তুলি তার ছোট্ট বাঁচ্চাটাকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছে। বাঁচ্চাটাকে খেলতে দিয়ে সে একটু বসল। পাশে একটি ছেলে এসে বসল। ছেলেটি নিজ থেকেই কথা শুরু করল।
জানেন, মানুষ যখন মারা যায়, তখন পঞ্চম মাত্রা বলতে আরেকটা মাত্রায় গিয়ে পৌঁছায়। যেখানে সুখ দুঃখ বলতে কিছু নেই। আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিস হচ্ছে সময়। টিক টিক করে বয়ে চলছে। আমাদের কন্ট্রোলে নেই। কিন্তু ঐ পঞ্চম মাত্রায় সময়কে কন্ট্রোল করা যায়। যে কোন সময়ই যাওয়া যায়। অতীত জীবনের যে অংশ তার ভালো লাগে, সে অংশতেই সে বিচরণ করতে পারে। যেতে পারে ভবিষ্যতে।
তুলি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। ছেলেটির কথা শেষে জিজ্ঞেস করল, কি সব আবোল তাবোল বলছেন আপনি?
আবোল তাবোল মনে হচ্ছে? আমি আসলে অণুর কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
হঠাৎ করে তুলির শরীর একটু কেঁপে উঠে। নিজ অজান্তেই। অণু!
তুলিকে কিছু বলতে সুযোগ দেয় নি ছেলেটি, নিজ থেকেই আবার শুরু করল। অণুকে অনেক বকা দিতেন তাই না? তার সকল ভুলের জন্য। অন্য ছেলেদের সাথে তুলনা করতেন, তাই না?
তুলি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? অণুর কি হন আপনি, এসব কি বলছেন? অনেক গুলো প্রশ্ন।
ছেলেটি বলল, অনেক গুলো প্রশ্ন করেছেন। একটা একটা করে উত্তর দিব। জানেন, আপনি যখন বকা দিতেন, অণুর কাছে ভালো লাগত। সে জানত, প্রিয় মানুষটি বকা যে দেয়, তাও আদর করেই দেয়। সে চিন্তা করেই তার ভালো লাগত। বন্য, পাগল, ছাগল যাই বলতেন, সে হাসি মুখে থাকত। ভালোবাসত বলে। আপনি কি ভালোবাসতেন না? জানি না। কিন্তু অণু জানত, আপনিও তাকে ভালোবাসতেন।
তুলির চোখ ভিজে উঠল। অনেক গুলো স্মৃতি ভেসে উঠল। স্মৃতি গুলো কি খারাপ, ইচ্ছে না সত্ত্বেও এসে ধরা দেয়।
কেউই পারফেক্ট না। আমি না, আপনি না। অণুও ছিল না। আপনার হাসবেন্ড কি পারফেক্ট? কেউই পারফেক্ট না। যখন একজন আরেকজনকে ভালোবাসে, তখন তারা দুইজন মিলে একজন আরেকজনকে পাফেক্ট করে তোলে। আপনাদের মধ্যে একজন হয়তো তা করতে ভুল করেছ।
অণু আপনাকে অনেক অনেক বিশ্বাস করত। যা বলতেন, তাই শুনত। কিন্তু যখন বলেছেন আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, তা বিশ্বাস করতে পারে নি। ভাবছিল আপনি মজা করছেন। বিয়ের দিন ও না। যখন সত্যি সত্যিই বিয়ে হয়ে গিয়েছে আপনার, তখন বাস্তবতা কেমন জানি তার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। যে বাস্তবতা তার গ্রহণ করার সামর্থ্য ছিল না।
অণুর পৃথিবী তুলি দিয়ে পূর্ণ ছিল। তুলি চলে যাওয়ার পর তা শূন্য হয়ে পড়ে। শূণ্য পৃথিবীতে কিভাবে কেউ বেঁচে থাকে বলেন?
আমি কে জানতে ছেয়েছিলেন। আমি অণুর অনলাইন ডায়েরীটির একজন পরমাণু পাঠক… ঐখানে আপনার একটি ছবি দেখে আপনাকে চিনতে পেরেছি। ছবি তা থাকলেও হয়তো চিনতে পারতাম, আপনার সকল বর্ণনা কি নিখুঁত ভাবেই না লিখে রেখেছে। আহ! বলেই ছেলেটি উঠে হুট করে আবার চলে গেলো। যেমন হুট করে এসে কথা শুরু করে দিয়েছে, তেমনি হুট করে আবার চলে গেলো। স্মৃতির বাক্স খুলে দিয়ে গেলো।
সে তার বাবার উপর দোষ দিবে? কেন তিনি বিয়ের সম্বন্ধটা আনতে গেলো। কেনো অন্য ছেলের সাথে তাকে বিয়ে দিয়ে দিল। নাকি নিজেই দোষী করবে, অণুর উপর একটু রাগ কম দেখালে কি হতো। তার বাবাকে বলে দেখলে কি হতো। ভাবতে পারছে না আর। প্রচণ্ড দেরি হয়ে গেছে। হারিয়ে ফেলছে সে, সব কিছু। অণু বলত, সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আহ, সময়!