যে দুটি দিন নিয়ে ভাবা উচিত

দুই দিনের কথা ভাবলে সব কিছু সহজ ভাবে চিন্তা করা যায়।

যে দিন মারা যাবো। দেখব কোন কিছুই থেমে নেই। সবাই দিব্যি চলছে। হয়তো ভাবি আমি না থাকলে কে করবে সব। কত কিছুই তো করতে হয়। কিন্তু আসলে সবই চলতে থাকবে। এমনকি নিজের সব দখল হয়ে যাবে। নিজের বলতে আর কিছুই থাকবে না।

আরেকটা দিন হচ্ছে বিচারের দিন। দেখব অনেকে অল্প আমল নিয়েও জান্নাতে চলে যাচ্ছে। কেউ অনেক বেশি আমল নিয়েও জাহান্নামে যাচ্ছে। সবাই ভয়ে কাঁপছে। কিছু করার নেই। কোন কথা বলার পারমিশন নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। খাবার পানি নাই। কেউ কেউ ঘামের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। কেমন ভয়াবহ একটা দিন। ঐ দিন তো এই পৃথিবীর কিছুই কাজে আসবে না। ‘আমিত্ব’ বলতে কিছুই থাকবে না। এই পৃথিবীতে কত ক্ষমতাশীল, কত পাওয়ার, কত মামা চাচা। কোন কিছুই কাজে আসবে না।

সব কিছু দুনিয়া মুখী হলে সমস্যা হয়ে যাবে। আখেরাতে আটকা পড়ে যাবো। তাই বলে দুনিয়াতে ভালো কিছু করব না? অবশ্যই করতে হবে। নিজের সেরাটা করতে হবে। ইসলাম তাই বলে। এমনকি প্রতিটা মানুষের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ সহজ করে দেওয়া হয়। সে ঐ কাজটা করলে সহজে উন্নতি করতে পারে। নিজে কিসে ভালো, সেটা খুঁজে নিতে হবে। খুঁজে নিয়ে নিজের সর্বোচ্চটা দিতে হবে। শুধু মনে রাখতে হবে একদিন সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই তো! সব সহজ হয়ে গেলো। যেহেতু চলে যেতে হবে, সেহেতু অন্যের ক্ষতি করে তো লাভ নেই। কার জন্য অন্যের ক্ষতি করব? নিজের জন্য? নিজের জন্য ঠিক কতটুকু দরকার? অন্যের ক্ষতি করে যতটুকু গ্রহণ করছি, তার সবটুকু কি ভোগ করে যেতে পারব? এই প্রশ্ন গুলো করতে পারলে অন্যায়ের হার ও কমে যাবে। লোভ লালসা কমে যাবে।

আল্লাহর নিক্তি অনেক সূক্ষ্ম । কাকে কতটুকু সুবিধে দেওয়ার পর সে কতটুকু কাজে লাগালো, সে অনুযায়ী বিচার হবে। পৃথিবীতে হয় উল্টো। যার সম্পদ যত বেশি, বিচার সিস্টেম তাকেই আরো বেশি সুবিধা দেয়। ক্ষমা পেয়ে যায়। পৃথিবীতে ধনীরা সুযোগ পায়। আখেরাতে সুযোগ পাবে গরীবরা। এমনকি জান্নাতে যারা যাবে, তাদের বেশির ভাগই হচ্ছে পৃথিবীতে দরিদ্র। ধনীদের সম্পদের হিসেব দিতে হবে। গরীবদের তো সম্পদই কম, হিসেব আর কি দিবে। পই পই হিসেব কাকে বলে, আমরা ঐ দিন দেখব। আল্লাহ তায়লা যদি আমাদের হিসেব সহজ না করেন, নিস্তার নেই।

সব কিছু পাওয়ার আশায় ইঁদুর দৌঁড় দেওয়া অবস্থায় একটু থামা কি উচিত নয়? একটু ভাবা উচিত নয়? ঐ বিশেষ দুই দিন নিয়ে ভাবলেই জীবনের সত্যিকারে মিনিং খুঁজে পাবো। দৌঁড়ের মধ্যেও তখন শান্তি পাবো। কারণ তখন জানব, একদিন চলে যেতে হবে। একদিন সব কিছুর হিসেব দিতে হবে। যে জিনিসটা আমার দরকার নেই, তার হিসেব আমি কেন দিব?

Leave a Reply