হাতের স্মার্টফোনকে প্রোডাক্টিভ ট্যুল হিসেবে ব্যবহার

সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করি মোবাইলে। এই মোবাইলকে যদি প্রোডাক্টিভ টুল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, সময়ের অপচয় অনেকাংশেই কমাতে পারি। আমাদের স্মার্টফোন আমাদের পারসোনাল কম্পিউটার। এমনকি কয়েক বছর আগের পারসোনাল কম্পিউটার থেকেও বেশি শক্তিশালী এবং ইউজফুল। এটাকে কাজে লাগাতে পারলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।

একজনের লাইফ গোল একরকম। তাই নিজ নিজ সময় গুলোকে নিজ নিজ লক্ষ্য অনুযায়ী কাজে লাগানো উচিত। নিজের স্মার্টফোনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের এবং সময়কে কাজে লাগানোর জন্য আমি কিছু টিপস শেয়ার করছি।

নতুন স্মার্টফোন সেটআপ করার পর সবার আগে যে কাজটা করবেন, সব রকম নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিবেন। শুধু ফোন কল ছাড়া। অন্তত ফেসবুক, ম্যাসেজঞ্জার সহ সকল সোশাল অ্যাপের। অর্ধেক প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যাবে। আমার এতদিন SMS এর নোটিফিকেশন অন্য ছিল। কিন্তু যে পরিমাণ স্প্যামিং হয় SMS মার্কেটিং এর নামে, তাই এটিও অফ করে দিয়েছি।

অডিও এবং অনলাইন ক্লাস

যারা হাঁটাহাঁটি করেন বা নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়, তারা ঐ সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন অডিও শুনে বা ভিডিও দেখে। আইফোনে Podcast অ্যাপ ডিফল্ট ভাবেই থাকে। অ্যান্ড্রয়েডে Google Podcasts বা নিজের পছন্দের কোন অ্যাপ ইন্সটল করে নিতে পারেন। এরপর পছন্দের টপিক্স অনুযায়ী শো বা চ্যানেল গুলো সাবস্ক্রাই করে রাখতে পারেন। বাসায় থাকা অবস্থায় ওয়াইফাইতে কিছু এপিসোড ডাউনলোড করে রেখে পরে শুনতে পারেন।

এছাড়া ইউটিউবে অ্যাপে ভিডিও ডাউনলোড করে রাখা যায়। পছন্দের কিছু ভিডিও ডাউনলোড করে রেখে পরে দেখতে পারেন। অনলাইন কোন কোর্স করলে সেই কন্টেন্ট গুলো ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। এরপর কোথাও যেতে যেতে বা অবসর সময়ে দেখলেন। iTunes U, Udamy, LinkedIn Learning, Coursera এর মত অ্যাপ গুলো ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতে কন্টেন্ট ডাউনলোড করে রেখে পরে বাসার বাহিরে গেলে ফ্রি টাইমে দেখা যায়।

Pocket (Read It Later) দারুণ একটা অ্যাপ। কোন একটা আর্টিকেল পছন্দ হয়েছে, পড়ার সময় নেই। রেখে দিলেন পকেটে। পরে যে কোন সময় পড়লেন। অনেকে অডিওবুক শুনতে পছন্দ করেন। তারা Blinkist, Audible বা এমন কোন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

ফাইল শেয়ার

মোবাইল এবং কম্পিউটারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা লাগে, তা হচ্ছে ফাইল শেয়ার। কোন ফাইল কম্পিউটার থেকে মোবাইলে নিব বা মোবাইল থেকে কম্পিউটারে নিব তার জন্য ক্যাবল খোঁজা আসলেই বিরক্তিকর। অ্যাপল ইকোসিস্টেমে এয়ারড্রপ আছে। উইন্ডোজেও নিয়ে এসেছে Near Share। অ্যান্ড্রয়েড উইন্ডোজ বা অ্যান্ড্রয়েড ম্যাক এর জন্য দারুণ সব অ্যাপ রয়েছে। এরমধ্যে জনপ্রিয় একটা হচ্ছে AirDroid।

