মিরুদের রোবটিক্স এবং এআই কোর্সের ফাইনাল এসাইনমেন্ট ছিল একটা অটোমেটেড রোবট তৈরি করা। যাকে কোন কমান্ড দিলে সে ঐ কমান্ড অনুযায়ী কাজ করবে।
এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন চলে এসেছে প্রায়। মিরুর কিছুই করা হয়নি। প্রচুর সময় আছে মনে করে প্রতিদিনই আগামীকাল করব করব করে শেষ দিনে এসে পৌঁছেছে। এবার সত্যি সত্যিই আগামীকাল জমা দিতে হবে। আজকের মধ্যে কিছু না করতে পারলে এই কোর্সে পাস করা লাগবে না।
রোবট তৈরির ব্যাসিক হার্ডওয়ার কিট কিনতে পাওয়া যায়। শুধু এসেম্বেল করতে হয়। মিরু ভেবেছে রোবটের কম্পোনেন্ট গুলো এসেম্বেল করে অনলাইন থেকে একটা কোড ডাউনলোড করে রোবটে এমবেড করে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। সে অনুযায়ী করেছেও। একটা ওপেন সোর্স রোবট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডাউনলোড করে গুগলে সার্চ করে কিছু মডিফাই করে নিয়েছে নিজের মত করে। দুই একটা এরর দেওয়ার কারণে স্ট্যাক ওভারফ্লো থেকে কিছু সলিউশন কোড কপি পেস্ট করে ইরর গুলো দূর করেছে। সব কিছু শেষ করে কোড গুলো রোবটের সিস্টেমে ট্রান্সফার করতে করতে অনেক রাত হয়ে যাওয়াতে আর টেস্ট করা হয়নি। পরের দিন এসাইনমেন্টের প্রেজেন্টেশন। না ঘুমালে ঠিক মত ক্লাসেও উপস্থিত হতে পারবে না চিন্তা করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে দেখল বুয়া আসে নাই। কিছু তো খেতে হবে। ব্যাচেলরদের ডিম ভরসা। রাতের কিছু ভাত রয়েছে। পানি ঢেলে নিলে পান্তা ভাত হয়ে যাবে। ডিম ভাজি করার জন্য পেঁয়াজ, মরিচ কাটতে হবে। খেতে খারাপ লাগবে না। ভাবল যে রোবটটা এসেম্বেল করেছে, তাকেই কাজে লাগানো যায়। রোবট থাকতে নিজের কাজ করার কোন মানে হয় না। রোবটের পাওয়ার বাটনে ক্লিক করল। কিছু সময় নিয়ে রোবট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বুট হলো। টেস্ট করার জন্য রোবটকে বলল হ্যালো রোবট। রোবট উত্তর দিল হ্যালো মিরু। মিরু ভাবল এবার কাজের কথা বলা যাক। রোবটকে কমান্ড দিল। রোবট, পেঁয়াজ কেটে দাও।
রোবট ছুরি নিয়ে সুন্দর মত পেঁয়াজ কাটা শুরু করল। একটা কাটা শেষে আরেকটা কাটা শুরু করল। এভাবে আরেকটা। মিরু যত চিৎকার করে বলে স্টপ, পেঁয়াজ কাটা বন্ধ কর। রোবট শুনে না। পেঁয়াজ কেটেই যাচ্ছে। রোবটের কাছে গেলে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। একে একে সব পেঁয়াজ কেটে শেষ করার পর রোবট থামল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। যেমন মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে কিছু ভাবে, ঠিক তেমন। মিরু ভাবল এই সুযোগ। ঐ তো পাওয়ার বাটন দেখা যাচ্ছে। পাওয়ার বাটনে যখনি মিরু হাত দিতে যাবে, তখনি রোবট হাঁটা শুরু করল। আস্তে আস্তে দরজার দিকে গেলো। এরপর লিফট কল করে নিচে নেমে গেলো। রোবটের হাতে ছুরি থাকায় একই সাথে উঠার সাহস পেলো না মিরু।।
মিরু দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখল ছুরি হাতে রোবটটি হেঁটে যাচ্ছে। মিরু দূরত্ব বজায় রেখে রোবটের পিছু নিল। দেখল রোবটটি একটি সুপারশপে ঢুকল। ঢুকে পেঁয়াজ কাটা শুরু করল। সুপারশপের এটেন্ডেন্সরা কাছে গিয়ে বাঁধা দিলেই রোবট নিজের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে তাদের দূরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে লাগল। মিরুর কেমন ভয় ভয় করতে লাগল। কি ভয়াবহ কাজ করে ফেলছে। দেখল একজনে বড় একটা রড দিয়ে রোবটকে বাড়ি দিল। রোবটটি পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরো কিছু বাড়ি দিয়ে চূর্ন বিচূর্ণ করে ফেলল রোবটিকে। মিরু হাফ ছেড়ে বাচল। এই কোর্সে ফেল করলে করছে। ভুলেও অনলাইন থেকে কোন কোড ডাউনলোড করে বা কপি পেস্ট করে আর কোন এসানমেন্ট করবে না।
