ইসলামে স্পষ্ট ভাবে অমুসলিমদের অধিকার সম্পর্কে বলা রয়েছে। কারও প্রতিবেশী কিংবা কোনো আত্মীয় অমুসলিম হয়, তার সাথেও প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের হক রক্ষা করে চলতে হয়। ইসলাম আমাদের এই আদেশ দেয়। মানতেই হবে। না মানলে নিজেকে পরিপূর্ণ মুসলিম বলে দাবি করতে পারব না।
পূজার সময় আসলেই দেখা যায় অনেক নামধারী মুসলিম হিন্দুদের মূর্তি নিয়ে অনেক কু-মন্তব্য করে। অনেক জায়গায়র মানুষ তো আরো বেশি এক্সট্রিম। মূর্তি ভেঙ্গে দেয়।
ইসলাম অমুসলিমদের পূর্নাঙ্গ ধর্মীয় স্বাধীনতাই দেয়, তাদের সঙ্গে সামাজিক অংশীদারি, সৌজন্য বোধ ও মেলামেশার সুযোগ দেয়। তারা তাদের ধর্ম পালন করবে। আমরা আমাদের। কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিতে হলেও সুন্দর করে দিতে হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। শান্তির দিকে কারো মনে কষ্ট দিয়ে আহ্বান করা যায় না। ইসলাম এগুলো আমাদের শেখায় না। যারা এমন করে, তারা কখনো পরিপূর্ণ মুসলিম হতে পারেনি। এবং এসব অন্যায় করার জন্য আল্লাহর কাছে নিশ্চিত জবাবদিহি করতে হবে।
একই দেশে বা অঞ্চলে অনেক ধর্মের মানুষই থাকতে পারে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কাউকে কারো ধর্ম পালনে বাঁধা দিয়ে বিশৃঙ্খলা ইসলামে নিষিদ্ধ। দাওয়াত দেওয়া ফরজ। আর তা উত্তম চরিত্র দিয়ে। আর ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে নিজে ইসলাম পুরাপুরি মেনে চলা। নিজে ইসলাম পুরাপুরি মেনে চলতে পারলে দেখতে পাবেন দাওয়াতের কাজ অর্ধেক হয়ে যাবে।
সাহাবী হযরত জাবের রা. বর্ণনা করেন, একদিন আমাদের পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর দেখাদেখি আমরাও দাঁড়ালাম। আমরা তাঁকে বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো এক ইহুদির লাশ!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যখন কোনো লাশ নিতে দেখবে, তখন দাঁড়াবে।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩১১
যদিও লাশ দেখলে দাঁড়াতে হয় না। উপরের হাদিসটি লাশ দেখে দাঁড়ানো রহিত হওয়ার আগের। এরপরও এ হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি ইসলাম কত উদার। অথচ আমরা কত সংকীর্ণ। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দিক, আমাদের হেদায়েত দিক।
অমুসলিমদের সাথে মেলামেশা সব করতে পারবেন, তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তবে তাদের বন্ধু রূপেও গ্রহণ করা যাবে না। কারণ আমাদের আচার, ব্যবহার, বিশ্বাস সহ অনেক কিছুই বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঐটা অন্য হিসেব। কিন্তু তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করলে তার হিসেব দিতে হবে। বিচারের দিন দেখা যাবে আপনার আমলনামার অনেক অংশই ঐ অমুসলিম মানুষটি নিয়ে গিয়েছে যার অধিকার আপনি নষ্ট করেছেন। তাই সাবধান থাকবেন। 🙂
হিন্দুদের তাদের ধর্ম পালন করতে আমরা বাঁধা দিব না। আবার তাদের পূজাতে অংশগ্রহণও করব না। পূজা হচ্ছে শিরক। বিচারের দিন সবাই ক্ষমা পেলেও শিরককারী ক্ষমা পাবে না। বাকিদের আল্লাহ চাইলেই ক্ষমা করে দিতে পারেন। মুসলিম হয়েও যারা পূজা দেখতে যান, পূজাতে অংশ গ্রহণ করেন, তাদের জন্য ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর একটা উক্তি শেয়ার করিঃ
” যেখানে ভয়ংকরতম পাপ শিরক করা হচ্ছে! আমার আল্লাহকে অপমান করা হচ্ছে! তুমি সেটা দেখতে গিয়েছ, দেখে আনন্দ পাচ্ছ, তোমার হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে না, তাহলে কি বোঝা গেলো? তোমার ভিতরে ঈমানের যে দাবী করেছো, এটা কিছুই নেই। ”
না জেনে, না বুঝে যা পাপ করেছি, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করে দেন। আর জেনে শুনে এরপর চেষ্টা করতে হবে যেন পাপ থেকে দূরে থাকা যায়।
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আমাদের খারাপ থেকে দূরে থাকে বলে। অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করতে বলে। সব কিছুই দেখতে হবে। কিছু মানলাম, কিছু মানলাম না, এটা ইসলাম না। 🙂
আলহামদুলিল্লাহ, আপনি ইসলাম সম্পর্কে একটি দুর্দান্ত নিবন্ধ লিখেছেন।
আলহামদুলিল্লাহ