গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভ্রমণ

আমাদের গ্রুপ থেকে প্ল্যান হলো খুলনা যাবে। তারিখ ঠিক করা হলো ৫ তারিখ। কিছু কাজে টাইট শিডিউল থাকায় প্রথমে রাজি হইনি যাওয়ার। সবাই বলল যেতে। কোন ট্যুরে নিষেধ করি কিভাবে! রাজি হলাম।

৫ তারিখে বিএনপির সমাবেশ ছিল বরিশাল। যাওয়া রিস্কি মনে করে আমরা একদিন পিছিয়ে দিলাম ট্যুর। ৬ তারিখ।

৬ তারিখ সকাল ৬টায় বের হওয়ার কথা ছিল। বের হতে হতে সাড়ে ছয়টা হয়ে যায়। আমরা রওনা দেই। মিটিং পয়েন্ট ছিল হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে। সবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে পাশের দোকান থেকে বাকড়খানি কিনে খাই আমরা। সবাই আসলে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আমি যাই উজ্জ্বল ভাই এর গাড়িতে করে। সাথে ছিল ফয়সাল ভাই ও উনার ফ্রেন্ড অভি আরেকটা গাড়িতে, এবং রয়েত ও রিংকন ভাই ছিল আরেকটা গাড়িতে।

চাকা পরিবর্তন করা হচ্ছে

মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে ফয়সাল ভাইদের গাড়ির একটা চাকা ফেটে যায়। ভাগ্য ভালো যে রয়েত ভাই এর গাড়িতে এক্সট্রা চাকা ছিল। চাকা পরিবর্তন করে আমরা আবার রওনা দেই আবার।

সাম্পান হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্টে
সাম্পান হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট

ঢাকা থেকে নাস্তা খেয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও জ্যামের কথা চিন্তা করে নাস্তা না খেয়েই রওনা দিয়ে দেই। তাই পথে নাস্তা খাওয়ার জন্য দাঁড়াতে হয়। আর তার জন্য দাঁড়াই সাম্পান হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টটা অনেক সুন্দর। আমরা খিচুড়ি অর্ডার দেই। বিফ খিচুড়ি। খিচুড়ি ঠাণ্ডা ছিল। ওদের সম্ভবত ওভেনও নেই যে একটু গরম করে দিবে। বীফ অনেক বেশি শক্ত ছিল। পুরাটা খেতে পারিনি। খিচুড়ি বাদ দিয়ে ভাবলাম একটু চা খাই। দুধ চা অর্ডার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর এসে বলল দুধ চা হবে না। বলল রং চা হবে। রং চা দিয়ে গেলো। যেটা মূলত দুধ চায়ের লিকার। খিচুড়ি কতটুকু খারাপ ছিল, তা বুঝেছি আরো পরে। সারাদিন আর খিদা লাগেনি। এত বেশি এসিডিটি হয়েছে যে বলার বাহিরে। আমার একার না, সবার অবস্থাই মোটামুটি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চকচক করলে সোনা হয় না এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ!

খুলনা যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জ পড়ে। ভাবলাম বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল দেখে যাই। এছাড়া দত্ত মিষ্ঠান্ন ভাণ্ডার নাকি অনেক জনপ্রিয়। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় মিষ্টির দোকান ছিল। অভি ভাই খুলনার ছেলে। উনি সব চিনে। প্রথমে নিয়ে গেলো উনার এক খালুর দোকানে। যেখানে আমরা গরম গরম প্যাটিস খাই। এরপর দত্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। যেটা গোপালগঞ্জ শহরে। সবাই অনেক গুলো রসগোল্লা খেয়েছে। এরপর যাই বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে। বিশাল এরিয়া জুড়ে পুরো কমপ্লেক্স। মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, ফটো গ্যালারি, অডিটোরিয়াম, মসজিদ অনেক কিছুই রয়েছে এই কমপ্লেক্সের ভেতর। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। হাইলি সিকিউরড একটা এরিয়া।

বঙ্গবন্ধুর সমাধি
ষাট গম্ভুজ মসজিদ

এরপর গেলাম ষাট গম্ভুজ মসজিদে। মজিদের প্রধান গেটে বড় করে লেখা এখানে ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ। যদিও অনেকেই উড়ায় এরপরও। আমি ট্রাই করিনি আর। মসজিদে ঘুরে দেখলাম। এর আগেও গিয়েছি এখানে। এরপরও ভালো লাগল। মসজিদের পাশের দীঘির পাড়ে সবাই মিলে বসে আড্ডা দিলাম। অনেক শান্ত একটা পরিবেশ।

