১৯ তারিখ ১০টার দিকে ৩০০ ফিট থেকে আমরা ১৫টি বাইক নিয়ে theBikerz (tBz) গ্রুপ থেকে ১৬ জন রওনা দেই সাজেকের উদ্দ্যেশ্যে। ৩০০ ফিট ধরে ঢাকা চট্রগ্রাম হাইওয়েতে এসে উঠি। রাস্তায় জ্যাম না থাকায় আমরা একটানা ড্রাইভ করে কুমিল্লা এসে ব্রেক দেই।
বড় টিম হওয়াতে সবাই এক সাথে ড্রাইভ করা যায় না। আমরা কয়েকজন পেছনে ছিলাম। অনেক্ষণ ড্রাইভ করেও সামনে যারা ছিল, তাদের ধরতে পারিনি। পরে উনারা ফোন করে জানালো উনারা পেছনে। একটা রেস্টুরেন্টে বসেছে। আমরা যারা সামনে, তারাও যেন কোথাও বসে খেয়ে নেই।
আমরা বসলাম আইরিশ হিলে। বীফ খিচুড়ি খেয়ে নিলাম। শরীর চাঙ্গা করার জন্য চা খেলাম। এরপর সবাই আসার পর আবার রওনা দিলাম। ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়েটা মোটামুটি দারুণ। যদিও বর্ষাকাল হওয়াতে বৃষ্টি এবং পানির কারণে কিছু কিছু জায়গায় গর্ত রয়েছে। তারপর ও ড্রাইভ করে মজা পাওয়া যায়। কষ্ট হয় না ড্রাইভ করতে।
অনেক্ষণ ড্রাইভ করে ফেনিতে একটা ফুয়েল পাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে চা খেয়ে নিলাম। ফেনির পর খাগড়াছড়ির দিকে ঢোকার রাস্তা। ঐ মোড়ে সবাই একসাথ হওয়ার পর আবার রওনা দেই। এবার পাহাড়ি রাস্তা। উঁচু নিছু। ভালোই লাগছিল ড্রাইভ করতে।
আস্তে আস্তে আমাদের এনার্জি কমে যাচ্ছিল। আগে একটানা অনেকদূর ড্রাইভ করলেও এখন কিছুক্ষণ পর পর একটু বসি। গল্প করি আবার রওনা দেই। সাজেক যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। আমরা খাগড়াছড়ি না থেমেই সাজেকের দিকে রওনা দেই।
খাগড়াছড়ি থেকে দিঘিনালাতে এসে আর্মির এস্কোর্টের মাধ্যমে সাজেকে যেতে হয়। এছাড়া সবার নাম এন্ট্রি করতে হয়। আর্মি ক্যাম্পে আমরা এন্ট্রি করে রওনা দেই সাজেকের দিকে।
এখানে হাজরাছড়া ঝর্ণার কাছে বসি। বসে আম, ডাব, আনারস, পেপে ইত্যাদি খেয়ে নেই। এরপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে রওনা দেই।
এবার আরো উঁচু নিচু রাস্তা। এর আগে চাদের গাড়িতে করে যখন এসেছি, কি যে থ্রিল অনুভব করেছি। এখন তো বাইকে করে, নিজে ড্রাইব করে। আগের থেকে অনেক বেশি থ্রিলিং। এছাড়া প্রচুর বাঁক। সামনে থেকে কেউ আসলে বোঝা যায় না। অনেক রিক্স।
দূর থেকে সাজেক দেখা যাচ্ছিল। আকাশের কিছু অংশে সাদা মেঘ।মেঘের পেছনে নীল আকাশ। আর দুই পাশেই হচ্ছে সবুজ এবং ঘন গাছপালা। দারুণ লাগছিল সব কিছু। সাজেকের কাছা কাছি শেষ অংশ বেশি খাড়া। শক্তিশালী গাড়ি গুলোও এই অংশ উঠতে একটু কুঁই কুঁই করে। আমরা সবাই একটানা উঠে যাই সহজেই। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা ছাড়াই সাজেক পোছাই।
সাজেক পৌছে ০ পয়েন্টে এসে রেস্ট নিচ্ছিলাম। বসে বসে আইসক্রিম খেলাম৷ চারপাশ দেখতে লাগলাম। ঐখানে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে। গাছটির ছায়াতে বসে গল্প করলাম সবাই। কি সুন্দর বাতাস বইছিল। আমাদের সকল ক্লান্তি দূর করে দিচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল সেখানেই ঘুমিয়ে নেই কিছুক্ষণ।
কয়েক জন গেলো রুম ঠিক করতে। রুম ঠিক করার পর আমরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আজ জুমাবার। এখানে একটা মসজিদ ছিল। মসজিদে এসে নামাজ পড়ে নিলাম। এরপর বের হলাম দুপুরের খাবার খেতে।
