বুধবারে রায়হান ভাইকে জিজ্ঞেস করি, রায়হান ভাই আপনারা এই সপ্তাহে সিলেট যাবেন? রায়হান ভাই বলল যাবো। আমি বললাম আমিও যাবো। উনি বলল ঠিক আছে, আমরা টিকেট কেটে রাখব। রায়হান ভাই এবং রাজ ভাই পরে টিকেট কাটল অনলাইনে। বৃহস্পতিবার সকালে টিকেট দিয়ে গেলো আমাদের অফিসে। হুট করে করা প্ল্যান। সিলেট কোথায় ঘুরব, কার সাথে ঘুরব কিছুই ঠিক করা হয় নি।
বৃহস্পতিবার অফিস করে বাসায় গিয়ে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। আমি রায়হান ভাই আর রাজ ভাই। গাবতলি থেকে বাস ছাড়বে। আমরা গাবতলি এসেছি CNG করে।
CNG তে বসে একটা স্ট্যাটাস দিলাম, সিলেট যাচ্ছি। সুহৃদ, আমার কাজিন বলল তাকে জানাইনি কেনো, সেও আসত তাহলে। আমি বললাম এখন রওনা দিলে সকালে এক সাথে ঘুরা যাবে। তখন সাড়ে এগারোটা রাতের। সে বলল সকালে রওনা দিয়ে আসবে। আমি বললাম ঠিক আছে। সুহৃদের সাথে আছে সাইফুল।
প্রায় বারোটার দিকে বাস ছেড়েছে। সকাল সাড়ে ছয়টায় সিলেট এসে পৌঁছেছি। সিলেট এসে রায়হান ভাই এর বাসায় উঠেছি। উনি বলল কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে, তারপর ঘুরতে বের হওয়া যাবে। আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। সাড়ে এগারোটার দিকে উঠে নাস্তা করে বের হলাম। যাবো SUST এ। রায়হান ভাই CNG তে উঠিয়ে দিল।
আমি এর আগে একবার সিলেট এসেছি। তখন শুধু বিছানাকান্দি ঘুরেছি। বিছানাকান্দি ভ্রমণ এ গিয়ে ঐ ট্যুর লগটি দেখতে পারেন। ঐ সময়ে শহরে একটু ঘুরেই আবার ঢাকায় ফিরেছি। কারণ আমার পরীক্ষা ছিল। ঘুরতে পারি নি ঠিক মত। SUST এ ও যাওয়া হয় নি। সাস্টে এসে ইবতিহাজ আবরার ভাই কে কল দিলাম। উনি বললছিল সাস্টে আসলে উনাকে যেন জানাই। এদিকে আজ শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়তে হবে। আমি সাস্টের সেন্ট্রাল মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে নিলাম। এরপর ইবতিহাজ ভাই এর সাথে দেখা। উনি সাস্টের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখাতে লাগল।
ইবতিহাজ ভাই আমাকে কোন বিল্ডিং এ কিসের ক্লাস হয় ইত্যাদি জানালো। যেমন একটা বিল্ডিং দেখিয়ে বলল এখানে আগে ড্রাম, গিটার প্র্যাকটিস করত। সারাক্ষণ সব শব্দ বের হতো এখান থেকে। এখন তাদেরকে অডিটোরিয়ামে একটা রুম দেওয়া হয়েছে। শহীদ মিনার দেখাতে নিয়ে গেলো। শহীদ মিনারটা একটা টিলার উপরে। সুন্দর করে তৈরি করা।
এরপর রকিবুল ভাই এসেছে। সাস্টে আসলে উনাকেও ফোন দিতে বলেছিল। ফোন দেওয়ার পর উনি এসেছে। এক সাথে টং এ বসে চা খেলাম। ততক্ষণে সুহৃদ আর সাইফুল এসে সিলেট পৌঁছিয়েছে। তাদের সাথে কথা হচ্ছিল তারা আসলে আমরা রাতারগুল যাবো। আমি সাস্ট থেকে রকিবুল ভাই এবং ইবতিহাজ ভাই এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আম্বরখানা এসেছি। এখানে সুহৃদ এবং সাইফুল অপেক্ষা করছিল। আম্বর খানা থেকে CNG নিয়ে রাতারগুল চলে গেলাম। রাতারগুল যাওয়ার রাস্তা ভয়াবহ খারাপ। ডেন্সিং কার ফীল পাওয়া যায়।
আমরা সাড়ে চারটার দিকে রাতারগুল গিয়ে পৌঁছিয়েছি। রাতারগুল গিয়ে দেখি অনেক পর্যটক এসেছে আমাদের মত। মাইক্রো, CNG নিয়ে। রাতারগুলো হচ্ছে একটা হাওর। প্রথম দেখাতে মনে হলো এটার স্পেশালিটি কি? এত কষ্ট করে আসলাম। তাছাড়া আমি প্রতিবার ভ্রমণে বের হলে একটা ব্লগ লিখি। এটা নিয়ে কি লিখব?
