- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, প্রথম দিনঃ সৈয়দপুর, রংপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমন, দ্বিতীয় দিনঃ রংপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, তৃতীয় দিনঃ নীলফামারী, তেঁতুলিয়া, বাংলাবান্ধা, পঞ্চগড়
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, চতুর্থ দিনঃ ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, পঞ্চম দিনঃ দিনাজপুর
উত্তরবঙ্গ ঘুরতে বের হয়েছি। রাতে দিনাজপুর ছিলাম। সকালে ঘুম ফ্রেস হয়ে নাস্তা করলাম। লিচু এবং আম দিয়ে। আগের দিনের অনেক গুলো লিচু এবং আম রয়ে গিয়েছে, সে গুলো। খাওয়ার পর আরো লিচু ছিল। সেগুলো ব্যাগে নিয়ে নিলাম। ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হয়ে নিচে এসে বসেছি, রোহান ভাই এর জন্য অপেক্ষা করছি। রুম ছেড়ে দিয়েছি। পরে হোটেলের এক কর্মচারি আমার টাউজার নিয়ে এসেছে, আমি ফেলে রেখে এসেছি। হোটেলের রিসিপশনে বসে আছি তখন। বের হয়ে গেলে ঐ টাউজারটা ফেলে চলে আসতাম। ভাগ্য ভালো ছিল।
সকালে গিয়েছি কান্তজিউ মন্দির। রোহান ভাই নিয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে এসেছি BKSP (Bangladesh Krira Shikkha Protishtan) এবং হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়তে। তারপর শহরে এসে নাস্তা করলাম। নাস্তা করে বাস স্টেশন এসে বগুড়ার টিকেট কেটে নিলাম। বগুড়া আসব।
দিনাজপুর থেকে বগুড়া আসতে এত সময় নিল তার উপর বগুড়ার এদিকে এসে বাস চেঞ্জ করল। মেইল বাস নামক সার্ভিস। অল্প কিছু জায়গা আসার জন্য এত সময় নিল। আবার মাঝখানে এসে আমাকে নামিয়ে দিল আরেকটা বাসে উঠার জন্য। আহ! সার্ভিস।
মহাস্থান গড় এসে নেমে গেলাম বাস থেকে। তখন 4.30, দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি তখনো। এত গরম! দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েছি কাছেই একটা হোটেলে।
মহাস্থান গড় বলতে আমি মনে করেছি পুরাতন বিল্ডিং হবে। ছবিতেও তেমন কিছু দেখেছি। তাই যখন মহাস্থান নেমেছি, তখন আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে মাজার। ফাউল জিনিস। আমি এদিক তাকাই, ঐ দিক তাকাই, মহাস্থান গড় দেখি না। মাজারের পাশে আতর বিক্রি করে। সাথে বই। আমারে দুইটা বই ধরিয়ে দিল। বই দুইটা নিলাম। সাথে দিচ্ছিল আতর, এটা সেটা। মাজারে দেওয়ার জন্য। কত কিছু যে বলল। আমি বললাম কিনব না। ওরা কত যে কথা বলতে পারে। আমি না বলছি, নাই। আতর, আগর বাতি এসব কিনি নাই।
পরে জানলাম পুরো এলাটাই হচ্ছে মহাস্থান গড়। মহাস্থান গড় বলতে যে ছবি দেখতাম, তা মূলত বেহুলার বাসর। সেখানে গেলাম। CNG তে উঠার পরই শুনলাম এখানে জাদুঘর কাছে। বেহুলার বাসর দেখে আবার এদিকে আসতে হবে জাদুঘর দেখতে হলে। যাই হোক, গেলাম বেহুলার বাসরে। দেখে তারপর আবার ফিরে এসেছি, যাদুগরের দিকে।