ষাট গম্ভুজ মসজিদ থেকে গেলাম খান জাহান আলির মাজারে। ঐখানের দীঘিটাও অনেক বিশাল। যদিও আমার মাজার বা এসব ভালো লাগে না। এমনিতেই দেখার জন্য দেখা আরকি।

দুপুরের খাওয়া আর খাওয়া হয়নি আমাদের। অভি ভাই বলল চুকনগরের চুইঝাল খেতে যেতে। খুলনা ঢুকে আমরা প্রথমে চলে গেলাম চুকনগর। ঐখানে আব্বাস হোটেল নাকি চুইঝালের জন্য বিখ্যাত। আব্বাস হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। একই সাথে দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বসলাম। চুইঝাল ভালোই লাগল। কিন্তু প্রচুর তেল ব্যবহার করে ওরা। এসিডিটি বাড়ার জন্য আর কি লাগে! খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম খুলনার দিকে। টাইগার গার্ডেনে উঠলাম আমরা।

খান জাহান আলি ব্রিজ
খান জাহান আলি ব্রিজ

রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে আমি শুয়ে পড়লাম। প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছিল। এরমধ্যে সোলায়মান ভাই আসল দেখা করতে। সবাইকে নিয়ে উনি বের হলো পিজ্জা খেতে। মাথা ব্যথা বেশি করার কারণে আমি আর বের হইনি।

সকালে নাস্তা করি হোটেলে। নাস্তা করে বের হতে হতে প্রায় ১২টা বেঝে গেলো। আমাদের প্ল্যান ছিল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে দেখা। ঐখানে সবাইকে ঢুকতে দেয় না। পাস লাগে। অভি ভাই পাস রেডি করল। মুজাহিদ ভাইকে বললাম আমাদের সাথে জয়েন করতে। উনি বিশাল দল নিয়ে আমাদের সাথে জয়েন করল। সবাই মিলে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে দেখলাম। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে চিমনি, তা অনেক বিশাল বড়। তা নাকি ৯০ তলা বিল্ডিং এর সমান! চিন্তা করা যায়? পুরা এরিয়া অনেক বড়। বিশাল বিশাল সব চুল্লি, যন্ত্রপাতি কত কিছু। নদীর পাশে রয়েছে আনলোডিং ডেক। যেখানে জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড করে চুল্লিতে নেয়। পুরো সিস্টেমটাই অটোমেটিক। পরিবেশের কথা চিন্তা করে খারাপ লাগল। কয়লা পুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত করবে পরিবেশে। কত আন্দোলন হয়েছে, কিছুই থামিয়ে রাখতে পারেনি।

খুলনার আইটি প্রফেশনালদের সাথে
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চিমনি

এই ট্যুরের শেষ চমক অপেক্ষা করছিল একটু পর। অভি ভাই উনার দুলাভাই এর মাছের ঘেরে আমাদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছে। যায়গাটা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই। সব কিছু ঘুরে যেতে যেতে আমাদের বিকেল হয়ে গিয়েছিল। সবারই কম বেশি খিদা লেগেছে। গিয়ে দেখি আমাদের জন্য ফ্রেস মাছ ভাজি, ছোট চিংড়ি ভাজি, মাছের ঝোল, দেশি চিকেন রেডি করে রেখেছে। অসাধারণ লাগল খেতে।

মাছের ঘের
আমরা

খাওয়া দাওয়া করে আমরা ঘেরে বসে আড্ডা দিলাম। অসাধারণ একটা পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে চা খেয়ে ঘের থেকে বের হই আমরা। এরপর রওনা দেই ঢাকার উদ্দেশ্যে। খুলনা থেকে ঢাকা আসতে এখন এত কম সময় লাগে। আমরা সাড়ে সাতটার দিকে রওনা দিয়ে এগারোটার দিকে ঢাকায় পৌঁছাই। এত কম সময় লেগেছে, যেটা কয়েক মাস আগেও কল্পনা করা যেত না। পদ্মা সেতু আসলেই ঐ এলাকার মানুষের জন্য একটা আশীর্বাদ।

Leave a Reply