গাজীপুর বেজক্যাম্প রিসোর্টে একদিন

গত বছর বলা যায় এই সময় আমরা সবাই মিলে গাজীপুর বেজক্যাম্প রিসোর্ট থেকে ঘুরে আসি। ঐটা ছিল ডে ট্যুর। এক্টিভিটি করেছিলাম সবাই মিলে। তো সে বারের এক্সপেরিয়েন্স খুবি ভালো থাকায় ভাবলাম আবারো ঘুরে আসি বেজক্যাম্প থেকে। এবারের প্ল্যান ছিল রাতে থাকা সহ।

পরিচিত ভাই ব্রাদার যারা যাবে, তাদের নিয়ে প্ল্যান। ইনিশিয়াল প্ল্যান ছিল ১৫ জনের মত যাওয়া। এরপর বাড়তে বাড়তে প্রায় ২২ জন হয়েছে। ফ্যামিলি সহ। বেজক্যাম্পে মেসেজ দিয়েছি জন প্রতি কেমন খরচ হবে। তারা জানালো 3995টাকা করে। ওদের অনেক গুলো প্যাকেজ আছে। কিছু হচ্ছে ডে ট্যুরের জন্য, কিছু রাতে থাকার জন্য, কিছু এক্টিভিটি সহ, কিছু এক্টিভিটি ছাড়া।

ফোন দেওয়ার পর ইমরান নামে একজন ধরল। জানালাম আমাদের প্ল্যান। আমি কোথায় থাকি জিজ্ঞেস করল। বললাম বসুন্ধরায় থাকি। উনি বলল সরাসরি কথা বললে সুবিধে হতো। আমাকে সব বুঝিয়ে বলতে পারবে। উনি জানালো পরের দিন বসুন্ধরা আসবে, প্লেপ্যান স্কুলে। আমি বললাম আসলে কল দিতে। উনি দুপুরের দিকে কল দিল। আমরা অ্যারাবিকায় কফি খেতে খেতে আলোচনা করলাম। বিকেলে আমাকে কোটেশন পাঠালো। বলল টাকা এডভান্স করলে আমাদের বুকিং কনফার্ম হবে। উনি থাকে আবার ধানমন্ডি। আমাদের সাথে যাবে ফয়সাল ভাই। উনাকে বললাম যেন কিছু টাকা দিয়ে দেয়।

বুকিং এর টাকা পাওয়ার পর আমাকে মেইল করে। আমাদের ১০% কর্পোরেট ডিসকাউন্ট দিবে। এর ফলে জন প্রতি খরচ হবে ৩৬০০ টাকা করে। মি. ইমরান আমাকে জানায় যে ট্যুরের আগের দিন এক্স্যাক্ট কাউন্ট জানতে।

ট্যুরের আগের দিন শনিবার আমাকে উনিই ফোন করে জিজ্ঞেস করে আমরা কতজন যাবো। আমি বললাম উনি বলছিল কথা বুঝা যাচ্ছে না, তাই sms করতে। sms করলাম। এরপর ফোনেও একটু কথা হল কয়জন যাচ্ছি এসব নিয়ে। এরপর লাইন কেটে দেওয়ার পর মনে পড়ল আরো দুই একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার দরকার ছিল। কল দিলাম, ফোন কেটে দিয়েছিল। ভাবলাম ব্যস্ত। সন্ধ্যার দিকে আবার ফোন দেই। ফোন ধরল না। রাত সাড়ে আটটার দিকে আবার দিলাম, তাও ফোন ধরে না। আমার সাথে মিজান ভাই ছিল। উনিও যাবে। উনাকে বললাম ভাই, আপনার নাম্বার থেকে একটু ফোন দিয়ে দেখবেন ফোন ধরে কিনা। উনার নাম্বার থেকে ফোন দেওয়ার পর সাথে সাথেই ফোন ধরল। এক মিনিট পরই। মিজান ভাই আমাকে ফোন দিল কথা বলার জন্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমার ফোন ধরা হচ্ছিল না কেন। উনি মিজান ভাইকে বলল উনি ইমরান। পরে আমার কথা শুনে উনি আরেকজন হওয়ার ভান করল। বলল উনি ইমাম! বললাম এমন আনপ্রফেশনাল বিহেবিয়ার আশা করিনি। অনেক কথাই হলো। উনি নিজের আনপ্রোফেশনালিজমকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করল।

পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আমরা বের হই ঢাকা থেকে। সাভার হয়ে বেজক্যাম্পের দিকে যাই। পথে একটা রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করে নেই। সাড়ে দশটার দিকে বেজক্যাম্পে পৌঁছাই। বেজক্যাম্পে পৌঁছালে আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংস হিসেবে জিরা পানি দেওয়া হয়। এরপর আমাদের ক্যান্টিন এবং টেন্ট দেখিয়ে দেয়, যেখানে আমাদের জন্য হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। কলিজা সিঙ্গারা, চা/কফি আর বিস্কিট। টেন্টে ব্যাগ রেখে আমরা নাস্তা করে নিলাম।

নাস্তা করে আমরা নিজেদের মত খেলা ধুলা করলাম। প্রথমে খেললাম সাতচাড়া। ঢাকা থেকে সাতচাড়া কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। সবাই যেন শৈশবে ফিরে গিয়েছি, এমন ভাবে খেলেছি সবাই। এরপর কিছুক্ষণ ফুটবল খেললাম। ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পুকুরে গোসল করতে নামলাম। পুকুরে নেমে আবার আমরা বোম্বাস্টিক খেললাম। কেউ কেউ কায়াকিং করছিল।

