সাজেক ভ্যালিতে দুইদিন

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ছিল ২৮ তারিখে। ঐ দিন বাস ট্রাক ধর্মঘট থাকায় আমরা আর রওনা দিতে পারি নি। তখন কেউ বলল মাইক্রো করে যাবো, কেউ বলল লঞ্চে করে কুয়াকাটাক যাবো। পরে আসলে কিছুই হয় নি। আমরা ব্যাগ ঘুছিয়ে বসে আছি। না যেতে পারার কারণে সবার মন খারাপ। আমিও ভেবেছি আর বুঝি যাওয়া হচ্ছে না।

২৮ তারিখে কেনা টিকেট গুলোও ফেরত দেওয়া হয়েছে। নতুন করে টিকেট কিনতে হবে। আরিফ ভাই টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টিকেট কিনে নিল। সাড়ে দশটার দিকে বাস। আমরা বের হয়েছি সাড়ে আটটার দিকে বাসা থেকে। কলাবাগান একটু আগেই পৌছিয়ে গিয়েছি। বাস স্ট্যান্ড এসেও ভাবছি, আমরা কি সত্যিই সাজেক যেতে পারব?

১০.৪৫ এর দিকে বাস ছাড়ল। আমরা রওনা দিলাম। খাগড়াছড়ি পৌছিয়েছি সকাল ছয়টার দিকে। ঐখানে নাস্তা খেয়ে চান্দের গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি সাজেকের উদ্দেশ্যে।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক  ভ্যালি

সাজেক যাওয়ার রাস্তাটা অনেক বেশি দারুণ। ২০১৫ এর ডিসেম্বরে একবার সাজেক গিয়েছি। বিস্তারিত জানা যাবে সাজেক ভ্যালি ও খাগড়াছড়ি তে দুই দিন লেখাটিতে। এবার গিয়েছি আমরা ৯জন। আরিফ, হিরা, রুবেল, আফরিন, শরিফ ভাই, আসগর ভাই, নিলাভ ভাই এবং ভাবী।

 

সাজেক যাওয়ার পথে অনেক গুলো চেক পয়েন্ট রয়েছে। এগুলো থেমে এন্ট্রি করতে হয়। এ ছাড়া এখন এসকোর্ট টিম সাথে দেওয়া হয়। প্রতিটা জীপ এর জন্য তো আর আলাদা আলাদা এসকোর্ট টিম দিবে না, তাই সব গুলো জীপ বা চান্দের গাড়িকে এক সাথ হতে হয়। এরপর এসকোর্ট টিম সব গুলো জীপকে নিয়ে রওনা দেয় সাজেকের উদ্দেশ্যে।

আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে বাঘাইহাট বাজারে। আমরা বলতে গেলে সবার আগে এসে এখানে পৌছাই। তাই অপেক্ষাও সবচেয়ে বেশি করতে হয়েছে। এখানে নেমে আমরা আখ কিনে নিয়েছি। ডাব খেয়েছি। এরপর এদিক সেদিক হাটা হাটি করেছি। সাজেক আসার পথে অনেক জায়গাতেই দেখছি ফুলের ঝাড়ু শুকানো হচ্ছে। অনেক অনেক ঝাড়ু। ঢাকায় যত ফুলের ঝাড়ু আসে, সব গুলো সম্ভবত এই পাহাড়ি এলাকা থেকেই আসে।

ফুলের ঝাড়ু রোদে শুকানো হচ্ছে

 

বাঘাইহাট বাজারের কাছে একটা শুকনো নদী

সাজেকে চান্দের গাড়ির ছাদে করে যাওয়া খুবি এক্সাইটিং।  মূল পর্যটন এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফিট উপরে। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। চান্দের গাড়ি করে প্রায় ২-৩ ঘন্টা লেগে যায় পৌছাতে। পাহাড়ি রাস্তায় একবার গাড়ি নিচে নামে, একবার উপরে উঠে। একটু বিপদজনক। কিন্তু ঠিক মত ধরে বসতে পারলে দারুণ লাগে। এ ছাড়া গাড়ির ভেতর থেকে সব কিছু সুন্দর ভাবে দেখাও যায় না। ছাদ থেকে সব কিছু সুন্দর ভাবে দেখা যায়। দেখা যায় পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য। একটাই সমস্যা। আপনার চেহারার রঙ বদলে যাবে!

সাজেকের পথে

সাজেক যাওয়ার পথে অনেক জায়গায় দেখলাম আগুণ জ্বলে। যাওয়ার পথেও দেখেছি, আসার পথেও দেখেছি। আগুণ দিয়ে সব পোড়ানো হয় ঝুম চাষ করার জন্য। কিন্তু এতে পাহাড়ের তো ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় পাহাড়ে বাস করা বিভিন্ন পশু পাখির।

আগুন আগুন
হুক্কা

সাজেক এসে সবাই সাধারণত রুইলুই পাড়াতে থাকে। রুইলুই পাড়ার পর হচ্ছে কংলাক। কংলাক পাহাড়ের উপর একোটা রিসোর্ট রয়েছে রক প্যারাডাইজ নামে। আমরা থেকেছি এই রক প্যারাডাইজে। এখানে থাকার জন্য রুমের পাশা পাশি রয়েছে তাবু এবং মাচা।

 

 

