আরেকটি ঢাকা – চটগ্রাম – কক্সবাজার সেলফ ড্রাইভ ট্যুর

বেশি দিন হয়নি যে কক্সবাজার সেলফ ড্রাইভ করে ঘুরে এসেছি। কোন প্ল্যান ছাড়া হুট করে আবারও ঘুরে এলাম কক্সবাজার থেকে। এবার সাথে অনেকেই ছিল। আমাদের আসলে প্ল্যান ছিল ৬ তারিখে জিনাইদাহ যাওয়ার। পদ্মা সেতুতে এখনো যাওয়া হয়নি। ভাবলাম ঐ দিক থেকে ঘুরে আসি। অনিবার্য কারণে ট্যুর ক্যানসেল হয় ৫ তারিখ সন্ধ্যায়। ইতি মধ্যে সবাই ট্যুরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। সবাই মিলে প্ল্যান করছিলাম কই যাওয়া যায়। কেউ বলল শ্রীমঙ্গল, কেউ বলল চট্রগ্রাম, কেউ বলল উত্তরবঙ্গের দিকে কোথাও। শেষ পর্যন্ত সীদ্ধান্ত হলো চট্রগ্রাম।

নতুন করে ট্যুর প্ল্যান করে ঘুমুতে যাবো, তখন রাতের ১০টায়। নিউজ দেখলাম তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ১২টা থেকে কার্যকর। বর্তমানে অকটেনের দাম ছিল ৮৯ টাকা প্রতি লিটার। দাম বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৩৫ টাকা প্রতি লিটারে। প্রায় ৫২% দাম বাড়ানো হয়েছে। চোখ থেকে ঘুম উদাও। আমার জানা মতে কোন দেশেই হুট করে এত বেশি ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়নি। এই ফুয়েলের দামের সাথে সাথে সব কিছুর দাম হুহু করে বেড়ে যাবে। এসব ভেবে কি যে খারাপ লাগছিল। সোশাল মিডিয়ায় সবার রিয়েকশন পড়লাম। ঘুমুতে ঘুমুতে রাত ১টা বেজে গেলো।

সকাল ৬টায় রওনা দেওয়ার কথা। এর আগেই উঠে রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। গাড়িতে ফুয়েল নেওয়া ছিল না আগে। ফুয়েল নিলাম। ১৩৫ টাকা প্রতি লিটারে। নতুন প্রাইসে।

আমরা সবাই মিলিত হলাম মর্নিং সান নামে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। ঢাকা চট্রগ্রাম হাইওয়ের প্রথম মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে। ট্যুর প্ল্যান অনেকে মিলেই করেছি। শেষ পর্যন্ত যে কয়জন টিকল, তারা হচ্ছে ফয়সাল ভাই, রহিত ভাই ও উনার ফ্রেন্ড, ইমরান ভাই, বুলবুল ভাই। মোট চারটা গাড়ি। সবাই মিলে মর্নিং সানে বসে নাস্তা করি। এরপর একবার কুমিল্লা, একবার ফেনি থেমে চা খেয়ে নেই। প্রায় একটার দিকে আমরা চট্রগ্রাম পৌঁছাই। প্রথমে আমরা যাই ভাটিয়ারীতে। এখানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করি। ভাটিয়ারী অসম্ভব সুন্দর একটি যায়গা। কি যে ভালো লাগে আমার এই যায়গাটা। যতবার চট্রগ্রাম গিয়েছি, বেশির ভাগ সময়ই এখান থেকে ঘুরে এসেছি। ভাটিয়ারীতে ভালো রেস্টুরেন্ট নেই। দুপুরের খাবার খেতে হবে। কিছুক্ষণ রেস্টুরেন্ট খুঁজলাম, এরপর না পেয়ে চলে যাই বারকোড জংশনে। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল। পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে। বারকোডের মেজবানে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। এরপর চা কফি খেয়ে আস্তে ধীরে নেভালের দিকে যাই সবার থেকে। নেভালের দিকে যাওয়ার রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকে। অন্য আরেকটা রোডেও যাওয়া যায় যদিও। গুগুলে জ্যাম যেটায় বেশি, ঐটাই সাজেস্ট করছিল। জ্যামের কারণে নেভালে যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

ভাটিয়ারী

নেভালের ভিউ অসাধারণ। কত গুলো জাহাজ। কি যে ভালো লাগে দেখতে। ঐখানে পুরাটা বলা যায় একটা পর্যটন স্পট। নদীর পাড়ে চেয়ার দেওয়া। সবাই বসে দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। টুকটাক খাওয়া দাওয়াও করতে পারে। আমরা বসে বসে পেঁয়াজু খেলাম। এরপর কিছুক্ষণ বসে রওনা দিলাম আবার চট্রগ্রাম শহরের দিকে। গন্তব্য ছিল রয়াল হাট। প্রথম যে বার চট্রগ্রাম গিয়েছিলাম, ঐবার রয়াল হাটে সন্ধ্যায় চিকেন বারবিকিউ খেয়েছি, তার স্বাধ এখনো মুখে লেগে আছে। এরপর কয়েকবারই গিয়েছি, আগের মত টেস্ট পাইনি। এবার আবার দেখলাম খুবি ভালো করেছে। চিকেন চাপ খেয়েছিলাম এবার, দারুণ লেগেছে।