চিম্বুক নামম একটা রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খেলাম। ২৫০ টাকার প্যাকেজ। মরিচ ভর্তা, কচি বাঁশ ভাজি, মুরগি, ডাল, আলুভর্তা, ভাত এবং খিছুড়ি। খাবার যথেষ্ট টেস্টি ছিল।
খেতে খেতেই বৃষ্টি শুরু হলো। এখানে পানির খুব অভাব। লোকাল অনেকেই বৃষ্টিতে গোসল করে নিল। বৃষ্টি একটু কমার পর রুমে ফিরলাম। আমাদের কটেজের ভেতর দিয়ে মেঘ যাচ্ছে। বারান্দায় বসে উপভোগ করলাম। কি যে ভালো লাগার মত অনুভূতি, তা বলে বুঝানো যাবে না।
এরপর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে বিকেলে উঠলাম। সাজেকে ঘুরে দেখতে বের হলাম। কংলাক সাজেক ০ পয়েন্ট থেকে ২ কিলো দূরে। পাহাড়ি রাস্তা। আমরা কয়েকজন বাইক নিয়ে ঘুরে কংলাকের দিকে গেলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে ফিরে এলাম সাজেকের ০ পয়েন্টে।
নামাজ পড়ে আমরা হেলিপ্যাডে বসে গল্প করলাম। রেস্টুরেন্টে গিয়ে বলে এলাম আমাদের জন্য চিকেন বারবিকিউ তৈরি করার জন্য। ওরা জানালো বারবিকিউ সব রেডি করতে দেরি হবে। ৯টার দিকে বারবিকিউ খেলাম সবাই মিলে। সন্ধ্যার দিকে খেতে পারলে দারুণ হতো। এরপর আবার হেলিপ্যাডে ফিরে এলাম। সবাই মিলে মজা করলাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমাদের গল্পের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল বাইক! হেলিপ্যাডে শুয়ে থাকতে কি যে ভালো লাগছিল। আকাশ অনেক পরিষ্কার ছিল। এক পাশে মেঘের ভেতর থেকে একটা চাঁদ উঁকি দিচ্ছিল। ঢাকা থেকে যে দিন যাই আমরা, ঐ দিন ঢাকায় ছিল ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা। সাজেকে দিনে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকলেও বিকেল থেকে মন প্রশান্ত করে দেওয়ার মত বাতাস ছিল। কি যে ভালো লাগছিল আমাদের।
১১টার দিকে আবার খাবার খেলাম। যদিও পেটে যায়গা নেই। তারপর ও ব্যাম্বো চিকেন দিয়ে ভাত খাওয়ার লোভে খেতে বসলাম। সত্যিকারের বাঁশ খাওয়া! খাবার ভালোই ছিল। খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
শনিবার। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইক নিয়ে আবার হেলিপ্যাডে চলে গেলাম। সকালে একবার বৃষ্টি হয়েছিল। সব কিছু কেমন স্নিগ্ধ। শীতকালে সব কিছু কেমন একটা কুয়াশায় আবৃত থাকে। এখন খুবি পরিষ্কার। দূরের পাহাড়টিও খুব স্পষ্ট বোঝা যায়। দেখা যায় পরিষ্কার সবুজ পাহাড়ের চুড়ায় মেঘের ভেতর দিয়ে এক টুকরো নীল আকাশ। বর্ষাকালে পাহাড়ের সত্যিকারের সৌন্দ্যর্য দেখা যায়। এত দূর বাইক চালিয়ে আসা সার্থক মনে হয়। ইচ্ছে করে থেকে যেতে।
হেলিপ্যাড থেকে ফিরে নাস্তা করে নিলাম। আমরা সাজেক থেকে রাঙ্গামাটি যাবো। এসকোর্ট হচ্ছে ১০টার দিকে। তাই নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম। সাড়ে দশটার দিকে রওনা দিলাম রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। এ জন্য প্রথমে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। যদিও সাজেক রাঙ্গামাটির মধ্যেই পড়েছে।
যতটুকু উপরে উঠেছি, এখন আবার ততটুকু নামতে হবে। উঠা থেকে নামা আরেকটু কঠিন। উঠার সময় ব্যালেন্সিং এ খুব একটা সমস্যা না হলেও নামার সময় খুব সতর্ক ভাবে ব্যালেন্স করতে হয়। আস্তে আস্তে নামতে হয়। আস্তে আস্তে আমরা যেতে লাগলাম রাঙ্গামাটির দিকে। দুই পাশ এত সুন্দর। যেতে ইচ্ছে করে না। তারপর ও নতুন আরেকটা সুন্দর জায়গার সন্ধানে তো আমাদের সামনে যেতে হবে, তাই না?
