সাইন্স ফিকশন – স্পেস

জানো, আমার বয়স যখন ২১ ছিল, তখন …

রিহান, আমি জানি তারপর তুমি কি বলবে। কারণ অসংখ্য বার তুমি আমাকে এ গল্পটি বলছিলে। অসংখ্য বার নয়, ১১৯ বার। এবার যদি বল, তাহলে ১২০ বার হবে।

তোমার ধারণা ঠিক নয়। আচ্ছা, বলো তো আমি এর পর কি বলবো?

তোমার বয়স যখন ২১ ছিল, তখন তুমি একটি সুন্দরী মেয়েকে প্রছন্ড ভালোবাসতে। কিন্তু তোমার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পয়েন্ট না থাকায় তুমি মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারো নি। এর পর…

হ্যা, তুমি ঠিকই ধরতে পেরেছো রিকি। কিন্তু তুমি বিরক্ত হচ্ছো কেনো? তুমি তো একটা রোবট। মানুষ একটি কাজ বার বার করে বিরক্ত হয়। কিন্তু তোমাকে তৈরিই করা হয়েছে এমন ধরনের কাজ করার জন্য। তা ছাড়া তো তোমার কোন অনুভূতিও নেই যে তুমি বিরক্ত হবে।

তোমার ধারণা ঠিক নয় রিহান। আমি পঞ্ছম প্রজন্মের রোবট ছিলাম। আমার ভেতর একটি প্রোগ্রাম রান হচ্ছে, যা নিজেকে নিজে আপগ্রেড করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সে হিসেবে আমি ৯.৯ প্রজন্মের। এর পরের আপডেটেই আমি দশম প্রজন্মের রোবটে রুপান্তরিত হবো। তুমি কি জানো দশম প্রজাতির রোবট আর মানুষের মাঝে কোন পার্থক্য নেই??

নাহ, আমি জানি না। জানতে চাইও  না। আমি এটাই জানি যে তুমি একটা রোবট। আর আমার গল্প তুমি শুনতে হবে। অসংখ্য বার শুনতে হবে।

আমি যদি সেন্সর গুলো বন্ধ করে রাখতে পারতাম ভালো হতো। তুমি বলে যেতে। আমাকে আর শুনতে হতো না। কিন্তু আমি সেন্সর গুলো বন্ধ করে রাখতে পারবো না। কারন স্পেসশিপটির প্রতি মুহুর্তের তথ্য গুলো আমার এনালাইসিস করতে হয়।

রিহান, তোমার যদি বলতে ইচ্ছে করে বলো। আমি অন্যান্য কাজ করার পাশা পাশি শুনব।

নাহ! রিকি, তুমি আবার সামনে বসে থাকতে হবে। মহাকাশ যান নিজেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে। তুমি যদি না বসো আমার সামনে, তাহলে কোল্ড রুমের ভেতরের মানুষ গুলোকে আমি জাগিয়ে তুলব। তারপর তাদের সাথে গল্প করব।

তুমি এটা করতে পারো না রিহান। কারণ এখন তুমি ওদের জাগিয়ে তুললে ওদের শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনেরই ক্ষতি হবে। তাদেকে নিয়ে যেতে হবে অনেক দূর। ঐ দূর MACS0647-JD গ্যালাক্সির জুডিয়াস গ্রহে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে মানুষের বংশ বৃদ্ধি করতে হবে। তা ছাড়া তুমি নিজেই ভলান্টিয়ার হতে চাচ্ছিলে এ মিশনের জন্য। এখন তুমি এমন কিছু করতে পারো না যেন মিশনটি ফেইল হয়।

রিকি, আমি এমন কিছু করতে চাই ও না। আমিও চাই মানুষ প্রজাতি পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। পুরো মহাবিশ্বের আনাচে কানাচের সকল উপযুক্ত গ্রহ গুলো মানুষ দিয়ে ভরে উঠুক। কিন্তু…

কিন্তু কি, রিহান??

