স্ট্যাবিলিটি এবং স্বাধীনতা

কেউ যদি আমাকে বলে, চলো মঙ্গল গ্রহ থেকে ঘুরে আসি, আমি চিন্তা করব না টিকেট কি ওয়ান ওয়ে নাকি রিটার্ণ টিকেট সহ। মঙ্গলে যেহেতু কখনো যাওয়া হয়নি, তাই প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে আগে ঐখানে যাওয়া। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা, ঘুমানোর জন্য ভালো রুম আছে কিনা এসব পরে চিন্তা করব। আগে স্পেসশীপে উঠে পড়ব!

আমি জানি না এটা খুব ভালো একটা গুণ কিনা। খারাপ গুণ কিনা তাও জানি না। এতটুকু জানি, একই জায়গায়, একই কাজ বার বার করা থেকে নতুন কিছু চেষ্টা করা আমার কাছে উত্তম মনে হয়। এ জন্য নিজের মধ্যে স্ট্যাবিলিটি হয়তো নেই। নতুন কিছু চেষ্টা করতে আমার একটুও খারাপ লাগে না।

আমাদের চারপাশের সবাই স্ট্যাবিলিটি খুঁজে বেড়ায়। এ জন্য ফ্যামিলি মেম্বার হতে শুরু করে চায়ের দোকানের মামা পর্যন্ত সবাই বলে, বিসিএসটা দিয়ে দেন এবার!

বিসিএস, সরকারী জব, প্রাইভেট জব, উদ্যেগতা সব কিছুর দরকার আছে। দরকার আছে দুই একটা পাগলা কিসিমের লোকেরও। যারা নিজেও জানে না তারা কি করছে, নতুন কিছুর সন্ধান করে বেড়াচ্ছে সর্বদা। কিন্তু আমরা সবাইকে নিজের বৃত্তে আবদ্ধ করে ফেলতে চাই। নিজ বৃত্তের বাহিরে কাউকে দেখলে তাকে আর ভালো চোখে দেখি না। বিসিএস নামে একটা টার্ম কোথাও শুনেছি? আচ্ছা, সবাইকে তাহলে বিসিএস দিতে হবে। মেডিকেল নামে একটা টার্ম শুনেছি? সবাইকে মেডিকেলে চান্স পেতেই হবে। বুয়েট নামে কিছু একটা আছে? সবাইকে ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে। তার এরোনেটিক্স ভালো লাগে? ব্যপার নাহ! বুয়েটে চান্স পেয়ে যে কোন একটা বিষয় নিয়ে পড়লেই হলো। লাইফ সেটেল! ঢাবিতে চান্স হয়নি? আহারে! লাইফটাই বৃথা। আবার চেষ্টা করলে নিশ্চই হবে।

এসব কেন খুঁজি? কারণ স্ট্যাবিলিটি। সেটেল হওয়া। এই স্ট্যাবিলিটি নিজের কতটা ক্ষতি করে জানেন? জানার চেষ্টাও করিনা। আমাদের মস্তিষ্কটা অদ্ভুত ভাবে কাজ করে। যখন ভালো কোথাও ঢুকার পর চিন্তা করি, আমাকে আর ঠেকায় কে, তখনি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরে বসি। নিজেকে আর আপগ্রেড করার চেষ্টা করি না। একটা বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে যাই। ঐ বৃত্ত থেকে আর বেরুনোর চেষ্টা না করে অন্যদেরকেও ঐ বৃত্তে আবদ্ধ হওয়ার উপদেশ দিয়ে বেড়াই।

অথচ আমরা চাইছি স্বাধীনতা। স্ট্যাবিলিটির কাছে নিজের স্বাধীনতাটা বিক্রি করে দেই। এরপর পরাধীন ভাবে কাটিয়ে দেই জীবনের বাকি সময় গুলো।

Leave a Reply