কোথায় যেন দার্জিলিং এর কথা প্রথম জানতে পেরেছি মনে নেই। কিন্তু পাহাড়, আর মেঘ ছোঁয়ার গল্প পড়ে ঠিক করেছি যদি কখনো ইন্ডিয়া যাই, তাহলে দার্জিলিংই সবার আগে যাবো। এটাই আমার প্রথম ইন্ডিয়া ট্যুর, এবং আমি দার্জিলিংই যাচ্ছি।
দার্জিলিং এর মানুষ এক সাথে অনেক গুলো ভাষায় কথা বলে। ওদের প্রধান ভাষা হচ্ছে নেপালি। দার্জিলিং পশ্চিম বাংলায় অবস্থিত। পশ্চিম বাংলার আন্ডারে ওদের প্রশাসন। বাংলাও জানে। হিন্দি তো জানেই। সারা বিশ্ব থেকে অনেক ট্যুরিস্ট আসার কারণে ইংরেজিও জানে বা জানতে হয়।
দার্জিলিং অনেক শান্ত একটা শহর কল্পনা করেছি। কিন্তু গিয়ে দেখি অনেক মানুষ। সুন্দর জায়গা। পাহাড়, মেঘ, সবুজের সমাহরহ। পাহাড়ের মাঝে মাঝে ছোট খাটো লেক চোখে পড়ল। লেকের পানি গুলো অনেক স্বচ্ছ। আর ঐ পানিতে গাছের ছায়া অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। মেঘ গুলো কত নিচে। মেঘের ও উপরে একটি শহর। মাঝে মাঝে মেঘ ছৌঁয়া যায়।
ভিসা করে রেখেছি আরো অনেক আগে। প্রায় চার মাস আগে। ইন্ডিয়াতে এক সাথে অনেক বড় ট্যুর দিব চিন্তা করে সময় বের করে উঠতে পারছিলাম না। তাই একদিন ঠিক করলাম ছোট ট্যুর হলেও দার্জিলিং থেকে ঘুরে আসব। এরপর ২৬ তারিখে হঠাৎ করেই ঢাকা থেকে কলকাতার টিকেট কেটে ফেলি। আমাকে যে ভিসা দেওয়া হয়েছিল, তা হয় এয়ার অথবা হরিদাশপুর বর্ডার হয়ে যেতে হবে। দার্জিলিং আমাদের তেতুলিয়া থেকে কাছেই। কিন্তু হরিদাশপুর হয়ে যেতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই চিন্তা করলাম এয়ারেই চলে যাবো। দার্জিলিং এর কাছা কাছি এয়ারপোর্ট হচ্ছে বাগডোগরা। আবার বাগডোগরাতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। তাই প্রথমে ঢাকা থেকে কলকাতার টিকেট কেটে নি। আর তা ২৮ তারিখ সকালে। ৮.৪০ এ ফ্লাইট। কলকাতা গিয়ে পরে বাগডোগরার টিকেট কাটব।
ঢাকা থেকে কলকাতা
সকালে কলকাতা আসার কথা ছিল। ৮.৪০ এ ফ্লাইট। সকালে জ্যাম থাকবেনা মনে করে আমি ৭টায় রুম থেকে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় এয়ারপোর্টে ঠিক মত পৌঁছাতে পারি নি। ফ্লাইট মিস করেছি। এর পরের ফ্লাইট সন্ধ্যায়। কলকাতা যাওয়ার জন্য বিমান বাংলাদেশের টিকেট কাটি। পরে ওদের অফিসে গিয়ে বলি আমি ফ্লাইট মিস করেছি। পরবর্তী ফ্লাইট কখন তা জিজ্ঞেস করার পর বলল সন্ধ্যায়। কিছু জরিমানা দিয়ে পরে সন্ধ্যার টিকেট কনফার্ম করি। সন্ধ্যার ফ্লাইটে কলকাতা আসি। সারাদিন এয়ারপোর্টে কাটিয়ে দিয়েছি। Hannibal দেখে। শুধু দুপুরে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দুপরের খাবার খেয়ে নি।
কলকাতায় পৌঁছে বাগডোগরার টিকেট কেনার চেষ্টা করি। প্রায় এয়ারলাইন্স এর টিকেটই শেষ। Jet Air এ টিকেট রয়েছে। অন্য সব এয়ার থেকে বেশি ফেয়ার। পরে Jet Air থেকেই টিকেট কিনে নি। এরপরের কাজ হচ্ছে হোটেল।
রাতে হোটেলেই খাবার খেয়ে নি। যে ভাত গুলো দিয়েছে, সেগুলো নুডুলস এর মত। লম্বা লম্বা ভাত। প্রথমে কনফিউসড ছিলাম। এগুলো ভাত নাকি নুডলস। পরে প্যাকেটের গায়ে দেখি, ছাওমিন ফ্রাইড রাইস। বুঝলাম, ভাতই খাচ্ছি।