গোসল করে ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। ওদের মেন্যু গতবারের মতই সেইম। আমরা একটু কাস্টোমাইজ করতে চেয়েছিলাম। শুধু চিকেনের পরিবর্তে মাটন যুক্ত করতে বলেছি, বলল ৪০০টাকা এড হবে এক্সট্রা। তাই আর যুক্ত করিনি। খাবারের মেন্যুঃ

বেজক্যাম্প খাবার মেন্যু
সাতচাড়া
সাতচাড়া খেলা হচ্ছে
পুকুর পাড়ে আমরা

 

 

পুকুরে গোসল

 

 

 

খাবারের টেস্ট কেন জানি এবার ভালো লাগেনি। ব্রয়লার মুরগি রান্না করে দিয়েছিল। আমাদের সাথের কেউই সম্ভবত ব্রয়লার মুরগি খেয়ে অভ্যস্ত না। বেগুন ভাজি সাধারণত একটু শুকনা শুকনা হয়ে থাকে। গোল গোল করে কাটা হয়। এবার বেগুন ভাজি গুলো একটার থেকে একটা থেকে আরেকটা আলাদা করা যায়নি। না হয়েছে ভর্তা, না হয়েছে ভাজি। ভাত যদিও খুবই ভালো চালের দিয়েছিল। শুধু ভাত তো আর খাওয়া যায় না!

খাওয়া দাওয়া করে আমরা পুকুর পাড়ে ওদের একটা ট্যারেসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই। এরপর রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট করলাম। বিকেলে আর্চারি করলাম সবাই। সন্ধ্যার দিকে আমাদের বিকেলের স্ন্যাক্স দিয়েছিল। স্যুপ এবং পটেটো ওয়েজেজ। স্যুপটা ভালো থাকলেও পটেটো ওয়েজেজটা খুব একটা ভালো ছিল না। খাওয়া দাওয়া করে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। কেউ যদি একজন দুইজন যায়, তাহলে পুরাপুরি বিরক্ত হয়ে যাবে এখানে আসলে। আমরা পুরো গ্রুপ যাওয়াতে খুবি এঞ্জয় করছিলাম। আসলে আমরা সবাই মিলে যে কোন এক জায়গায় বসতে পারলেই আড্ডা জমে উঠে। এটা সম্ভবত সব গ্রুপের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সাড়ে নয়টার দিকে আমাদের রাতের খাবার সার্ভ করা হয়েছিল। পরোটা, চিকেন বারবিকিউ, মাটন কারি। মাটন কারি আফগানি স্টাইলে রান্না করেছিল। যেটার সাথে আমরা আসলে পরিচিত না। যেখানে মসলার ব্যবহার কম, ঝাল কম। খেতে মিষ্টি মিষ্টি। চিকেন বারবিকিউটা ভালোই ছিল বলতে হয়।

বেজক্যাম্প ক্যান্টিন

খাওয়া দাওয়া করে আবার আড্ডা। আমাদের সাথের টীপু ভাই আখ এনেছিল বাজারে গিয়ে। বসে বসে আখ খেলাম। গল্প করলাম। প্রায় ১২টার দিকে আমি ঘুমাতে গেলাম। বাকিরা তখনো আড্ডা দিচ্ছিল। আমাদের ঘুমানোর জন্য ছিল ৪টা টেন্ট। প্রতি টেন্টে ছিল ৬ জনের জন্য বেড। যদিও সবাই মিলে এক টেন্টে আড্ডা দিতে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ছিল।

টেন্টে দিনের বেলায় প্রচুর গরম ছিল। টেন্টে থাকাই মুশকিল হচ্ছিল। রাতে বৃষ্টি হওয়াতে গরম লাগেনি খুব একটা। মশা এবং পিঁপড়া অনেক জ্বালাতন করেছে। ভোর রাতে আমি ঘুম থেকে উঠি। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন টেন্টের বাহিরে এসে বসি। অনেক ভালো লাগছিল। আমার সাথে মিজান ভাই এবং ইমরান ভাই (আমাদের ইমরান, ম্যানেজারটা না😛 ) এসে বসছিল। কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম, উপভোগ করলাম স্নিগ্ধ সকাল। এরপর আবার ঘুমাতে গেলাম।

রাতের বেজক্যাম্প
রাতে বেজক্যাম্পের ড্রোন ভিউ

 

ঘুম থেকে সাড়ে আটটার দিকে উঠলাম। আমাদের নাস্তা সার্ভ করছিল ৯টার দিকে। পরোটা, ডাল, ডিম এবং চা/কফি। ডালের সাথে মুরগি থাকবে বলছিল। যদিও আমি মুরগি খুঁজি তি তি …। খুঁজে পাইনি।

আমাদের গাড়ি বহর

খাওয়া দাওয়া করে বিল পে করে বের হয়ে পড়লাম বেজক্যাম্প থেকে। ওদের সার্ভিস এবং একোমোডেশন ভালো না থাকলেও আমরা সবাই মিলে নিজেদের মত করে সময় গুলোকে ইনজয় করেছি। ট্যুর ভিডিওঃ

1 thought on “গাজীপুর বেজক্যাম্প রিসোর্টে একদিন”

Leave a Reply