হাজরাছড়া ঝর্ণার ঐখানে নেমে আমরা পেয়ারা, ডাব, পেঁপে ইত্যাদি খেলাম। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে এরপর আবার রওনা দিলাম। আমিনুল হক ভাই আমাদের বলছিল দীঘিনালাতে থামতে। কফি খাওয়ার দাওয়াত। উনার ভাই এর সুন্দর একটা কফি হাউজ রয়েছে দীঘিনালাতে। স্বপ্নযাত্রা রিসোর্ট নামে। ঐখানে গেলে আমাদের ফ্রাইড চিকেন, স্যান্ডুইস, কফি এবং ড্রিংস খাওয়ায়। খাওয়া দাওয়া করে আমরা আবার রওনা দেই।
খাগড়াছড়ি যেতে যেতে বৃষ্টি শুরু হলো। আমার কাছে রেইনকোট থাকা স্বত্বেও তা না পরে একটা ছাউনিতে দাঁড়িয়েছি কিছুক্ষণ। এরপর বৃষ্টি কমার পর রওনা দিয়েছি। আমাদের সাথে বাকিরা পেছনে ছিল তখনো। আমি আর নাঈম (এভ্রিল) ভাই খাগড়াছড়ির কাছে এক জায়গায় দাঁড়াই। বৃষ্টি হচ্ছিল তখন। এখানে দেখলাম এক মুরুব্বি আম বিক্রি করছে। জিজ্ঞেস করলাম কত টাকা করে কেজি? বলল ৪০ টাকা। মাত্র ৪০ টাকা! ঢাকায় একই আম ১২০ টাকার বেশি। ৪টা আম প্রায় দেড় কেজি হয়েছে। আমি ভেবেছি নাঈম ভাই ২টা খাবে, আমি ২টা খাবো। পরে জানালো উনি খাবে না। আমি বসে বসে একটা একটা করে সব গুলো খেলাম। বাকিরা ততক্ষণে চলে এসেছে। এরপর রওনা দিলাম। খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য ভেতরের দিক দিয়ে একটা রাস্তা আছে। সুন্দর রাস্তা। পাহাড়ের মাঝে দিয়ে বাইক চালাতে দারুণ লাগছিল। দুই পাশেই সবুজ গাছ পালা। দূরে বিশাল বিশাল পাহাড়। সব গুলো পাহাড় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল।
মাঝে মাঝে আমরা থেমে চা খেয়ে নিয়েছিলাম। কোথাও কোথাও থেমে ছবি তুলছিলাম। রাঙ্গামাটি পোঁছাতে পোঁছাতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। খাবার খেতে হবে। দুপুরে তেমন একটা খাওয়া হয়নি। রিজার্ভ বাজারের ঐ দিকে একটা হোটেলে বসি খাওয়ার জন্য। গ্রীন রেস্টুরেন্ট নামে। বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা, মাছ মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নেই। খাবার গুলো খুবি দারুণ লেগেছিল। হোটেলে ফিরে এসে সবার সাথে একটু গল্প করে ঘুমাতে গেলাম। পরে মনে পড়ল পানি খাওয়া দরকার। হোটেলের নিচেই দেখেছি ডাব বিক্রি করে। ডাবের পানি খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
রবিবার। সকালে উঠে নাস্তা করে নিলাম সবাই মিলে। এরপর আমরা ট্রলারে করে সুবলং ঝর্ণার দিকে গেলাম। লেকের পানি এখন ঘোলা। লেকের পানি খুব একটা সুন্দর না হলেও বাকি সব কিছু সুন্দর। কোথাও মেঘ, কোথাও রোদ, আবার কোথাও বৃষ্টি হচ্ছিল। যেখানে মেঘ, তার নিচের পানি গুলো কালো দেখাচ্ছিল। যেখানে রোদ, সেখানের পানি অন্য রকম দেখাচ্ছিল। মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও হচ্ছিল। আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। সুবলং ঝর্ণায় গিয়ে