোথাও ঘুরতে গিয়ে হালাল খাবার খুঁজে পেলে তো পেলেন। না পেলে ভেজ খাবার খুঁজে নিতে পারেন। ব্যাগ রেখে হোটেলের রেস্টুরেন্টে গেলাম। এরপর ভেজিটাবল ফ্রাইড রাইস আর একটা মিক্স ভেজ নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।
খাবার শেষে বের হয়ে পড়লাম ঘুরার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে একটা সিম কিনে নিলাম। সিম এবং ডাটা মিলে ২৫০ রুপির মত লেগেছে। সিম কিনতে পাসপোর্টের ফটোকপি লাগে।
হোটেলের পাশেই ন্যাশনাল মেমরিয়াল কর্টেন। কর্টেনের ভেতর ঢুকলাম। এখানে কর্টেনের চারপাশে হাঁটতে হাঁটতে তসবির মত কিছু পড়ে। একটা রুমে অনেক গুলো মোমবাতি জ্বালানো। এগুলো দেখে বের হলাম। চোখে পড়ল নোটিশ বোর্ড। বিদেশীদের জন্য ৩০০ রুপি এন্ট্রি ফি। আমি আমার ফেসকে ধন্যবাদ দিলাম। কারণ ওরা মনে করেছিল আমি ওদেরই একজন B)
কর্টেন থেকে বের হয়ে একটু হাঁটলাম। পরের গন্তব্য হচ্ছে বোদ্ধ পয়েন্ট। পাহাড়ি রাস্তায় কিছুক্ষণ হেঁটেই টায়ার্ড। ট্যাক্সি ডেকে ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম। বোদ্ধ পয়েন্ট পাহাড়ের অনেক উপরে। উপর থেকে থিম্পু শহরটা খুব সুন্দর করে দেখা যায়। খুব সাজানো একটা শহর। পরিস্কার, পরিপাটি। দেখতে সুন্দর লাগে।
বোদ্ধ পয়েন্টে বোদ্ধের একটা বিশাল স্ট্যাচু। নিচ থেকেই দেখা যাচ্ছিল। সোনালী। সূর্যের আলো পড়ে চক চক করছিল। এছাড়া চারপাশে আরো অনেক গুলো মূর্তি ছিল। সব গুলোই সোনালী। বোদ্ধের মূর্তির নিছে পার্থনাগার। ঐটার ভেতরে জুতা খুলে ঢুকতে হয় এবং ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ। বাহির যতটা না সুন্দর ভেতরটা আরো বেশি সুন্দর। ছোট ছোট অনেক গুলো বোদ্ধ মূর্তি রয়েছে ভেতরে। শোকেচে সাজানো। পুরো ইন্টেরিওর সোনালী। অন্য রকম সুন্দর।
বোদ্ধ পয়েন্টের পাশেই একটা পার্ক ছিল। পাহাড়ের আরেকটু উপরে। বেশি না, মাত্র ২৫০ মিটার উপরে। কিন্তু একটু হাঁটার পরই পুরো শরীর বেঁকে বসল, মাথা ব্যথা করতে লাগল। কিছুদূর গিয়ে আবার নিচের দিকে নামতে লাগলাম। নিচের দিকে নামা সহজ। ট্যাক্সি খুঁজতে ছিলাম। ট্যাক্সি না পেয়ে হেঁটে হেঁটে নামছিলাম।
নামার পথে ঐখানে একটা জায়গায় ব্যয়াম করার কিছু ইন্সট্রুমেন্ট আছে। দুই একজন ব্যয়ামও করছিল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। একটা গাড়িতে দেখলাম দুইজন মাত্র। লোকাল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের সাথে নামা যাবে কিনা। বলল যাবে। আমি গাড়িতে উঠে পড়লাম। ওদের সাথে একটু আধটু কথা হলো। ড্রাইভিং সিটে যে ছিল, উনি বলল উনার ভাতিজাকে ঘুরাতে নিয়ে এসেছে। ও গ্রাম থেকে এসেছে। আর উনার একটা বেকারি আছে এখানে, থিম্পুতে। এই তো। আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কোথায় উঠেছি। আমি হোটেলের নাম বললাম। বলল সেখান দিয়েই যাবে উনারা। পরে আমাকে নামিয়ে দিল।
পাশেই একটা একটা কফি শপ ছিল। ঐখানে গিয়ে চা এবং কিছু স্ন্যাক্স খেনে নিলাম। তারপর হোটেলে। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আমি আগের রাতে বলা যায় ঘুমাই নি। রেস্ট নেওয়ার দরকার হয়ে পড়ছিল। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। ৮টার দিকে হোটেলের কর্মী এসে জিজ্ঞেস করল ডিনার করব কিনা। আমি চিন্তা করলাম এই শীতের মধ্যে উঠে খাওয়ার থেকে না খেয়ে থাকা সহজ। বললাম না।