কলকাতার ট্যাক্সি ড্রাইভার গুলো কক্সবাজারের রিক্সা বা CNG ড্রাইভারের মত। দালাল আরকি। নিজেদের পছন্দ মত হোটেলে নিয়ে যাবে। জিনিসটা খারাপ। কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে নামলেই থাকার জন্য অনেক গুলো হোটেল পাওয়া যাবে। ট্যাক্সি নেওয়ার দরকার ছিল না। কিন্তু একবার যখন শুনছে আমার হোটেল দরকার, তখন আমাকে আর ছাড়ে নি। আমিও ফাঁদে পড়ি।
কলকাতা থেকে দার্জিলিং
হোটেল থেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই বের হয়ে পড়ি। তখন লোকাল সাড়ে ৬টা মাত্র। সকালটা শুরু করি এক কাপ চা দিয়ে। চায়ের কাপটা অনেক ছোট। দুই তিন চুমুক চা মাত্র।
এরপর লুচি আর ভাজি-ডাল খেয়ে নি। কলকাতায় মানুষ তিন রকম ভাষায় কথা বলে। হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি। খাওয়া দাওয়া করে এয়ারপোর্ট চলে আসি। এখানে এসে বোর্ডিং পাস নেওয়া, চেক ইন ইত্যাদি করতে করতেই অনেক সময় চলে গেলো। ফ্লাইট ১০টা ২০ এর দিকে।
১১টা ২০ এর দিকে বাগডোগরা এসে পৌছাই। প্রথম প্রথম Bagdogra উচ্চারণ অনেক কষ্ট হতো। বিদগুটে মনে হত। এখন ইজি হয়ে গেছে। বাগডোগরা থেকে আসি শিলিগুড়ি। জংশন নামক জায়গায়। এখান থেকে দার্জিলিং এর গাড়ি রয়েছে। অনেকক্ষণ ঐখানে বসে থাকতে হয়েছে। দার্জিলিং এর অন্যান্য যাত্রীর জন্য। পানির কূপ অনেক বার দেখলেও প্রথম কূপ থেকে পানি উত্তলন করি শিলিগুড়িতে।
প্রায় ৩০ মিনিটের মত বসে থাকার পর দার্জিলিং এর দিকে রওনা দি। ঐ জীপ গুলো পাহাড়ে চলার উপযোগী। যাত্রী মাত্র চার জন ছিলাম আমরা। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং দিকে রওনা দেওয়ার সময় থেকেই পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছিল। যেন পাহাড় গুলো আমাদের ডাকছে। পাহাড় গুলোর উপরেই দার্জিলিং। অনেক উপরে। নিচ থেকে যে পাহাড়টি দেখি, ঐ পাহাড়টির ছুঁড়ায় উঠলে নতুন পাহাড়ের ছুঁড়া দেখা যায়। তারপর ঐটার উপর ও উঠি, তারপর আরেকটা ছুঁড়া। এভাবেই উপরের দিকে উঠতে থাকি।
পাহাড়ের মাঝে মাঝে বসতি। নিচ থেকে যেমন পাহাড়ের উপরের বাড়ি গুলো খুব ক্ষুদ্র দেখায়। আবার উপর থেকেও নিচের বসত বাড়ি গুলো খুব ক্ষুদ্র দেখায়। বিমানের উপর থেকে যেমন সব কিছু ক্ষুদ্র দেখায়, তেমনি পাহাড়ের উপর থেকে নিচের সমতল ঘরবাড়ি গুলো তেমন দেখায়। অনেক উপড়ে উঠার পর মেঘের জন্য আর নিচের সব কিছু দেখা যাচ্ছিল না। কেমন ঝাপসা দেখাচ্ছিল সব। এরপরও উঠতে থাকি। উপরের দিকে।
পাহাড়ি রাস্তা গুলোর মোড় গুলো কেমন ভয়ঙ্কর। মাঝে মাঝে ১৮০ ডিগ্রি টার্ন। পাশে তাকালেই পাহাড়ের পাদদেশ। কোন ভাবে পড়লে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেউ মনে হয় না খুঁজতেও আসবে।
দার্জিলিং এর মূল শহরে অনেক মানুষ জন। অনেক ভিড়। অনেক দোকান পাট। আমার ধারণা ছিল শান্ত একটা একটা শহর হবে। কিন্তু এত মানুষ দেখে আমি কিছুটা আশাহত হলাম। এমনকি এই পাহাড়ের উপরও ও জ্যাম লাগে। এখানে খুব সন্ধ্যায়ই সব বন্ধ হয়ে যায়, দোকান পার্ট সব কিছু। আমি বিকেলে, বলতে গেলে সন্ধ্যার সময় বের হয়েছি। তখন অনেক মানুষ দেখলাম। যখন দার্জিলিং এসেছি, সাড়ে তিনটার দিকে, তখনও মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল। কিন্তু রাত ৮টায় বের হয়েছি, গিয়ে দেখি সব বন্ধ। রেস্টুরেন্ট বা ছোট খাটো খাবারের দোকান আর ঔষধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
দার্জিলিং দ্বিতীয় দিন
