এবার আমার সেন্টমার্টিন বা কক্সবাজার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। এবার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল কুয়াকাটা। কারণ বলছি। কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিন অনেক বার যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কুয়াকাটা যাওয়া হয় নি।
লাস্ট ভ্রমণে বের হয়েছি রোজার আগে। দুই মাস হবে। নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া এবং মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ করেছি। ঐ খানে থাকতেই চিন্তা করলাম, এর পর কুয়াকাটাই যাবো। অন্য কোথাও না। এ জন্য সাইফুল যখন বলল জাকির ভাই, চলেন ঘুরে আসি। আমি বললাম কুয়াকাটা হলে রাজি আছি। সাইফুল ও রাজি হলো। কিন্তু দুই দিন পর সাইফুল আমাকে একটা নিউজের লিঙ্ক দিয়ে বলে কুয়াকাটায় তো বন্যা।
কি আর করা, আমি কুয়াকাটা যাবো না। তাই ঘুরতেও বের হবো না। সাইফুল বলল, চলেন সেন্টমার্টিন যাই। সেন্ট মার্টিন আমার সব সময়ই ভালো লাগে। কিন্তু এবার মন খারাপ। তারপর ও রাজি হয়েছি। আমাদের সাথে যাবে রুবেল। সব ঠিক।
আমি সাইফুল কে বললাম টিকেট কাটার আগে রুবেল কে একবার ফোন করে শিউর হয়ে নিয়েন। সাইফুল বলল ঠিক আছে। আমি বলার কারণ আছে। রুবেল এর আগে কয়েকবার বলল চল ঘুরতে যাই। আমি রাজি হই। পরে আমি ব্যাগ ট্যাগ ঘুছিয়ে ওরে ফোন করি, রুবেল কই? রুবলে বলে যাবে না। এ সমস্যা ঐ সমস্যা… তাছাড়া ও আমাকে রোজা থেকেই বলে কুয়াকাটা যাবে আমার সাথে। কিন্তু দিন ঠিক করতে পারে না।।
কিছুক্ষণ পর সাইফুল বলল, রুবেল ভাই যেতে পারবে না। টিকেট কাটা হয় নি। আমাকে বলল যেহেতু রুবেল ভাই যাবে না, আর আপনিও যেতে চাচ্ছেন না, তাহলে এখন না যাই। আমি বললাম ঠিক আছে…
এক দিন পর আমি সাইফুল কে বললাম, সাইফুল ভাই, আমার ভালো লাগে না। চলেন আমরা দুই জনে গিয়ে ঘুরে আসি। সাইফুল রাজি হলো। ঐ রাতেই সে বের হয়ে গেলো টিকেটের জন্য। আমি বললাম পরে গেলে হয় না? বলে না, যদি ভালো সিট না পাই। সাইফুল অনেক এক্সাইটেড ছিল। পরে গিয়ে টিকেট কাটল। তিন দিন আগে টিকেট কাটা হলো।
এরপর আমরা দুই জনই স্ট্যাটাস দিলাম, মঙ্গল বারে সেন্টমার্টিন যাচ্ছি। স্ট্যাটাস দেখে সাইফুলের রুমমেট ও যাবে। ঠিক আছে, টিকেট কেটে নিল। মঙ্গল বার রাত নয়টায় আমরা রওনা দিলাম। সেন্টমার্টিন পরিবহনে করে সরাসরি টেকনাফে। আল্লাহর উপর ভরসা করে 🙂
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অনেক গুলো নাম। সব গুলোই সুন্দর সুন্দর। প্রবাল দ্বীপ, নারিকেল জিঞ্জিরা, দারুচিনি দ্বীপ। প্রবাল দ্বীপ হওয়ার কারণ হচ্ছে দ্বীপটি প্রবাল দিয়েই সৃষ্টি। নারিকেল জিঞ্জিরার কারণ অনেক নারিকেল গাছ, নারিকেল বা অনেক ডাব পাওয়া যায়। বাকি নাম গুলোর কারণ জানি না।
মঙ্গলবারে আমরা ঢাকা থেকে বের হয়েছি। আজ নতুন আরেকটি দিন। বুধবার। সকাল নয়টা ৩০ এর দিকে জাহাজ ঘাট এসে নামলাম আমরা। তিনজন। আমি সাইফুল আর আনিসুর। কিন্তু জাহাজ ঘাটের ওরা বলল জাহাজ ছাড়বে না। অনেকেই বলছিল আগে যে জাহাজ ছাড়ে না। তারপর ও গিয়েছি। কারণ জাহাজ না ছাড়লে ট্রলারে করে যাবো। জাহাজের লোক গুলো বললো টেকনাফ শহরে চলে যেতে, ঐখান থেকে ট্রলারে করে যেতে পারব। পরে বুঝলাম বাস থেকে নামা ভুল হয়েছে। সরাসরি টেকনাফ শহরে চলে আসলেই হতো।
লোকাল মাইক্রোবাসে করে টেকনাফ শহরে আসলাম। এখানে এসে ট্রলার যেখান থেকে ছাড়ে সেখানে এসে জিজ্ঞেস করলাম, কখন ছাড়বে? বলল সাড়ে বারটার দিকে। হাতে এখনো দুই ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট বাকি। এতক্ষণ কি করব?
