৯ এ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে রুবেল ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে বলে, একটা কথা বলি যদি রাগ না করস। আমি বলি বল। বলে, চল কক্সবাজার যাই, আজকেই।
আমাকে রাগ করার কথা জিজ্ঞেস করার কারণ হচ্ছে এর আগে দুই তিন বার এমন ট্যুরে যাবো, সব ঠিক। যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে একটা কজ দেখিয়ে ট্যুর ক্যানসেল করছিল। ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার পর যদি ট্যুরে না যাওয়া যায়, তখন অবস্থা কেমন চিন্তা করেন!
তো আমি বললাম, আমার কাছে টাকা নাই। বলে আমি দিব, কত টাকা লাগবে তোর! যাই হোক, যে কোন ট্যুরকে আমি না বলতে পারি না যদি না ইমার্জেন্সি কোন কাজ না থাকে। এমনকি এক্সাম থাকলে এক্সাম না দিয়ে ট্যুরে বের হয়ে যাই…
রুবেল বলল, আমি বিকেলে বাসাবো আসতেছি, রাতে বাসে করে যাবো। আমি বলি বাসে উঠার আগে নো বিশ্বাস। পরে বলে, লাঞ্চ করেই চলে আসতেছি, তাহলে তো তুই বিশ্বাস করবি নাকি? আমি বলি, আয়। এভাবেই হঠাৎ কক্সবাজার ট্যুর ঠিক করলাম। রুবেল আসার সময় মালিবাগ নেমে টিকেট কেটে নিল। এরপর আমার বাসায়। রাত এগারটায় বাস ছিল। আমরা খাওয়া দাওয়া করে সাড়ে দশটার দিকে বের হয়েছি। এরপর যাত্রা শুরু…
গতকাল বাড়ি থেকে আমার ভাইয়া এসেছিল। মা শীতের পিঠা তৈরি করে দিয়েছিল। মা ফোন করে বলল যেন আমি কক্সবাজার যাওয়ার সময় পিঠা নিয়ে যাই। আবার রুবেলের আম্মু রুবেলকে অনেক গুলো ফল ব্যাগে দিয়ে দিল।
কুমিল্লা যখন যাত্রা বিরতি দিয়েছিল, আমরা দুইটা নামি নাই। শীত + অলসতা। ব্যাগ থেকে পিঠা এবং ফল বের করে খেয়ে নিলাম। আর মা বাবা আমাদের নিয়ে কত চিন্তা করে, তা ভাবলাম।
চট্রগ্রামের পর আবার যাত্রা বিরতি দিল। তখন সকাল হয়ে গিয়েছিল। আমরা নাস্তা করে নিলাম। যে হোটেলে নামিয়েছে, তার সামনে সুন্দর জায়গা। একটু হাঁটা হাঁটি করলাম, দুই একটা ছবিও।
এরপর সাড়ে আটটার দিকে আমাদের কক্সবাজার নামিয়ে দিল বাস। রুম ঠিক করে রুমে ব্যাগ রেখে, একটু ফ্রেস হয়ে সী বীচে চলে গেলাম। একটু আধটু হাঁটা হাঁটি করে রুমে ফিরলাম। রেস্ট নেয়ার জন্য।
দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমালাম। এরপর গেলাম খাওয়া দাওয়া করতে। সেখান থেকে বীচে। বীচে সারা বিকেল ছিলাম। সন্ধ্যায় রুমে ফিরে যে যার মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি… এরপর রাতে খাবার খেয়ে এসে ঘুম।
সকালে উঠেছি দেরি করে ঘুম থেকে। তাই ১২টার দিকে একবারে সকালের খাবার এবং দুপুরের খাবার এক সাথে খেয়ে নিয়েছি। এরপর আমরা হিমছড়িতে গিয়েছি। হিমছড়ি এর আগে যত বার এসেছি, ততবার CNG বা অটোতে করে গিয়েছি। এগুলো অনেক দ্রুত চলে যায়, দুপাশে দেখার মত এত সুন্দর সুন্দর জায়গা, ঠিক মত দেখা যায় না। তাই আমরা রিক্সা ঠিক করলাম যাওয়ার জন্য। প্রচণ্ড রোদ ছিল, তারপরও ভালো লেগেছে রিক্সায় করে যেতে। এক পাশে ছোট ছোট পাহাড়, আরেক পাশে সমুদ্র। সমুদ্রের পানি গুলো কি সুন্দর নীল দেখাচ্ছিল… দুই পাশ সত্যিই দেখার মত ছিল। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি থেকে ইনানী বিচ পুরা রাস্তাই অসম্ভব সুন্দর। আর উপভোগ করার জন্য দরকার, মোটর সাইকেল, ছাদ খোলা গাড়ি অথবা রিক্সা।
রিক্সায় করে হিমছড়িতে আসার পথে CCA IT থেকে ফোন করেছে। উনাদের সাথে একটু চা খাওয়ার জন্য। উনাদের ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে, সেখানের ছেলেদের সাথে বসে একটু কথা বলার জন্য। রুমে ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ৪টার দিকে ঐখানে গিয়েছি। উনাদের ঐখানে রুবেল এবং আমি কিছু কথা বললাম, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং প্রোগ্রামিং নিয়ে। এরপর চা-টা খেলাম। তারপর লাবণী বিচের দিকে আসলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। লাবনী বিচের ঐখান দিয়ে নেমে হাঁটতে হাঁটতে কলাতলী বিচ পর্যন্ত আসলাম। এরপর কিছুক্ষণ বসে বসে প্রকৃতি উপভোগ করলাম। কিছুক্ষণ বীচে থেকে রুমের দিকে ফিরে আসলাম।
কিছুক্ষণ রেস্ট নেওয়ার জন্য বিছানায় শুলাম, ঘুম চলে এসেছিল। খাওয়ার জন্য আর উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু রুবেল জোর করে উঠিয়েছে। এর পর খেতে গেলাম। সন্ধ্যায় ঠিক করেছিলাম আমরা রুপচান্দা খাবো। রেস্টুরেন্টে গিয়ে তাই অর্ডার দিলাম। পুরা ট্যুর ছিল একটা ফুড ট্যুর। কারণ যতটুকু না আমরা ঘুরা ঘুরি করেছি, তার থেকে বেশি করেছি খাওয়া দাওয়া আর রুমে এসে ঘুম। আর পুরো ট্যুরের সেরা খাওয়া খেয়েছি এখন… আমরা একবার ও কোক বা কোন ড্রিঙ্কস খাই নি। ডাব এবং চা ছাড়া। স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেলাম নাকি?
রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। যদিও ফেসবুকিং করতে করতে অনেক দেরি করে ঘুম এসেছে। সকালে উঠে নাস্তা করতে বের হলাম। বীচে গিয়ে হাঁটা হাঁটি করলাম। এরপর সামান্য কেনা কাটা। তারপর রুমে ফিরে চেক আউট করলাম। তখন আসলো শাকিল ভাই।
শাকিল ভাই এর সাথে কথা বললাম, রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাস্টার্ড খেলাম। এরপর উনি আমাদের বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিল। বিদায় জানালাম কক্সবাজার কে, আরেক বার আসা পর্যন্ত 🙂