টাইগার হিল:
আগের দিন রাতেই টাইগার হিলে যাওয়ার জন্য গাড়ি ঠিক করে রাখতে হয়। টাইগার হিলে সবাই যায় সূর্যদয় দেখতে। আর তা দেখা জন্য বের হতে হয় ভোর চারটায়। আমি এলার্মই দিয়েছি ৪টা থেকে। আমার এলার্ম বাজার আগেই হোটেলে স্টাফ ডেকে তুলল। এরপর ফ্রেস হয়ে বের হয়ে পড়লাম, টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে। টাইগার হিল দার্জিলিং এর সবচেয়ে উঁচু যায়গা। মূল টাউন থেকে প্রায় ১১ কিলো দূর। আর জীপে করে পৌছাতে প্রায় ৪০ মিনিটের মত লাগে। অনেক মানুষ যাচ্ছে ঐখানে। সারি সারি জিফ, একটার পেছনে আরেকটা। কাছাকাছি যাওয়ার পর জ্যামের জন্য আর জিফ যাচ্ছিল না, পরে নেমে হেঁটে যেতে হয়েছে। ঐখানে টিকেট কাটতে হয়। টিকেট কেটে আরো অনেক দূর যেতে হয়েছে। পাহাড়ে হাঁটা যথেষ্ট কষ্টকর, তারপর ও সূর্যদয় দেখার জন্য সবাই টাইগার হিলে জড়ো হচ্ছিল। আমরা খুব দেরি করেই গিয়েছি বলতে গেলে। গিয়ে দেখি পুরো টাইগার হিলের ছুঁড়া মানুষে গিজ গিজ করে। পথে আরো অনেকেই আসছে।
পূর্বদিকে আস্তে আস্তে লাল আভা দেখা যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে লাল আভার পরিমাণ বাড়তে লাগলো। এক সময় সূর্যিমামা উঁকি দিলো। সাথে সাথে সবাই চিৎকার করে উঠল। আনন্দ উল্যাস। আসলেই সুন্দর দেখায় সূর্যদয় টাইগার হিল থেকে। মানুষ স্রোতের বেগের মত যেমন আসছিল, তেমনি আবার আস্তে আসতে নামতে লাগল। সূর্য নিজেকে অল্প কিছুক্ষণ দেখিয়ে এত মানুষ দেখে সম্ভবত লজ্জা পেয়ে আবার মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। এত বেশি মানুষ, এত সারি সারি জীপ পার্ক করে রাখা, আমাদের জীপ খুঁজে পেতে আমার ভালোই সময় লাগল। সব গুলো জীপ সারি করে পার্ক করা, নাম্বার প্লেট দেখে নাম্বার মিলিয়ে হাঁটতে লাগলাম। তারপর ও খুঁজে পেলাম না। জীপ ড্রাইভার কে দুই তিন বার কল করে তারপর এক সময় খুঁজে পেলাম।
টাইগার হিল থেকে ফেরার পথে আরো দুইটা স্পট পড়ে। একটা মন্দির, নামটা ভুলে গেছি। আরেকটা হচ্ছে বাতাসিয়া লুপ।
বাতাসিয়া লুপঃ
বাতাসিয়া লুপে কিছু ফুল গাছ সুন্দর করে সাজানো আছে। এটা ছোট রেইল লাইনের একটা রাস্তা বা লুপ। যেটা সুন্দর, তা হচ্ছে বাতাসিয়া লুপ থেকে দার্জিলিং শহরের ভিউ। এখান থেকে দার্জিলিং এর অনেক অংশের অসাধারণ ভিউ দেখা যায়। বাতাসিয়া লুপ দেখার পর আমাদের নিজ নিজ হোটেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো। তখন সকাল সাড়ে আটটা মাত্র।
Japaneese Pease Pagoda & Japanies Temple:
আমি নাস্তা করে নিলাম। ভেজিট্যাবল স্যান্ডুইস আর এখানকার চা। দার্জিলিং চা। তারপর আবার সাড়ে নয়টায় রওনা দিলাম HMI [Himalayan Mountaineering Institute] তে। সাথেই রয়েছে চিড়িয়াখানা। তবে পথে পড়ে Japaneese Pease Pagoda & Japanies Temple। এ দুইটা একই জায়গায়।
Himalayan Mountaineering Institute:
এভারেস্টে যারা উঠতে চায়, তাদের জন্য HMI তীর্থযাত্রার মত। এখানে ট্রেনিং দেওয়া হয়। থাকার ব্যবস্থা সহ সব কিছু আছে। সাথে রয়েছে মিউজিয়াম। এখানে যথেষ্ট সমৃদ্ধ্য সংগ্রহ রয়েছে। সব এভারেস্ট সম্পর্কিত। এগুলো দেখলাম। এ ইন্সটিটিউটটি Tenzing Norgay এর সন্মানে করা হয়।
মিউজিয়ামের সামনে Tenzing Norgay এর একটা স্ট্যাচু রয়েছে। মিউজিয়াম দেখে এর পর গেলাম চিড়িয়াখানায়।