দ্বিতীয় দিন
ঘুম থেকে উঠে সকাল সাতটার দিকে একটু বের হয়েছি। তখন -২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাহিরে। আমি শরীরের সব অংশই বলা যায় ঢেকে বের হয়েছি। একটা জীবন্ত মমির মত। এরপরও তীব্র শীত লাগছিল। মনে হচ্ছিল বরফ হাতে ধরে রাখা আরো সহজ। বাহিরে মানুষও কম। দুই একজন এদিক সেদিক যাচ্ছে। গাড়িও দুই একটা। যে সব গাড়ি পার্ক করা, সেগুলোর উইন্ডশীল্ডে বরফ জমে আছে। আমি কিছুক্ষণ পরেই ফিরে এসেছি হোটেলে। এরপর নাস্তা খেয়ে রুমে গিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নিলাম।
৯টার দিকে বের হয়ে গিয়েছি ইমিগ্রেশন অফিসের দিকে। হোটেল থেকে ৮০০ মিটার এর মত দূরত্ব। হেঁটেই চলে গেলাম। ভুটানের পারো এবং থিম্পু ছাড়া অন্য কোথাও যেতে হলে স্পেশাল পাস লাগে। আর তা সংগ্রহ করতে হয় ইমিগ্রেশন অফিস থেকে। ওদের ঐখানে একটা ফরম আছে, ফরমটা পূরণ করতে হয়। পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসার ফটোকপি আর নো অবজেকশন লেটার লিখে জমা দেওয়ার পর বলল এক ঘন্টা পর আসতে। আমি চলে গেলাম দ্রুক এয়ারের অফিসে। এসবই কাছা কাছি জায়গায়।
আমার রিটার্ণ করার তারিখ ছিল ১০ তারিখে। ৬ তারিখে আসতে পারলে ১০ তারিখে ফিরলে দারুণ হতো। ৪ দিন ভুটান ঘুরার জন্য যথেষ্ট সময়। ৩ দিনেও ঘুরা যায়। কিন্তু ট্যুরিস্ট স্পট গুলো ঘুরতে সব কিছুতে তাড়াহুড়ো করতে হবে। আমার তাড়াহুড়ো করে ঘুরতে ইচ্ছে করছিল না। তাই ১০ তারিখের পরিবর্তে ১২ তারিখে রিটার্ণ করার প্ল্যান। ১১ তারিখে ফিরতাম যদি ফ্লাইট থাকত। সমস্যা হচ্ছে প্রতিদিন ভুটান থেকে ঢাকা যাওয়ার ফ্লাইট নেই। অফিসে যাওয়ার পর বলল ২০ ডলার ফি দিতে হবে তারিখ পরিবর্তন করতে হলে। ৪ দিন আগে পরিবর্তন করলে কোন ফি দিতে হতো না। আমি বললাম আমি তো চারদিন সময় পায়নি। এছাড়া বাংলাদেশে উইকেন্ড ছিল। ভুটান আসার পর এখানেও উইকেন্ড। কোন সুযোগ ছিল না। পরে ফি ছাড়াই ফ্লাইটের তারিখ পরিবর্তন করে দিল।
দ্রুক এয়ারের অফিস থেকে আবার ইমিগ্রেশন অফিসে ফিরে গেলাম। গিয়ে দেখি পাস রেডি। নিয়ে হোটেলে এলাম। ব্যাক প্যাক নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। গন্তব্য পুনাখা। এর আগে থিম্পু জং একটু দেখে যাবো। হোটেলের কাছেই। ৫০০ মিটারের মধ্যে। যাওয়ার পথে দেখলাম ট্রাকে বা গাড়িতে করে কমলা বিক্রি করে। দুইটা কমলা কিনে নিলাম। কমলা গুলো মিস্টি। খেতে দারুণ ছিল। জং এ স্থানীয়রা যেতে হলে ভুটানের ফরমাল ড্রেস পরে যেতে হয়। আমি দেখে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে।
ভুটান বড় বাস একটাও ছোখে পড়েনি। মাঝারি সাইজের বাস দেখলাম। আর রয়েছে প্রচুর ট্যাক্সি। বাস স্ট্যান্ড থেকে পুনাখার দিকে যাওয়ার একটি ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম। পুনাখা যাওয়ার রাস্তাটা বেশি সুন্দর। পাহাড় গুলোও সবুজ। চোখ জুড়ে যায়। সমস্যা হচ্ছে এত বেশি আঁকা বাঁকা রাস্তা যে, মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। সবার হয় কিনা জানি না, কিন্তু আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছিল। প্রায় দুই ঘন্টার মত জার্নি। আমি এক সময় ভাবা শুরু করলাম কখন শেষ হবে।
থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে দোচালা পাস (Dochula Pass) পড়ে। এখান থেকে ভুটানের সর্বোচ্চ পর্বত দেখা যায়। ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি এখানে নামব কিনা। আমি বললাম হ্যা। এখানে কিছুক্ষণ থেকে ছবি তুলে আবার রওনা দিলাম পুনাখার দিকে।
এরপর আরেক জায়গায় ট্যাক্সি থামালো। ছোট্ট একটা ইমিগ্রেশন অফিস। যেখানে আমার পাসটা দেখানোর পর পুনাখা যাওয়ার এন্ট্রি সীল মেরে দিল। পাশে রাস্তার উপর ফলের দোকান। আমি যাদের সাথে যাচ্ছিলাম, তাদের একজন আপেল কিনে নিল। মাত্র ১০ রুপিতে এক কেজি। আমরা চার জন যাত্রী। বাকিদেরকে একটা একটা করে আপেল দিল।
পুনাখা শহরটা অনেক নিরিবিলি। আসলে ভুটানটাই নিরিবিলি। কিন্তু পুনাখা আরো বেশি নিরিবিলি। মানুষ জন অনেক কম। হোটেলও দুই একটা মাত্র। একটা হোটেলে যাওয়ার পর দেখলাম সেখানে মিটিং হয়। আরেকটাতে গেলাম, সেখানে সিঙ্গেল কোন রুম নেই। ডাবল বেডের রুম আছে। এরপর অন্য আরেকটাতে আসলাম। এখানের সবই পারফেক্ট। Punakha Residency নামের হোটেল। থ্রি স্টার মানের হোটেল। ১৩০০ রুপি একদিন।
হোটেলে ব্যাক প্যাক রেখে ফ্রেশ হয়ে গেলাম কিছু খাওয়া দাওয়া করতে। খাওয়ার অনেক কিছু থাকলেও আমি স্যান্ডুইচ আর ডিম খেয়ে নিলাম। এরপর বের হলাম ঘুরতে। পুনাখা জং ঘুরতে যায় সবাই। আমিও গেলাম। ভুটানের এডমিস্ট্রেশন অফিসকে জং বলে। জং গুলো প্রায় সব গুলো একই ডিজাইনে তৈরি। জং এলাকা ঘুরার পর গেলাম সাসফেনশন ব্রিজ। আমরা ঝুলন্ত ব্রিজ নামে চিনি। অনেক বিশাল এ ব্রিজটি। এক পাশ থেকে অন্য পাশ পরিস্কার দেখা যায় না। ব্রিজে উঠে পুরা ব্রিজ কিছুক্ষণ নাড়ালাম। নাড়ানো সহজ। দুই পা দুই দিকে দিয়ে একবার এক পায়ে ভর দিলেই আস্তে আস্তে নড়া শুরু হবে। সাথে লোকাল দুই জনও যোগ দিল।
পুনাখা জং এর এখানে একটা ব্রিজ আছে। ব্রিজ থেকে নিচে তাকালে নদীতে অনেক মাছ দেখা যায়। নদীতে পানি খুবই কম। শীতকাল, তাই হয়তো। পানি কম হওয়া সত্ত্বেও নদীতে প্রচুর মাছ। অনেক বেশি। আমাদের দেশে কোন পুকুরে মাছ চাষ করলে যেমন দেখা যায়, তেমন। ভুটানে কোন প্রাণী হত্যা নিষেধ। মাছও। তারা মাছ, মাংশ ইত্যাদি ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসে।
ঘুরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যা হলো। ফিরে এলাম হোটেলে। আস্তে আস্তে শীত বাড়ল। বাহিরে আর যেতে ইচ্ছে করছিল না। হোটেলের ওয়াইফাই দিতে বললে আমাকে বলল Please don’t share। আমি বললাম আমি শেয়ার করব না। আবার বলল please don’t share। আমি আবারও একই কথা বললাম। এরপর বলল পাসওয়ার্ডটাই হচ্ছে please don’t share। এরপর ল্যাপটপে এটা সেটা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
তৃতীয় দিন
