চারপাশে এত এত সেরা মানুষ। কেউ ভালো গায়, কেউ ভালো লিখে, কেউ ভালো অভিনয় করে, কেউ ভালো জব করে, কেউ ভালো ব্যবসা করে, কেউ বা বিসিএস ক্যাডার (😛) … এত এত সেরা মানুষ দেখে কার না খারাপ লাগে? এত সব বুদ্ধিমান বা পরিশ্রমী মানুষদেরকে দেখলে নিজেকে কেমন অপূর্ণ মনে হয়। নিজের মনের আয়নার সামনে দাঁড়ালে কত গুলো ত্রুটি দেখা যায়। এত গুলো ত্রুটি দেখে মন খারাপ হয়ে উঠে।
দিন শেষে এই খুঁত যুক্ত মানুষটাই তো আমি। নিজের এই খুঁত নিয়েই তো বেঁচে থাকতে হবে। খুঁত যেমন আছে, তেমনি কিছু গুণ ও রয়েছে। প্রতিটা মানুষেরই থাকে। সত্যিকার অর্থে কোন মানুষই পারফেক্ট নয়। পূর্ণাঙ্গ নয়। যে মানুষটাকে অনেক বেশি পারফেক্ট ভাবি, উনার গল্প শুনলে হয়তো উনি শুনাবে উনার ত্রুটি গুলোর কথা। আমরা তো আর দূর থেকে তা দেখি না। শুধু গুণ গুলোই দেখি। অন্যদের গুণ গুলো দেখে নিজেদের খুঁত গুলো বড় করে দেখি। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল উল্টো। হওয়ার কথা ছিল অন্যের গুণ গুলো দেখে নিজের গুণ গুলোকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করা।
নিজের খুঁত গুলো নিয়ে বেশি ভাবলে গুণ গুলো চাপা পড়ে যায়। সেগুলো আর প্রকাশ করা হয়ে উঠে না। হয়ে উঠেনা সেগুলোর পরিচর্চা করা। এরপর এক সময় হয়তো এই গুণ গুলোও হারিয়ে যাবে। আমরা কেউই সত্যিকারের পারফেক্ট হতে পারব না। যা করতে পারব, তা হচ্ছে প্রতিদিন নিজের গুণ গুলোকে একটু একটু করে উন্নতি করা। প্রতিদিন। যদি আমরা নিজেকে একটু একটু করে প্রতিদিন আপডেট করতে পারি তাহলে এক সময় আমাদের দেখা যে কোন সেরা মানুষ থেকেও সেরা হয়ে উঠতে পারব। সেরা মানুষরা এভাবেই সেরা হয়। এক ধাপ এক ধাপ করে উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে এক সময় অন্যদের ছাড়িয়ে যায়। আর যদি নিজেকে একটু একটু করে ইম্প্রুভ না করতে পারি, তাহলে? নিজের খুঁত গুলো নিয়ে হতাশায় ভুগতে হবে। ধ্বংস হয়ে যাবো তখন। একটা হাদিস ও তো আছ এমন,’ধ্বংস তার জন্য, যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে উত্তম হলো না’।
আমরা সবাই অন্যের বেস্ট ভার্সন দিয়ে নিজেকে বিচার করি, ভাবতে থাকি নিজে কত লুজার। ও সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজ বা পড়ালেখা শুরু করেছে, আমাকেও তা করতে হবে। ও রাতে দ্রুত শুয়ে পড়ছে, আমাকেও দ্রুত ঘুমাতে হবে। ও এমন করে, আমাকেও তেমন করতে হবে… এভাবে কত কিছু। সত্যি কথা হচ্ছে এভাবে সেরা হওয়া যায় না। সেরা হতে হলে আগে নিজেকে জানতে হয়, নিজেকে বুঝতে হয়। বুঝতে হয় নিজের জন্য কোনটা কাজ করে। এরপর ঐভাবে চলতে পারলেই এক সময় ভালো কিছু করা সম্ভব হয়। অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা না করে নিজেকে বুঝতে পারাই হচ্ছে সিক্রেট। এজন্য হয়তো সক্রেটিস বলে গিয়েছেন “know thyself”।
অনেক সময় দেখা যায় অন্য মানুষেরা যা নিজের কাছে আশা করে, আমরা তাই করে যাই। আমরা ভাবি আমি যদি তেমন না করি, তাহলে হয়তো তারা আমাকে আর পছন্দ করবে না। অন্যদের ইচ্ছে মত কাজ করতে থাকলে এক সময় নিজেকে রোবট মনে হবে। নিজের স্বকীয়তা বলতে আর কিচ্ছু থাকবে না। আর তখন ভালো কিছু করতেও ইচ্ছে করবে না। তাই সবার আগে যা দরকার, তা হচ্ছে নিজের পছন্দ মত করে কাজ করে যাওয়া। একটু একটু করে নিজেকে ইম্প্রুভ করা। অন্যরা কি ভাববে তা না ভেবে নিজের বিবেক বা বুদ্ধি ব্যবহার করে সেরাটা করে যাওয়া। সেরাটা করতে করতে নিজেও এক সময় সেরা হয়ে উঠা। একটাই লক্ষ্য, নিজের বেস্ট ভার্সন হওয়া। 🙂