কয়েক দিন আগে হাসিন ভাই জিজ্ঞেস করে, রাজশাহী যাবা? আমি দুই হাত এক সাথে তুলে বলি যাবো। হাসিন ভাই বলল উনি নিজে ড্রাইভিং করবে। তখন তো আমি এক্সাইটেড। লং ড্রাইভে যাবে! দিন গুণতে শুরু করলাম।
এপ্রিলের ২ তারিখে রাজশাহী যাবে হাসিন ভাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম কখন। ভাইয়া বলল ৫টায়। আমি ধরে নিলাম বিকেল ৫টায়।
ড্রাইভার দেলোয়ার ভাই আমাকে রাত ৫টায় ফোন দিয়ে বলল রেডি হতে। উনি আসতেছে আমাকে তুলে নেওয়ার জন্য। আমার তখন বুঝতে বাকি থাকল না যে বিকেল ৫টায় নয়, ভোর ৫টার কথা বলছিল হাসিন ভাই।
আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে পড়লাম। সাধারণত আমি কোথাও বের হওয়ার আগের রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখি। আজ রাখিনি হাতে অনেক সময় আছে চিন্তা করে। পরে উল্টোটা হলো।
মাহফুজ ভাইকে উত্তরা থেকে পিক করে হাসিন ভাই এর বাসার সামনে গেলাম। ভাই নামলো। আমরা রওনা দিলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। হাসিন ভাই কেন রাজশাহী আসতেছে, তা আমি তখনো জানি না। আমি এতটুকু জানি যে আমি ঘুরতে পারব, তাই এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলাম।
গাড়িতে উঠে জানতে পারলাম হাসিন ভাই রুয়েটে স্পিকার হিসেবে যাচ্ছে। রুয়েটের ক্যারিয়ার ফোরাম আয়োজন করেছে। Better Career in IT ব্যানারে। হাসিন ভাই আমাকে আর মাহফুজ ভাইকে বলল আমরাও যেন কিছু বলি। গাড়িতে বসে বসে ঠিক করলাম কে কি নিয়ে বলব। আমি ঠিক করেছি অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে বলব।
সকালে নাস্তা করে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। আমরা নাস্তা করতে থেমেছি পার্ক ভিলেজ নামক একটা রেস্টুরেন্টে। দারুণ সার্ভিস। পরোটা, ডিম, ডাল, সবজি আর গরু ভুনা দিয়ে নাস্তা করলাম। এরপর আবার যাত্রা শুরু করলাম।
রাজশাহী যাওয়ার রাস্তাটা অনেক সুন্দর। দুই পাশে এখন সবুজ ধান ক্ষেত। মাঝখান দিয়ে সোজা রাস্তা। সুন্দর রাস্তা পেয়ে হাসিন ভাই ড্রাইভ করা শুরু করল। আমরা দু পাশ দেখতে দেখতে যেতে লাগলাম।
রাতে ঘুম কম হওয়াতে মাঝখান দিয়ে আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি রাজশাহী পৌঁছে গিয়েছি। হাসিন ভাই রুয়েটের পাশ দিয়ে আসার সময় বলল একটু দেখি আসি। সবাই গেলাম। হাসিন ভাই এবং মাহফুজ ভাই, দুই জনই রুয়েটের। একজন সিভিলের। আরেকজন কম্পিউটার সাইন্স এর। আমাকে হাসিন ভাই ভিবিন্ন ভবন দেখালো। কোথায় কি ক্লাস করেছে, কোন হলে থেকেছে, ইত্যাদি। দেখালো কোন ফোনের দোকান থেকে ঐ সময় ভাবীর সাথে কথা বলত।
রুয়েট থেকে বের হয়ে হোটেলে উঠলাম। আমরা উঠেছি হোটেল ওয়ারিশান এ। সুন্দর, গোছালো একটা হোটেল। ব্যাগ রেখে বের হয়ে পড়লাম, দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। তখন প্রায় ১টা ভাজে।
খাবার খেতে ঢুকেছি চিলিস এ। পদ্মার পাড়ে এসে যদি ইলিশ না খাই, তাহলে কেমন দেখায়। সরষে ইলিশ দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম আমরা। এক পিস ইলিশ খাওয়া শেষ না করতেই হাসিন ভাই আমার জন্য আরেক পিস অর্ডার দিল। বসে বসে খেলাম। দারুণ লাগল।