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিলাম। হোটেলের রেস্টুরেন্টেই। নয়টার দিকে বের হলাম পুনাখার আশে পাশে দেখার জন্য। পুনাখা এলাকাটি সুন্দর। পুনাখা টাউনের পাশ দিয়েই একটা নদী বয়ে গিয়েছে। নদীতে পানি কম। শীত কাল বলেই। পানি আসে ঝর্ণা থেকে। শীত কালে ঝর্ণা গুলোতে পানি কম। তাই নদীতেও পানি কম। নদীর তলদেশ দেখা যায়। অনেক গুলো পাথর। পরিস্কার সাদা পাথর।
হোটেলে ফিরলাম ১১টার দিকে। চেকআউট করে রওনা দিলাম থিম্পুর দিকে। লোকাল ট্যাক্সিতে করে।
থিম্পু থেকে পুনাখা বা পুনাখা থেকে থিম্পু যাওয়ার রাস্তাটা সুন্দর। পাহাড় গুলো গাছে ভর্তি। সবুজ। রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে ফল এবং সবজি বিক্রি করতে দেখা যায়। আপেল, কমলা আর বিভিন্ন সাক সবজি। রাস্তায় বানর হাঁটতে দেখা যায়। দেখা যায় পাহাড়ি গরু। গরু গুলো নিজের মত করে এদিক সেদিক যায়। ধরার মত কেউ নেই। কারণ তো এর আগে বললাম, ভুটানে কোন প্রাণীই হত্যা করা হয় না।
ছোট ছোট কিছু ঝর্ণা চোখে পড়বে পথে। যেগুলোর বেশির ভাগই জমে গিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তুষার পড়ে রয়েছে।
থিম্পু এসে এরপর রওনা দিলাম পারোর দিকে। থিম্পু প্রথম বার এসে ভালো লেগেছিল। পুনাখা ঘুরে আসার পর কেমন জানি গিঞ্জি গিঞ্জি লাগছিল। কারণ পুনাখায় এখনো তেমন একটা বসতি নেই। অল্প কিছু ঘর বাড়ি, যেগুলো পাহাড়ের সাথে মানিয়ে গিয়েছে।
থিম্পু থেকে পারোতে যাওয়ার পাহাড় গুলোতে গাছ গাছাড়ি কম দেখা যায়। ছোট ছোট ঘাসের মত কিছু লতা পাতা রয়েছে, যার বেশির ভাগই শুকিয়ে রয়েছে। শীত কাল বলে হয়তো। আর পুনাখার দিকে এখনো সব কিছু সবুজ। পাহাড় জুড়ে গাছ গাছাড়ি।
কেন জানি আমার মাথা ব্যথা করছে সারাক্ষণ। পাহাড়ী রাস্তায় জার্নি করার কারণে নাকি বুঝতে পারছি না। পারো এসে হোটেল খুঁজে নিলাম। কয়েকটি হোটেলেই গেলাম, কোনটাতেই সিঙ্গেল বেড বা সিঙ্গেল কোন রুম খুঁজে পাই নি। ৮০০ রুপিতে একটা হোটেলে উঠলাম পরে। Hotel Lhaki Yangchak নামে। নরমালি ১৫০০ রুপি প্রতি রাত। সিঙ্গেল হওয়ার কারণে ছাড় পেয়েছি। হোটেলটা সুন্দর। রুমের ইন্টেরিওর পুরাটা কাঠের। কাঠের হওয়াতে ঠান্ডা একটু কম।
হোটেলে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। খেতে হবে। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেয়ে নিলাম। এরপর রুমে এসে ঘুম।
চতুর্থ দিন
সূর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে জেগেছি। কিন্তু বাহিরে ঠান্ডা, এ জন্য আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। উঠলাম ৮টার দিকে। টাইগার নেস্টে যাবো। এর আগে খেতে হবে। কিন্তু রেস্টুরেন্ট দুই একটাতে গিয়ে দেখি এখনো বন্ধ। হোটেলের রেস্টুরেন্টে সম্ভবত খেয়ে নিলে ভালো হতো। একটা জেনারেল স্টোর থেকে দুইটা কলা নিয়ে খেয়ে নিলাম। এরপর ট্যাক্সি একটা নিয়ে রওনা দিলাম টাইগার নেস্টের দিকে।
ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল বসন্তে ভুটান আরো সুন্দর দেখায়। কারণ তখন চারদিকে ফুল ফোঁটে।
ট্যাক্সি ভাড়া নিলো ৩৫০ রুপি। যতটুকু পর্যন্ত গাড়িতে যাওয়া যায়, সেখানে নামিয়ে দিল। এরপর বাকি পথ ট্র্যাকিং করে যেতে হবে। টাইগার নেস্টে যেতে তিন ঘণ্টা এর মত ট্র্যাকিং করতে হয়। আমি অনেক ট্র্যাকিং করেছি। তিন ঘন্টার বেশিও করেছি। তাই ভাবলাম এ আর এমন কি!