বাজারে ঘুরলাম কিছুক্ষণ। এরপর গেলাম মাথিনের কূপ দেখতে। মাথিনের কূপ নিয়ে একটা গল্প রয়েছে। গল্পটি অন্য দিন লিখব। মাথিনের কূপের কাছে এক ঘণ্টা বসে থাকলাম। এরপর আবার বাজারে ফিরে চা খেয়ে নিলাম। তারপর এখন ট্রলার ঘাঁটে এসে বসে আছি।
আমরা ভয় পাচ্ছিলাম আমরা তিন জনই শুধু ট্রলারে যাচ্ছি? কারণ প্রথম যখন আসছিলাম, তখন কেউই ছিল না। কিন্তু না, এখন দেখি অনেক লোকাল মানুষ রয়েছে। বেশির ভাগই মহিলা। আর কয়েক জন পর্যটক ও রয়েছে। আরো কিছুক্ষণ পর ট্রলার ছাড়বে। জোয়ারের পানির জন্য অপেক্ষা করছে।
নদী বা সমুদ্র পাড়ের মানুষের জীবন অনেক ক্ষেত্রেই জোয়ার ভাটার সাথে সম্পর্কিত। জোয়ার ভাতার সাথেই তাদের জীবন উঠা নামা করে। নিঝুম দ্বীপে গিয়েও তা লক্ষ করেছি। এখানে এসে আমারা ও জোয়ারের উপর নির্বর করতে হয়েছে।
১২টা ৩০ এ ট্রলার ছাড়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ছেড়েছে ১টা ৪৫ এ। এবং বর্ডার গার্ডের চেকিং করার পর ঠিক মত ছাড়া হয়েছে ২টায়। মাঝ খানে আরেকটি দ্বীপে ট্রলার থামিয়ে আরো কিছু লোক নিল।
সেন্টমার্টিন পোঁছাতে পাঁচটা বেজে গিয়েছিল। রুম ঠিক করে তারপর ফ্রেস হয়ে খেতে গেলাম। এখন কোন রেস্টুরেন্টই খোলা নেই। ছোট খাটো দুইটা মাত্র রেস্টুরেন্ট খোলা। সে গুলোও আমরা বললে রান্না করবে এমন। তারপর আমরা গিয়ে বসার পর আমাদের রান্না করে দিয়েছে। খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সূর্যাস্ত আর দেখা হয় নি।
আমরা কিছু মাছ কিনলাম। যে হোটেলে থাকি, তারা রান্না করে দিবে। রাতে সে গুলো দিয়ে খাবার খাবো।
খাওয়া দাওয়া করে আমরা দ্বীপের সৈকতে ঘুরতে গেলাম। চাঁদের আলো ছিল। দ্বীপের এক পাশে নেমে হাঁটতে হাঁটতে আরেক পাশে গিয়ে উঠলাম। তীরে থাকা একটা নৌকায় বসে রাতের চাঁদ, সমুদ্রের ঢেউ আর বাতাস উপভোগ করলাম। এরপর বাজারের দিকে এসে ডাব খেলাম। এক জন দুটি করে। মাত্র ১৫ টাকা করে রাখল। তারপর বাসায় ফিরলাম।
কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসলো। সে গুলো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল নয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি। আরেকটি নতুন দিন। বৃহস্পতিবার। বাজারে গিয়ে নাস্তা করে হাঁটতে হাঁটতে ছেঁড়া দ্বীপের দিকে গেলাম। ছেঁড়া দ্বীপতে সাধারণত ট্রলার দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ভাটার সময় শুকনা থাকে, তাই হেঁটে যাওয়া যায়। আমরা হাঁটা শুরু করলাম। মোটামুটি অনেক দূর। মাঝখানে এক জাগায় থেমে ডাব খেলাম। বিশাল বিশাল ডাব। এক জন দুটি করে খেতে পারব মনে করেছি। অনেক গুলো গাছ। এমনকি যে গাছের ডাব গুলো বড়, সে গাছ দেখিয়ে বললাম ঐ গাছ থেকে পাড়েন। তারা পেড়ে দিল।