ক্রস ডিভাইসের মধ্যে কোন অ্যাপ ছাড়া ফাইল শেয়ার করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন snapdrop.net। এয়ারড্রপের ক্লোন। একই নেটওয়ার্কের দুইটা ডিভাইসের ব্রাউজারে ওয়েবসাইটটা ওপেন করলে ফাইল শেয়ার করার অপশন পাবেন।

নোট

কম বেশি সবার নোট রাখতে হয়। বাজারের লিস্ট হোক বা কি কি কাজ করতে হবে এমন যে কোন নোট। হতে পারে কোন আইডিয়া বা যে কোন কিছু। অনেক দারুণ সব নোট অ্যাপ রয়েছে। আমি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি Google Keep। ছোট খাটো নোটের জন্য Google keep দারুণ। যদি বড় কোন নোট হয় বা লেখালেখির অভ্যাস থাকে, তাহলে Evernote ব্যবহার করতে পারেন।

হিসাব নিকাশ / লেখালেখি

লেখালেখি রিলেটেড আমাদের বেশির ভাগ কাজ কর্মই Evernote বা এররকম অ্যাপ গুলো দিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। এরপরও যদি দরকার হয়, তাহলে Google Doc ব্যবহার করতে পারেন। ছোটবেলা থেকে পাইরেটেড MS Office ব্যবহার করে অভ্যস্ত। MS Word ব্যবহার করতে চাইলে তাও করতে পারেন। অ্যাপ যদিও ফ্রি না কিন্তু ব্রাউজারে ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়। পুরো মাইক্রোসফট অফিস ফ্রিতে OneDrive থেকে ব্যবহার করা যাবে। যদিও কিছু ফিচার কম। কাজ চলবে। কম্পিউটারে বসে OneDrive থেকে কোন কিছু লিখলে তা মোবাইল থেকে এক্সেস করা যাবে। হিসেব নিকেশের জন্য অনেক অ্যাপ আছে। তবে Google Sheetই অনেকের জন্য যথেষ্ট। মোবাইলের পাশা পাশী কম্পিউটারে বসলে সেখান থেকেও এক্সেস করা যায়।

ফিটনেস

কতটুকু হাঁটছি বা দৌঁড়িয়েছি, তা ট্র্যাক করার জন্য অনেকদিন Endomondo ব্যবহার করেছি। এখন দুইটা অ্যাপ ব্যবহার করি। একটা হচ্ছে Nike Training, আরেকটা Nike Run Club। Nike Training এ নিজে নিজে ব্যয়াম করার কোর্স রয়েছে। কি ভাবে কি করতে হবে, কতক্ষণ করতে হবে সব সহ। বেশির ভাগ ফিটনেস অ্যাপ যদিও এমন। এখানে অনেক ফ্রি কোর্স রয়েছে। Nike Run Club ব্যবহার করি দৌঁড়ানো রেকর্ড করার জন্য। অনেক অলটারনেটিভ অ্যাপ রয়েছে। আপনার যেটা ভালো লাগে, সেটাই ব্যবহার করতে পারেন।

ইসলাম

নিয়মিত নামাজের সময় দেখার জন্য আমি Muslim Pro ব্যবহার করি। তো এরা নাকি ডেটা সেল করেছে US আর্মির কাছে। ডেটা প্রাইভেসি নিয়ে এত বেশি কর্নসার্ন না থাকার কারণে এখনো এটাই ব্যবহার করছি। অ্যান্ড্রয়েডে এটার একটা অল্টারনেটিভ অ্যাপ হচ্ছে Muslim Day। আইওএসেও অল্টারনেটিভ থাকতে পারে। খুঁজে নিতে পারেন। আল-কোরআনের জন্য QuranExplorer অ্যাপ ব্যবহার করি। কম্পিউটারে quranexplorer.com সাইট থেকেও এক্সেস করা যায়। এর থেকে ভালো অ্যাপ আছে। এটাতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য কোনটাতে সুইস করা হচ্ছে না।