চুপে চুপে সুপারশপ থেকে বের হয়ে যেতে লাগল। যেন কেউ না বুঝতে পারে এটা মিরুর রোবট ছিল। বের হতে গিয়ে যা দেখল, তা দেখার জন্য মিরু একটুও প্রস্তুত ছিল না। দেখল অনেক গুলো রোবট হাতে ছুরি নিয়ে একে একে এগিয়ে আসল। সেগুলো সুপারশপে ঢুকে পেঁয়াজ কাটতে লাগল। সবাই ভয় পেয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে দ্রুত সুপারশপ ত্যাগ করল। সুপারশপের সব পেঁয়াজ কাটা শেষে রোবট গুলো বের হয়ে অন্য দিকে যেতে লাগল। এত গুলো রোবটের হাতে ছুরি। কেমন ভয়ঙ্কর একটা দৃশ্য। সবাই ভয় পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করল। যে যেভাবে পারল, পালাতে লাগল। যদিও মানুষের কোন ক্ষতি করছিল না রোবট গুলো। মিরু দেখল একে একে সব দোকান পাটে ঢুকে যেখানেই পেঁয়াজ পায়, সেখানেই গিয়ে পেঁয়াজ কাটা শুরু করে। এত গুলো রোবট, তাদের থামানোর মত কেউ নেই। সবাই যে যার মত করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ কয়টা রোবট হলে তাও কোন না কোন ভাবে কন্ট্রোল করা যেত। যত যায়গায় যত রোবট আছে, সব গুলো একে একে বের হয়ে আসতে লাগল। সোশাল মিডিয়ায় ঢুকে দেখল নিউজফিড জুড়ে রোবটের পেঁয়াজ কাটার দৃশ্য। একটা ভূতুড়ে অবস্থা। মিরুর বুঝতে বাকি রইলো না যে সে ভুল ক্রমে একটা ভাইরাস তৈরি করে ফেলেছে। যে ভাইরাস ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। অথবা প্রথম রোবটকে মারার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সেই রোবটই কোন না কোন ভাবে আসে পাশের রোবটকে আক্রান্ত করে দিল। আক্রান্ত রোবট গুলো আরো রোবটকে আক্রান্ত করতে লাগল। আস্তে আস্তে পুরা পৃথিবীর সব জায়গায় রোবট আক্রান্ত হয়ে পড়ল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা পৃথিবীর যত পেঁয়াজ আছে, সব কেটে ফেলল এই পেঁয়াজ কাটা রোবট গুলো।
পেঁয়াজ কাটাতেই শেষ হলে তো হতোই। আস্তে আস্তে রোবট গুলোর নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হতে লাগল। কোন কোন রোবট আলু কাটা শুরু করল। কিছু রোবট রসুন, আদা, মরিচ যা পাচ্ছে, তা কাটা শুরু করল। আস্তে আস্তে গাছ পালা থেকে শুরু করে কাটা যায় এমন সব কিছু কাটা শুরু করল। নিউজ চ্যানেল গুলোতে একে একে ব্রেকিং নিউজ প্রচার করা শুরু করল। সোশাল মিডিয়ায় ঢুকার মত সাহস মিরুর হয়নি। সে চিন্তা করতে লাগল কিভাবে এই রোবট গুলোকে বন্ধ করা যায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে পেলো যেহেতু রোবট গুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইনফেক্টেড হচ্ছে, পুরা ইন্টারনেট সিস্টেমই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। লোকাল নেটওয়ার্ক, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, বাসার মধ্যে থাকা ওয়াইফাই রাউটার থেকে শুরু করে সব। এতে নতুন করে কোন রোবট ইনফেক্টেড হবে না। আর যেগুলো অলরেডি ইনফেক্টেড, সেগুলোকে একে একে কন্ট্রোলে আনা যাবে।
সে পেঁয়াজ কাটা রোবট থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে একটা পোস্ট লিখে নিচে দিয়ে লিখে দিল ফ্রম ক্রিয়েটর অফ দিস পেঁয়াজ কাটা রোবট। মুহুর্ত্বেই ভাইরাল হয়ে গেলো সে পোস্ট। সম্ভবত পলিসি মেকারদের চোখে পড়ল। কারণ এর কিছুক্ষণ পরই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলো।
ইন্টারনেটের সাথে সব কিছু জড়িত থাকায় আস্তে আস্তে সব কেমন জানি বন্ধ হতে লাগল। এমনকি বাসার ইলেক্ট্রিসিটিও। সারা পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসল। দায়ী? কপি পেস্ট কোড!
ভালো একটা পোষ্ট