ইন্টারনেট অনেক ওপেন ভাবতাম। ছিলও এক সময়। কিন্তু দিন দিন ইন্টারনেট অনেক বেশি সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এর একটা কারণ হচ্ছে ফেসবুক, গুগলের মনোফলি।
দেখেন, আগে ফেসবুক পেইজে বা প্রোফাইলে কেউ কোন কিছু শেয়ার করলে ফ্রেন্ড লিস্টের বা ফলো লিস্টের সবার কাছে যেতো। এটা তারা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পেইজ থেকে কেউ কোন পোস্ট দিলে মিলিওন মিলিওন ফলোয়ার থাকা সত্বেও খুব কম মানুষের কাছে পৌঁছায়। মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে আপনাকে পে করতে হয়।
অফলাইন দোকান ভাবতাম এক্সপেন্সিভ। কিন্তু এখন হিসেব করে দেখলাম ফেসবুকের মাধ্যমে কোন কিছু বিক্রি করা দোকান থেকে কম এক্সপেন্সিভ না। বরং আরো বেশি এক্সপেন্সিভ। মাসে মাসে বুস্টিং এর জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয়। যা দিয়ে অনায়েসে ভালো লোকেশনে একটা দোকান দেওয়া যাবে। যদিও এটার একটা পজেটিভ দিক হচ্ছে আপনি ছোট থেকে শুরু করতে পারেন। সামান্য কিছু পুঁজি দিয়ে। এরপর ব্যবসা বড় হওয়ার সাথে সাথে খরচ বাড়ালেন, বিক্রি বাড়ল। স্টিল অনলাইন অফলাইন খুব একটা পার্থক্য নেই। আমরা অনেক বেশি রেভুলেশন আশা করেছি। তেমন কিছু কি হচ্ছে?
নিজের ওয়েব সাইট থেকে বিক্রি করবেন? হে হে! আরো বেশি খরচ করার জন্য রেডি থাকুন। নিজের ওয়েব সাইট গুগলের প্রথম পেইজে আনা এক ধরনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে শুধু টাকা বা শুধু বুদ্ধি দিয়ে জয়ী হওয়া যায় না। টাকা, বুদ্ধি এবং সময় এক সাথে লাগে।
আবার আপনার ওয়েব সাইট থেকে মানুষ কিনবে কেন, যদি না তা জনপ্রিয় হয়। আর এই জনপ্রিয় করার জন্য বা ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করার জন্যও বিপুল পরিমাণ খরচের দরকার হয়। যেখানে প্রচুর খরচের পাশা পাশী অনেক সময় লাগে। সব মিলিয়ে বর্তমান ইকমার্স বা এফ-কমার্স আমাদের শপিং সমস্যা খুব একটা সমাধান করে নাই।
এতক্ষণ বলেছি গ্লোবাল সমস্যা। এবার লোকাল সমস্যা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
ইভ্যালি বা এ টাইপের সাইট নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। কারণ এগুলো ব্যবসার মধ্যে পড়ে না, ইকমার্সের মধ্যে পড়ে না। এগুলো নিয়ে আলোচনা করার মানে হয় না। এরপর আছে দারাজ। দারাজে আপনি ২০ টাকার একটা প্রোডাক্ট কিনলেও ২৫ টাকা ডেলিভারি ফি। প্রতিটা প্রোডাক্টের জন্য আলাদা আলাদা ডেলিভারি ফি। চারটা আইটেম কিনলে ১০০ টাকা ডেলিভারি ফি। এর উপর রয়েছে রেগুলেশনের সমস্যা। মনিটরিং সমস্যা। যে প্রোডাক্ট ২০ টাকা, তা ২০০ টাকা বা তারও বেশি বিক্রি করে। মানুষ দোকানে যায়, একটা প্রোডাক্ট দেখে। হাতে নেওয়ার পর একটা আইডিয়া হয় যে প্রোডাক্টের দাম কত হতে পারে। কিন্তু এখানে শুধু ছবি দেখে। ছবিতে চক চক করে। এরপর হাতে পাওয়ার পর আকাশ পাতাল পার্থক্য। এভাবে চলতে থাকলে আসলে লোকাল ইকমার্সের ভবিষ্যৎ খুব একটা ভাল হবে না। দারাজ আসার পর প্রথম দিকে যখন প্রোডাক্ট অর্ডার দিয়ে লো কোয়ালিটি প্রোডাক্ট পেয়েছি। কয়েক বছর দারাজের নাম শুনলেও স্ক্যাম স্ক্যাম মনে হতো। এরপর আবার সাহস করে কয়েকটা প্রোডাক্ট অর্ডার করি, ভালো হওয়াতে গত এক বছর অনেক গুলো প্রোডাক্ট কিনি। কিন্তু এর মধ্যে কিছু প্রোডাক্ট এতই বাজে, পুরা টাকাই লস।
