সেলফ ড্রাইভ করে কুয়াকাটা ভ্রমণ

মাঝে মাঝে ভাল্লাগেনা রোগ হলে আমাদের ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে তেমনি একটা ভাল্লাগেনা রোগ পেয়ে বসেছে আমাদের। ভাবলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কুয়াকাটা অনেক দিন যাওয়া হয়নি। ভাবলাম কুয়াকাটা থেকেই ঘুরে আসি। বুধবার রাতেই আমরা বের হয়ে পড়ি। তখন রাত প্রায় একটা। গাড়ি নিয়ে রওনা দেই মাওয়ার দিকে। মাওয়া ঘাটের ফেরি চলাচল আপডেট পাওয়ার জন্য ফেসবুকে সার্চ করি। ফেসবুকের একটা গ্রুপে দেখলাম রাতে ফেরি চলাচল করে। বসুন্ধরা থেকে মাওয়া যেতে বেশি সময় লাগেনি আমাদের। বলা যায় দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছি।

মাওয়ার রাস্তার কথা কি বলব। এর আগেও কয়েকবার এসেছি। কি যে ভালো লাগে মাওয়া রোডে ড্রাইভ করতে। মাওয়াতে পৌঁছাই প্রায় তিনটার দিকে। ফেরিতে উঠার জন্য লাইন খুঁজে লাইনে দাঁড়ালাম। কুয়াকাটা এর আগে একবার এসেছি বাইক নিয়ে। তখন গ্রুপে আসার কারণে নিজে কিছুই করতে হয়নি। সবাই যে দিকে যাচ্ছিল, আমিও সে দিকে। কোথায় কি হচ্ছিল, কোন কিছুর খরব রাখতে হয়নি। এবার নিজে নিজে আসার কারণে জানতে হচ্ছে কোথায় কিভাবে যেতে হবে। এমনকি জানতাম না ফেরির জন্য কোথায় লাইনে দাঁড়াতে হয়।

ফেরির জন্য লাইনে দাঁড়ানোর পর দেখলাম এক ঘণ্টা পর দুই একটা গাড়ি যেতে দেয়। আমার সামনে এমন না যে অনেক গুলো গাড়ি। অল্প কয়েকটা গাড়ি। এরপরও ফেরিতে উঠতে পারিনি। অনেকে লাইন ছাড়াই নিজ নিজ ক্ষমতার বলে চলে যাচ্ছিল। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইন এগোয় না। কারণ অনেক ভিয়াইপি, ট্রাক এসবকে যেতে দেয়। টাকা খেয়ে অনেককে ছেড়ে দেয়। ছোট ছোট ফেরি আসে। যেগুলোতে অল্প কয়েকটা গাড়ি এবং ট্রাক উঠলেই পূর্ণ হয়ে যায়। তো আমরা যারা লাইনে দাঁড়িয়েছি, তাদের অপেক্ষা শেষ হয়না।

রাতের তিনটার দিকে ফেরি ঘাটে গেলেও ফেরিতে উঠার সুযোগ পাই সকাল আটটার দিকে। আমার ধারণা ছিল না যে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তাহলে ঘুম দিতাম একটা। যদিও নাঈমা ঘুমিয়ে নিয়েছে কিছুক্ষণ। গাড়ির পেছনের সিট ফোল্ড করার ফলে বেডের মত স্পেস হয়ে গিয়েছিল। বাসা থেকে ক্যাম্প বেড এবং একটা ছোট কম্বল নিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুমানোর সুন্দর ব্যবস্থা।

ফেরিতে গাড়ি নিয়ে যারা চলাচল করেন, তারা হয়তো বুঝে থাকবেন যে গাড়ির কোন না কোন ক্ষতি হয় ফেরিতে উঠলে। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে ফেরি ছাড়ার সময় ফেরি বেঁধে রাখার মোটা তার যখন ফেরিতে রাখছে, তখন তা এসে লেগেছে গাড়ির কিটে। স্ক্রেচ পড়ে গিয়েছে ঐখানে। যে লোক ঐ তারটা ফেলছিল, উনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম একটু সাবধানে তারটা রাখতে পারেনি? স্ক্রেচ ফেলে দিলেন তো। উনি বলল আপনারা তো কত দাগ ফালান। এটা কিছু না! উনার মুখে এটা শুনার পর আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি! মানে আমরা ড্রাইভ করতে গিয়ে এক্সিডেন্টলি স্ক্রেচ ফেলি, এ জন্য উনিও ফেলতে পারবে!