রয়াল হাটে কিছুক্ষণ থেকে আমরা গেলাম হোটেলে। হোটেল আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। রয়াল হাটে বসেই ঠিক করা হয়েছে। রাতে ঘুমিয়ে সকালে আবার কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান। এই কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যানও হুট করে।

সকাল ৬টার মধ্যেই আমরা বের হয়ে পড়ি হোটেল থেকে। এরপর রওনা দেই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। পথে রোডভিউ রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করি খিঁচুড়ি দিয়ে। অসাধারণ লেগেছে ওদের খাবার। এরপর আবার রওনা দেই। কক্সবাজার রোডে অনেক গুলো বাজার পড়ে। সব গুলো বাজারে অনেক সময় লেগেছিল পার হতে। বেশির ভাগ কারণ হচ্ছে বাজারের উপরে অটো, বাস, মিনিবাস গুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছিল।

প্রায় দেড়টার দিকে আমরা কক্সবাজার পৌঁছাই। এরপর হোটেলে উঠি। হোটেল আমিন ইন্টারন্যাশনালে উঠি আমরা। এটা ডলফিন মোড়ের পাশেই। হোটেলে ব্যাগ রেখেই চলে যাই সমুদ্রে। অনেকক্ষণ সাঁতার কেটে ফিরে আসি। ফ্রেস হয়ে এরপর চলে যাই শালিক রেস্টুরেন্টে। দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। ঐখানে সাইফুল ভাই ওদের সুন্দর করে সব করে দিতে বলল। সত্যি সত্যিই সব অনেক সুন্দর ভাবেই করে দিল।

খাওয়া দাওয়া করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমরা এরপর বীচে গিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর রুমে এসে ঘুম।

সকালে একটু দেরি করেই উঠেছি। বৃষ্টি হচ্ছিল। আস্তে ধীরে উঠে নাস্তা করে নিলাম। এরপর চলে গেলাম মেরিন ড্রাইভে। কিছুক্ষণ হিমছড়িতে, কিছুক্ষণ কাঁকড়া বীচ, এরপর কিছুক্ষণ ছিলাম পাতুয়ারটেক বীচ। এই পাতুয়ারটেক বীচ রয়েল টিউলিপেরও পরে। ঐখানে যাওয়ার পর গাড়ী পার্ক করার সাথে সাথে একজন এসে বলল পার্কিং চার্জ দিতে। কোথাও উল্লেখ নেই যে এটা পেইড পার্কিং জোন। রাস্তার পাশের যায়গা। কেমন জানি সব কিছু থেকে চাঁদা নেওয়া শুরু হলো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় যে নিশ্বাস নিচ্ছি, পারলে তার চাঁদা দিতে হচ্ছে, এমন একটা ব্যপার!

কাঁকড়া বীচ

আমরা মেরিন ড্রাইভ থেকে ফিরে আবার সমুদ্রে নামি। সি বাইকে রাইড দেই। বড় বড় ঢেউয়ের মধ্যে কি যে থ্রিল লেগেছিল যে দুইবার রাইড দেই। কিছুক্ষণ সমুদ্রে থেকে ফিরে আসি হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে যাই। সেই শালিকে। এরপর সন্ধ্যায় সবাই মিলে বীচ পাড়ে একটা রেস্টুরেন্টে কফি খাই। এরপর হাঁটাহাঁটি করি।

সকালে ঢাকার দিকে ফিরব। তাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল ৬টার দিকে আমরা রওনা দেই ঢাকার উদ্দেশ্যে। সকালের নাস্তা করি ফোর সিজন রেস্টুরেন্টে। কুমিল্লায় জায়ান্ট মার্কেটার্সে মাসুম ভাই উনার অফিসে যেতে বলল। সবাই মিলে দুপুরের খাবার উনার অফিসে বসে খাই। হান্ডি বিরিয়ানি অর্ডার দেয় উনি। অসাধারণ ছিল খাবার। খাওয়া দাওয়া করে আমরা শালবন বিহারের দিকে যাই। যেতে যেতে যদিও দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই ঠিক মত কিছু দেখতে পারিনি। ড্রোন থাকায় সব বন্ধ হওয়ার পরও আকাশ থেকে সব দেখা নিতে পারছি, ছবি তুলতে পারছি। ফ্রি ফ্রি, হে হে!

ফোর সিজন রেস্টুরেন্টের পাশের ড্রোন ভিউ
শাহ আমানাত ব্রিজ এর পাশে
শাহ আমানাত ব্রিজ
শালবন বৌদ্ধ বিহার
শালবন বিহার

কুমিল্লায় সবার থেকে বিদায় নিয়ে যে যার মত করে বাসায় ফিরি। আমাদের বাসায় ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে দশটা বেজেছিল। আলহামদুলিল্লাহ, সুন্দর মতই বাসায় ফিরতে পেরেছি।

কক্সবাজারের ড্রোন ভিউঃ

1 thought on “আরেকটি ঢাকা – চটগ্রাম – কক্সবাজার সেলফ ড্রাইভ ট্যুর”

Leave a Reply