সাইন্স ফিকশন – বায়ো চিপ

ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে সবচেয়ে কম বয়সী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যে ছেলেটি, তার নাম অভি। অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র। এ পর্যন্ত যত গুলো অলিম্পিয়াড হয়েছে, সব গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর নিয়ে সে চ্যাম্পিয়ন। অলিম্পিয়াডের চ্যাম্পিয়ন ঘোষনা দেওয়ার পর থেকেই সবার মুখে এ প্রডিজির নাম। কানা ঘুষা করে চলছে সবাই এ নিয়ে, এটা কিভাবে সম্ভব! অলিম্পিয়াডে কিছু আন সলভড সমস্যা দেওয়া থাকে, সে গুলো সহ সব গুলোরই সমাধান করেছে অভি। এ জন্য প্রশ্ন সেটকারীরাও অবাক।

যদিও তার আশে পাশে বা তার স্কুলের কেউই এটা নিয়ে অবাক হয় নি। অভির বুদ্ধি সম্পর্কে সবাই জানে। যে কোন প্রশ্নের উত্তরই অভি দিতে পারে। যত কঠিনই হোক না কেনো। যে কোন সমস্যার সমাধানই সে দিতে পারে।

সবাইকে পুরষ্কার দেওয়ার পর অভির পালা। কিন্তু পুরষ্কার নেওয়ার আগে সবাই চাচ্ছে অভি সম্পর্কে জানতে। তাকে কিছু বলতে। সে স্বাভাবিক ভাবেই রাজি হলো। বলা শুরু করল, তার নিজের সম্পর্কে।
আমার নাম অভি, অভি সিরাজ। মাকে আমি দেখি নি, শুধু ছবিতেই দেখেছি। আমার সকল দেখা শুনা করত আমার বাবা। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি। ক্লাসের সবচেয়ে বোকা ছেলে। সবচেয়ে কম মার্ক পাওয়া ছাত্র। ষষ্ঠ শ্রেনীর রেজাল কার্ড দিয়েছিল ঐদিন। আমার রেজাল কার্ড দেখে সবাই হাসা হাসি শুরু করেছে। এত খারাপ রেজাল্ট কেউ করে? কেউই আমার সাথে মিশত না, বোকা বলে। অনেক গুলো পঁচা পঁচা কথা বলেছে আমাকে। বাসায় এসে বাবাকে বলেছি ঐদিন। আমার চোখে পানি ছিল। অন্য দিন হলে বাবা আমাকে শান্তনা দিত, কিন্তু ঐ দিন কোন শান্তনা দেয় নি।
আমার বাবা ছিলেন ম্যাড সাইন্টিস্ট। ঐ দিন বাবা আমাকে উনার ল্যাবে নিয়ে যায়। আমাকে অজ্ঞান করে। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। অনেক অনেক ব্যথা। সয্য করার মত নয়। বাবা বলল ঠিক হয়ে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমকে কিছু ঔষধ দিল। আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসল।

বাবা অনেক অনেক বুদ্ধিমান, অনেক বেশি বুদ্ধিমান। তার ছেলেকে কেউ বোকা ছেলে বলে ক্ষেপাবে, তিনি তা মেনে নিতে পারেন নি। তাই ঐদিন আমার মাথায় ছোট্ট একটা অপারেশন করে একটা বায়ো-মেকানিক্যাল চিপ লাগিয়ে দেয়।