কাঁচা বাজারের জন্য এখন পর্যন্ত আমি কোন অনলাইন শপের উপর নির্ভরশীল হতে পারিনি। এটা নিজের খুঁতখুঁত স্বভাব নাকি ইকমার্সের ব্যর্থতা, জানা নেই। অনলাইনে অর্ডার করার পর যদি নন স্ট্যান্ডার্ড প্রোডাক্ট শিপ করে, এটা আসলে তাদের সমস্যাই বলব।
ফেসবুকে এখন প্রতিটা সিজনে অনেক সিজনাল ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে নামে। এক সময় ছিল সুন্দরবনের খাঁটি মধু। এখন অনলাইনে সব অরগানিক প্রোডাক্ট। অর্গানিক মাছ, অরগানিক ফল, অরগানিক সবজি, অরগানিক মসলা, অরগানিক মাংস ইত্যাদি। অথচ এদের কেউই অর্গানিক কি জিনিস তাই জানে না।
আম দিয়েই উদাহরণ দেই। ধরেন আপনি অনলাইন একটা পেইজ থেকে আম কিনলেন। আপনাকে এ জন্য কুরিয়ার ফি মিনিমাম প্রতি কেজিতে ১০টাকা পে করতে হবে। এরপর যে খাঁচায় করে আম পাঠাবে, তাও আপনার পকেট থেকেই যাবে। তাও মিনিমম ১০০ টাকা। এরপর যদি বাসায় আপনাকে আম দিয়ে না যায়, আপনাকে কুরিয়ার সার্ভিসের হাব থেকে আম নিয়ে আসতে হবে। এরপর তো ফেসবুক এডের খরচ আছেই। এভাবে সব মিলিয়ে প্রতি কেজিতে আমের দাম পড়ে যায় বাজার থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি প্রতি কেজিতে। যেগুলোও কোন কোন ভাবে ক্রেতাকেই পে করতে হয়। আমার কাছে ইফিশিয়েন্ট মনে হয় না জিনিসটা! সবাই হয়তো ফরমালিন মুক্ত আমের কথা বলবে। ভাই, ফরমালিনের ও দাম আছে। সিজনে ফলে ফর্মালিন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, এত দ্রুত সব কিছু শেষ হয়ে যায়। ফেসবুক ব্যবসায়ীরা আমাকে মারতে আইসেন না আবার! আমি শুধু ফ্যাক্ট গুলো লেখার চেষ্টা করলাম।
আরেকটা বিষয় বলা হয় নি। আপনি অনলাইনে আম (বা এমন যে কোন কিছু) অর্ডার দিয়ে যদি বাসায় না পেয়ে থাকেন, কোন দিন কুরিয়ার সার্ভিসের হাবে যান, মনে হবে যেন ভুল করে কারো কাছে হাত পাততে গিয়েছেন! ভাই রে ভাই, নিজ টাকা খরচ করে অন্যের খারাপ আচরণ কেন সয্য করতে হবে! এর উপর রয়েছে আম গুলো চাপে পরে ভর্তা হওয়া। এগুলো যদিও সেলারের সমস্যা না। এগুলো চেইনের অংশ। দেখা গেলো সেলার আপনাকে সত্যিকারে বাগানের বাঁচাই করা আম পাঠাল, কুরিয়ার সার্ভিস সেগুলোকে এমন ভাবে হ্যান্ডেল করল যে আপনি আমের ভর্তা হাতে পেলেন!
এগুলো সবই ইন্টারনে ওপেন না হওয়ার সাইড ইফেক্ট। ফেসবুক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উপকারী হলেও তা বড় ব্যবসায়ী হতে দিচ্ছে না। কিভাবে হতে দিচ্ছে না, তা তো বুঝতেই পারছেন। রিচ কমিয়ে দেওয়া। বড় ব্যবসায়ী হতে দিলে প্রতিটা এলাকায় ব্যবসায়ী নিজেরাই বিভিন্ন শহরে ট্রাকে করে প্রোডাক্ট নিয়ে ডিস্ট্রিবিউট করতে পারত। কস্টিং কমে আসত, লাভ বেশি করতে পারত।
ইন্টারনেট, ইউ আর নট ওপেন & ওয়াইড!
খাঁটি কথা
tik kota