চিড়িয়াখানা
চিড়িয়াখানা তেমন বড় না। অল্প কিছু প্রাণী। কিন্তু উঁচু নিচু হওয়াতে হাঁটতে ভালোই কষ্ট হবে।
চিড়িয়াখানা দেখে এরপর গেলাম চা বাগান দেখতে। যদিও দার্জিলিং এর প্রায় পাহাড়েই চা বাগান। তারপর ও কাছে গিয়ে দেখা। যে জিফে করে আমরা যাচ্ছিলাম, ঐটাতে কলকাতা থেকে আসা দুইজন ছিল, তাদের সাথে কথা হলো। আবার দুইজন ছিল আসাম থেকে। আসামের উনাদের সাথেও কথা হলো। চা বাগান দেখে এসেছি Tenzing Rock এর কাছে। এ বিশাল পাথরে প্র্যাকটিস করেই নাকি Tenzing Norgay এভারেস্ট জয় করতে যায়।
Ropeway / ক্যাবল কার
তারপর এসেছি ক্যাবল কার এ উঠার জন্য। জিফের অন্যান্য টুরিস্ট ক্যাবল কারে উঠবে না। আমিই উঠব। তাই আমাকে এখানে রেখে চলে গেলো। ক্যাবল কারে উঠার জন্য টিকেট কেটে নিলাম। লম্ভা সিরিয়াল দেখে ভয় পেয়েছি। এখানেই একদিন কেটে যাবে। টিকেট কাউন্টার থেকে জিজ্ঞেস করলা আমি একা কিনা, বললাম হ্যাঁ। তাপরর আমাকে অন্য পথ দেখিয়ে দিয়ে বলল সিরিয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। কারণ অনেকেই ফ্যামিলি নিয়ে আসে। তো ফ্যামিলি মেম্বাররা চায় এক সাথে Ropeway বা ক্যাবল কারে উঠতে। উঠা যায় ৬ জন। কোন ফ্যামিলিতে কম লোক থাকলে তাহলে সিঙ্গেল যারা, তাদের দিয়ে পূর্ণ করা হয়। আমি উঠেছি আসামের এক ফ্যামিলির সাথে।
আসামেও বাংলাতে কথা বলে। আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। কিভাবে কোথায় থেকে এসেছি, কিভাবে এসেছি ইত্যাদি। বললাম। অন্যান্য টুকটাক কথা হলো উনাদের সাথে। কিছুক্ষণ পর উনারা চকলেট বের করল, নিজেরা খাওয়ার সাথে সাথে আমাকেও দিল। এ ছাড়া বাদাম, কিসমিস ইত্যাদি শুকনো ফলের মিশ্রণ ও খাচ্ছিল, আমাকেও খেতে বলল।
ক্যাবল কারে নেপাল উঠতে অনেক টাকা লেগেছিল। ইন্ডিয়া মাত্র ১৫০ টাকা। আমি ভেবেছি অল্প একটু দূরত্ব হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। শেষ হচ্ছে না। পরে জানলাম চার কিলো মোট। নামতে দুই কিলো, উপড়ে উঠতে দুই কিলো। এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টার মত লাগে। ক্যাবল কার থেকে চারপাশ দেখতে এত বেশি ভালো লেগেছে বলার মত না। পাহাড়ের উপর থেকে পাহাড় দেখা। দারুণই হওয়ার কথা। ক্যাবল কার থেকে নামার পর আসামের ঐ ফ্যামিলি আমাকে তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য বলল। আমি হোটেলে ফিরব বলে চলে আসি। আসার সময় আমাকে আসামে দাওয়াত দিল। এবং বলল আসাম অনেক সুন্দর জায়গা। ভালো লাগবে। অবশ্যই যেন ভিজিট করি। দার্জিলিং এর চা অনেক ভালো। কিন্তু দার্জিলিং এর চা থেকে থেকে আসামের চা আরো বেশি বিখ্যাত।
ক্যাবল কার থেকে নেমে দার্জিলিং শহরে ফিরেছি। লোকাল জিফে করে। শহরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। চাইনিজ Veg Chopsy। এখানে এসে বেশির ভাগ খাবারই খাচ্ছিলাম ভেজিটাবল। ফল আর চকলেট। ভেজিটাবল খাবার গুলো খেতে ভালোই লাগছিল। হোটেলে ফিরে গোসল করতে করতে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সন্ধ্যা মানেই অন্ধকার। একটু এদিক সেদিক হাঁটতে বের হলাম। সব দোকান বন্ধ হতে লাগল। এরপর আবার রুমে ফিরলাম।
দার্জিলিং তৃতীয় দিন
সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি। সাড়ে নয়টার দিকে। আবহাওয়া দারুণ ছিল। সব কিছু নীল আর সবুজ দেখাচ্ছিল। আমার রুম থেকেই দারুণ ভিউ দেখা যাচ্ছিল।
রক গার্ডেনঃ
ফ্রেস হয়ে বের হয়ে পড়লাম। গন্তব্য রক গার্ডেন। রক গার্ডেন সাধারণত বিকেলের দিকে যায় সবাই। ৩টার দিকে। তখন জীপ পাওয়া যায়। এক সাথে অনেকে যাওয়া যায়, এত খরচ কম। আমি সকালেই যেতে চাচ্ছিলাম। তাই প্রাইভেট কার ভাড়া করে নিতে হলো।
রক গার্ডেন দার্জিলিং শহর থেকে অনেক নিচে। যাওয়ার পথে অনেক গুলো চা বাগান চোখে পড়ল। আর নিচ থেকে দার্জিলিং শহর ও চোখে পড়ল। আবহাওয়াটা বেশি ভালো থাকায় সব কিছু অনেক দারুণ লাগতেছিল। চারপাশ দেখতে দেখতে রক গার্ডেন পৌছালাম। গাড়ির ড্রাইভার আমাকে ৪০ মিনিট সময় দিল রক গার্ডেন ঘুরে আসার জন্য। ৪০ মিনিট যথেষ্ট সময়।
রক গার্ডেন একটা ঝর্ণা। আমি মনে করেছিলাম বাগান টাগান হবে। যদিও বাগানও আছে। কারণ জায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো, ফুল গাছ দিয়ে। ঝর্ণাটা এত বেশি বড় না। কিন্তু সুন্দর। ঝর্ণা থেকে ঝর্ণার চারপাশ বেশি সুন্দর। ঝর্ণার উপরের দিকে উঠার জন্য সিঁড়ি করে দেওয়া। সিঁড়ি বেঁয়ে উপরে উঠলে লাগলাম। এক পাশ দিয়ে উঠে আরেক পাশ দিয়ে নামলাম। পাহাড়, মেঘ আর আকাশের নীল মিলে দারুণ লাগতেছিল।
ঝর্ণা দেখে আবার দার্জিলিং শহরে ফিরলাম। আসার পথে এক জায়গায় নেমে নিচ থেকে দার্জিলিং শহর কেমন দেখায়, তার ছবি তুলে নিলাম।
দার্জিলিং শহরে ফিরতে ফিরতে প্রায় ১২টা বেজে গেলো। আমি তখন ও সকালের নাস্তা করি নি। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে আলু পরটা খেলাম। ভেবেছি স্বাধ হবে না, খাওয়ার জন্য খাওয়া। কিন্তু খেতে ভালোই লাগল।
চৌরাস্তা এবং মল
নাস্তা করে চলে গেলাম চৌরাস্তা। এটা দার্জিলিং এর কেন্দ্র। চৌরাস্তার পরেই রয়েছে মল। এখানে অনেকটুকু সমতল জায়গা। অনেক মানুষ জড়ো হয়। চারপাশ সুন্দর ভাবে দেখা যায়। আর এখানে রয়েছে একটা স্টেজ। কনসার্ট বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়।
চৌরাস্তা এসে যে দিকে ভালো লাগল, সে দিকেই যেতে লাগলাম। চারপাশে এত বেশি সুন্দর লাগতেছিল। একটা হোটেলের সামনে খোলা জায়গা ছিল, ঐখান থেকে পাহাড় গুলো আরো সুন্দর দেখাবে মনে করে ঢুকলাম। কিন্তু ঢুকার সাথে সাথেই একটা কুকুর আমার পায়ে হালকা করে কামড় দিল। দিয়ে খেউ খেউ করতে লাগল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। অনেক বেশি খেউ খেউ করার কারণে আমি কি করব বুঝতে পারি নি। দৌঁড় দিলে যদি কামড় দেয়। একটু দাঁড়াতেই দেখলাম কামড়াতে আসে। দ্রুত গেট বরাবর বের হয়ে আসলাম। গেটে দাঁড়িয়েও ঐ কুত্তা খেউ খেউ করে। কি বাঁচা যে বাঁচলাম! মনে মনে বললাম দার্জিলিং এর কুত্তা গুলো খুব কুত্তা।
ঐখানে Cafe Coffee Day নামক একটা কফি সপ রয়েছে। ঐখান থেকেও দারুণ ভিউ দেখা যায়। ঐখানে গেলাম। মূলত ছবি তোলার জন্য। ছবি তুললাম পরে পিজ্জা খেয়ে বের হয়ে আসলাম।
মল থেকে হাতের ডানে নিচের দিকে একটা রাস্তা গিয়েছে। ঐ দিকে নামতে লাগলাম। ডানপাশ, সম্ভবত ঐ দিক পূর্ব দিক। অনেক বেশি সুন্দর লাগতেছিল। ঐ দিকে আবার সুন্দর সুন্দর রিজোর্ট ও রয়েছে। রিজোর্ট গুলোও অনেক সুন্দর করে সাজানো। ঐ দিক ইচ্ছে মত ঘুরে আবার মল ফিরে আসলাম।
