কক্সবাজার
বিমানের টিকেট আগেই কিনে রেখেছি। গত মাসের ৩০ তারিখে উত্তরবঙ্গ ঘুরতে গিয়েছি, এ মাসের জন্য আবার প্রিয় কক্সবাজার। এ মাসের সাত তারিখে উত্তরবঙ্গ ঘুরে বাসায় ফিরেছি। তারপর দুই দিন আগে বাড়ি গিয়েছি। বাড়িতে একদিন থেকেই চলে এসেছি। এবং এখন কক্সবাজারে। বলা যায় ঘুরাঘুরির উপর একটা মাস। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে।
২৯ তারিখ, সোমবার। সকালে সেহেরী খেয়ে আর ঘুমাই নি। এটা ঐটা করতে করতে সকাল হয়ে গিয়েছে। ফ্রেস হয়ে ৮টায় রুম থেকে বের হয়েছি। বাসাবো থেকে এয়ারপোর্ট আসতে মোটামুটি ভালোই কষ্ট সয্য করতে হয়েছে। অনাবিলে উঠেছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসতে হয়েছে। সকালে মানুষ গুলো এত কষ্ট করে বাসে উঠতে। আহ! আমার অফিস করতে হয় না, মাঝে মাঝে সকালে বের হলে সবাই বাসের জন্য কি হাহাকার করে, তা দেখি। ভয়াবহ।
এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে প্রায় নয়টা ২০ এর মত লেগেছে। ডোমেস্টিক টার্মিনালে ডুকে বোর্ডিং পাস নিতে গিয়েছি। গিয়ে দেখি আমাকে ২০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। টিকেট কেনার সময় ট্যাক্স নেয় নি। পরে ট্যাক্স বসানো হয়েছে। এবং আমাকে এখন তা দিতে হবে। দেওয়া নিয়ে সমস্যা না, সমস্যা হচ্ছে তাদের কাছে ভাংতি নেই। টার্মিনালের ভেতরে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের টিকেট কাউন্টার রয়েছে, যেখানে টিকেট বিক্রি করে। দুই একটা কাউন্টারে গেলাম। ভাংতি নেই। ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটের বান্ডেল দেখা যাচ্ছে। বিমানের কাউন্টারে এসে জানালাম ভাংতি পাই নি। পরে এদিক ঐদিক থেকে ভাংতি নিয়ে ট্যাক্স রেখে আমাকে বোর্ডিং পাস দিল। এরপর চেক আউটের জন্য অপেক্ষা।
আজ চেক আউটের জন্য বেশিক্ষণ বসতে হয় নি। আজ সময় মতই সব হয়েছে। টার্মিনাল থেকে বাসে করে বিমানের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর বিমানে উঠলাম। সম্ভত ৬০ জনের সিটের বিমান। যাত্রী মাত্র ২৮ জন। আমি নিজে গুনিনি, এয়ার হোস্টেজ একজন আরেক জনকে বলতে শুনেছি।
বিমান উপড়ে উঠতে আমার কাছে ভালোই লাগে। একটা অনুভূতিও কাজ করে। সব কিছু ছেড়ে দূরে কোথায়ও হারিয়ে যাচ্ছি, এমন অনুভূতি। বিমান চালানো শুরুর আগেই বলে দেয় কত সময় লাগবে, কত উচ্চতায় বিমান চলবে সহ অন্যান্য সব তথ্য। আমাদের এটা ১৫০০০ ফিট উপর দিয়ে চলেছে।
চট্রগ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় সব জাহাজ দেখা যাচ্ছিল। বন্দর থেকে হয়তো এমন দেখা যায় না। কিন্তু উপর থেকে দেখা যায় অনেক গুলো জাহাজ, একটা একটার থেকে অনেক দূরে। আর কক্সবাজারের উপরে আসার পর দেখতে পেলাম সব নদী। অনেক বেশি নদী। ১১টার দিকে কক্সবাজার ল্যান্ড করেছে।