আগে তো কয়েকবারই ফেরি পদ্মা ব্রিজের পিলারে ধাক্কা দেওয়ার নিউজ আমরা শুনেছি। ফেরি পদ্মা ব্রিজের নিচ দিয়ে খুব সাবধানে চলছিল। খুব স্লো ভাবে যাচ্ছিল পদ্মার নিচ দিয়ে। প্রায় এক ঘণ্টা পরে অপর পাড়ে গিয়ে উঠলাম। উঠার পর যখন আবার মেইন রোডে উঠলাম, কি যে ভালো লাগছিল। এত সুন্দর রাস্তা। গাড়ি রেখে নিজেই কিছুক্ষণ গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছিল! ভাঙ্গা পর্যন্ত আমরা এমন সুন্দর রাস্তায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখানে এক জায়গায় টোল তুলছিল। রাস্তা এখনো চালু হয়নি। এরা অবৈধ ভাবেই টোল তুলছিল। ভাঙ্গা থেকে বরিশালের দিকে ঢুকলাম। বরিশালের রাস্তাও যথেষ্ট ভালো। যদিও দুই লেনের। মাঝে কোন ডিভাইডার নেই। পদ্মা ব্রিজ চালু হওয়ার কথা এই বছরের জুনের দিকে। এরপর এই রোড মনে হয় না মানুষের চাহিদা মেটাতে পারবে। বরিশালের পথে এক জায়গায় থেমে আমরা হালকা নাস্তা এবং চা খেয়ে নিয়েছি।

রাস্তায় বাস গুলো কি যে বেপরোয়া চালায়। বাংলাদেশের কয়েক জায়গায়ই সেলফ ড্রাইভ করে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সব গুলো রুটের সেইম অবস্থা। বাস ড্রাইভাররা অন্য গাড়ি গুলোকে সাইড না দিয়ে, ব্রেক না করেই ড্রাইভ করতে থাকে। আমরা সর্বোচ্চ যা করতে পারি তা হচ্ছে নিজ থেকে ব্রেক করে এক পাশে সরে যাওয়া। জানি না সব সময় এভাবে বেঁচে যেতে পারব কিনা। আল্লাহ যেন আমাদের এই বেপরোয়া ড্রাইভ থেকে হেফাজতে রাখেন।

১২টার দিকে একটা ফুয়েল স্টেশনে থেমে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। দুই ঘণ্টার ভালো ঘুম হয়েছে। তখনো বরিশাল থেকে প্রায় ৫০ কিলো দূরে। দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি। এ দিকে কোন রেস্টুরেন্ট চোখে পড়েনি। ভাবলাম বরিশাল গিয়েই খাবো। বরিশাল কিং নামে একটা রেস্টুরেন্টে থামলাম। অর্ডার দেওয়ার পর ওরা ওয়েলকাম ড্রিংস দিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর খাবার আসল। খুব সুন্দর এবং টেস্টি ছিল খাবার। খেয়ে দেয়ে আবার রওনা দিলাম।

বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার রাস্তাও ভালো। একেবারে সোজা রাস্তা বলা যায়। বাঁক খুবি কম। বেপরোয়া বাস গুলো না থাকলে ড্রাইভ করে খুব মজা পাওয়া যেত। এরপরও শুকরিয়া। অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর ব্রিজ এই রোডে। ব্রিজের সাথে আরেকটা জিনিস ফ্রি। তা হচ্ছে টোল। টোল দিতে দিতে ফতুর হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় যেতে মনে হচ্ছিল ফুয়েল খরচ থেকে টোল খরচ বেশি!