Observatory Hill and Mahakal Temple
চৌরাস্তার আরো উপরে রয়েছে অবজারভেটরি হিল এবং Mahakal Temple । যেখান থেকে সব কিছু সুন্দর করে দেখার কথা। কিন্তু ঐখানের গাছ গুলো এত বিশাল বিশাল যে, গাছের জন্য চারপাশ কিছুই দেখা যায় না। তার উপর গাছ গুলো ঐ জায়গাটাকেই অন্ধকার করে রেখেছে। সেখানেই রয়েছে মন্দিরটি। অবজারভেটরি হিল এর এক পাশ দিয়ে উঠে অন্য পাশ দিয়ে নামলাম।
সূর্য মেঘের আড়াল হলেই কেমন সব অন্ধকার বা মেঘলা লাগে। ঠাণ্ডা লাগাও শুরু হয়। আবার খুব দ্রুতই সূর্য অস্ত যায় মনে হচ্ছিল। অন্য পাশ দিয়ে আবার মলে ফিরে আসলাম। বাহিরে ঠাণ্ডা লাগছিল। তাই Cafe Coffee Day তে গিয়ে বসলাম। মলের খোলা জায়গা থেকে এখানকার ভিউ বেশি সুন্দর দেখায়। আস্তে আস্তে সব অন্ধকার হতে লাগল। আমি এখানে বসে বসে ই-মেইল চেক, ফেসবুকিং ইত্যাদি করলাম। আর হালকা খাওয়া দাওয়া।
সকালেই হোটেল চেক আউট করলাম। কারণ রাত ৮টায় কলকাতার ট্রেন। ট্রেনে কলকাতা যেতে অনেক সময় লাগবে। তার উপর রাতে কিছু দেখবোও না। তারপর ও যেতে হচ্ছে। কারণ এখান থেকে কলকাতা বিমানে ফিরতে এর থেকে বেশি ঝামেলা হবে। দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি যেতে হবে, শিলিগুড়ি থেকে বাগডোগরা। বাগডোগরা থেকে কলকাতা। রাতে ট্রেনে ঘুমাতে ঘুমাতেই চলে যেতে পারব।
ট্রেন স্টেশনে অনেক আগেই এসে পৌঁছেছি, যেন বিমানের মত মিস না করি। কিছুক্ষণ বসে আছি। প্রায় ৩০ মিনিট আগে ঐখানের দ্বায়িত্বরত পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম কলকাতাগামী ট্রেন কোথায়। বলল কোন ট্রেন। তারপর বললাম কলকাতার ট্রেন। তখন বলল কলকাতার ট্রেন তো শিলিগুড়ি থেকে যায়। আমি বললাম আমি তো টিকেট এখান থেকে কিনলাম। বলল ট্রেন এখান থেকে যায় না। এখানের ট্রেন গুলো লোকাল ট্রেন। ট্যুরিস্টদের জন্য। আমার টিকেট চেক করল। তারপর বলল ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যাবে। এখান থেকে না।
দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি যেতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগে। শিলিগুড়ি যাওয়ার মত সময় হাতে নেই। তাছাড়া দার্জিলিং থেকে সন্ধ্যার পর আর কোন জীপ শিলিগুড়ির দিকে আসে না। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত পোহানোর মত অবস্থা। ট্রেনের টিকেটে লেখাও ছিল দার্জিলিং মেইল। আমি ভেবেছি দার্জিলিং থেকেই ছাড়বে। আহারে। প্রথমে বিমান মিস করেছি, এখন ট্রেন মিস।
আমি হোটেলে ফিরলাম। বললাম আমি এখন শিলিগুড়ি যেতে চাই। যদি না যেতে পারি, আমি থেকে যাবো। হোটেলের একটা স্টাফ আমার সাথে আসল। শিলিগুড়ির কোন জীপ পেলে আমাকে উঠিয়ে দিবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও লাভ হয় নি। আমি পরে যেখান থেকে জীপ ছাড়ে, সেখানে গেলাম। কোন জীপই যাবে না। আবার হোটেলের সামনে ব্যাক করলাম। শিলিগুড়ির দিকে যাওয়ার সব গাড়িই এখান দিয়ে যাবে। আমি যেটা পাই, সেটায় উঠে যাবো। অনেকক্ষণ পর একটা প্রাইভেট কার দাঁড়ালো। বললাম শিলিগুড়ি যাবো। বলল ৫০০ টাকা। আমি ৩০০ টাকা দিব বললাম। নরমাল সম্ভবত ১৩০ টাকা। পরে ৩০০ টাকাতে রাজি হলো। আমি উঠে পড়লাম। ঐ প্রাইভেট কারে আরো দুই জন যাত্রী ছিল। আমার কথা জিজ্ঞেস করল। আমি আমার ট্রেন মিস করার কথা বললাম। তারা বলল তাদের একজন কলকাতা যাবে। পরের দিন সকালে। এ জন্যই এখন শিলিগুড়ি যাচ্ছে। একজন যাত্রী। আরেকজন এগিয়ে দেওয়ার জন্য এসেছে।