কিন্তু যখন ঐ মেয়েটির কথা মনে পড়ে, তখন সব লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। তিথি। তার নাম ছিল তিথি।

আমরা এক সাথে কত ঘুরছি জানো? কত কথা বলতাম আমরা। সময় শেষ হয়ে যেতো। আমাদের কথা শেষ হতো না। ঐ সবুজ পাহাড়ের কাছে চলে যেতাম আমরা। সূর্যটি সাদা থেকে হলুদ হতো। তারপর এক সময় লাল। তারপর এক সময় টুপ করে ঢুবে যেতো। তখনো আমরা কথা বলতাম। তখন আমাদের পেছনের দিকে একটি চাঁদ উঠতো। পৃথিবীর এক মাত্র উপগ্রহ। তারপর আমরা আস্তে আস্তে বাসায় চলে যেতাম। ঐ মেয়েটির সাথে থাকতে আমার কত ভালো লাগত জানো? তুমি যদি রোবট না হতে, তাহলে বুঝতে পারতে।

ওর বাবা মা ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বলছিল। অনেক ছেলে নাকি আসছিল ওকে বিয়ে করার জন্য। আমার কাছে তখনো কোন পয়েন্ট ছিল না। আমি বলছি আমি একটা কাজ যোগাড় করে নিব। তারপর তাকে বিয়ে করব। সে রাজি হয়েছিল। তার  মা বাবার অনেক বকা শুনতে হয়েছিল তাকে।

তার পর  কি হয়েছিল জানো??

আমি জানি রিহান। তারপর ও তুমি বলো। কারণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমার কথা শুনে যেতে হবে।

আমি একটি অফার পেয়েছিলাম, অনেক গুলো পয়েন্ট পাওয়া যাবে। একটি মহাকাশ যানে একটি গবেষণার উদ্দেশ্যে যাবে। ঐখানে লোক দরকার। আমি রাজি হয়ে গেলাম।

জানো, স্পেসশিপের তুলনায় পৃথিবীর মানুষের বয়স দ্রুত বেড়ে যায়? আমার চুক্তি হয়েছিল মাত্র ৬ মাসের জন্য। তারপর স্পেসশিপের যান্ত্রিক গোলাযোগের কারণে আমরা আর ফিরতে পারি নি। পৃথিবী থেকে আরেকটি স্পেসসশিপ এসে আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে গিয়েছিল। প্রায় তিন বছর কাটাতে হয়েছিল মহাকাশে। আমি প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি জানো না আমার সময় গুলো কিভাবে কেটেছে। আমার যদি ডানা থাকত, আমি নিজে উড়াল দিয়ে পৃথিবীতে চলে আসতাম। কিন্তু পারি নি।
স্পেসের তিন বছর। আর পৃথিবীর প্রায় ২০ বছরের ও বেশি। আমি যে পৃথিবী রেখে গিয়েছিলাম, ঐটাকে আর খুজে পাই নি। পাই নি তিথিকে। তিথি হারিয়ে গিয়েছে। দূর কোন এক অজানায়। যার খবর কেউ জানে না। আজ আমার কাছে অনেক পয়েন্ট। মিলিয়ন পয়েন্ট এর ও বেশি। কিন্তু..

জানো রিকি, মহাকাশে এ জন্যই ঘুরে বেড়াই। যেন তিথির মতো কারো সাথে দেখা হয়, অন্য কোন গ্রহে।
এ জন্যই পৃথিবী ছেড়ে আজ আমি স্পেসশিপে। যে পৃথিবীতে তিথি নেই, সেখানে আমি থাকি কি করে?

4 thoughts on “সাইন্স ফিকশন – স্পেস”

  1. :'( এরকম একজন তিথির অনুপস্থিতি পৃথিবীটাকেই নিষ্প্রয়োজন করে তোলে, এলোমেলো করে দেয় সবকিছু, চিরতরের জন্য বন্ধ হয়ে যায় অনূভূতির দরজাগুলো !!
    আর তিথির জন্য অর্জন করা পয়েন্ট গুলো প্রতি মূহুর্তে বেদনার বিষফোঁড়া হয়ে বিঁধে যায় হৃৎপিন্ডের নরম দেয়ালে !!

    Reply
  2. এরকম একজন তিথির অনুপস্থিতি পৃথিবীটাকেই নিষ্প্রয়োজন করে তোলে এলোমেলো করে দেয় সবকিছু, চিরতরের জন্য বন্ধ হয়ে যায় অনূভূতির দরজাগুলো !!

    Reply

Leave a Reply