পায়রা সেতু
পায়রা সেতু

বরিশাল থেকে পটুয়াখালী যেতে সুন্দর একটা ব্রিজ আছে। পায়রা ব্রিজ। যদিও এটা শাহ আমানত ব্রিজের মত করে তৈরি করা। এরপরও ভালো লাগে দেখতে। এছাড়া অন্যান্য ব্রিজ থেকে কি যে সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। অনেক গুলো নদী আছে। একটা নদীর নাম হচ্ছে সন্ধ্যা। সুন্দর নাম।

 

আসরের নামাজের পর আরো একটা ফুয়েল স্টেশনে থেমে ৪০ মিনিটের মত ঘুমিয়ে নিলাম। এরপর মাগরিব পড়ে রওনা আবার রওনা দিলাম। কুয়াকাটা পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেলো। পলাশ নামে এক ভাই আছে এখানে। উনাকে ফোন দিলাম। উনি এসে উনাদের হোটেলে নিয়ে গেলো। রুম দেখে আমরা বের হয়ে পড়লাম বীচের উদ্দ্যেশে। অনেক পর্যটক এখানে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট অনেক ছোট একটা যায়গা। এই ছোট জায়গায় মানুষ গিজ গিজ করছিল। কারণ বৃহস্পতিবার। বুধবার ছুটি ছিল। এই সুযোগে অনেকেই ঘুরতে এসেছে।

হাঁটতে হাঁটতে বারবিকিউ মার্কেটের দিকে এলাম। জিরোপয়েন্ট থেকে বীচে নামলে হাতের ডান দিকে পড়ে। নাঈমার ক্র্যাব খেতে ইচ্ছে করছিল। ফ্রেস দেখে একটা দোকানে অর্ডার দিলাম। ক্র্যাব বারবিকিউ করে দিলে ভেতরের মাংস ঝর ঝরে থাকে। খেতে মজা লাগে। এরা ভেজে দিয়েছে। মাংস খোলসের সাথে আটকে গেছে। বের হতে চায় না। এরপরও যতটুকু পারল খেয়ে নিল। কেউ যদি এরপর ক্র্যাব খেতে চান, তাহলে বারবিকিউ করে দিতে বইলেন। ভেজে খাওয়া থেকে ভালো হবে। প্রথম যে বার কুয়াকাটা এসেছিলাম, সে বারও ক্র্যাব খেয়েছি আমরা। তখন মাছের দোকান ছিল দুই একটা। এখন অনেক গুলো দোকান এখানে। ক্র্যাব খাওয়ার পর ভুট্টা এবং ঝালমুড়ি খেয়েছি। ভুট্টা আগুনে পুড়ে কি সুন্দর মসলা এবং লেবু মেখে দিয়েছে। খারাপ লাগেনি খেতে।  আমরা বীচের পাড়ে এরপর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে রুমে ফিরলাম। সারাদিনের জার্নির কারণে খুব সহজেই ঘুম চলে এলো।

ভোর ছয়টার দিকে উঠলাম সূর্যদয় দেখতে যাবো বলে। রেডি হয়ে বের হলাম। একটু বের হওয়ার পরই দুইটা বাইক এলো। জিজ্ঞেস করলাম সূর্যদয় স্পটে কত টাকা নিবে। বলল ৭৫ টাকা করে। দুইটা বাইক নিলাম। ওদেরকে একটা বাইকে যেতে বললাম। আমি আর নাঈমা আরেকটা বাইকে। ঐখানে গিয়ে দেখলাম প্রচুর ট্যুরিস্ট। সবাই এই শীতের ঘুম বাদ দিয়ে সূর্যদয় দেখতে গিয়েছে। বের হওয়ার সময় দেখলাম প্রচুর কুয়াশা। আগে থেকেই জানতাম সূর্যদয় সুন্দর মত দেখা যাবে না। এরপরও ঘুরার জন্য যাওয়া। একটু পর বাইকওয়ালা এসে বলল ওদের টাকা দিতে। আমি এর আগে দেই না ভাবলাম ওদের সাথে আবার ফিরে যাবো। আমি দুই জনের ১৫০ টাকা দেওয়ার পর ওরা বলল ৩০০ টাকা দিতে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? বলল যে এক বাইকে ওরা দুইজন করে উঠায়। তাই এক বাইক ১৫০টাকা করে দিতে হবে। যে জিনিসটা ওরা বাইকে উঠার সময় বলেনি। কেমন খারাপ লাগল।

সূর্যদয়ের ঐখানে অনেক গুলো দোকান আছে। প্রথম বার যখন কুয়াকাটা এসেছি, তখনো এমন সূর্যদয় দেখতে গিয়েছি। তখন শুধু একটা টং ছিল। যেখানে লাল চা আর হালকা বিস্কিট পাওয়া যেত। এখন মানুষ বাড়ছে। দোকান বাড়ছে। আমরা একটা দোকানে গিয়ে পিঠা খেলাম। গরম গরম খেতে ভালোই লাগছিল।

