আমরা ঢাকা থেকে বেজক্যাম্পে গিয়েছিলাম। ভাবলাম একটু উত্তরবঙ্গের দিক থেকে ঘুরে আসি। এছাড়া মমো ইনে হেলিকপ্টার রাইড দেওয়া যায়। রাইডের জন্য কথা বলেছিলাম। বলল বিকেল সাড়ে তিনটার মধ্যে পৌঁছাতে পারলে রাইড দেওয়া যাবে। আমরা যেহেতু সেলফ ড্রাইভ করে যাবো, একটু রিলাক্সে, তাই সাড়ে তিনটার মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। জিজ্ঞেস করলাম পরের দিন রাইড দেওয়া যাবে কিনা, বলল পরের দিন রাইড দেওয়া যাবে না।
বেজক্যাম্প থেকে আমরা ১১টার দিকে বের হয়ে রওনা দেই বগুড়ার উদ্দেশ্যে। ঐ দিকে এর আগে বাই রোডে যাইনি। একবারই গিয়েছি ২০১৪তে। যমুনা সেতু পার হয়ে রাজশাহী গিয়েছি। তখন ট্রেনে গিয়েছি। এছাড়া একবার গিয়েছি হাসিন ভাই এর সাথে গাড়িতে করে। এলেঙ্গা পর্যন্ত হচ্ছে চার লেনের রাস্তা। মাঝখানে ডিভাইডার দেওয়া। এরপর দুই লেনের। কোন ডিভাইডার নেই। স্বাধীনতার এত বছর পরও উত্তরবঙ্গের মানুষ চার লেনের রাস্তা পেল না। জাতি হিসেবে ব্যর্থতাই বলব। যদিও এখন চার লেনের রাস্তা হচ্ছে। জানি না কবে শেষ হবে। যদিও এখন দরকার ৬ বা আট লেনের রাস্তা করা।
যমুনা সেতুতে উঠার জন্য ট্রাকের জন্য আলাদা লেন, বাস এবং গাড়ির জন্য আলাদা লেন। বিষয়টা ভালো। আমি ভুল করে ট্রাকের লেনে ঢুকে পড়ি। যদিও সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা ছিল কোনটা কোন লেন। নোটিশ করিনি সাইনবোর্ডটি। অনেকক্ষণ পর যখন টোল ব্রিজের সামনে গেলাম, একজন এসে বলল এটা ট্রাকের রোড। এখান দিয়ে যাওয়া পসিবল না। বদ বেটা আমাকে ট্রাকের এক্সিট রোড দেখিয়ে দিল, যেটা অনেক বেশি ভাঙ্গা। বের হওয়ার সময় গাড়ীর নিচে ঘষা খাচ্ছিল।
আমার জানা ছিল না যমুনা সেতুর টোল সম্পর্কে। টোল দেওয়ার সময় ২০০টাকার একটা নোট দেই। টোল কালেক্ট করার ঐ লোক বলে ভাই কত দিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করি টোল কত। বলে ৫৫০ টাকা, আপনি এর আগে এই দিকে আর আসেন নি? আমি বলি না, আমাদের ঐ দিকে সব গুলো টোলই ১০০টাকার নিচে। জিজ্ঞেস করল কোথায় থেকে আসছি। আমি বলি ঢাকা থেকে। আসলে আমাদের বাড়িতে যেতে হয় মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে। তখন জীপ গাড়ির জন্য ৯০টাকা টোল দিতে হয়। উত্তর বঙ্গের দিকের মানুষের তো আকাশ ভরা তারা! একবার আসা যাওয়াতেই ১১০০টাকা টোল দিতে হয়। যদিও পদ্মা সেতুতে আরো বেশি। ৭৫০ টাকা। ভাগ্য ভালো যে আমাদের গ্রামের বাড়ি যেতে এত বেশি টোল দিতে হয় না। তাহলে এখনকার মত ঘন ঘন বাড়ি যাওয়ার লাগত না।
যমুনা সেতু পার হওয়ার সময় দেখলাম ডান পাশ দিয়ে ট্রেন যাচ্ছিল। এত স্লো যাচ্ছিল ট্রেন। সেই তুলনায় আমরা খুব দ্রুতই পার হলাম। মাঝে দাঁড়িয়ে চা খেলাম। এরপর আরো কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে দুপুরের খাবার খেলাম। মমো ইনে পৌছালাম ৫টার দিকে। তখন আর হেলিকপ্টার রাইড দেওয়া সম্ভব না। বলল পরের দিন সাড়ে দশটায় সম্ভব হবে। সেই আশায় আমরা মমো ইনেই থেকে গেলাম।
