সক্রেটিস একটা কথা বলতেন এমন, ‘যে জানে যে কাজটি ভালো, সে ঐ ভালো কাজটিই করবে’। সক্রেটিসের জন্ম ইসলাম এমনকি খ্রিষ্টান ধর্ম পৃথিবীতে প্রচারের আগে। এটা বলার কারণ হচ্ছে তখনই তিনি শান্তি প্রচার করতেন, জ্ঞান প্রচার করতেন। সক্রেটিসের ফিলসফি আমার কি যে ভালো লাগত। প্রথম উনার কথা শুনেছি হাইস্কুলে থাকতে, আমার এক শিক্ষকের কাছে। স্যার একটা কোট বলেছিলেন এমন ‘I to die, and you to live. Which is better God only knows.’ এরপর সক্রেটিস সম্পর্কে আরো কিছু বলেছিলেন। কোটটা তখন স্যার ব্যাখ্যা করে দিয়েছিলেন। ‘আমি মরে যাচ্ছি, তোমরা বেঁচে আছো, এর মধ্যে কোনটা ভালো, সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন’। সক্রেটিস এই কথাটা বলেছেন যখন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৫০০ জন বিচারক বিচার করতে বসে। অপরাধ? মানুষের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করা। সক্রেটিস জ্ঞান বিতরণ করতেন অনেক সুন্দর ভাবে। কাউকে সরাসরি কোন কিছু বলতেন না। সবাইকে প্রশ্ন করতেন। প্রশ্ন করতে করতে এক সময় যাকে প্রশ্ন করতেন, তার নির্বুদ্ধিতা তাকে দেখিয়ে দিতেন। সবার মধ্যেই জ্ঞান বা বুদ্ধি রয়েছে। উনি শুধু মাত্র সবার মধ্যের ঐ জ্ঞান বা বুদ্ধিটুকু বের করার কাজ করতেন যেমন একজন ধাত্রী সন্তান জন্ম দেন না, শুধু সন্তান জন্ম দিতে সাহায্য করেন। উনি বলতেন “I cannot teach anybody anything. I can only make them think” এখন যেমন অনেক অহংকারী মানুষ আছে, তখনও ছিল। ঐ সব মানুষেরা মানতে করতে চাইতেন না যে তারা অজ্ঞ। তাদের জ্ঞানের কত অভাব রয়েছে। সক্রেটিসের সাথে কথা বলতে গেলে তারা হতভম্ব হয়ে যেতেন। তারা সক্রেটিসকে অপছন্দ করা শুরু করলেন। আর এভাবে তখনকার প্রভাবশালীরা সক্রেটিসের বিরুদ্ধে বিচার বসান।
সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষ্যে ৫০০ জন বিচারকের মধ্যে অল্প কয়েকজনই এগিয়ে ছিল। যখন সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তখন এই কথা গুলো বলেনঃ
“The hour of departure has arrived, and we go our separate ways, I to die, and you to live. Which of these two is better only God knows. So much for saying “I’m sorry.”
ছোটবেলায় শুনা সক্রেটিসের এই কোটটা আমাকে অনেক ভাবেই প্রভাবিত করেছে। আমাকে হেরে যেতে শিখিয়েছে। সক্রেটিস তখন পারত ক্ষমা চেয়ে নিতে। উনি ক্ষমা চাইলে তাকে বেঁচে থাকতে দিত। উনি যদি এথেন্স ছেড়ে চলে যাওয়ার অঙ্গীকার করতেন, তাহলে তাকে হেমলক খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। কিন্তু তখন কি আমার এই প্রায় আড়াই হাজার বছর পর উনাকে মনে রাখতাম? রাখতাম না। উনি কত সুন্দর ভাবেই হেরে গিয়েও জিতে গিয়েছে।
উনি বিশ্বাস করতেন কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়, তা যদি মানুষ বুঝতে পারে, তখন সে ন্যায় কাজটাই বেঁচে নিবে। এটা এখনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারি না। কারণ আমরা অনেকেই বুঝি কোনটা সত্যিকারের ভালো, কোনটা সত্যিকারের খারাপ, এরপরও আমরা অনেকেই খারাপটাই বেঁচে নিব।
যদিও আমরা তাদেরকে এ জন্য দোষও দিতে পারি না। কারণ ভালো খারাপ বিচার করার ক্ষমতা কম থাকার কারণেই এমন হয় অনেক ক্ষেত্রে। তাৎক্ষণিক ভাবে যেটা ভালো মনে হয়, অনেকে ঐটাই পছন্দ করে নেই। চিন্তা করি না তার ইফেক্ট কতটুকু খারাপ হবে। আর এ জন্যই আমাদের সবার জানা দরকার। অনেক বেশি জানা দরকার। যেন আমরা যে কোন কিছু সঠিক ভাবে বিচার করতে পারি।
আবার আমার অনেকেই বিশ্বাস করি আমরা সব কিছু জানি। জানি বলেই নতুন কিছু জানতে চাই না। অথচ সক্রেটিস সবসময়ই মন খারাপ করে থাকতেন। কারণ? কত কমই না জানতেন উনি। যখনি মনে পড়ত উনি কত কমই না জানেন, তখনি কষ্ট পেতেন। আর আমরা তো সব কিছুই জানি। আমাদের জানার দরকার আছে নাকি? উনার আরেকটা কোটঃ
‘True wisdom comes to each of us when we realize how little we understand about life, ourselves, and the world around us.’
যতক্ষণ পর্যন্তনা মনে হবে কত কমই না জানি, কত কমই না বুঝি আমরা, ততক্ষণ পর্যন্তই জানতে, পড়তে হবে। এরপর? আরো অনেক বেশি জানতে হবে, আরো বেশি পড়তে হবে, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। কারণ তখন নিজের মধ্যে যে অভাব অনুভূত হবে, তা পৃথিবীর কোন ধন সম্পদ দিয়ে পূরণ হবে না 🙂