প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এই পানাম নগর। পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। এই শহরটি সত্যিকার অর্থেইধংস হয়ে যাচ্ছে। ৬০০ মিটার জুড়ে এই শহর। এর ভেতর দিয়ে রাস্তা রয়েছে যেখান দিয়ে লোকাল মানুষ যাতায়াত করে। আর এতে যে কেউই প্রবেশ করতে পারে। যে কেউই প্রবেশ করে নষ্ট করে দিচ্ছে এই প্রাচীন শহরটিকে। সিকিউরিটি থাকলেও অতটা কঠিন নয়। মনে হয়েছে ঐ সিকিউরিটি কোন কাজেরই না।
পানাম নগর নারায়ণগঞ্জ জেলার, সোনারগাঁতে অবস্থিত। ঢাকা থেকে খুব কাছেই। ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটারের মত দূরত্ব। মঙ্গলবার ঘুম থেকে উঠে বাইক নিয়ে রওনা দেই পানাম নগরের উদ্দেশ্যে। প্রায় এক ঘন্টা পর পৌঁছে যাই পানাম নগরে। প্রথমেই চোখে পড়বে একটা ভাস্কর্যে পানাম নগর সম্পর্কে কিছু তথ্য। আমি নয়টার দিকে পৌঁছাই। তখনো টিকেট কাউন্টার খোলা হয়নি। ঐখানের সিকিউরিটিকে আমার বাইক সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য এবং এন্ট্রি ফি হিসেবে ৮০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করি। যদিও লোকাল যে কেউই পানাম নগরের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে পারে।
পানাম নগরে ঢুকলেই চোখে পড়বে প্রাচীন বাড়ি গুলো। কোনটার দরজা নেই। কোনটার জানালা নেই। দেয়াল গুলো খঁসে পড়ছে। বেশির ভাগ বাড়িই দোতলা। একতলা এবং তিনতলা বাড়িও রয়েছে। উঠার সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ি গুলো অনেক সরু। বাড়ির ভেতরে রুম গুলো অনেক পেছানো। এক রুমের দরজা এক এক দিকে। ধাঁধার মত মনে হবে। টয়লেট, পানির কুয়া সবই রয়েছে। এক সময় যা রাজধানী ছিল, এখন তা পরিত্যাক্ত। বাড়ি গুলো এমন অরক্ষিত দেখে খারাপ লাগল। প্রায় ৫০০ বছর আগে এসব বাড়ি তৈরি করা হয়েছে তখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে। চিন্তা করা যায়?
পানাম নগরে কিছুক্ষণ থেকে বের হলাম। পাশেই হচ্ছে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর। এই যাদুঘরটি অনেক বিশাল এরিয়া জুড়ে। যাদুঘরে রয়েছে হাতের কাজের বিভিন্ন জিনিস পত্র। আগের মানুষেরা কত নিঁখুত ভাবেই না হাতেই সব কিছু তৈরি করত। নকশি কাঁথা, বিভিন্ন আসবাব পত্র, গয়না সহ বিভিন্ন জিনিস। তিন তলা জুড়ে যাদুঘরটি।
যাদুঘর এরিয়াটা খুব সুন্দর। অনেক নিরিবিলি। প্রিয় কাউকে নিয়ে ঘুরে আসার জন্য দারুণ একটা যায়গা। ভেতরে রয়েছে অনেক গুলো স্টল। খাবার স্টলের পাশা পাশি রয়েছে শাড়ির স্টল। রয়েছে একটা বিশাল লাইব্রেরীও। লাইব্রেরীটা অনেক সমৃদ্ধ। প্রচুর বই রয়েছে লাইব্রেরীতে। বেশির ভাগই বাংলায়। বাংলা ভাষা কত সমৃদ্ধ। আরেকটু কাছে হলে নিয়মিত গিয়ে পড়া যেতো। চারপাশ ঘুরে এক সময় বের হয়ে আসি। রওনা দেই নিজ বাসার উদ্দেশ্যে।