আমি এরপর কলাতলী আসার জন্য CNG তে উঠেছি। CNG ওয়ালা অনেক কাহিনী করল। আমার সাথে আরো দুইজন উঠেছে। আমাদের অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে একটা হোটেলের সামনে এনেছে। রুম দেখতে বলেছে। আহা মরি কোন রুম না। রুম গুলোর ৫০% ছাড়ের পর ও অনেক বেশি ভাড়া বলে! অফ সিজনের কারণে ৫০% ছাড়। আমি কোন কথা না বলেই ঐ হোটেল থেকে বের হয়ে এসেছি। পেছন থেকে অনেক ডেকেছে, আমি একটুও না তাকিয়ে চলে এসেছি। CNG ওয়ালার লাভ হচ্ছে আমি রুম নিলে নাকি ৫০ টাকা পাবে। এ মাত্র ৫০ টাকার জন্য যারা ট্যুরিস্ট তাদেরকে অনেক টাকা ধরিয়ে দেয়।
এর আগে AR Guest হাউজে থেকেছি একবার। এখানেই উঠেছি। এটা কলাতলীতে। ব্যাগ রেখে ড্রেস পরিবর্তন করে সমুদ্র সৈকতে চলে গেলাম।
এখানের ফটোগ্রাফার বলল ছবি তুলে দিবে। কিভাবে তুলবে, কত টাকা এসব ঠিক করে বললাম তোলেন। কারণ এর আগে টাকা টুকার কথা না জিজ্ঞেস করে ভয়াবহ একটা আক্কেল হয়েছে। তাই আগেই সতর্কতা। ফটোগ্রাফার মামা বলে এভাবে করেন। ঐ ভাবে করেন। আমি আমার মত করে দাঁড়িয়ে বসে কয়েকটা ছবি তুললাম। এরপর সাগরের দিকে যেতে লাগলাম। যত দূর যাই, ততই ভালো লাগে। যেতে যেতে অনেক দূর চলে গিয়েছি। পেছন থেকে এখানের গার্ডরা হুইছেল বাজানো শুরু করেছে। তাকিয়ে দেখি আমাকেই ইশারা করছে। কেনারের দিকে আসার জন্য। আস্তে আস্তে কেনারের দিকে চলে আসলাম। এখন বর্ষাকাল। অনেক পানি সমুদ্রে। বাতাস ও অনেক বেশি। তাই এক ধরনের স্রোত। এক জাগায় দাঁড়িয়ে থাকলে আস্তে আস্তে অন্য দিকে নিয়ে যায়।
অনেকক্ষণ সমুদ্রে থেকে রুমে ফিরলাম। এরপর ফ্রেস হয়ে বের হয়েছি নামাজ পড়ার জন্য। এরপর যে ছবি গুলো তুলেছে, সে গুলো নিলাম। রুমে এসে ছবি গুলো রেখে ইনানী বীচের উদেশ্যে বের হয়ে পড়লাম।
বীচে যাওয়ার আগে তানভীর ভাই ফোন দিল। উনি আমার প্ল্যান জিজ্ঞেস করল। পরে বলল উনি আসবে। চট্রগ্রাম থেকে। তারপর আমরা টেকনাফ যাবো। টেকনাফের কুদুম গুহা দেখতে। উনাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম আসতে কতক্ষণ লাগবে? তাহলে আমরা এক সাথে ইফতার করতে পারব। উনি জানালো যে রওনা দিচ্ছে, আশা করি ইফতার করা যাবে এক সাথে।
ইনানী বীচ
ইনানী বীচ গিয়েছি ভেঙ্গে ভেঙ্গে। কলাতলি থেকে একটা জায়গায়। নাম ভুলে গেছি। সেখান থেকে CNG তে করে সোনাপাড়া বাজার। কলাতলি থেকে সোনাপাড়া যাওয়ার পথে পড়ে হিমছড়ি। হিমছড়ি বা ইনানী যাওয়ার রাস্তাটি অনেক সুন্দর। একপাশে সমুদ্র আরেক পাশে পাহাড়। পাহাড় আর সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে রাস্তা।
হিমছড়িতে একটা ঝর্ণা রয়েছে। ছোট ঝর্ণা। সাথে পাহাড়েও উঠার ব্যবস্থা রয়েছে। আর ঐ পাহাড় থেকে সুন্দর ভাবে সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যাস্ত দেখা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সুন্দর মত দেখা যাবে। আকাশে মেঘ থাকলে সুন্দর মত দেখাবে না।