নিচ থেকেই টাইগার নেস্ট দেখা যাচ্ছিল। পাহাড়ের অনেক উপরে। নিচ থেকেই বুঝা যাচ্ছিল অনেক হাঁটতে হবে। এখানে ঘোড়া পাওয়া যায়। অর্ধেকের মত পথ ঘোড়া দিয়ে যাওয়া যায়। ভাবলাম হেঁটেই যাই। কিছুদূর যাওয়ার পরই টের পাচ্ছিলাম কষ্ট হচ্ছে। মাথা ব্যথাও ফিরে এসেছে। তখনো অর্ধেকেও যাওয়া হয়নি। ক্যাফেটেরিয়া একটা রয়েছে যাওয়ার পথে। যা অর্ধেক দূরত্ত্বে। এখনো অর্ধেকেও পৌছাতে পারিনি, কিন্তু শরীর এখনই বেঁকে বসেছে! হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে না। হাঁটতে লাগলাম। ক্যাফেটেরিয়া দেখে সেখানে গিয়ে কফি এবং বিস্কিট খেয়ে নিলাম। এরপর আবার হাঁটা শুরু করলাম।
কিছুক্ষণ হাঁটার পরই নিজের হৃদস্পন্দন শোনা যায়। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা বা ধীরে ধিরে হাঁটা, এভাবেই উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চোখে পড়ল। নানা বৈচিত্রময়।
পথে বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে দেখা হচ্ছে। কারো কারো সাথে একটু একটু কথাও হচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে কাছা কাছি চলে এসেছি। অনেক কাছেই টাইগার নেস্ট দেখা যাচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে এত কাছে থেকেও সেটি অনেক দূরে। কারণ এবার নিচে নামতে হবে এবং আবার উপরে উঠতে হবে। এবার হাঁটা একটু সহজ। কারণ সিঁড়ি করে দেওয়া আছে। এখানে একটা ঝর্ণাও রয়েছে। ঝর্ণা থেকে পানি পড়ে বরফ হয়ে রয়েছে। উপর থেকে মাঝে মাঝে জমে থাকা বরফও পড়ছে।
টাইগার নেস্টে ঢুকতে টিকেট লাগে। ৫০০ রুপি। আর টিকেট কাটটে হয় একবারে নিচে, যেখান থেকে ট্র্যাকিং শুরু করা হয়। আমার টিকেট কাটা হয়নি। এত দূর এসেছি এখন টাইগার নেস্ট না দেখেই ফিরে যাবো? সব জায়গাতেই করাপ্টেড পুলিশ আছে। বালিতে দেখলাম করাপ্টেড পুলিশ। এখানেও দেখলাম। এরা বলল ৫০০ রুপি দিলে টিকেট দিবে। টিকেট ঠিকই দিলো। কিন্তু আগে যারা যাচ্ছিল, তাদের কারো কারো কাছ থেকে টিকেট রেখে সেগুলোই আবার যারা আমার মত টিকেট কেটে আসেনি, তাদের কাছে বিক্রি করছিল।
টাইগার নেস্টের এখানে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। ইলেক্ট্রিক কিছু নিয়ে প্রবেশও নিষিদ্ধ। লকার ছিল। লকারে ক্যামেরা এবং মোবাইল রেখে তারপর টাইগার নেস্টের দিকে গেলাম। এখানে কয়েকটা মন্দির রয়েছে। অনেকে পূজাও করছিল। এগুলো দেখলাম। এরপর গেলাম টাইগার নেস্টে। টাইগার নেস্ট মূলত একটা গুহা। গুহার ভেতরে ঢুকলাম। গুহার এক পাশ দিয়ে পাহাড় থেকে বের হওয়া যায়। বের হওয়ার ঐখানে গেলাম। পারাসুট থাকলে একটা জাম্প দেওয়া যেতো। পুরা খাড়া পাহাড়।
দেখে ফেরার পথ ধরেছি। ফিরতে আগের থেকে কষ্ট কম হচ্ছিল। পাহাড়ে উঠা থেকে নামা তুলনা মূলক ভাবে সহজ। আমি অনেক ঘুরেছি। অনেক ট্র্যাকিং করেছি। ট্র্যাকিং করা সব সময়ই কঠিন। কিন্তু আজ একটু বেশি কষ্ট হয়েছে। ঠান্ডা ছিল। শুরুর দিকে ঠান্ডা লাগলেও পরে আর ঠান্ডা লাগে নি।