ঐখানে অনেক গুলো হাঁস খাদ্য খুঁজতেছিল। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। তখন একজন এসে বলল এই হাঁস গুলো তো একদিন মরে যাবে, কিন্তু ছবিটা থেকে যাবে। ছবির মধ্যে হাঁস গুলো বেঁচে থাকবে। অনেক সিম্পল কথা। কিন্তু অনেক গভীর। যে বলল, উনি বলল হাঁস গুলো উনার। এরপর পরে জানতে পারলাম এখানে যত গুলো নৌকা আছে, সব গুলোর ম্যানেজার উনি।
আমরা বললাম আমাদের একটা ছোট নৌকা দিন। আমরা মাত্র তিনজন। নৌকা এবং মাঝি একজন দিল আমাদের সাথে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কত টাকা দিতে হবে। বলল আপনি ফিরে এসে খুশি হয়ে যা দিন, তাতেই হবে। আমি অনেক বার জিজ্ঞেস করলাম। উনি একই কথা বলল। আমি ভয় পাচ্ছিলাম ফিরে আসলে যদি কোন ঝামেলা হয়। পরে কোন দাম ঠিক করা ছাড়াই নৌকাতে উঠলাম।
নৌকা দিয়ে আস্তে আস্তে যেতে লাগলাম। ঐখানে দূরে একটা ওয়াচ টাওয়ার দেখা যাচ্ছিল। আমরা ঐখানে যাবো। কিছুদূর যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম এত মানুষ এখানে কেন আসে। হাওড় এর কিছু দূর যাওয়ার পর খালি বিল টা পার হলেই আসল সৌন্দর্য। গাছের মাঝখান দিয়ে নৌকা দিয়ে চলতে কি যে ভাল লাগছিল। উপরে গাছ। নিচে পানি। আমরা নৌকাতে আস্তে আস্তে যাচ্ছি। অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ। মাঝি গান গাওয়া শুরু করল। দারুণ লাগছিল। বার বার মনে হচ্ছিল আরো আগে আসলে তো আরো বেশিক্ষণ এখানে থাকা যেতো।
অনেক পর্যটকের দেখা পেলাম। কেউ কেউ গোসল ও করছিল হাওড় এর পানিতে। আমি জামা কাপড় নিয়ে গেলে আমিও করতাম। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল আমরা আস্তে আস্তে ফিরে আসলাম। ঐ ম্যানেজারের হাতে ৩০০ টাকা দিয়েছি। ম্যানেজার টাকা গুণেও দেখে নি। কোন কথাও বলে নি। ভালো লেগেছে ব্যাপারটা। আর মাঝি মামাকে ৫০টাকা বকশিশ দিয়েছিলাম।
শহরে ফিরতে ফিরতে সাড়ে আটটা ভেজে গেলো। যে CNG নিয়ে গিয়েছি, সেটাই আমাদের ফেরত নিয়ে আসল। আম্বরখানা থেকে রাতারগুল আসা যাওয়ার মিলে ৮০০ টাকা নিয়েছে। আম্বরখানা ফিরে এসে হোটেলে বুক করে হোটেলে উঠলাম। এরপর ফ্রেস হয়ে বের হয়ে পড়লাম রাতের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে।
এর আগের বার উনদাল নামক রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়েছি। দারুণ লেগেছিল। তাই এবার ও খুঁজে খুঁজে উনদালে চলে গেলাম। ঐটা সিলেটের জিন্দাবাজারে। এবার ও দারুণ লেগেছে। খাবার খেয়ে আমি রায়হান ভাই এর বাসায় গেলাম। ব্যাগ রেখে এসেছিলাম উনার বাসায়। ব্যগ আনতে গিয়েছি। এরপর হোটেলে।
