জল ও জঙ্গলের কাব্য সুন্দর একটি রিসোর্ট। গত বছর আপওয়ার্ক প্রিমিয়ার ক্লাবের সাথে ঘুরে আসি এই রিসোর্টে। কিছুদিন আগে হাসিন ভাই আমাকে ডেভট্রাভেলার্সের জল ও জঙ্গলের কাব্যের ডে আউট ইভেন্টের লিঙ্ক দিয়ে জিজ্ঞেস করে যাবো নাকি। আমি বলি যাবো। এরপর সেকান্দার বাদশাও জিজ্ঞেস করে। রেজিস্ট্রেশন করি। দেখলাম অনেকেই রেজিস্ট্রেশন করেছে। ১০০+ ডেভেলপার, প্রোগ্রামার, ডিজাইনার বা সিমিলার প্রফেশনালসের মিলনমেলা।
গত ১৪ তারিখে আমি বাইক এক্সিডেন্ট করি। থুতনিতে এবং ঠোটে ব্যথা পাই। থুতনির সেলাই কাটা হয়নি। এরপরও ২১ তারিখে সকালে ঘুম থেকে উঠে রওনা দেই। বাস আসবে ৩০০ ফিট। আমি আর সেকান্দার ঐখানে গিয়ে দেখি হাসিন ভাই, দুলাল ভাইরাও ঐখানে। সকাল ৭.১০ এ বাস আসার কথা। এর আগেই আমরা ঐখানে গিয়ে পৌঁছাই। সকালের নাস্তা জল ও জঙ্গলের কাব্যে গিয়ে খাওয়ার কথা থাকলেও একটা দোকান থেকে তেহারি খেয়ে নেই আমরা। কারণ পৌঁছাতে পোঁছাতে তো সময় লাগবে। খিদা লেগে যাবে।
বাস ৭.১০ এ আসার কথা থাকলেও ৮টা বেজে যায়। আমরা রওনা দেই রিসোর্টের দিকে। যাওয়ার পথে গাড়িতে গান নাচ সবই হয়। সবাই মিলে গান গাওয়ার মধ্যে কি যে আনন্দ। সময় খুব দ্রুত কেটে যায়। আমরাও রিসোর্টের কাছে পৌঁছে যাই। রিসোর্টের খুব কাছের রাস্তা খুব খারাপ। বাস আর যেতে পারছিল না। পরে প্রায় ১০ মিনিটের মত আমাদের হাঁটতে হয়।
রিসোর্টে কোন গেস্ট আসলে এখনো এনালগ পদ্ধতিতে ভেতরে সিগনাল দেওয়া হয়। দড়ি ধরে টান দেওয়া হয়। এতে ভেতরের দিকে বেলে আওয়াজ হয়, বুঝতে পারে গেস্ট এসেছে। পৌঁছানোর পর আমাদের স্বাগতম জানায় লেবুর সরবত দিয়ে। দেখলাম ঐখানের কর্মীরা সবার জন্য খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত। আমরা ১০০+ এছাড়া আরো অনেকেই এসেছে। পরে শুনেছি ১৮০+ গেস্ট এসেছে ঐ দিন উনাদের।
আমরা রিসোর্টে গিয়ে এদিক সেদিক কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। সব কিছুই সুন্দর লাগছিল। অনেক সবুজ। শরৎকাল হওয়াতে আকাশটাও সত্যিকারের নীল। এছাড়া আকাশের সাদা মেঘ গুলোও সুন্দর দেখাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরই আমাদের নাস্তা দিল। চালের রুটি, পরটা, চিতল পিঠা, ভর্তা, ডাল, মুরগি, সবজি, ফিন্নি ইত্যাদি। খেউ খেলো টেবিল চেয়ারে, কেউ খেলো কটেজে বসে। আমরা কেউ কেউ খেলাম ঘাসের উপর বসে। প্রকৃতির কাছে এসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা।
ঢাকা থেকে বিশাল একটা কেক নিয়ে যাওয়া হলো। খাওয়া দাওয়া করে কেক কাটা হলো। এরপর কেউ কেউ ক্রিকেট খেলল, কেউ উনো খেলল, কেউ বোটে ছড়ল, কেউ শুধু বসে বসে হাওয়া খেলো। সুন্দর সেই বাতাস। মন শান্ত করে দেওয়ার মত। মনে হচ্ছিল যেন সবার সকল স্ট্রেস উড়িয়ে নিয়ে যাবে। শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজ পড়তে হবে। আমরা কেউ কেউ গিয়ে জুমার নামাজ পড়ে নিলাম পাশের একটা মসজিদে। ফিরে এসে নৌকায় করে চলে গেলাম দূরের একটা টিবিতে। পানির মধ্যে ঐটাকে একটা দ্বীপের মত লাগছিল। ঐটা আরো বেশি সুন্দর। বসার জায়গা রয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমি সারাক্ষণ শুধু ঐখানে বসে কাটিয়ে দিতে পারব। একটা বই আর এক মগ লেবু চা হলে ভালো লাগার পরিমাণ বেড়ে যেতো। চায়ের ব্যবস্থা যদিও ছিল মেইন রিসোর্টে। চা, কফি আনলিমিটেড, ফ্রি। দ্বীপে যখন ছিলাম, তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুক্ষণ মেঘ, কিছুক্ষণ বৃষ্টি। দারুণ একটা আবহাওয়া। কেউ কেউ গোসল করল।
ঐখান থেকে ফেরার পর দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে। জল ও জঙ্গলের কাব্যের কথা এত দিন পর ও মনে থাকার কারণ হচ্ছে এর খাবার। এর আগের বার যে খাবার খেয়েছি, তার টেস্ট এখনো মনে আছে। অনেক রিসোর্টেই গিয়েছি কিন্তু এদের মত খাবার অন্য কোথাও পাইনি। অনেক গুলো আইটেম। ব্যুফে স্টাইল। দেশি খাবার। দারুণ লাগল খেতে।
খাওয়া দাওয়া করে যে যার মত করে হাঁটাহাঁটি করলাম, গল্প করলাম। এদের অনেকের সাথেই অনলাইনে পরিচয়। কিন্তু সরাসরি কখনো দেখা হয়নি। এই ইভেন্টের কল্যাণে অনেকের সাথেই সরাসরি দেখা হলো। গল্প হলো। ভালো লাগল।
সন্ধ্যার আগে আমাদের তালের পিঠা দিল। দারুণ লাগল খেতে। গ্রামের দিকে এসব খাবার বেশি খাওয়া হয়। শহরের মানুষেরা কত কিছু থেকেই বঞ্চিত। একদিনের জন্য আমরা গ্রামের স্বাধ পেলাম। সন্ধ্যার পর দেখলাম আকাশে কি সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছিল। থেকে যেতে পারলে দারুণ হতো। ঐখানে থাকার ব্যবস্থা নেই তেমন। আমরা সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর রওনা দেই ঢাকার উদ্দেশ্যে। কিছু ভাল লাগা নিয়ে।
বাহ!! খুব সুন্দর লাগলো।