দেখলাম পানি খুবি কম। কয়েক দিন আগে মেঘালয় ঘুরে এসেছি। এখন কম পানির ঝর্ণা ভালো লাগে না। এরপর আরো দুই একটা ঝর্ণাতে নিয়ে গেলো আমাদের। তারপর নিয়ে গেলও চাং পাং নামক একটা রেস্টুরেন্টে। ঐখানে বসে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। ব্যাম্বো চিকেন, ফিস ফ্রাই, ভর্তা ইত্যাদি দিয়ে। এই ঘুরা ঘুরিতে সুন্দর জায়গা দেখার পাশা পাশি সুন্দর খাবার খাওয়ার ও ভালো সুযোগ হয়। ভালো লাগে। এই রেস্টুরেন্টের চারপাশ ও সুন্দর। বসার জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর কটেজ।
খাওয়া দাওয়া করে আমরা রওনা দেই রাঙ্গামাটি শহরে। হোটেলে গিয়ে বাইকের চাবি নিয়ে সবাই বের হয়ে পড়ি। গন্তব্য কাপ্তাই।
রাঙ্গামাটি থেকে ক্যাম্পটাই যাওয়ার জন্য ভেতরের দিক দিয়ে একটা সুন্দর রাস্তা রয়েছে। এক পাশে পাহাড়, আরেক পাশে লেক। চিন্তা করেন আপনি এমন একটা রাস্তা দিয়ে বাইক চালাচ্ছেন! অসম্ভব সুন্দর লাগছিল।
কাপ্তাই পোঁছাতে পোঁছাতে বিকেল। মূলত আমরা কাপ্তাই ড্যাম দেখতে যাবো। ঐখানে গেটে আমাদের আটকাল। আমরা যেতে পারব না। অনুমতি লাগবে, এটা সেটা। অনুমতি নেওয়ার পর বলল বাইক নিয়ে যেতে পারবেন না। দুইটা বাইক নিয়ে যেতে পারব শুধু। আমরা মানুষ ১৬ জন। নিতে পারব ২টা! রিকোয়েস্ট বা কোন কিছুতেই কাজ হয়নি। বাইক রেখে সবাই সিএনজি দিয়ে রওনা দিলাম। সেনাবাহিনীর এরিয়া। সুন্দর হওয়ারই কথা।
কাপ্তাই ড্যামে মোট ১৬টা গেট রয়েছে। আমরা যখন গিয়েছি, তখন দেখলাম ১৬টাই চালু। সব গুলো দিয়েই অনেক স্পিডে পানি যাচ্ছিল। দেখার মত দৃশ্য। ঐখানে কিছুক্ষণ থেকে আমরা বাইকের কাছে ফিরে এলাম। এরপর রওনা দিলাম রাঙ্গামাটির দিকে।
পথে বৃষ্টি শুরু হলো। পাহাড়ি একটা দোকানে দাঁড়ালাম আমরা। চা, কলা, বিস্কিট খেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কোন ফল আছে কিনা। বলল আনারস আছে। পাহাড়ি একজন গিয়ে আনারস নিয়ে এলো নিজের বাগান থেকে। ফ্রেস এবং পাকা। আমরা আনারস খেলাম। বৃষ্টি কমার পর এরপর আবার রওনা দিলাম। ততক্ষণে সূর্য ডুবে গিয়েছে।
হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। এরপর আমরা গেলাম রাতের খাবার খেতে। আবার ও রিজার্ভ বাজারের গ্রীন রেস্টুরেন্টে। খাওয়া দাওয়া করে রুমে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সোমবারে সকালে উঠে আমরা গেলাম একটা কাঠের কারুকাজের কারখানাতে। পুরো গাছের গুড়ি থেকে বিভিন্ন পাখি বা অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। আমিনুল হক ভাই আমাদের নিয়ে গিয়েছিল। এরপর সেগুলো দেখে রওনা দিলাম রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে। ব্রিজে হেঁটে অপর পাড়ে গেলাম। দেখে শহরে ফিরে একটা রেস্টুরেন্টে ডুকে সকালের নাস্তা করে নিলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল। কমে আসলে আমরা হোটেলে ফিরে ব্যাগ প্যাক করে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে। যদিও আমি ফেনি পর্যন্ত সবার সঙ্গে ড্রাইভ করব। এরপর লক্ষ্মীপুর চলে যাবো। নিজ বাড়িতে।