সোনাপাড়া বাজার থেকে ইনানী গিয়েছি। তার জন্য সোনাপাড়া বাজার থেকে অটোতে উঠেছি। অটোটা গিয়েছে গ্রামের ভেতর দিয়ে। সত্যিকারের গ্রাম। অনেক গুলো সুপারি বাগান। পানের বাগান। বাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা। গ্রাম্য ঘর। ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণেই দেখতে পেয়েছি।
ইয়ানী বীচ সুন্দর। আমি যখন গিয়েছি তখন বিকেল। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে আবার থামে। আসে পাশে কোন জায়গা নেই যে যেখানে বৃষ্টি হলে গিয়ে দাঁড়াবো। মাছ ট্রলার আছে। ট্রলারে গিয়ে উঠলাম। ট্রলারের দুইপাশ অনেক উঁচু। উঁচু হওয়াতে এক পাশে বৃষ্টির পানি পড়ে না। বৃষ্টি থামার জন্য বসলাম। বীচের এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করলাম। ছবি তুললাম। ঐখানের একটা ছেলেকে আমার মোবাইল দিয়ে বললাম ছবি তুলে দিতে। ছবি তুলে দেওয়ার পর ওর হাতে কিছু বখশিশ ধরিয়ে দিলাম। এরপর ঐখানে ইনানী বীচ পয়েন্ট বাজারে ফিরলাম। যেখান থেকে cng বা অটো পাওয়া যাবে কলাতলী ফেরার জন্য।
ইনানী বীচে একটি বিকেল অ্যালবাম থেকে সব গুলো ছবি দেখা যাবে।
CNG সরাসরি কলাতলি আসবে না। অটোতে করে সোনাপাড়া বাজারে আসতে হবে, এরপর এখান থেকে CNG করে কলাতলী। আমি একটা অটোতে করে সোনাপাড়া বাজারের এদিকে চলে এসেছি। এসে CNG এর জন্য অপেক্ষা করি। ঐখানে একটা মাইক্রো দাঁড়িয়ে ছিল। ঐটা দেখি স্টার্ট দিয়েছে। আমি দ্রুত গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি কলাতলীর দিকে যাচ্ছেন? বলল হ্যাঁ। আমি বলি আমিও যাবো। বলে কয়জন, আমি বলি একা। এরপর বলে ৪০ টাকা দিতে হবে। আমি বলি সমস্যা নেই। উঠে পড়লাম মাইক্রোতে। খুব দ্রুত কলাতলী চলে এসেছি। ইনানী যেতে অনেক সময় লেগেছে আসতে অনেক কম সময় লাগল। মাইক্রো একেবারে আমার হোটেলের সামনে নামিয়ে দিল। CNG তে করে আসতে গেলে ৮০ টাকা লাগত। সেখানে ওরা আমার থেকে নিয়েছে মাত্র ৫০ টাকা। ভাগ্য বলা যায়। দ্রুত কলাতলী আসার কারণে সন্ধ্যা হতে আরো দেরি আছে। প্রায় এক ঘণ্টার মত। আমি সৈকতে যেতে পারি। কিন্তু এত বেশি টায়ার্ড লাগছিল যে আর ইচ্ছে করে নি। অনেক ঘুরা ঘুরি হয়েছে। রোজা রেখে একদিনে ভালোই ঘুরা হয়েছে। তার উপর আগের দিন রাতে ভালো করে ঘুমানো হয় নি। রুমে এসে তাই একটু বিশ্রাম নিলাম। বিশ্রাম বলতে ফেসবুকিং।
৬টা ৩০ এর দিকে ইফতার করার জন বের হয়েছি। তানভীর ভাই এসএমএস দিল ১৫ মিনিট লাগবে। আমি কোথায় ইফতার করব। একটা রেস্টুরেন্টের নাম বললাম। আমি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। দুইজনের জন্য ইফতার নিলাম। ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথেই উনি এসে পড়ল। এক সাথে ইফতার করলাম।
তানভীর ভাই এর সাথে এর আগে অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি। চট্রগ্রাম আসলেই উনার সাথে কোথাও না কোথাও ঘুরতে চলে যাই। এর উপর মনপুরা, হাতিয়া এবং নিঝুম দ্বীপ উনি আর আমি এক সাথে ঘুরতে গিয়েছি।
