হাজারিখিল সংরক্ষিত বনে এ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পিং

ক্যাম্পিং করার জন্য হাজারিখিল সংরক্ষিত বন দারুণ একটা জায়গা। আমরা স্বপ্নযাত্রা থেকে ২০ জনের একটি দল ঐখানে গিয়ে ক্যাম্পিং করে আসলাম।

ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি ৩ এ অগাস্ট, বৃহস্পতিবার রাতে। গাড়ি ছাড়ার কথা ছিল ১১টায়। ঢাকা থেকে বের হতে লেগেছে ২টা। জ্যামের কারণে। কুমিল্লা পৌছাই আমরা ৪টার দিকে। চট্রগ্রাম পৌছাতে পৌছাতে সাতটা। চট্রগ্রাম বাস থেকে নেমে সিএনজি করে গিয়েছি অক্সিজেন। সেখান থেকে আবার আরেকটা সিএনজিতে উঠে ফটিকছড়ি। তারপর আবার সিএনজি পরিবর্তন করে চলে গেলাম হাজারিখিল। পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে নয়টা। তিনস্থরের সিএনজি ট্যুর 😛

আমরা গিয়ে উঠেছি হাজারিখিল সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিসে। ঐখানে আমাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করা ছিল। আমরা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা করে ক্যাম্পিং সাইটে চলে গেলাম। অফিসের পাশেই সুন্দর ক্যাম্পিং করার জায়গা। টেন্ট নিজেরা নিজেরাই সেট করলাম। বড় বড় লোহা কাঠ গাছে হেমক টাঙ্গানো হলো। টেন্ট রেডি হওয়ার পর আমরা বের হয়ে পড়লাম বন দেখার জন্য।

ক্যাম্পের পাশে আমরা

 

ক্যাম্পের সামনে আমাদের আরেকটি ছবি

এই বনে বিভিন্ন বন্য প্রাণী রয়েছে। যদিও আমি দুই একটা পাখি ছাড়া আর কিছুই দেখি নি। এ ছাড়া রয়ছে পাহাড়ি পানি প্রবাহ এর মাধ্যমে সৃষ্ট খাল। এখন বর্ষাকাল। পুরা বনটাই সবুজ। ভেতর দিয়ে হাঁটতে দারুণ লাগছিল। গরম একটু কম হলে আরো ভালো লাগত।

 

বনের ভেতর হাঁটাহাঁটি

বন থেকে বের হওয়ার পর আমাদের গাইড আমাদের নিয়ে গেলো একটা পেয়ারা বাগানে। বলল যত ইচ্ছে পেয়ারা খেতে। গাছে পেয়ারা অনেক থাকলেও খাওয়ার মত ছিল খুব কম। এখানের পেয়ারা গুলো নাকি সব বানরে খেয়ে ফেলে। পাশেই ছিল চা বাগান। পেয়ারা বাগান থেকে চা বাগানের পাশ দিয়ে ফিরে আসলাম আমাদের ক্যাম্পিং সাইটে। এখানে একটা পুকুর ছিল। আমরা নেমে গেলাম গোসল করতে।

পুকুরে গোসল করা

গোসল করে চলে গেলাম ক্যাম্পিং স্থানে। ঐখানে আমাদের জন্য দুপুরের খাবারে ব্যবস্থা করা ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম সবাই। এরপর হেমকে রেস্ট নিলাম যে যার মত করে।

বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে আমাদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করল। চা খেয়ে আবার ঘুরতে বের হলাম। এখানে পাশেই ছিল একটা চা পাতা তৈরির কারখানা। ঐটা দেখতে গেলাম। চা পাতা তৈরির পুরো প্রসেসটাই দেখলাম অটোমেটেড। চাপাতা তুলে এনে এক জাগায় দেওয়া হয়। অনেক গুলো প্রসেসের পর বের হয় চা পাতা। চা পাতা তৈরির কারখানা দেখে গেলাম এখানের একটা বাংলোতে। সেখান থেকে গেলাম ত্রিপুরা পাড়ায়। ত্রিপুরা পাড়ার ঐখানে মানুষ গুলোর ঘর মাটির তৈরি। উপরে যদিও টিনের চাল।

 

ত্রিপুরা পাড়া

এভাবে ঐ এলাকা ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমরা ফিরে এলাম ক্যাম্পের এখানে। সন্ধ্যার পর নিজেরা নিজেরা বার-বি-কিউ করলাম। মুরগি সহ অন্যান্য মসলা ঐখানের লোক এনে দিল। আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে বার-বি-কিউ করা প্রায় সব কিছুই পরে আমরা নিজেরা নিজেরা করলাম। রাতে পরোটা আর বার-বি-কিউ খেলাম। এরপর ক্যাম্প ফায়ার করে আমরা আড্ডা দিলাম। কিছুক্ষণ গল্প করা, কিছুক্ষণ গান গাওয়া ইত্যাদি করতে করতে রাত ২টা বাজলো। এরপর যে যার টেন্টে গিয়ে ঘুমিয়ে নিলাম।

সকালে উঠলাম সাতটার দিকে। এরপর ঘুমিয়ে থাকাও কষ্টকর হতো। কারণ ততক্ষণে সূর্য উঠে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে নিলাম। এখানে দড়ির উপর হাটার একটা অপশন ছিল। আমরা কিছুক্ষণ এখানে মজা করলাম। এরপর  চা বাগান ও পাশে থাকা পাহাড়ের দিকে গেলাম। ফিরে এসে হেমকে দুলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম।

 

একটি পাহাড়ের উপর আমরা

 

চা বাগান

পাহাড় ও চা বাগান ঘুরে আসতে আসতে একটা বেজে গেলো। আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর সব গুছিয়ে রওনা দিলাম ঢাকার দিকে।

1 thought on “হাজারিখিল সংরক্ষিত বনে এ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পিং”

Leave a Reply