যাদুঘরে ঢুকেছি একদম শেষ সময়ে। সেখানে বিভিন্ন মূর্তি সহ অনেক কিছু রয়েছে। বের হয়েছি। ছবি না তুললে কি আর হয়?! ঐখানে দারওয়ানকে দেখিয়ে দিয়েছি কিভাবে ছবি তুলতে হয়। ও কয়েকটি তুলল। আমি চা খাওয়ার জন্য ওর হাতে কয়েকটি টাকা দিয়েছি। এরপর বলল আর তুলব কিনা, পরে ও আমাকে অনেক গুলো ছবি তুলে দিল। আমিও খুশি, সেও খুশি।
সেখান থেকে ফিরছি বগুড়া শহরে। Raqeeb Hassan ফোন দিচ্ছিল সকাল থেকে কয়েক বার। আমি কোথায় আছি, পৌঁছিয়েছি কিনা। কোথায় উঠব এসব নিয়ে। রাকিব থাকে ঢাকায়। তার ছোট ভাই রোমান কে পাঠালো আমাকে রিসিভ করতে। এরপর ঢাকা থেকে ফোন করে আবার আমার জন্য হোটেল ও ঠিক করে রাখল। হোটেলে এসে উঠলাম।
এত বেশি গরম। আমি কোন দিন মনে হয় নি এত ঘামিয়েছি আজকে যত ঘামিয়েছি।
হোটেলে এসে ফ্রেস হয়ে বের হয়েছি। গিয়েছি আকবরিয়াতে। নাস্তা করতে। ফালুদা, হালিম, দই সব এক সাথে! ভালোই লেগেছে। এরপর গিয়েছি দত্তপাড়া। ঐখানে গিয়ে দেখি গান হচ্ছে। কোন অনুষ্ঠান হচ্ছিল। তারপর আবার রুমে ফিরে এসেছি।
তাওহীদ ভাই নক দিল। উনি জিজ্ঞেস করল হাসান রনি ভাই এর সাথে দেখা হয়েছে কিনা। আমি বলি না, নাম্বার দিন। তারপর নাম্বার দিল। কল দিয়েছি। উনার সাথে এর আগে আমার দেখা হয় নি। কথাও হয় নি। নাম বলার পর আমাকে চিনতে পারল। তারপর জিজ্ঞেস করল আমি কোথায় আছি। আমাকে বলল উনি আসবে।
আমি সাড়ে দশটার দিকে গিয়েছি রাতের খাবার খেতে। আকবরিয়াতেই। উনি ফোন দিল। আকবরিয়াতে উনি চলে আসল। কিছু খেতে বললাম, কিছুই খেলো না। আমরা রুমে ফিরে আসলাম।
আকবরিয়া হোটেলে রাত ১২টার দিকে যেই খেতে যায়, তাকেই ফ্রি খাওয়ায়।মিসকিনদের জন্য আলাদা রান্না করে। অনেক আগ থেকে তাদের এ রীতি চলে এসেছে।
এত দিন আমি গরম টের পাই নি ভালো করে। দিনাজপুর গরম হলেও সয্য করার মত ছিল। কিন্তু বগুড়া এসে বুঝতে পারলাম গরম কাকে বলে। এত্ত বেশি গরম। রুমে ঢুকে স্বস্তি। নন এসি রুম হলে ঘুমানো যেতো না। এত বেশি গরম লাগছিল।
রুমে আসার সময় আম কিনে নিয়ে এসেছি কিছু। আর দিনাজপুর থেকে ফেরার সময় যে লিচু এনেছি, সেগুলো ও আছে। খেয়ে শেষ করতে পারি নি। ঘুমানোর আগে কিছু খেয়ে নিলাম। এরপর ঘুম। নতুন দিনের অপেক্ষায়।
আমি নেটে মহাস্থানগড় আর বেহুলার বাসর ঘর এর ছবি দেখে বেশ কনফিউজড ছিলাম। এখন কনফিউশন দূর হলো। আর এত খোপ খোপ কেন? বাসর ঘর আসলে কোনটা?
মূল বাসর ঘর মাটির নিচে। মাটি জমে যাওয়ার কারণে এমন খোপ খোপ দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকদের মতে বাসর ঘর ছিল পুরো ৭ তলা। যার ৩ তলা এখনো মাটির নিচে এবং ৪ তলা মাটির উপরে। পুরো ৭ তলা বিল্ডিং এ ৩০০+ রুম ছিল। এদের মধ্য মনি হিসাবে ছিল, নিছিদ্র একটি লোহার রুম। সেটাই মূলত বেহুলার বাসর ঘর, যার অস্তিত্ব বাইরে থেকে বুঝা যায় না।