হেনার সাথে আমার বিয়েটা বলা যায় জমজমাট ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই পক্ষের মানুষই খুব আনন্দ করেছে। আমি আনন্দ করেছি? ঐটাকে আনন্দ বলা যায় কিনা জানি না, একটু চিন্তিত ছিলাম সব কিছু নিয়ে। তবে সবার আনন্দ দেখে নিজের কাছে খুব ভালো লাগা কাজ করছিল।
বিয়ের পরে সব কিছুই ঠিক মত যেতে লাগল। হেনার পড়ালেখা তখনো শেষ হয়নি। আমাদের বাসার কাছেই দারুণ একটা ইউনিভার্সিটি রয়েছে। যাতায়াত সুবিধার কথা চিন্তা করে বাসার কাছের ইউনিভার্সিটিতে ক্রেডিট ট্রান্সপার করার ব্যবস্থা করা হয়। হেনা পড়ালেখা কন্টিনিউ করে। আমি নিজের জব।
আমি অফিসে যাই। অফিস থেকে ফিরি। ছুটির দিকে এদিক সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করি। প্রথম দিকে সব কিছুই সুন্দর মত চলছিল। হ্যাপি কাপল যাকে বলে, তেমনই। এরপর আস্তে আস্তে কেন জানি মনে হচ্ছিল হেনার সাথে আমার দূরত্বটা বেড়েই চলছে। জানতে চাওয়ার পর বলল এক্সাম, এসাইনমেন্ট এসব নিয়ে ব্যস্ততা বাড়ছে। এর বেশি কিছু না।
একদিন হেনা বলল সে সেফারেট হতে চাচ্ছে। নিজের সকল খুঁত গুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। ভাবতে লাগলাম নিজেকে ভালো না লাগার সব গুলো কারণ নিয়ে। আমি বললাম ঠিক আছে। এই ঠিক আছে কথাটা বলতে কত যে কষ্ট হয়েছিল। বোঝাতে পারব না।
সেপারেশনের আগেই আমরা সেপারেট হয়ে যাই। একই বাসায় থেকেও স্বল্প পরিচিত মানুষের মতই থাকা শুরু করি। কত কথা বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বলা হয় না। হেনার কি তেমন হয়? কি জানি। বিয়েটা কত মানুষের সামনে হলেও আমরা দুইজন গিয়ে পেপার গুলোতে সাইন করি।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে হেনাকে জিজ্ঞেস করি কেন সে সেপারেট হতে ছেয়েছিল, তা জানা যাবে? হৃদয় নামে একটা ছেলের কথা বলল। কখনো কারো সাথে তুলনা করিনি নিজেকে। নিজের সব কিছু নিয়ে অখুশি ছিলাম না। এই প্রথম হৃদয় নামে ছেলেটার সাথে তুলনা করা শুরু করল আমার মন। আমি বললাম হৃদয় নামক ছেলেটার কাছে আমাকে হারিয়ে দিলে? হেনা উত্তর দেয়নি। নিজের সব কিছু নিয়ে চলে গেলো।
হেনা চলে যাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন কোন কিছুই অনুভব হয়নি। যেন বেড়াতে গিয়েছে এমন একটা অনুভূতি। কয়েক দিন পরেই চলে আসবে এমন লাগছিল। এরপর আস্তে আস্তে কেমন শূন্যতা লাগছিল। ঘরে আসলেই রাজ্যের শূন্যতা ভর করত। ভালো লাগত না কিছুই।
অফিস করতেও আর ভালো লাগছিল না। অফিসে গিয়ে রিজেগনেশন লেটার জমা দিয়ে এলাম। পড়ালেখা শেষ করেই ভালো একটা অফার পাওয়ার কারণে জবে ঢুকে গিয়েছিলাম। এমবিএ টা করার ইচ্ছে থাকলেও আর করা হয়ে উঠেনি। ভাবলাম ইউনিভার্সিটিতে গেলে হয়তো ভালো লাগা কাজ করবে। এমবিএ পড়ার জন্য এডমিশন নিয়ে নিলাম।
ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে হেনার সাথে দেখা হওয়া। চিন্তা করলাম হয়তো ক্যাম্পাসে দেখা হবে। দেখা হয়। মাঝে মধ্যে একটু আধটু কথাও হয়। পরিচিত কোন মানুষের সাথে যেমন কথা হয়, ঠিক তেমন।
একদিন ক্যান্টিনের এক কোনায় বসে ছিল। পরীক্ষা থাকায় আমি কথা বলার সুযোগ পাইনি। পরীক্ষা শেষে চা নেওয়ার জন্য এসে দেখি ঠিক আগের জায়গায়ই বসে রয়েছে। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। বলতে চায়নি প্রথমে। পরে বলল হৃদয়ের সাথে তার ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে। তাকে খারাপ কথা বলেছে। চোখ গুলো দেখলাম কেমন লাল হয়ে আছে। আমি শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি এখনো আছি বলে হাত ধরার চেষ্টা করলাম। হেনা তার হাত দ্রুত সরিয়ে নিয়ে বলল তোমাকে থাকতে হবে না। আমি হেরে গিয়েছি। আবার হেরে তোমাকে জিতিয়ে দিতে চাই না বলে নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো।
তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, আমি হারতেও চাইনি। জিততেও চাইনি। চেয়েছি শুধু এক সাথে থাকতে। ছোট্ট জীবনটা পার করতে।