ক্যাফেটেরিয়াতে লাঞ্চ করা যায়। বুফ্যে লাঞ্চ। আমার হাতে সময় থাকায় আমি শহরে এসে লাঞ্চ করব ভেবেছি। এছাড়া খাওয়া দাওয়া করে হাঁটতেও কষ্ট হওয়ার কথা। তাই আর সেখানে লাঞ্চ করা হয়নি। আমি শহরে পৌঁছেছি ৩টার দিকে। ৮টা থেকে – ৩টা। ভালোই এডভেঞ্চার হলো।
হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম লাঞ্চ করার জন্য। এখানে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেয়ে নিলাম।
পঞ্চম দিন
ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিলাম। এরপর পারো টাউনের এদিক সেদিক ঘুরে দেখলাম। হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের কাছে চলে আসায় হোটেলে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। এরপর দুপুরের দিকে আবার বের হলাম। প্ল্যান হচ্ছে ভুটানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম দেখতে যাওয়া। গুগল ম্যাপে সার্চ করে দেখি অল্প কিছু দূর মাত্র। তা ফলো করে যেতে যেতে দেখি আমি রাস্তার মাঝ খানে। মিউজিয়াম দূরের কথা, দুই পাশে কিচ্ছু নেই। যা বুঝলাম, গুগল ম্যাপের উপর সর্বদা ভরসা করতে নাই।
যাই হোক লোকাল একজনকে জিজ্ঞেস করার পর দেখিয়ে দিল। ঐ তো দেখা যায়। একটু হাঁটলেই পৌছে যাবো চিন্তা করে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে গিয়ে বুঝলাম যতটুকু কাছে দেখা যায়, আসলে তত কাছে নয়। পাহাড়ের উপর। এঁকে বেঁকে উঠতে অনেক সময় লাগল। পথে পারো জং পড়বে, পারোর এডমিস্ট্রেশন ভবন। রাতের বেলা এই জং এবং মিউজিয়াম দুইটাতেই লাইটিং করা থাকে। দূর থেকে সুন্দর লাগে।
সর্টকার্ট একটা রাস্তা ধরে এগুচ্ছিলাম। পাশে লোকাল ঘড় বাড়ি। সারা ভুটান অনেক কুকুর চোখে পড়বে। এ কয়েক দিন দূর থেকে দেখতাম কুকুরে কুকুরে মারা মারি করত। দূর থেকে ঘেউ ঘেউ করত। এখন লোকাল বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার কারণে এদের পালিত কুকুর গুলো যে ভাবে ঘেউ ঘেউ করে উঠে, তা ভয় পাওয়ার মত।
মিউজিয়ামের ঐখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। যেখান থেকে পারো টাউনের বার্ড আই ভিউ দেখা যায়। ছোট্ট একটা শহর। পাশ দিয়ে একটি পাহাড়ী নদী বয়ে গিয়েছে।
মিউজিয়ামে ঢুকে টিকেট কেঁটে নিলাম। ২৫ রুপি। মিউজিয়ামে রয়েছে অনেক ধরণের মাস্ক, ভুটানের বিভিন্ন প্রাণী, কিছু আর্ট ইত্যাদি। ছোট্ট একটা মিউজিয়াম। দেখে বের হয়ে আবার রওনা দিলাম পারো টাউনের দিকে।
সেলিম ভাইরাও ভুটান ঘুরতে এসেছিল কাল। কাল পারো থেকে থিম্পু গিয়েছিল। আজ আবার পারোতে ফিরে এসেছে। পারোতে একই হোটেলেই উঠেছে। দেখা হলো উনাদের সাথে।
পুরো ভুটানের সব গুলো বাড়ি প্রায় একই রকম। ওদের জং গুলোও একই রকম। বড় কোন বিল্ডিং চোখে পড়ে না। দুই একটা ছাড়া আর সবই ৩-৪ তলার মত। পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ার পরেও রাস্তা ঘাট অনেক উন্নত। শহরের ভেতরে যেন জ্যাম না হয়, সে জন্য রাস্তা গুলো সুন্দর ভাবে ডিজাইন করা। আর রাস্তাতে পার্কিং করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে, বাংলাদেশে আমরা যা চিন্তাও করতে পারি না।
