নারায়নগঞ্জের একটি উপজেলা হচ্ছে আড়াইহাজার। এটি ন্যাচারালি এবং হিস্টোরিক্যালি খুবি সমৃদ্ধ একটি এরিয়া। বাইক নিয়ে ঘুরতে চলে গেলাম। বসুন্ধরা রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া থেকে কাছেই। ৩৫ কিলোমিটারের মত দূরত্ব। পূর্বাচল রোডের পর বাকি রোড গুলোর অবস্থা তেমন একটা ভালো না। এছাড়া গুগলে যে রোড দেখাচ্ছিল, সে রাস্তার কাজও চলছিল। সব বন্ধ। তাই অন্য রোড ধরে যেতে হয়েছে। মানুষকে জিজ্ঞেস করতে করতে এক সময় পৌঁছে গেলাম আড়াই হাজার। সবাই অনেক ফ্রেন্ডলি। সুন্দর ভাবে সুন্দর ভাবেই পথ দেখিয়ে দিল।
বেশির ভাগ প্রধান রাস্তার কাজ হওয়ায় কাঁচা রাস্তা ধরে চলতে হচ্ছিল। বাইক নিয়ে এর আগেও কাঁচা রাস্তায় ট্যুর দিয়েছি। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি। পুরা একালায়তেই অনেক গুলো মিল। বেশির ভাগই দেখলাম টেক্সটাইল মিল। একটা মিলে ঢুকে দেখলাম কিভাবে কাপড় তৈরি হয়। এরপর চলে গেলাম গোপালদী।
গোপালদী জমিদার বাড়ি বা সদাসদী জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়িতে এক সময় জমিদার থাকলেও এখন থাকে কিছু সাধারণ মানুষ। কিছু কিছু ঘর ভেঙ্গে গিয়েছে। যে গুলো ভালো, সেগুলোও যে কোন সময়ই ভেঙ্গে পড়বে। তারপরও এই বাড়ি গুলোতে কিভাবে এরা থাকে, জানি না! এখন কিছু হিন্দু পরিবার থাকে এই বাড়ি গুলোতে। তারা এই গুলোতে ভাড়া থাকে। মালিক অন্য কেউ। এই বাড়ি গুলো আমাকে দেখাচ্ছিল নূরুল ইসলাম নামে একটি ছেলে। একটা বাড়ি দেখার পর জিজ্ঞেস করলাম আর আছে? বল আছে, ঐ দিকে। ভূঁঞা বাড়ি। আমি বললাম আমার সাথে যাবে? সে রাজি হলো। এরপর বাড়ি গুলো, কোন জায়গা দিয়ে ছাদে উঠতে হয় এসবই দেখাচ্ছিল। দেখা শেষে যখন ছেলেটিকে একটি দোকানের সামনে এনে বললাম কি খাবে? বলল কিচ্ছু না। বললাম কিছু একটা খাও। এরপর একটা আইস্ক্রিম নিল। বললাম আর কিছু? বলল একটা চিপস। ছেলেটিও খুশি। আমিও।
জমিদার বাড়ির সামনে বাইক রাখার পর একটি মেয়ে বলল আপনার বাইকটা খুব সুন্দর। আমি জিজ্ঞেস করি আমি সুন্দর না? বলে না 🙁
জমিদার বাড়ি দেখে চলে গেলাম বিশনন্দী ফেরীঘাটের দিকে। মেঘনা নদীর পাড়ে। অনেক মানুষ আসা যাওয়া করছে নৌকায় করে। ফেরিও রয়েছে। ইচ্ছে ছিল নদীর অপর পাড়ে যাওয়ার। কিন্তু রাতে না ঘুমানোর কারণে খুব একটা ভালো লাগছিল না। তাই রওনা দিলাম ঢাকার দিকে।এক জায়গায় দেখলাম আনারস বিক্রি করছে। আনারস ছিলে লবন মরিচ দিয়ে দিচ্ছে। অনেক মিষ্টি। খেতে দারুণ লেগেছিল। ফেরার পথে দেখলাম অনেক রঙ্গিন কাপড়। রোদে শুকানো হচ্ছে। নতুন কাপড়। কিছু কিছু জায়গায় দেখলাম খুব নোংরা পানিতে কাপড় গুলো পরিস্কার করা হচ্ছে।
একটা ছোট্ট পুকুরে কিছু ছেলে গোসল করতে ছিল। আমার হাতে ক্যামেরা দেখে আরো অনেক গুলো ছেলে দৌঁড়ে আসল। এরপর ওদের মত করে নাচতে শুরু করল। যখন দেখল যারা পানিতে, তাদের ছবি তুলছি, তখন বাকিরা সবাই প্যান্ট খুলে পানিতে নেমে পড়ল। কি যে উত্তেজনা তাদের মধ্যে। দুনিয়ার কোন কিছুই তাদের এখনো স্পর্শ করেনি। তাদের সব কিছুই ভালো লাগে। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। দুপুর বেলা সারাক্ষণ এমন পানিতে পড়ে থাকতাম। কি যে ভালো লাগত। কিছুক্ষণ পর দেখলাম এক লোক এসে ওদের দৌঁড়ানি দিল। কারণ জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম পুকুরের পাড় ভেঙ্গে পড়ার কারণেই গোসল করতে দিচ্ছে না ছোট ঐ বাচ্ছা গুলোকে। ওরা পরে আমার বাইকে কাছে আসল। এক সাথে ছবি তুললাম। এরপর রওনা দিলাম নিজ বাড়ির দিকে।
আড়াইহাজার আরো কিছু জমিদার বাড়ি আছে। সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি ইত্যাদি। আপনারা গেলে এগুলোও দেখে আসতে পারেন। এছাড়া নদী পার হয়ে চর গুলোও দেখতে পারেন।
আপনার অনেক সময় লেগেছে। আমার লেগেছে ৬ মিনিট(পড়তে)।
পিচ্চিগুলো!! hahaha