কুয়াকাটা পশ্চিম বীচ
কুয়াকাটা পশ্চিম বীচ

কুয়াকাটা বেড়ি বাঁধ
কুয়াকাটা বেড়ি বাঁধ

এরপর আবার রওনা দিলাম জিরো পয়েন্টের দিকে। আসার সময় দুইজনের মাত্র ৮০টাকা লেগেছে। এসেছি CNGতে করে। এসে নাস্তা করে নিলাম । নাস্তা করে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ ধরে চলে গেলাম ভেতরের দিকে। শুটকি পল্লি, লেবুর বনের দিকে ড্রাইভ করে গেলাম। এই বেড়ি বাঁধের কাজ চলছে। অনেক প্রশস্ত করে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। পুরাপুরি শেষ হলে দারুণ একটা রোড হবে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের মত ড্রাইভ করে মজা পাওয়া যাবে।

 

 

 

শুটকি পল্লি – শুটকি শুকানো হচ্ছে
শুটকি পল্লি – শুটকি শুকানো হচ্ছে

 

বেড়িবাঁধ থেকে ফিরে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। শুক্রবার। এরপর ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়তে গেলাম। পলাশ ভাই বলল উনাদের সাথে দুপুরের খাবার খেতে। নামাজ পড়ে আসার পর উনি রুমে খাবার পাঠাল। মাছ ভাজি, মুরগির তরকারি, ডাল ইত্যাদি। খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমিয়ে নিলাম কিছুক্ষণ।

সন্ধ্যার দিকে আমরা বের হলাম। ঘুরাঘুরি করলাম কিছুক্ষণ। এরপর বার-বি-কিউ মার্কেটে গিয়ে একটা কোরাল মাছ বারবিকিউ করার জন্য অর্ডার দিলাম। সুন্দর করে ওরা বারবিকিউ করে দিল। এরপর খাওয়া দাওয়া করে আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে রুমে ফিরলাম।

পরের দিন ভোরে আবার বের হলাম। কাঁকড়া বীচে গেলাম লাল কাঁকড়া দেখার জন্য। একটাও দেখা যায়নি। উল্টো শীত খেতে হলো। লাল কাঁকড়া বীচ থেকে মিসরি পাড়া বৌদ্ধ মন্দির গেলাম। সেখানে মিঠা পানির একটা কুয়া আছে। এরপর চলে এলাম আবার জিরো পয়েন্টে।

 

লাল কাঁকড়া বীচে এক জেলে মাছ ধরার জাল পরিষ্কার করছে
লাল কাঁকড়া বীচে এক জেলে মাছ ধরার জাল পরিষ্কার করছে

জিরো পয়েন্টের বাম দিকে (বীচের দিকে যাওয়ার বা দিকে) বেড়ি বাঁধ থেকে একটু নিচে পৌষি নামে একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা রেস্টুরেন্ট। খাবারও ভালো। ঐখানে নাস্তা করে নিলাম। এরপর রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে হোটেল চেকআউট করে বের হয়ে পড়লাম বরিশালের উদ্দেশ্যে।

কুয়াকাটা থেকে বরিশাল যাওয়ার রাস্তা এখন অনেক ভালো। সাড়ে দশটায় আমরা বের হই। দুপুর একটার মধ্যে বরিশাল পৌঁছাই। আবারও বরিশাল কিং এ ঢুকে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। এরপর রওনা দেই বরিশাল গুটিয়া মসজিদ দেখতে। মসজিদটি সুন্দর। এর আগের বার যখন এসছি, তখন রঙ নতুন ছিল। প্রচুর ফুল ছিল। এখন ফুল নেই বললেই চলে। রঙও কিছুটা পুরাতন হয়ে গিয়েছে। মসজিদ থেকে ফেরার পথে দূর্গা সাগর দীঘি দেখতে থামলাম। কি নিরিবিলি একটা জায়গা। বসে থাকতেও ভালো লাগে। ঢাকা ফিরব বলে কিছুক্ষণ বসে রওনা দিলাম মাওয়া ঘাটের দিকে।

গুটিয়া মসজিদ – বাইতুল আমান জামে মসজিদ
গুটিয়া মসজিদ – বাইতুল আমান জামে মসজিদ

 

