যে কারণে স্যামসাং বাংলাদেশের প্রোডাক্ট কেনার আগে ভাবা উচিৎ

সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে সঠিক সার্ভিস পাওয়া যায় না। তারা থার্ডপার্টি সার্ভিস সেন্টারের উপর নির্ভরশীল। থার্ডপার্টি সার্ভিস সেন্টার ঠিক মত সার্ভিস না দিয়ে স্যামসাংকে যে তথ্য দেয়, সামসাং তাই বিশ্বাস করে। গ্রাহক প্রযাপ্ত প্রমাণ সহ অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও ঐ অভিযোগকে গায্য করে না। এর থেকে বড় কারণ হচ্ছে কোয়ালিটি চেক না করেই নষ্ট প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিয়েছে আমাকে।

আমার অভিজ্ঞতা

স্যামসাং থেকে আমি একটা ওয়াশিং মেশিন ক্রয় করি ২৫ এ জুন ২০২৪ তারিখে। মেশিনটি একই দিনে আমার বাসায় পৌছিয়ে দেওয়া হয়। এবং পরের দিন এসে ইন্সটল করে দেওয়া হয়।  ইন্সটল করার পর ব্যবহারের প্রথম দিন থেকেই মেশিন অস্বাভাবিক শব্দ করে আসছিল। ধারণা করছি যা কোন কোয়ালিটি চেক করা ছাড়াই আমাকে পাঠানো হয়। যার কারণে শুরু থেকেই মেশিনটি সমস্যা করছিল।

প্রথম দিকে আমি কোন গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু অতিরিক্ত শব্দ করা এবং মেশিনের ড্রাম মেশিনের বডিতে প্রচণ্ড জোরে বাড়ি খাচ্ছিল। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে কোন দুর্গটনা ঘটে যাবে। এরপর জুলাই এর ৫ তারিখে আমি স্যামসাং কাস্টোমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ করি।  

৬ তারিখে একজন টেকনিশিয়ান মেশিন দেখতে আসে। ভিজ্যুয়াল কোন সমস্যা না পেয়ে  মেশিনের ক্যালিব্রেট করে। আমাকে জানানো হয় ঠিক হয়ে যাবে। এবং চলে যায়। যদিও মেশিন টেকনিশিয়ানের সামনেও প্রচণ্ড শব্দ করছিল। আমি ভিডিও করে রেখেছি। 

৬ তারিখের পরেও সমস্যা সমাধান হয় না। আমি আবারও ২৬ এ আগস্ট  কাস্টোমার কেয়ারে যোগাযোগ করি। বলি যে, আগের সমস্যা সমাধান হয়নি। কাস্টোমার কেয়ার জানালো মেশিন রিস্টার্ট দিতে। সমাধান হবে। কাস্টোমার কেয়ার থেকে যে ইন্সট্রাকশন দিয়েছে, আমার মডেলের সাথে ম্যাচ করেনি। ফলে আমি মেশিন রিস্টার্ট দেওয়ার কোন অপশন খুঁজে পাইনি। সমস্যারও সমাধান হয়নি। 

১৬ এ সেপ্টেম্বর আমি আবারো কাস্টোমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আবার বলল সার্ভিস সেন্টার থেকে লোক আসবে। ১৭ তারিখে সার্ভিস সেন্টার থেকে আরেকজন টেকনিশিয়ান এসে ভিজিট করে। সমস্যা দেখে। কিন্তু সমাধান না করেই চলে যায়। আমাকে বলা হয় অফিসে জানাবে। কিন্তু অফিস থেকে কেউ কোন আপডেট না জানানোর কারণে আমি ১৯ তারিখে স্যামসাং কাস্টোমার কেয়ারের মেইলে ইমেইল করি। ফিরতি ইমেইলে আমাকে জানানো হয় তারা বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি দেখছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবে। কিন্তু কোন চেষ্টা আমি দেখিনি। কেউ আমার সাথে যোগাযোগ না করায় আমি আবার ২৪ তারিখে আপডেট জানতে চাই। তখনো একই জেনেরিক উত্তর পাই।  ‘তারা বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি দেখছে। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবে।’ যতবার যোগাযোগ করি, একই জেনেরিক উত্তর।

এভাবে একাধিকবার যোগাযোগের পর পহেলা অক্টোবরে আমার বাসায় আবার টেকনিশিয়ান আসে। উনাদের সামনেও মেশিন অত্যাদিক শব্দ করা সত্ত্বেও কোন সমাধান ছাড়াই চলে যায়। আমাকে বলে এমন শব্দ করবেই একটু। 

চতুর্থ অক্টোবরে মেশিন ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি অস্বাভাবিক ভাইব্রেশন এবং শব্দ হচ্ছে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম কোন দূর্ঘটনা ঘটে যাবে। ভেতরের ইলেকট্রিক ওয়ারিং ছিঁড়ে যেতে পারে।  আমি দ্রুত আবারো ইমেইলে প্রমাণ সহ স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করি।

পরের দিন আবার সার্ভিস সেন্টার থেকে কল দেয়। জিজ্ঞেস করে আমি বাসায় থাকব কিনা। আমি বলেছি থাকব। ঐ দিন সার্ভিস সেন্টার থেকে কেউ আসেনি। পরের দিনও না। এরপর আমি আবার কাস্টোমার কেয়ারে ইমেইল দেই। ওরা আমাকে কল করে। এই প্রথমবার আমার সাথে সামস্যাং থেকে যোগাযোগ করা হয়। একবারই। তাও অভিযোগ ছিল আমার নাম্বার বন্ধ ছিল। এই জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি সার্ভিস সেন্টার থেকে। ওরা জানালো বিষয়টা দেখছে।