ওদের সাথে যেতে যেতে কথা হল। এরপর আমাকে বলল আমি যেন হোটেলে থেকে যাই। সকালের ট্রেনে কলকাতা চলে যাই। আর বলল চাইলে ওদের সাথে হোটেলে শেয়ার করে থাকতে পারব। শিলিগুড়ি এসে খাওয়া দাওয়া করলাম আমরা সবাই। এরপর হোটেলে। হোটেলে আমি আর আরেকজন। ডাবল বেডের একটা রুম নিয়ে থেকে গেলাম। অন্য জন চলে গেলো।
শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা
হোটেল থেকে নিউ জলপাইগুড়ি কাউন্টারে যাই সকালে। ৭টা ৪৫ এ ট্রেন। ঐখানে সাড়ে সাতটার মধ্যেই চলে যাই। গিয়ে একটা কারেন্ট টিকেট করে নি। জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে সিয়ালদাহ পর্যন্ত। কারেন্ট টিকেটের নিয়ম হচ্ছে সিট খালি থাকলে বসতে পারবে। না হয় দাঁড়িতে যেতে হবে। রাস্তা হচ্ছে টোটাল ৫৮০ কিলো মিটার। ট্রেনে আসতে প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। ঐ লোকটি একটি স্লিপার সিট নিয়েছে। স্লিপার সিট গুলো লম্ভা। বসলে তিন জন বসা যায়। আর কেউ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আসতে চাইলে একজন শুতে পারে।
ট্রেন দেরি করেছে ৫০ মিনিট। ট্রেন আসলো। আমরা উঠলাম। সকাল সকাল তো কেউ ঘুমাবে না। ঐ ভদ্রলোক স্লিপারের এক পাশে বসল। আমি অন্য পাশে। আমি তখনো সকালের খাবার খাই নি। হোটেল থেকে বের হয় এক কাপ চা খেয়েছি মাত্র। কাপ গুলো আগেই বলছি অনেক ছোট। তিন চুমুক চা। এক মগের নিচে চা হলে তাকে চা মনে হয় না। ট্রেনে খাবারের প্যাকেট বিক্রি করছিল। সেখান থেকে একটা নিয়ে খেয়ে নিলাম। এরপর দুইটা ডিম। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আমি ঘুম পাচ্ছিল। এ দিক ঐ দিক তাকাই। দেখি অনেক গুলো স্লিপার খালি। আমি একটা উঠে ঘুমিয়ে পড়লা। এর মধ্যে TT টিকেট চেক করে গেলো। কিছুই বলল না।
প্রথম বার যখন ঘুম ভাঙলো আমার, তখন সম্ভবত ২টা। এরপর একটু উঠে হাঁটা হাঁটি করে, কিছু ছবি তুলে আবার ঘুম। সন্ধ্যা পর্যন্ত। তারপর বাকি সময় বসে, হেঁটে কাটিয়ে দিয়েছি। ১২ ঘণ্টা সময় এমনিতেই কেটে গেলো। শিয়ালদহ এসে নামলাম সাড়ে আটটার দিকে। আমি যাবো কলকাতা নিউমার্কেটের ঐ দিকে। শিয়ালদহ থেকে একটা বাসে করে নামলাম ধর্মতলা। ধর্মতলার কাছেই নিউমার্কেট। নিউমার্কেটের পরে হোটেল যে দিকে, সে দিকে গেলাম। সদর স্ট্রিটে অনেক হোটেল রয়েছে। সে দিকে গিয়ে হোটেল প্যালেসে উঠলাম। এখানে অনেক দালাল রয়েছে। নিজের মত করে হোটেল পছন্দ করে নিলেই ভালো।
হোটেলে ব্যাগ রেখে নিচে এসে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর রুমে গিয়ে এটা সেটা করে ঘুম। আমার ইচ্ছে ছিল পরের দিন বিকেলেই ঢাকা রওনা দেওয়া। কিন্তু বিকেলের কোন ফ্লাইট নেই। সব গুলো ফ্লাইট সকালে। তাই ঠিক করলাম পরের দিন যাবো। মানে ৩ তারিখে।
সকালে উঠে সবার আগে এয়ার টিকেট করে নিলাম। এরপর সকালের খাবার। কলকাতার পরটা অনেক মজার। স্বাদ আমাদের দেশের গুলো থেকে ভিন্ন। ওদের তৈরি করার পদ্ধতিও ভিন্ন। নাস্তা করে কলকাতার ঐতিয্যবাহী টানা রিক্সাতে উঠলাম। রিক্সা করে পার্ক স্ট্রিট গেলাম। কাছেই ছিল। গল্পের বইতে অনেক লেখা ছিল এই পার্ক স্ট্রিটের কথা।