ইমেজ এবং ভিডিও

ছবি ভিডিও ছাড়া লাইফ এখন তো আর কল্পনা করা যায় না। সবাই কম বেশি এক্সপার্ট বলা যায় ছবি তোলায়। অনেক ভালো ভালো ছবি এডিটর রয়েছে মোবাইলের জন্য। ভিডিও এর জন্যও দারুণ সব অ্যাপ রয়েছে। ফ্রি অ্যাপ গুলোর মধ্যে আমার কাছে ভালো লাগে GoPro Quik। অনেক গুলোই ট্রাই করছি। কিছু পেইড, কিছু ফ্রি হলেও ওয়াটারমার্ক দিয়ে রাখে। Quik এ অভ্যস্ত হয়ে গেলে মোবাইলের মাধ্যমেই ভালো মানের ভিডিও এডিট করা যাবে। মোবাইল দিয়েই পারসোবাল ভ্লগ তৈরি করতে পারবেন।

VPN

ইন্সটল করে রাইখেন। কাজে লাগে। আমি আপাতত 1. 1. 1. 1 ইন্সটল করে রেখেছি। ব্রাউজারের জন্য SetupVPN। এদের অ্যাপ আছে অ্যান্ড্রয়েড, Mac এবং উইন্ডোজের জন্য। ব্যবহার করে দেখা হয়নি যদিও।

ক্লাউড

মোবাইল হোক বা কম্পিউটার, কখনো বিশ্বাস করবেন না। যে কোন সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই দরকারি ফাইল গুলো ক্লাউডে রাখবেন। মাস্ট। একবার হারিয়ে গেলে কিন্তু আর পাবেন না। Dropbox, Google Drive, iCloude Drive, OneDrive যেটাই হোক। একটা হলেই হলো। বেশি ফাইল হলে একের অধিক সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন।

Learning

নিজেকে আপডেটেড রাখার জন্য Medium পড়ি। যদিও এরা দুষ্টু হয়ে গিয়েছে। এখন কিছু পড়তে গেলেই বলে টাকা দে টাকা দে! এর উপর বাংলাদেশ থেকে ব্লক! Where is my VPN? 😐 এছাড়া Quora পড়ার ট্রাই করি। যদিও এরাও এদের অ্যালগরিদম আপডেট করেছে। আগের মত পড়ে মজা নেই। স্টিল বিকল্পও নেই।

স্পেসিপিক টপিক্স শেখার জন্য দারুণ সব অ্যাপ পাওয়া যায়। এক সময় কোডিং শেখার জন্য কম্পিউটার লাগত মাস্ট, কম্পাইল করার জন্য। কিন্তু এখন মোবাইলেই শেখা যায়। কোড লিখে কম্পাইল করা যায়। যে ল্যাঙ্গুয়েজ শিখবেন, ঐ ল্যাঙ্গুয়েজের একটা IDE অ্যাপ ইন্সটল করে নিবেন। ইংরেজি শেখার জন্য দারুণ সব অ্যাপ পাওয়া যায়। Duolingo বা এমন একটা অ্যাপ ইন্সটল করে নিতে পারেন। এমন সব বিষয়ের জন্য।

এত সুন্দর একটা ডিভাইস, পুরো পৃথিবীর জ্ঞান সব হাতের মুঠোয় এনে দেয়। এত দারুণ সব কাজ করা যায় এটা ব্যবহার করে। এরপরও যদি কাজে না লাগাতে পারি, তাহলে তো এটা এক ধরনের ব্যর্থতা। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারের বাহিরেও দারুণ সব অ্যাপ আছে, সেগুলোও এক্সপ্লোর করা দরকার, কাজে লাগানো দরকার।

3 thoughts on “হাতের স্মার্টফোনকে প্রোডাক্টিভ ট্যুল হিসেবে ব্যবহার”

Leave a Reply