থাকার জন্য তাবু
ছায়াতে বসে চারপাশ দেখার জন্য মাচা।

চান্দের গাড়ির ঝাকুনি খেতে খেতে আসার কারণে অনেক অনেক টায়ার্ড হয়ে যাই আমরা। রক প্যারাডাইজে এসে সবাই রেস্ট নেই। সাজেকে এসে খাবার অর্ডার দিতে হয়। এরপর এরা তৈরি করে। আমাদের ক্ষিদে থাকা সত্ত্বেও খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমরা যে যার মত করে রেস্ট নেই। খাবার খেতে খেতে চারটা ভেজে যায়। এরপর যে যার মত করে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে।

রাতে আমরা ছিলাম মাছার উপরে। সবাই মিলে আড্ডা দিলাম। এরপর খাওয়া দাওয়া করে এসে ঘুম। আমাদের প্ল্যান ছিল সাজেক এক রাত থেকে পরের দিন বান্দরবন যাওয়ার। সাজেক এসে ভালো লাগায় সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় দুই দিনই এখানে থাকবে।

সকালে উঠে নাস্তা করে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করলাম। এরপর রোদ বাড়তে থাকায় রুমে এসে রেস্ট নিলাম। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বের হলাম রুইলুই পাড়ার উদ্দেশ্যে। শুক্রবার থাকায় দেখলাম অনেক অনেক পর্যটক এসেছে। ঘুরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আমরা রওনা দিলাম কংলাক, আমাদের রিসোর্টের উদ্দেশ্যে।

একটি চাঁদ

রাতে আমাদের জন্য বারবিকিউ করা হয়েছে। সবাই মিলে বসে বসে গল্প করলাম।  এরপর এক সময় এসে বলল বারবিকিউ রেডি। আমরা গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। রাতেও দেখলাম পাহাড়ের অনেক জায়গায় আগুন। পরের দিন ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অনেক ভোরে, সাড়ে চারটার দিকে। ঘুমানোর চেষ্টা না করে বের হয়ে পড়লাম। বালিশ নিয়ে চলে গেলাম মাছার উপর। ঐখানে বসে বসে সূর্যদয় এর অপেক্ষা করতে করতে বই পড়লাম। ভোরের দিকে অনেক দূরে একটা পাহাড়ী মোরগ ঢেকে উঠল। ঐটাকে সাড়া দিতে আরেকটা… এরপর আরেকটা। এভাবে একটা আরেকটার সাথে কথা বলতে লাগল।

 

পাহাড়ে সূর্যদয়
কুয়াশা আবৃত পাহাড়

 

ছবি তোলার পর বলে – ২০ টাকা দ্যান

কংলাকে কোন নেটওয়ার্ক ঠিক মত পাওয়া যাচ্ছিল না। রবির ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছিল একটু একটু। রবি সিম ছিল আসগর ভাই এর কাছে। উনি হটস্পট অন করত, আমরা সবাই কচ্ছপ গতির নেট ব্যবহার করতাম। আসগর ভাই একটু দূরে গেলেই সবাই চিৎকার করে আসগর ভাই বলে ডাকা শুরু করত!

সকালে আস্তে ধীরে সবাই ঘুম থেকে উঠল। আমরা নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। রক প্যারাডাইজে চেকইন করার সময় রুম ভাড়া একটা বলল, চেকআউটের সময় আরেকটা। পরে ওদের মালিকের সাথে কথা বলে সমাধান করতে হলো। ব্যাকপ্যাক নিয়ে কংলাক থেকে নামলাম। এরপর রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে।

খাগড়াছড়িতে কিছু সময়

খাগড়াছড়ি পৌছাতে পৌছাতে দুপুর হয়ে গেলো। দুপুরের খাবার ক্ষেতে হবে। সাধারণত চান্দের গাড়ির ড্রাইভার নিয়ে যায় মনটানা রেস্টুরেন্টে। মনটানার খাবার তেমন একটা ভালো না। গতবার খেয়েছি সিস্টেমে। সিস্টেম রেস্টুরেন্ট একটু দূর। সিস্টেমের মত আরো কয়েকটা আছে খাগড়াছড়িতে। এবার নতুন একটাতে নিয়ে গেলো। নাম ভুলে গিয়েছি। এখানের খাবারও ভালো ছিল।  দুপুরের খাওয়া খেয়ে আমরা চলে গেলাম আলুটিলা গুহাতে। গুহা দেখে গেলাম ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে। এখানে থাকতে থাকতে সন্ধ্যা নামল। আমরা বাস স্ট্যান্ডের দিকে গেলাম। রাত নয়টার দিকে বাস ছাড়বে। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে রেস্ট নিলাম। চান্দের গাড়ির ড্রাইভার বলল এই রেস্টুরেন্টের খাবারও নাকি ভালো। আসলে জগন্য ছিল। নাম মাত্র খাওয়া দাওয়া করলাম। এরপর রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।

 

পর্যটকের দল

 

আলুটিলা থেকে খাগড়াছড়ি শহর

 

 

1 thought on “সাজেক ভ্যালিতে দুইদিন”

  1. সাজেক যাওয়া,আসার সময় ছোট বাচ্চারা দেখা মাত্রই হাত নাড়ে।ওইটা কিন্তু অনেক ভাল লাগে। Capture করলে ভালই হতো।

    Reply

Leave a Reply