ভুটানে পাঁচ দিনের মত। আজ প্রথম সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুত যেতে দেখলাম। ২০ মিনিটের মধ্যেই যদিও চলে এসেছে।
আমাদের হোটেলের আন্ডার গ্রাউন্ডে পার্টি হচ্ছিল। দেখতে গেলাম। ভুটানিজ গানের সাথে ভুটানিজ নাচ নাচছিল। অল্প কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছি। সকাল ৫টায় উঠতে হবে। তাই একটু আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফেরা
এলার্ম দিয়ে রেখেছি ৫টার দিকে। অন্য কোন দিন সাধারণত এক ঘুমেই রাত পার হয়ে যায়। আজ কিছুক্ষণ পর পরই ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘড়ি দেখি, আবার ঘুমাই। এভাবে করতে করতে ৫টার দিকে উঠে ফ্রেস হলাম। বের হতে হতে ৫.৩৫।
বাহিরে বের হয়ে দেখি একটা ট্যাক্সিও নেই। ট্যাক্সি আছে, কিন্তু ড্রাইভার নেই আরকি। পুরা শহর কেমন নিস্তব্দ। কুকুর গুলো কিছুক্ষণ পর পর ঘেঁউ ঘেঁউ করে উঠছিল। হাঁটা শুরু করলাম। ৬ কিলো মিটারের মত দূরত্ব। চিন্তা করলাম ট্যাক্সি পথে পেলে তো ভালো, না পেলে হেঁটেই পৌঁছানো যাবে। একজন দেখলাম জগিং করতে। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম এয়ারপোর্টে যাওয়ার ট্যাক্সি এখন কোথায় পাওয়া যাবে। পথ দেখিয়ে দিয়ে বলল এখানে দাঁড়ালে পাওয়া যাবে। শীতে দাঁড়িয়ে থাকলে জমে যেতে হবে। এয়ারপোর্ট রোড ধরে হাঁটতে লাগলাম। উনিও ঐ পথে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বলল আর দশ মিনিট হাঁটলেই এয়ারপোর্ট। উনি পথ দেখিয়ে দিতে লাগল।
এয়ারপোর্ট ম্যাপে ৬ কিলোমিটার দেখালেও এখানে একটা সর্টকার্ট রয়েছে। আমাকে পথ দেখিয়ে দিল। ঐ পথ ধরে উনিও দেখলাম হাঁটছে। কিছুক্ষণ হাঁটারপরও এয়ারপোর্ট দেখা গেলো। বললাম আমরা এয়ারপোর্ট পৌছে গিয়েছি। উনি বলল, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করলাম আপনি কোথায় যাচ্ছেন। বলল উনি এয়ারপোর্টে কাজ করেন। যে জিনিসটা আরো আগে জানতে পারলে চিন্তা মুক্ত থাকা যেতো।
এয়ারপোর্টে সাড়ে ৬.১৫ এর দিকে পৌছে গিয়েছি। হাতে তখনো অনেক সময় ছিল। চেকইন, বোর্ডিং পাস, আবার চেকইন ইত্যাদি শেষ করে এরপর দেশে ফেরার অপেক্ষা।
ভুটান সুন্দর। অনেক ভালো লেগেছে ঘুরে। ভুটানিজরা তাদের প্রকৃতিকে ধরে রেখেছে। এক এক ধর্মের মানুষ এক এক জিনিস পূজা করে। মনে হচ্ছিল ভুটানিজরা পূজা করে তাদের পরিবেশকে। ভুটান ঘুরে ভালো লাগলেও আমি আমাদের দেশের খাবার অনেক মিস করছিলাম। সকালে নাস্তা করিনি, আসলে নাস্তা করার সুযোগও ছিল না। প্ল্যান ছিল ঢাকায় ফিরে নাস্তা করব। কিন্তু আমার প্ল্যান ভেস্তে গেলো যখন দেখলাম ফ্লাইট একটু পর পর ডিলে হয়। আকাশে প্রচুর কুয়াশা। ৭.৪০ এ ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। প্রথমে ৩০ মিনিট ডিলে হয়েছে। এভাবে করতে করতে প্রায় ১০.২০ এ বিমানে উঠি আমরা। ভুটানের আকাশ পরিষ্কার হলেও ঢাকার আকাশে তখনো কুয়াশা, তাই দেরি হচ্ছিল।