ইফতার করে নামাজ পড়ে আমরা বীচের দিকে গেলাম। সুন্দর চাঁদ উঠেছে। ইজি চেয়ারে বসে থাকলাম। চাঁদের আলো এতই বেশি যে কাছাকাছি সব স্পষ্ট দেখা যায়। প্রায় এক ঘণ্টার মত বীচে শুয়ে থাকলাম। অনেক ঠাণ্ডা হাওয়া। বাতাসের কারণে ঠাণ্ডা লাগতে লাগল। রুমের দিকে ফিরে আসছি এরপর। এসেই ফেসবুকে একটু ঢুঁ মেরে আমি শুয়ে পড়ছি। সাথে সাথে ঘুম।
ঘুম ভেঙ্গেছে সেহেরী খাওয়ার সময়। রাতের খাবার খাওয়া হয় নি। খাওয়া উচিত ছিল। সেহেরি খেতে হোটেল থেকে বের হলাম। খেয়ে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
কুদুম গুহা ভ্রমণ
তানভীর ভাই চট্রগ্রাম থেকে এসেছে কুদুম গুহা দেখতে। গত কাল। আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে রওনা দিয়েছি। ৯টার দিকে। টেকনাফের বাসে উঠেছি। যাত্রী অনেক কম। অনেকক্ষণ বাস টার্মিনালে বসেছিল। তারপর অন্য জায়গায় এসে আরো কিছুক্ষণ বসল। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টার পর বাস টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছাড়ল।
বাস থেকে আমরা হোয়াইক্যাং নামক জায়গায় নেমে গিয়েছি। টেকনাফের অনেক আগে। সেখান থেকে CNG তে করে গিয়েছি হরিপুর। কুদুম গুহার কাছাকাছি যতটুকু রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায়। CNG বেটা ছিল বদের হাড্ডি। আমাদের থেকে বেশি টাকা নিছে। ঐখানে গিয়ে একটা গাইড নিয়ে নিলাম, আমাদের গুহার পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
যাওয়ার পুরা পথটি জঙ্গল মধ্য দিয়ে। বৃষ্টি হওয়াতে পুরা পথ কাঁদা মাটি আর পানি দিয়ে পরিপূর্ণ। প্যান্ট পরিবর্তন করে তাই থ্রি কোয়ার্টার পরে নিলাম। কাঁদা মাটি দিয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়েছি। ১৫ – ২০ মিনিটের মত হাঁটতে হয়েছে। গুহার সামনে গিয়ে দেখি ভেতরে সব পানি। আগেই জানতাম ভেতরে পানি থাকবে। তাই এক্সট্রা জামা কাপড় নিয়ে এসেছি। জামা কাপড় পরিবর্তন করে গুহা ঢুকতে পানিতে নামব, দেখি অনেক ঠাণ্ডা। আবার ভেতর থেকে চামচিকার ক্যাচ ম্যাচ শব্দ। গুহাতে না ঢুকেই ফিরব কিনা ভাবতে লাগলাম।
কুদুম গুহায় গমন অ্যালবাম থেকে সব গুলো ছবি দেখা যাবে।
ভেতরে আস্তে আস্তে ঢুকতে লাগলাম। পানি হাঁটু থেকে আস্তে আস্তে বুক পরিমাণ হলো। ভেতরে অন্ধকার। টর্চ নিয়ে গেলাম। টর্চের আলো দেখে চামচিকার দল অনেক বেশি পরিমাণ উড়া শুরু করল। আমাদের গায়ের উপর উপর থেকে বালু পড়তে লাগল। কানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেমন একটা অনুভূতি। সত্যকারের এডভেঞ্চার।
চামচিকা নাকি অজগরের প্রিয় খাবার। উপর থেকে যদি চামচিকা পড়ে, তাহলে সাথে সাথে সেগুলো অজগর গিলে ফেলে। আর এখানেও নাকি অজগর আছে একটা। জানি না। তবে ভেতরে অনেক মাছ ও ছিল। ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক দেখলাম।