চিপটা ইন্টারনেট এবং মস্তিষ্ক এর সাথে একটা হাবের মত কাজ করে। সবারই জানার কথা মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি। কিন্তু এ ক্ষমতা কাজে লাগানো যায় না শুধু তথ্যের অভাবে। ইন্টারনেটের সাথে মস্তিষ্কটা যুক্ত করে দেওয়ার পর আর কোন সমস্যা থাকল না। যে কোন তথ্যই যে কোন সময়ই এক্সেস করা যায়। যে কোন কিছুই সমাধান করা যায়।
মাথা ব্যথা কমে যাওয়ার পর চিপটি একটিভ করে দেয় বাবা। প্রথম দিকে অভ্যস্ত হতে কষ্ট হয়েছে, এরপর আস্তে আস্তে যে কোন বিষই সহজে জেনে নেওয়া সহজ হয়ে গিয়েছে আমার জন্য।
কিছুদিন পর বাবা একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে। উনার ল্যাব ধংস হয়ে যায়। উনাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর ও বাঁচানো গেলো না। অথচ উনি অনেক আজব আজব জিনিস নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাতো, তার একটা হচ্ছে মানুষের দীর্ঘায়ু। অনেক দিন কিভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা যায়। এক কথা গুলো বলার সময় অভির গলা একটু ভেঙ্গে এসেছিল। এক হাত দিয়ে তার চোখ দুটি মুছে নিল।

বাবা মারা যাওয়ার পর ফুফি আমাকে উনার সাথে নিয়ে যায়। স্কুলে পরবর্তী এক্সামের রেজাল্ট কার্ড সবাই হাতে পাওয়ার পর সর্বোচ্চ নাম্বার যে পেয়েছে, তার নাম দেখে অবাক হয়। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ঐদিন ওরা কিছুই বলে নি, নিজেরা নিজেরা কানে মুখে কথা বলতে লাগল। ঐদিনও ওরা আমার থেকে দূরে ছিল। কেউই আমার কাছে আসে নি। সবার দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। অথচ আমি চেয়েছি সবার সাথে মিশতে। অন্য সবার মত, স্বাভাবিক একটা ছেলে হতে চেয়েছি।

এভাবে সবসময় নাম্বার বেশি পাওয়ার কারণে স্যারেরা অলিম্পিয়াডের রিজিওনালে ক্যাম্পে যোগ দিতে বলল। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও যেতে হলো।সেখান থেকে আজকের এখানে।

আমার হয়তো পুরষ্কারটা নেওয়া ঠিক হবে না। সমস্যা গুলো ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে আমি দ্রুত সমাধাণ করেছি মাত্র। যে কোন সমস্যাই সলভ করতে পারব, কিন্তু আমি এমন কিছুই চাই নি। আমি শুধু একটা সাধারণ ছেলে হতে চেয়েছি। অন্য সবার সাথে মিশতে চেয়েছি। এসব বলে অভি আস্তে আস্তে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে লাগল।

বিচারক মন্ডলির সবচেয়ে বিজ্ঞ জন পেছন থেকে অভির হাত ধরল। হাত ধরে সামনে নিয়ে আসল। তারপর বলল, চিপের সাহায্য নিয়ে হয়তো তুমি সমস্যা গুলো সমাধাণ করেছো। কিন্তু তুমি কি জানো, চিপ ছাড়াও তুমি অসাধারণ একটা ছেলে? এ পুরষ্কার তোমার হাতেই মানায়। এ বলে অভির হাতে ট্রফি তুলে দেয়। সবাই হাত তালি দেয়।

ঐ বিজ্ঞ বিজ্ঞানী বলে, আজ থেকে তুমি বাংলাদেশ বিজ্ঞান কমিটিতে যোগ দিবে। অন্য সব বিজ্ঞানীদের সাথে কঠিন কঠিন সব সমস্যার সমাধাণ খুঁজে ফিরবে। বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
চারদিকে তখন ফায়ার ওয়ার্কের আলোতে জ্বলমল করছিল। হাত তালিতে পুরো হল রুম কাঁপছিল। আর অভি নামের ছেলেটি তার বাবাকে স্মরণ করে চোখ দিয়ে পানি ফেলছিল। কেউ দেখে নি তা, কেউ না।

3 thoughts on “সাইন্স ফিকশন – বায়ো চিপ”

  1. অস্বাধারণ লিখেছেন 🙂 অভি না হয়ে জাকির হলেও খারাপ হতো না।

    Reply
  2. ভাই আপনি এতো ভালো বুজান।আপনাকে বলার মতো আমার ভাষা নেই

    Reply

Leave a Reply