হোটেল রাত ১২টায় বন্ধ করে দেয়। তাই বলে ভাবিনি শার্ফ বারোটায় বন্ধ করবে। রায়হান ভাই এর বাসা থেকে আসতে আসতে একটু দেরি হচ্ছিল। হোটেল থেকে ফোন করে বলল যেন দ্রুত আসি। আমি বললাম আর ৫ মিনিট লাগবে। তখন তারা বলল যেন ৫ মিনিটই লাগে। এর বেশি হলে গেট বন্ধ করে চলে যাবে। আমি পাঁচ মিনিট এর মধ্যে গিয়ে দেখি ওরা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
শনিবার সকাল নয়টার দিকে রুম থেকে বের হলাম। এরপর নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা করে গিয়েছি হজরত শাহজালাল এর মাজারে। সেখান থেকে গিয়েছি বাসস্ট্যান্ড, শ্রীমঙ্গল যাবো।
শ্রীমঙ্গল দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। আমাদের হাতে সময় কম থাকায় আমরা শুধু গিয়েছি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এখানে গিয়ে বানর দেখেছি। যদিও শুনলাম অন্যান্য প্রাণীও দেখা যাবে। কিন্তু আমরা দেখি নি। বনের মধ্যে হাঁটছি। সম্ভবত ৫ কেজি ওজোন কমছে। কেউ যদি সহজেই ওজন কমাতে চান, তাহলে বনে চলে যান। নাই বসার জায়গা, নাই কিছু খাওয়ার জায়গা। হাঁটতে থাকুন। ওজন কমতে বাধ্য।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে দুই একটা চায়ের দোকান রয়েছে। আমরা কিছুক্ষণ বসে চা খেলাম।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বের হয়ে আমরা CNG উঠলাম, শ্রীমঙ্গল ফেরার জন্য। এর মধ্যে একটা চা বাগানে নেমেছি। রাস্তার পাশে বিশাল বিশাল চা বাগান। দেখতে দারুণ লাগে। এরপর ফিরে এসেছি শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গলে এসে দুপুরের খাবার খেয়েছি। তারপর বাসে উঠে সিলেট ফিরেছি।
সিলেট ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সিলেটে এসে গিয়েছি DeviserWeb এর অফিসে। রায়হান ভাই দের অফিস। ঐখানে ফ্রেস হয়েছি। বের হয়েছি রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। আবারো উনডালে। ঐখানে Farhad ভাই এসেছে। খেতে খেতে কথা বলেছি। ১২টায় বাস। আমরা খেয়ে দেয়ে বাস স্ট্যান্ড এর দিকে গিয়েছি। এরপর ফিরে এসেছি ঢাকায়।
সাইফুল ছোট ভাই এর মত। এক সাথে এর আগেও ঘুরেছি। সুহৃদের সাথেও অনেক ঘুরাঘুরি হয়েছে। ওরা দুইজন সাথে থাকায় অনেক বেশি মজা হয়েছে। রায়হান ভাই অনেক হেল্প করেছে। অনেক দিন পর সুন্দর একটা ভ্রমণ হয়েছে।
সিলেটে ঘুরার জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। সব কিছু সুন্দর করে দেখতে চাইলে এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
jakir vai amar basa sylhet jodi ar kunodin asen plz amake bolben sob jayga gure gure dekabo apnar deya sob pust ami pori kub valo lage tnx
[email protected]