আগে যারা গেলো, তারা সবাই নিজেদের নাম, প্রেমিকার নাম, মোবাইল নাম্বার সহ যত রকম আর্ট পারত সবই গুহার দেয়ালে রেখে এসেছে। চিহ্ন হিসেবে। এগুলো দেখে বের হলাম। আবার মেইন রোডের দিকে ফিরলাম হেঁটে হেঁটে। ঐদিকে চাকমারা থাকে। তাদের বাড়ি গুলো মাটির, উপরে পাতার চাউনি। সেগুলো দেখে দেখে ফিরতে লাগলাম।
ফেরার পথে অনেক কিছুই চোখে পড়ল। যেমন ছেলে মেয়েরা মাছ ধরে ফেরা। গরু নিয়ে ফেরা ইত্যাদি।
একজন রিক্সা ওয়ালা আমাদের দেখে থামল। রিক্সায় ছিল ঐ মাছ ধরা ছেলে মেয়ে গুলো। রিক্সা ওয়ালা ছেলে মেয়েদের নামিয়ে দিচ্ছিল আমাদের জন্য। আমরা তাদের কাছে গেস্ট, এ জন্য। আমরা বলি লাগবে না। ওদের নিয়ে যান। পরে রিক্সাওয়ালা বলল আমাদের জন্য রিক্সা পাঠিয়ে দিবে। এবং দিয়েছে।
কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র ভ্রমণ
কুদুম গুহা থেকে ফিরে এসেছি ঘুমধুম নামক জায়গায়। ঐখানে এসেছি কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র দেখার জন্য। ফেরার পথে উঠেছি একটা লোকাল মাইক্রোতে। মাইক্রোর পেছনের সিটে বসেছি। পাহাড়ি রাস্তা, উঁচু নিচু। তার উপর মাঝে মধ্যে স্পিড ব্রেকার। তো রোলার কোস্টারের মত লেগেছে। আর মাথা বার বার মাইক্রোর সাথে বাড়ি খাচ্ছিল। এভাবে ঘুমধুম এসে পৌঁছিয়েছি।
এখানে উখিয়ার মধ্যে বিটিভি এর একটা উপকেন্দ্র রয়েছে, এখানে। উখিয়া উপকেন্দের অফজিতে হচ্ছে কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা। রিক্সা দিয়ে যাওয়া যায় না কারণ উঁচু নিচু রাস্তা। CNG দিয়ে যেতে হবে যদি যাই। কিন্তু কোন CNG পেলাম না। দেড় থেক দুই কিলোর মত রাস্তা। হাঁটার মত শক্তি নেই। কারণ রোজা রেখেছি দুই জনই। গুহায় হেঁটে যাওয়া, হেঁটে আসা, চাকমাদের বাড়ি ঘর হেঁটে হেঁটে দেখা সব মিলিয়ে টায়ার্ড। এসেছি যেহেতু দেখবই। হাঁটা শুরু করলাম। পথের দুই পাশে বিভিন্ন ফলের বাগান। কমলা, পেঁপে, আম, ড্রাগন ফল সহ বিভিন্ন ফল।
মেইন রোডের ব্যানারেই লেখা ছিল কুমিরের প্রজনন সময় এর কারণে প্রদর্শনী বন্ধ। তারপর ও গেলাম, কারণ আমাদের দেশে তো কত কিছুই লেখা থাকে। সব কাগজে কলমে। হেঁটে হেঁটে গিয়ে দেখি সত্যি সত্যিই বন্ধ। গেটে তালা। লেখা রয়েছে প্রদর্শনী বন্ধ, কুকুর হতে সাবধান। চারদিক দিয়ে দেয়াল। এত দূর এসেছি। দেখে যাবই। এদিক সেদিক তাকালাম, কাউকে খুঁজে পেলাম না। তাহলে বলতাম আমাদের দেখার সুযোগ করে দিতে। পরে দেয়াল টপকে উপরে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে আরেকটা ভেড়ি, বাঁশের। ঐ ভেড়ির ভেতর দিয়ে শরীর ঢুকিয়ে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি অনেক গুলো গ্রিড। প্রতি গ্রিডে দুইটি করে কুমির।
