আজ রিমার মন খারাপ। ছাদে চলে আসছে সে। আজই তার শেষ দিন। ১২ তলা বিল্ডিং এর উপরে। ছাদের কেনারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে কোন সময় লাফ দিবে এখান থেকে।
কারন হচ্ছে আজ শিমুল আসে নি। সে আসবে বলছিল। আসে নি, তার উপর মোবাইল বন্ধ করে রাখছে।
১৩ থেকে ১৪ বছর বয়স। রাগ কন্ট্রোল করা যায় না। যে কোন ডিসিশনই কোন চিন্তা ছাড়াই নিয়ে ফেলে।
আমার মনে আছে। আমিও এমন কিছু করেছিলাম। ছোট্ট একটা বকা দিয়েছিল আমাকে। কেন বকা দিয়েছিল আমাকে, আমি আর বাড়ি থাকবো না। ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাটতে ২০ কিলোমিটার দূরে চলে গেছি। যেখান দিয়ে অনেক দূরে যাওয়া যায়, এমন রাস্তা ধরে। সকালে বের হয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা। আর হাঁটতে পারছি না। পেটের ভেতর অনেক খিদা। সব কিছু খেয়ে ফেলতে পারব এমন খিদা। মায়ের কথা মনে পড়ল। কি আর করা, রাগ কমে গেলো। আস্তে আস্তে বাড়ি ফিরে আসলাম। পথে নলকূপ থেকে পানি খেয়েই থাকতে হয়েছিল।
রাগ বেশি হলে যা হয় আরকি। রিমির ও তেমনি কিছু হয়েছে। আবেগ বেশি বলে কথা। ১২ তলার উপর দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে, লাফ দিবে?
অবশ্যই দেওয়া উচিত। তাহলে শিমুল দারুণ শিক্ষা পাবে। আর জীবনেও এমন করবে না। মোবাইল বন্ধ রাখবে না। কিন্তু লাফ দিলে তো সে ছিঁড়ে যাবে। মাথা ফেটে যাবে। রক্ত ঝরবে। তার আবার রক্ত দেখলে দারুণ ভয় লাগে।
১২ তলার উপর থেকে সূর্য মামা দেখা যায়। সে পশ্চিম দিকের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য মামাকে দারুণ লাগে। লাল। টকটকে লাল। পুরো পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে আছে। অনেক গুলো পাখি উড়ে যাচ্ছে। অনেক সুন্দর দৃশ্য। এত সুন্দর দৃশ্য আগে তার চোখে পড়ে নি। প্রতিদিনই দেখত। তবে আজকের মত সুন্দর লাগেনি কখনো।
রিমির অনেক দিনের ইচ্ছে সে পাখি হবে। পাখি হয়ে উড়ে যাবে। অনেক দূর পর্যন্ত। এখন যদি যে এখান থেকে লাফ দেয়, সে আর কখনো পাখি হতে পারবে না।
তাই সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নিল সে লাফ দিবে না। আগামীকাল দেখা হলে শিমুলকে ইচ্ছে মত বকে দিবে। যেন এমন আর কক্ষনো না হয়।
তার রাগ গুলো ঐ পাখি গুলোর সাথে উড়ে চলে গেছে। অনেক দূর হারিয়ে গেছে। ১৩ – ১৪ বছরের সবার রাগ এমন পাখি হয়ে উড়ে যাক। জীবন মেলুক নতুন ডানা।