দূর্গা সাগর দীঘি
দূর্গা সাগর দীঘি

রাস্তা ভালো থাকায় বেশি সময় লাগেনি আমাদের। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মাওয়া ঘাট পৌঁছাই। এইদিকে প্রথমবারের মত আসা। তাই সব কিছু এলোমেলো লাগছিল। গুগল ম্যাপ ধরে যাচ্ছিলাম। আধা ঘণ্টা এদিক সেদিক ঘুরাচ্ছিল। পরে মানুষের সাহায্য নিয়ে ঘাটে পৌঁছাই। খুব ছোট একটা সিরিয়াল। কিন্তু একটা দুইটা করে গাড়ি যেতে দিচ্ছিল। তার উপর অনেকে সিরিয়ালের তোয়াক্কা না করে চলে যাচ্ছিল। অল্প একটু সিরিয়াল পার হতে পুরা ১২ ঘণ্টা লেগেছে! ছোট ছোট ফেরি আসে। যেগুলোতে অল্প কয়েকটা গাড়ি উঠে। এছাড়া মাছের, মুরগির ট্রাক গুলোকে ছেড়ে দেয়। আমরা বসে আছি তো বসে আছি। অনেক গাড়ি সিরিয়াল ভেঙ্গে পাশে এসে দাঁড়ায়। যখনি দেখে কেউ ঘুমের কারণে সামনে এগুতে ভুলে যায়, তারা টুপ করে ঢুকে যায় সিরিয়ালে। এভাবে করতে করতে সকাল ছয়টার দিকে আমরা ফেরিতে উঠার সুযোগ পাই। এত সময় ধরে বসে থাকতে হলো। এই এলাকার মানুষের ধৈর্যের তারিফ করতে হয়। যারা গাড়িতে চলাচল করে, তাদের অবস্থা কত ভয়াবহ। কত সময় ধরে বসে থাকতে হয়। ফেরি পার হওয়ার পর বাকি রাস্তা পার হতে সময় লাগেনি। প্রায় দেড় ঘণ্টায় মাওয়া থেকে বসুন্ধরায়। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব সহজে চলে আসতে পারলাম।

বরিশাল, কুয়াকাটার পথের দোকান গুলতে দুধ চা পাওয়া যায় না। সবাই লাল চা বিক্রি করে। এছাড়া বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে যত গুলো ব্রিজ পড়ে, প্রায় সব গুলোতে টোল দিতে হয়। যার বেশির ভাগই অবৈধ। এরপরও টোল তোলে। দেখার কেউ নেই। এই এলাকার মানুষ গুলোর উপর কেমন অত্যাচার মনে হয় আমার কাছে। আমরা না হয় একবার দুইবার এই দিকে যাবো। কিন্তু যারা নিয়মিত যাতায়াত করে, তাদের প্রতিদিন আসতে যেতে এই অবৈধ টোল দিতে হয়।

মাওয়া ফেরি ঘাটে এত সময় ধরে অপেক্ষা করে বুঝলাম ঐ এলাকার মানুষের জন্য পদ্মাসেতু কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বরিশাল, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া এসব এলাকার মানুষ পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে সহজে। যদিও পদ্মা সেতুতে প্রচুর পরিমাণ টোল দিতে হবে। এরপরও অন্তত সময় বাঁচবে। এই বছর জুনের মধ্যে পদ্মাসেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ইনশাহ আল্লাহ পদ্মা সেতু দিয়ে আরেকবার ঐ দিকে ঘুরতে যাবো। গাড়ি নিয়ে কুয়াকাটাকা গেলেও ঐখানে গিয়ে ঘুরতে হবে বাইক বা অটো নিয়ে। গাড়ি নিয়ে চলাচল করার মত যায়গা নেই। কুয়াকাটা যাওয়ার রাস্তা গুলো ভালো হলেও ঘুরাঘুরি করার যায়গা গুলোর রাস্তা ভালো না। সব মিলিয়ে বলা যায় কুয়াকাটা এখনো ট্যুরিস্ট ফ্রেন্ডলি না। এরপরও বলব কক্সবাজারের সাথে তুলনা না করে যদি কুয়াকাটা ঘুরা যায়, তাহলে খারাপ লাগবে না।

 

কুয়াকাটা এর আগে একবার লঞ্চে এবং একবার বাইকে করে গিয়েছি। সেগুলোর লিঙ্কঃ

1 thought on “সেলফ ড্রাইভ করে কুয়াকাটা ভ্রমণ”

Leave a Reply