রওনা দেওয়ার একটু পরই বৃষ্টি শুরু হলো। ওয়েদার আপডেটে দেখলাম সারাদিনই বৃষ্টি হবে। তাই বৃষ্টিতে না থেমেই রওনা দিলাম সবাই। কেউ কেউ রেইনকোট পরে নীল, কেউ বৃষ্টিতেই ড্রাইভ করল। রেইনকোট পরতে আমার কাছে আনইজি লাগায় বৃষ্টিতে ভিজেই ড্রাইভ করছিলাম। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়া ঠাণ্ডা লাগছিল। একটা দোকানে থেমে একটা পলেথিন নিলাম। ঐটা টি-সার্টের ভেতরে বুকের উপর দিয়ে দিলাম। ঠাণ্ডাকে ছুটি! দারুণ কাজে দিল ছোট্ট এই হ্যাক।
রাঙ্গামাটি থেকে আমরা প্রথমে এসেছি হাটহাজারি। পথে ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হলো। একটা প্রাইভেট কার সিগনাল না দিয়ে টার্ণ নেওয়াতে মাহি ভাই পড়ে গিয়েছিল। যদিও খুব একটা ব্যথা কেউ পায়নি। এরপর হাটহাজারি থেকে ভাটিয়ারী হয়ে আমরা চট্রগ্রাম – ঢাকার হাইওয়েতে উঠি। ভাটিয়ারীর ভেতর দিয়ে যেতে হলেও অনুমতি লাগে। আর্মিদের এরিয়া। আস্তে আস্তে বাইক চালিয়ে আমরা ভাটিয়ারী পার হই।
হাইওয়েতে উঠার পর সুন্দর মত ড্রাইভ করে ঢাকার দিকে রওনা দেই। পথে আরেকটা এক্সিডেন্ট হয়। হাসিন ভাই সম্ভবত থামার সিঙ্গনাল দিয়ে ব্রেক করছিল। নাঈম ভাই হাসিন ভাই এর পেছনেই ছিল। সিঙ্গনাল না দেখে যখন দেখল হাসিন ভাইয়ের সাথে লেগে যাচ্ছে, তখন হার্ড ব্রেক করতে গিয়ে পড়ে যায়। হাতে ব্যাথা পায়। এছাড়া বাইকের হ্যান্ডেলও বাঁকা হয়ে যায়। বাইকের কিটে স্ক্রেচ পড়ে।
বাইক জার্ণি আসলেই খুব রিস্কি। কিছু এক্সিডেন্ট হয় হয়তো নিজের কারণে। বেশির ভাগই হয় অন্য মানুষের জন্য। রাস্তা না দেখে পার হওয়া, সিগনাল না দিয়ে লেন পরিবর্তন করা বা ইউটার্ণ নেওয়া, কুকুর, গরু, ছাগল ইত্যাদি রাস্তায় হুট করেই চলে আসা সহ নানা কারণে। আমরা সবাই সেফটি গার্ড পরেই ড্রাইভ করি। সেইফটি গার্ড দিয়ে হয়তো ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়, কিন্তু এক্সিডেন্ট হলে কিছু না কিছু ক্ষতি হয়ই।
আমি ফেনী মহীপাল এসে নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর রোডে ঢুকি। এরপর সোনাপুর হয়ে রামগঞ্জ পৌঁছাই। ততক্ষণে রাত ৮টা। বাকিরা রাত দশটার দিকে ঢাকায় পৌঁছায়। পুরা ট্যুরে ১০০০ এর ও বেশি কিলোমিটার বাইক ড্রাইভ করি আমরা। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে, বড় সড় কোন দূর্ঘটনা ছাড়াই সবাই সবার বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছি।
জাকির ভাই, ছবিগুলা খুবই সুন্দর হয়েছে। ফ্রেমিং চমৎকার! 🙂
অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া !!!
ধন্যবাদ