স্টোইসিমজ এবং শান্ত থাকা

স্টোইসিমজ কেন জানি ভালো লাগে। আগে থেকেই ভালো লাগত। পৃথিবীতে এত বেশি ক্যাওজ, এত বেশি অপশন। বেশি অপশনের কারণে মনে হয় আমার কাছে যা আছে, তাই মনে হয় খারাপ, বাকি সব ভালো।

আবার সোশাল মিডিয়ার কারণে আমাদের সামনে সবাই ভালোটাই শো করে। কেউ তার খারাপ অংশ বা দুঃখ গুলো কমই শেয়ার করে বা দুঃখ গুলো আমাদের দৃষ্টি তেমন ভাবে আকর্ষন করতে পারে না যেমন পারে সুখ গুলো। আর এসব ক্ষেত্রে মনে হয় যে আমিই সবচেয়ে খারাপ আছি। আমার থেকে বাকি সবাই কত ভালো আছে। সবাই কত সুখে আছে। সবাই কত শান্তিতে আছে।

এসব ক্যাওজ যখন নিজেকে বিষণ্ণ করে তোলে, তখন স্টোইক ফিলোসফারদের কথা গুলো শুনলে কি যে ভালো লাগে। যে কোন সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে গেলেই তারা বলবে, মেনে নাও। মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আসলে তেমন কিছু করারও থাকে না। কোন কিছু করতে গেলে সমস্যা আরো বাড়তেই থাকে।

সুখে থাকার জন্য সত্যিকার অর্থে তেমন কিছুই লাগে না। সুখে থাকার জন্য যা কিছু আমাদের দরকার, তা আমাদের মধ্যেই থাকে। অথচ আমরা সুখ খুঁজে ফিরি অন্যদের কাছে। ভাবি অন্য সবাই আমাদের সুখী করতে পারবে। কিন্তু পারে কি? Marcus Aurelius নামক একজন গ্রেট স্টোইক ফিলোসপার বলছিলেন

“Almost nothing material is needed for a happy life for he who has understood existence”

অথচ তিনি ছিলেন রোমের সম্রাট। উনার কোন কিছুরই তো অভাব ছিল না। সুখে থাকার জন্য বেশি কিছুও লাগে না। কিন্তু আমাদের সিস্টেমটা এমন ভাবে তৈরি করা যে প্রতিনিয়ত আমাদের বুঝানো হয় ঐ জিনিসটা হলে আরেকটূ সুখে থাকা যাবে। এভাবে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে আমরা আমাদের চারপাশ পূর্ণ করি। অপ্রয়োজনীয় জিনিস গুলো পাওয়ার জন্য নষ্ট করি প্রয়োজনীয় সময় গুলো। গ্রেট Seneca বলেছেন

“Until we have begun to go without them, we fail to realise how unnecessary many things are. We’ve been using them not because we needed them but because we had them.”

এই ফিলোসপাররা অনেক আগের। প্রায় ২০০০ বছর আগের। তখনকার সময় কেমন ছিল, একটু আধটু ইতিহাস থেকে বুঝতে পারি। কিন্তু কথা গুলো আমার কাছে মনে হয় তখনকার থেকে এখন আরো বেশি প্রযোজ্য।

চারপাশের জিনিস গুলোকে আমরা কি খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? পারি না। আমরা যা পারি, তা হচ্ছে চারপাশের জিনিস বা ঘটনা গুলোতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে ঐ জিনিস গুলো বা ঘটনা গুলোকে কিভাবে নিব। আমরা যদি ভাবতে থাকি আমাদের সাথে সব কিছু নিজ ইচ্ছে মত হবে, তখন আমরা আসলে অসন্তুষ্টই থেকে যাবো। কারণ সব কিছুকে তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা যতটুকু পারি, তা হচ্ছে কোন কিছু নিজ ইচ্ছে মত না হলেও তা মেনে নিতে। আর মেনে নিতে পারলেই সুখী না হলেও অন্তত আমরা অসুখী হব না।

আমরা অনেকেই ভাবি সফলতা পেলেই আমরা সুখী হব। কিন্তু সত্যিকারের সফলতা কি? জানতে চেয়েছি কখনো? কখনো ভেবেছি? আমরা এই ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ডে যা কিছুই পাই না কেন, আরো বেশি করে সব পেতে চাইবো। প্রতিটা ধাপেই সফলতার সংজ্ঞা পরিবর্তন হবে। আর তাই সত্যিকারের সফলতা কখনোই খুঁজে পাবো না। সত্যিকারের সফলতা হচ্ছে যে কোন পরিস্থিতিতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। এক্সট্রারনাল জিনিস পত্র দিয়ে নিজের হ্যাপিনেস পরিমাপ না করা।

একটি ঘটনা থেকে আমরা তাই নিতে পারি, যা আমরা নিতে চাই। পজিটিভ কিছু নিতে চাইলেও পারি, নেগেটিভ কিছু নিতে চাইলেও পারি। পুরোটাই নির্ভর করে আমাদের নিজেদের ফোকাসের উপর। কোনটাতে আমরা ফোকাস করব, তার উপর। এটা নিয়ে উইলিয়াম শেক্সপিয়র এর একটা বাক্য খুব সুন্দর।

“There is nothing either good or bad but thinking makes it so.”

আমরা কিভাবে চিন্তা করব, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। আর সব কিছু সহজ ভাবে নিতে চাইলে স্টোইক লাইফ লিড করা থেকে ভালো কিছু আর হতে পারে না। যদিও তা এত সহজ না। আমাদের চারপাশ আমাদের সর্বদা বলতে থাকে, তোমার এটা নেই, ঐটা নেই। তখন কার না ইচ্ছে করবে সব কিছু পেতে? সবারই করে বা করবে। সব কিছু পেলেও মনে হয় না আমরা সুখে থাকতে পারব। কারণ তখন অন্য কোন কিছুর অভাব আমাদের সামনে হাজির হবে। একটা লুপ। এই লুপ হতে বের হওয়া যেমন সহজ, তেমন কঠিন। সব কিছুই নিজের উপর নির্ভর করে। এটাকে অনেকে ইঁদুর দৌঁড়ও বলে। আমরা সবাই দৌঁড়াচ্ছি। জানিনা এর শেষ কোথায়।

2 thoughts on “স্টোইসিমজ এবং শান্ত থাকা”

  1. কেন জানেন না এই তো জানা হয়ে গেল যার যা আছে বা থাকবে তারপর ও চেষ্টা করে এর চেয়ে ভালো থাকতে এভাবেই প্রতিটা প্রজন্মা করতে করতে লুপের ভিতর ঘুরবে। শেষ মেষ মৃত্যু এসে থেমে যাবে হয়ে যাবে অন্য ইতিহাস এভাবেই তো। জীবনের লুপ।

    Reply

Leave a Reply