প্রথম গ্রিডে যে কুমিরটি, ঐটাকে প্রথম বার দেখে আরেকটা দেখতে গেলাম। গিয়ে আবার প্রথমটার কাছে ফেরত আসার সময় ঐটা হাঁ করে দৌড়িয়ে আসল। ভয় পেয়ে গেলাম। এক একটা কুমির এত বড়, ভয়ঙ্কর। ঢুকার আগে আমি ভেবেছি ছোট ছোট কয়েকটা কুমির হবে। ভেতরে ঢুকে অবাক। দুই একটা গ্রিড দেখার পরই দূর থেকে এই কে, কিভাবে ঢুকেছেন বলে কেউ একজন আমাকে ডাকল। ওদের ডাক শুনে ওদের ঐদিকে গেলাম। পেছনে ফিরে দেখি তানভীর ভাই নেই। উনাকে ডাকছি। উনি পুকুরের মত জায়গা রয়েছে, যেখানে অনেক গুলো কুমির, ঐ গুলো দেখতে গিয়েছে। অনেকক্ষণ ডাকার পর ফিরে আসল। এ দিকে আমাদের এখানের দারওয়ান বা কাজ করে এমন দুইজনে ডাকছে। তানভীর ভাইকে ডাকতে এসে সব গুলো গ্রিড দেখব চিন্তা করলাম। কারণ ওদের ডাকে সাড়া দিতে গেলে আর দেখা হবে না। আমাদের বের হয়ে যেতে হবে। তাই সব গুলো গ্রিড একবার করে দেখলাম, খুব দ্রুত। সব গুলো কুমির রোদ পৌহাচ্ছে।
কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র পরিদর্শন অ্যালবাম থেকে সব গুলো ছবি দেখা যাবে।
তারপর ঐ লোকদের কাছে ফিরে আসলাম। এটা সেটা জিজ্ঞেস করল। কোথায় থেকে এসেছি, এটাতে ঢুকা নিষেধ, লেখা দেখি নি ইত্যাদি ইত্যাদি। জিজ্ঞেস করল কোথায় দিয়ে ঢুকেছি, বললাম দেয়াল টপকে। জিজ্ঞেস করলাম গেট খুলে দিবেন? ওদের কাছে চাবি থাকা স্বত্ত্বেও বলল যে দিক দিয়ে ঢুকছি, সেখান দিয়ে বের হতে। আবার দেয়াল টপকে বের হলাম।
এবার এরা কাহিনী শুরু করল। বলল টাকা দিতে। আরে বাবা, টাকা যদি নেওয়ার ইচ্ছে থাকত তাহলে আগে বললেই তো হত। এত কথা আমাদের না বললেই হত। যাই হোক টাকা দিলাম কিছু। দিয়ে ফিরলাম। মনে মনে বললাম কষ্ট করে আশা স্বার্থক। সত্যিই স্যাটিসফাইড। এটা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এখানে কুমিরের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর বড় হলে এগুলো সারা বিশ্বে পরে সাপ্লাই দেওয়া হয়।
হেঁটে হেঁটে আবার মেইন রোডের দিকে যাচ্ছি। ঐখান দিয়ে একটা ট্রাক যাচ্ছিল। দৌড়ে গেলাম, কারণ কোন গাড়ি চলে না ঐখান দিয়ে। এটাতে করে যদি মেইন রোডের দিকে যাওয়া যায়। ওরা আমাদের উঠালো না। পরে হেঁটে হেঁটেই ফিরতে হলো। মেইন রোডে এসে প্রথমে CNG করে একটা বাজারে এসেছি। এরপর সেখান থেকে একটা বাসে করে কক্সবাজার ফিরেছি। ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেছে। সন্ধ্যা হতে তখনো দেরি। ইচ্ছে করছিল বীচের দিক থেকে ঘুরে আসতে। কিন্তু প্রচণ্ড টায়ার্ড থাকার কারণে রুমে ফিরে বিশ্রাম নিলাম। ইফতারের আগে বের হয়ে ইফতার করলাম। তারপর আবার রুমে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বীচের দিকে গেলাম।
আকাশে গতকালের মতই সুন্দর একটা চাঁদ ছিল। লাবণী পয়েন্ট এর দিকে গিয়ে হেঁটে হেঁটে সুগন্ধা পয়েন্টের দিকে ফিরলাম। সুগন্ধা পয়েন্টে এসে ইজি চেয়ারে বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম। শাকিল ভাই কল দিল। কোথায় আছি জিজ্ঞেস করল। উনি আসল, এক সাথে বসে কথা বললাম। তারপর রাতের দিকে রুমে ফিরলাম। কক্সবাজারকে বিদায় জানালাম পরের দিন সকালে। রওনা দিয়েছি চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে।
কক্সবাজারে এমন অনেক ধরনের প্রানীদের দেখা পাওয়া যায়। এদের ঘুরতে যাওয়ার নিদর্শনে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।