খাবার খেয়ে রুমে ফিরলাম। ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করার পরিবর্তে করলাম উল্টোটা। বাথরুমে ঢুকে বাথ ট্যাবে পানি ছেড়ে শুয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। তখন দারুণ ফ্রেস লাগছিল। এরপর বসে বসে স্লাইড তৈরি করলাম।
বিকেল ৫টার দিকে বের হলাম আমরা। রুয়েটে গেলাম। হাসিন ভাই এর ফ্রেন্ড আসছিল। উনি সহ। রুয়েটে গিয়ে উনার অন্যান্য ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা হলো। সবাই মিলে স্যারদের রুমে গেলো। স্যারদের সাথে বসে গল্প করল। হাসিন ভাই ছিলেন সিভিলের ছাত্র। এখন বাংলাদেশের একজন নামকরা প্রোগ্রামার। এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল স্যারদের সাথে। গল্প করতে করতে ইভেন্টের সময় হয়ে আসল।
ইভেন্ট শুরু হলো ৭টায়। হাসিন ভাই শুরু করল। মাঝখানে আমাকে সুযোগ দিল, আমি বললাম। এরপর বলল মাহফুজ ভাই। তারপর আবার হাসিন ভাই সবাইকে উৎসাহিত করার জন্য কথা বলা শুরু করল। প্রায় সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কথা বলেছে হাসিন ভাই। দারুণ লেগেছে।
ইভেন্ট শেষ করে ফিরতে ফিরতে ১১টার মত ভেজে গেলো। রুমে ফিরে ব্যাগ রেখে আমরা বের হলাম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। আমাদের সাথে ছিল অরিত্র আহমেদ। খেতে গিয়েছি বিদ্যুৎ নামক একটা হোটেলে। বাংলা খাবারের জন্য নাকি বিখ্যাত। ঐখানে গিয়ে ভাত, মাছ, মুরগি, খাসি ইত্যাদি দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর খেলাম রাজশাহীর বিখ্যাত লেবু চা। এখানে অন্য রকম ভাবে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে। ডিমের সাথে সরিষার তেল এবং পেয়াজ দিয়ে সুন্দর ভাবে দেয়। খেতে ভালো লাগে। ডিম ও খেলাম।
রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত, এটা সবাই জানি। এখন আমের মৌসুম নয়। তারপর ও ফলের দোকানে আম দেখলাম। দেখেই কিনে নিলাম কিছু। এরপর রুমে ফিরলাম।
রাতে যে যার কাজ করছি, এমন সময় বৃষ্টি শুরু হলো। হোটেলের বারান্দায় চলে গেলাম আমরা। বৃষ্টি উপভোগ করার জন্য। বারান্দায় সোফা ছিল। আমি নিরিবিলি অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। কুয়াশার মত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি গায়ে এসে লাগল। শরীর শীতল করে দিয়ে গেলো। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম এভাবে।
সকালে বের হয়েছি সাড়ে পাঁচটার দিকে। রাজশাহী থেকে আমরা বগুড়া যাবো। হাসিন ভাই উনার মায়ের সাথে দেখা করবে, তাই। মাহফুজ ভাই রাজশাহী রয়ে গিয়েছে। আমি আর হাসিন ভাই রওনা দিয়েছি বগুড়ার উদ্দেশ্যে। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। অনেক বেশি বৃষ্টি। গাড়ির ছাদে বৃষ্টি পড়ার শব্দ দারুণ লাগছিল। বৃষ্টির শব্দ এতই মোহনীয় যে আমার ঘুম চলে এসেছে। প্রায় ৮টার দিকে ঘুমুতে ঘুমুতে বগুড়া এসে পৌঁছিয়েছি। ঐটা ছিল হাসিন ভাই এর বোনের বাড়ি।
হাসিন ভাই এর আম্মু আমাদের জন্য রান্না করছিল। হাঁসের মাংস, চিংড়ি, ভর্তা সহ অনেক কিছু। আমরা খেয়ে আবার বের হয়ে পড়লাম, ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় প্রায় আড়াইটায় পৌঁছিয়েছি। শেষ হলো ছোট খাটো আরেকটি সুন্দর ট্যুর।
বগুড়া আসবেন একবার বলবেন না…………
You mean I don’t have to pay for expert advice like this an?romey!
আবার চলে আসেন ভাই রাজশাহীতে 🙂