মমো ইনে কাপল রুম হচ্ছে প্রায় বারো হাজার টাকার মত। সেখান থেকে বাংলালিংক প্রিয়জন গ্রাহক হিসেবে ৪০% ডিসকাউন্ট পেয়েছি। তখন প্রায় 7300 টাকা লেগেছিল। ফাইভ স্টার হোটেল গুলোতে স্টাফরা গেস্টদের সাথে কেমন জানি মনিবের মত করে আচরণ করে। ব্যপারটা আমার কাছে কেমন জানি অস্বস্থি লাগে। রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে চা খেলাম। এরপর ৭টার দিকে সুইমিং পুলে গিয়ে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটলাম। রুমে এসে চেঞ্জ করে হাঁটতে বের হলাম। মমো ইনের চারপাশেই হাঁটার জন্য প্রচুর জায়গা। পুরো এরিয়াটা যথেষ্ট সুন্দর। দিনের বেলায় কিছু রাইডও দেওয়া যেত। ভাবলাম পরের দিন দেওয়া যাবে।
ড্রোন ছিল সাথে। বের করে কিছু ছবি তুললাম। ড্রোন ল্যান্ড করার পর দেখি সিকিউরিটি ও আরো দুই তিন জন আমার দিকে দ্রুত পায়ে আসছে। এসেই রাগি সুরে জিজ্ঞেস করল ড্রোন উড়াচ্ছি যে অনুমতি নিয়েছি কিনা? আমি বললাম আমি এখানের গেস্ট। সাথে সাথে সুর পাল্টে গেল। বলল স্যার, ড্রোন উড়াতে হলে অনুমতি নিতে হয়। রিসিপশনে যোগাযোগ করলে লিখিত একটা অনুমতি দিয়ে দিবে। আমি বললাম আচ্ছা। যদিও আমার ফুটেজ নেওয়া শেষ। বুঝা হয়ে গেলো বহিরাগত কেউ এখানে আসলে তাদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়। যদিও সবার জন্যই উন্মুক্ত। বিকেলে প্রচুর মানুষ দেখলাম। পার্কের মত সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ভালোই লাগছিল।
এখানে বারবিকিউ করা হচ্ছিল। আমরা বসে বারবিকিউ খেয়ে নিলাম। সাইদ আমাকে জানালো বগুড়ায় কোথায় কি ভালো। যেমন মমো ইনের পাশেই ওদের পার্কে মটকা চা পাওয়া যায়। ঐটা ট্রাই করতে পারি জানালো। চিকেন বারবিকিউ খেয়ে মটকা চা খেতে গেলাম। ১০টা বাজে তখন। মটকা চা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা গরম করে রাখছিল চা। পরে তাই খেয়ে চলে আসলাম।
আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম বৃষ্টি। নন স্টপ! নাস্তা করে নিলাম। এরপরও বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। আগের দিন বলল সাড়ে দশটার দিকে হেলিকপ্টার রাইড দিতে পারব। আকাশের যে অবস্থা, মনে হয় না তা সম্ভব হবে। আমরা রুমে গিয়ে রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। রওনা দিলাম ঢাকার দিকে। পথে সাত রাস্তার মোড় থেকে এশিয়া সুইটস থেকে দই কিনে নিলাম। এদের দই নাকি ভালো।
বৃষ্টিতে ড্রাইভ করতে ভালোই লাগছিল। পথে এরিস্ট্রোক্যাট নামে একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেলাম। ওদের পরিবেশ, স্টাফ, খাবার, সব কিছুই ভালো ছিল। খাওয়া দাওয়া করে আবারও বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভ। একটুও কমছিল না। গাজীপুর টঙ্গি রোডে কি যে ভয়াবহ জ্যামে পড়েছি। রোডের কন্ডিশন ভয়াবহর রকমের খারাপ। এই রোডে যারা নিয়মিত যাতায়াত করে, তাদের কথা ভেবে কি যে খারাপ লাগছে। এই জ্যাম ঠেলে বাসায় রাত ৮টার দিকে এসে পৌঁছাই। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে সুন্দর মত বাসায় ফিরতে পেরেছি। ট্যুর ভিডিওঃ
ঢাকা থেকে যেতে চাইলে কত টাকা খরচ হতে পারে?
দরকারী একটি পোস্ট