বিমান উড়ার পর চিন্তা করলাম, যাক, দেরি হলেও এখন আর চিন্তা নেই। এবার ঠিক ঠিক মত ঢাকায় পৌঁছাতে পারলেই হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে ঢাকার দিকে যেতে লাগলাম আমরা।ঢাকার কাছা কাছি আসার পর পাইলট সাব জানালো এয়ারপোর্টে প্রচুর ট্রাফিক। কুয়াশার কারণে যে বিমান গুলো ল্যান্ড করতে পারেনি, আকাশ পরিষ্কার হওয়ার পর সব গুলো একে একে ল্যান্ড করছে। তাই। এয়ারপোর্ট থেকে ৬০ কিলো দূরে বিমান আকাশে হোল্ড করে রেখেছে অনেক্ষণ।
প্রায় ৩০ মিনিট পর আমরা ল্যান্ড করলাম। ল্যান্ড করেও বসে থাকতে হলো। কারণ সিঁড়ি লাগানো হয়নি। এছাড়া এয়ারপোর্টের সব গুলো বাস ব্যস্ত। এখানেও ৩০ মিনিটের মত অপেক্ষার পর বিমান থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেলাম। এরপর ইমিগ্রেশনের জন্য গেলাম। এত বেশি মানুষ এয়ারপোর্টে আর কখনো দেখিনি। সব গুলো বিমান এক সাথে ল্যান্ড করার কারণে ইমিগ্রেশনে অনেক ভিড়। এখানেও অনেক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হলাম এয়ারপোর্ট থেকে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে সব সুস্থ ভাবে সুন্দর ভাবে ফিরতে পেরেছি।
ভুটানের দুইটা জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমার যাওয়া হয়নি। একটা হচ্ছে চেলে লা পাস (Chele La Pass), আরেকটা হচ্ছে Haa Valley। চেলেলা পাস হচ্ছে হা এর কাছা কাছি, যেখান থেকে এভারেস্ট দেখা যায়। এটি হচ্ছে ভুটানের সবচেয়ে উঁচু রোড। আর হা হচ্ছে ভুটানের আরেকটা জেলা। পারোর কাছা কাছিই। পারো থেকে দুই ঘন্টার দূরত্ব। হা ভ্যালিতে যেতে হলেও পাস লাগে। পাস নিয়েও রেখেছি। সময়ও ছিল যাওয়ার মত। কিন্তু শরীরের কথা চিন্তা করে আর যাইনি। ইনশাহ আল্লাহ আবার কখনো ভুটান গেলে এই দুই যায়গায় আগে যাওয়ার চেষ্টা করব।
ভুটান ভ্রমণের আরো কিছু ছবি দেখা যাবে ফেসবুক অ্যালবামে।
ভুটানের পাশা পাশি আরো দুই একটা দেশে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। সে ট্যুর গুলো সম্পর্কে জানা যাবে নিচের লেখা গুলো থেকেঃ
বালি ভ্রমণ নিয়ে লেখাতে টোটাল খরচের একটা বিবরণ ছিল ভাই! এটাতে সেরকম কিছু পেলাম না। 🙁 তাছাড়া বাদ বাকি সব ঠিক আছে! সম্ভব হলে আপডেট করে দিবেন আশাকরি! 😀
এয়ার টিকেট ১৮,০০০ রুপির মত। আর ঘুরাঘুরি, হোটেল, খাওয়া দাওয়া সব মিলে মাত্র ১০,০০০ রুপির মত।
“এয়ারপোর্ট থেকে ৬০ কিলো দূরে বিমান আকাশে হোল্ড করে রেখেছে অনেক্ষণ” এটা বুঝিনি ভাই।
খরচ পাতি কেমন লাগল ভাই?
ভাই, দুঃখিত এই পোস্টে অন্য টপিক নিয়ে কথা বলায়।
“লো কনফিগারেশনের(১জিবি র্যাম) লেপটপ দিয়ে এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপ করার সফটওয়্যার ‘এন্ড্রয়েড স্টুডিও এবং JDK’ ব্যবহার করে হাই কোয়ালিটি অ্যাপ ডেভেলপ করা যাবে??”