টিকেটে গিয়ে দেখি আমার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি অজুহাতে টিকেট ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ আমার মোবাইলে মিসকল এলার্টও চালু রয়েছে। কেউ যদি কল করার চেষ্টা করত, তার এলার্টও আমি পেতাম।

ফিরতি মেইলে আমাকে জানানো হয় যে একাধিক বার ডায়াগনোসিস করে মেশিনে কোন সমস্যা পায়নি। যে কারণে সার্ভিস ক্যানসেল করা হয়েছে।  অথচ কেউ আসেনি চেক করতে।

সার্ভিস টিকেটঃ

পরে ৭ তারিখে আমি আবারো যোগাযোগ করি সার্ভিস সেন্টারে। তারা আবারো আমাকে আশ্বাস দিয়েছে সমস্যাটা দেখবে। এছাড়া আমার এই পণ্যের ওয়ারেন্টি মাত্র এক বছরের। এভাবে কালক্ষেপণ করায় ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে যাচ্ছে।

জিনিসটাকে আমি পাবলিক করতে চাইনি। আমি স্যামসাং এর ব্র্যাডিং হেড এর নাম্বার কালেক্ট করি। উনাকে ফোন করে আগে অনুমতি নেই যে সমস্যাটাকি উনাকে জানাবো? উনি বলল জানাতে। এরপর জানালাম। উনাকে রিকোয়েস্ট আইডি দিতে বলল। আমি দিলাম। এরপর উনি রিসিভ করছেন কিনা, বা কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা, আমি জানিনি। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ উনি সিন করেননি, এতটুকু দেখতে পাচ্ছি।

এত ভাবে ওদের সাথে যোগাযোগ করেছি। সার্ভিস সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করেছি। আশ্বাস, দেখবে। কিন্তু পর্যাপ্ত স্টেপ নেওয়া হয়নি। এখন ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে এবং প্রায় চারমাস অপেক্ষার পর জিনিসটা পাবলিক করলাম। ওদের সাথে আমি ইমেইলে এবং হোয়াটসঅ্যাপে এতবার যোগাযোগ করছি, এত এফোর্ট দিয়েচ্ছি। একই পরিমাণ এফোর্ট দিয়ে কোন প্রজেক্ট করলে কয়েকটা মেশিন কেনার টাকা হয়ে যেতো!

এতবার যোগাযোগ করেও সমস্যাটা সমাধান হয়নি। প্রায় চার মাস হতে চলল, এখনো একটা সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। আমি স্যামসাং এবং সার্ভিস সেন্টার, উভয় পক্ষের প্রফেশনালিজমের ঘাটতি পেয়েছি। আমরা ভালো ব্র্যান্ড থেকে বেশি দাম দিয়ে প্রোডাক্ট কিনি যেন ভালো সার্ভিস পাই। এদের যদি এই অবস্থা হয়, কি করা যায়?

০৯-১০-২৪

যাই হোক, আমি ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমার ইচ্ছে ছিল না অভিযোগ করার। আমি আশা করেছিলাম এরা সমাধান করে দিবে। কিন্তু সমাধান করার কোন সলিড স্টেপ নিতে দেখিনি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোয়ালিটি চেক করা ছাড়া একটা প্রোডাক্ট কিভাবে ডেলিভারি দিয়েছে। এটাও ভাবার বিষয়।

আমি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই জানালো অনেকেই সিমিলার এক্সপেরিয়েন্সের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। পিসিবিল্ডার্স তো একটা ভিডিও বানিয়েছে

এই পোস্টটা আজকেরঃ

Brand Practitioners Bangladesh গ্রুপে একই দিনে দুইটা পোস্ট স্যামসাং সার্ভিস নিয়ে। অন্য কোন কোম্পানির এমন সমস্যা এত বেশি নজরে পড়েনি। এর মানে হচ্ছে এরা আফটার সেলস সার্ভিসকে কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কোয়ালিটি চেক না করে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিবে কেনো? প্রডাক্ট ব্যবহার করার কয়েক দিন পর সমস্যা হলে তাও মানা যেতো। কিন্তু বেশির ভাগ অভিযোগ দেখলাম প্রথম থেকেই সমস্যা। এরা কি প্রোডাক্টের কোয়ালিটি চেক করে না?

আপডেট – ১০-১০-২৪

দশ তারিখ সন্ধ্যায় আমার সাথে স্যামসাং থেকে একজন কথা বলে। বলল আমার সাথে সার্ভিস সেন্টার থেকে যোগাযোগ করবে। এবং ৭-৮ দিনের মধ্যে এর একটা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম সাত দিন কেনো লাগবে। উনারা জানালো উনাদের ইন্ডিয়ান টিমের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবে। সমস্যা এনালাইসিস করবে। যদিও আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এত দিন কেনো করা হয়নি ইত্যাদি। যাই হোক, ইনশাহ আল্লাহ আমি এই লেখায় আপডেট জানাবো।

আপডেট – ১২-১০-২৪

শনিবার দুপুরের দিকে আমাকে স্যামসাং থেকে ফোন করে আপডেট দিল। জানালো ১৪ তারিখ যোগাযোগ করবে। নিজেদের থেকেই।

2 thoughts on “যে কারণে স্যামসাং বাংলাদেশের প্রোডাক্ট কেনার আগে ভাবা উচিৎ”

  1. আপডেটের জন্য অপেক্ষা করছি। স্যামসাং সার্ভিস ইজ টেরিবল।

    Reply
    • জ্বি ভাই, ইনশাহ আল্লাহ রেগুলার আপডেট দিব।

Leave a Reply