পার্ক স্ট্রিট এ গিয়ে ফাস্টট্র্যাক থেকে ঘড়ি কিনলাম। এরপর চলে এলাম নিউমার্কেটের দিকে। বাড়ির জন্য শপিং করলাম। এভাবেই অনেক সময় কেটে গেলো। বিকেলে আমার সাথে Abhishek Patra দেখা করবে বলল। ওর বাড়ি কলকাতায়। বিকেল পাঁচটার দিকে ও আসল। এরপর আমরা এদিক সেদকি হাঁটা হাঁটি করলাম। তারপর আবার পার্ক স্ট্রিটে ফিরে আসলাম। এখানে বিখ্যাত একটা বই এর স্টোর রয়েছে। অক্সফোর্ড বুক স্টোর। অনেক অনেক বই পাওয়া যায়। আবার বসে পড়াও যায়।
বুক স্টোর থেকে বের হয়ে মেট্রোতে উঠলাম। মেট্রো মাটির নিচ দিয়ে চলে, ট্রেনের মত। কিন্তু ছোট। খুব দ্রুত চলে। অনেক মানুষ এক সাথে উঠতে পারে। বসার যায়গা কম ভেতরে। সবাই দাঁড়িয়েই যায়। কোন জ্যাম নেই। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব দ্রুতই পৌঁছে যেতে পারে। মেট্রোতে করে আমি এসেছি দম দম এ। এর কাছেই এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্ট আসার পর মোবাইল চেক করে দেখি Fazley Rabbii এর মেসেজ। দেখা করবে বলল। আমি এয়ারপোর্ট আসতে বললাম। এখানে আসল। সাথে তার আরেক ফ্রেন্ড, শামিম। আমরা এক সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করলাম। অনেকক্ষণ কথা বললাম। এপর আমি এয়ারপোর্ট এ ঢুকলাম। তখন প্রায় এগারোটা।
আমার ফ্লাইট পরের দিন সকাল ৭টা ৪৫ এ। হোটেলে না উঠে এয়ারপোর্ট চলে এসেছি। হোটেলে গিয়ে উঠলে ১টার আগে ঘুম আসবে না। আবার সকাল ৪টায় উঠতে হবে। তিন ঘণ্টার জন্য হোটেলে না গিয়ে এয়ারপোর্ট চলে আসাটাই ভালো মনে করলাম। এখানে এসে খারাপ ও লাগছে না। ল্যাপটপে বসে বসে এটা সেটা করে মুভি দেখে কাটিয়ে দি।
সকালে বোর্ডিং পাস নিয়ে, ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে এরপর বিমানে উঠার জন্য অপেক্ষা করি।
ঢাকার টাইম ৯টায় এসে ঢাকা পৌঁছাই। জ্যামের শহর ঢাকাতে। যদিও অর্ধ দিবস হরতাল ছিল। ঢাকায় এত মানুষ, সবাইকে বের হতেই হয়। কোন দিন হরতাল, কোন দিন সাধারণ দিন, তা পার্থক্য করার সুযোগ নেই। ঢাকায় এসে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে বের হয়ে বাসায় ফিরি। শেষ হয় আমার দার্জিলিং ভ্রমণ।
ট্রেনে করে দার্জিলিং যেতে চাইলে ১৫০০০ -২০০০০ রুপি তেই সুন্দর ভাবে বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসা যাবে। এখানে আমার খরচ গুলোর একটা লিস্ট। দার্জিলিং থাকা খাওয়ার খরচ বলতে গেলে অনেক কম। আর দুইজন বা তার অধিক মিলে গেলে খরচ অনেক কম হবে। শুধু দার্জিলিং যেতে চাইলে ভিসা করার সময় উত্তরবঙ্গের ঐ দিকের বর্ডার দিয়ে ঢুকার পারমিশন নিয়ে নিলে সুবিধে হবে। আমি যখন ভিসা করি, তখন এ সব জানতাম না। মনে করেছি ভিসা থাকলে যে কোন বর্ডার দিয়েই ইন্ডিয়া ঢুকা যাবে। কিন্তু ভিসাতে যে বর্ডারের কথা উল্যেখ থাকে, তা দিয়েই ঢুকতে হয় এবং তা দিয়েই বের হতে হয়। ভিসা করার সময় একটু বুঝে শুনে করলে ভালো হবে। ভিসা নিজে করলে ৬০০ টাকা লাগবে মাত্র। কোন এজেন্ট দিয়ে করালে ২০০০-৩০০০ টাকা লাগতে পারে।
জাকির ভাই দার্জিলিং আসলেই এমন সুন্দর একটি জায়গা যার বর্ণনা লিখে কিংবা বলে বুঝানোর মত না। কিন্তু আপনার লেখার ধরন ও অসাধারন বর্ণনা থেকে যে কেউ একটা সঠিক ধারনা পেয়ে যাবে।
very nice
অনেক. পোস্ট দেখেছি আপনার টা থেকে ভালো পাই নি