একটা খেলাম। দ্বিতীয়টা খেয়ে কষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দাম অনেক কম। মাত্র ২০ টাকা করে রাখল একটি ডাব।
ডাব খাওয়ার পর একটা সমস্যা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পরই পি করতে হয়েছে। গাইডরা অবাক হয়ে গেলো! এত বার :p গাইডরা বলছি এ কারণে যে আমাদের সাথে দুই জন গাইড ছিল। পর্যটক কম আসে, তাই ওদের না বলা সত্ত্বেও আমাদের সাথে ছিল সারাক্ষণ। আমরাও নিষেধ করি নি।
ছেঁড়া দ্বীপে একটি মাত্র ফ্যামিলি থাকে। সেখানে আবার রাতে থাকার পর্যটক দের জন্য ছোট ছোট দুই তিনটা কটেজ রয়েছে। ছোট একটা দ্বীপে অনেক কিছুই আছে। মুরগি, ছাগল এসব চোখে পড়ল।
ছেঁড়া দ্বীপে যেতে যত সহজ ছিল, ফিরতে তত সহজ হয় নি। কারণ আমরা এক দিক দিয়ে অন্য দিক দিয়ে ফিরছিলাম। দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে ফিরছলাম। ঐ দিক দিয়ে পাথর, এবং গাছপালা অনেক বেশি। যদিও অনেক কিছু দেখতে পেরেছি। সাধারণ পর্যটকরা যে দিকে যায়, ঐদিকে কোন মাঠ নেই। কিন্তু আমরা যে দিকে গিয়েছি, ধান খেত ছিল। অনেক ছোট ছোট ঘর ছিল। অনেক গুলো জায়গা অনেকেই কিনে রেখেছে। ভবিষ্যতে হোটেল করবে বলে।
ফিরার সময় সমুদ্রে নেমে গোসল করলাম। এর আগে যত বার এসেছি, অন্য সিজনে এসেছি। সমুদ্রে নামার সময় অনেক পর্যটক থাকত সাথে। ভয় পেতাম না। অনেক দূর যেতাম। তাছাড়া ঢেউ অনেক কম থাকত। কিন্তু এবার অনেক বড় বড় ঢেউ। বেশি দূরে যাই নি। বুক সমান পানি পর্যন্ত গিয়েছি। গাইড ও নিষেধ করছিল।
রুমে ফিরে গোসল করলাম। তারপর খেতে গেলাম। প্রায় ৪টা ভেজে গিয়েছিল। আমি নামাজ পড়ার জন্য রুমে ফিরলাম। নামাজ পড়া শেষ, ঘুরতে বের হবো, ততক্ষণে অনেক বৃষ্টি শুরু হলো। আর বের হতে পারি নি। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কমল। আমরা বের হলাম।
লঞ্চ ঘাট বা সেন্টমার্টিন এর ব্রিজটির দিকে গেলাম। আমাদের সাথে গাইড আর দুই তিনটা লোকাল ছেলে ছিল। তারাও যদিও গাইড হিসেবে কাজ করে। একটা ছেলে আমাদের গান শুনালো। চাঁদের আলো ছিল। ব্রিজে শুধু আমরা কয়েক জন। সমুদ্রের গর্জন আর বাতাসে দারুণ লাগছিল। কিছুক্ষণ থেকে ফিরলাম। ফেরার পথে আবার হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। দারুণ আবহাওয়া। একটুও গরম নেই।
বাজারে এসে হোটেলে বললাম রাতে খাবো। তারা আড়ত থেকে মাছ কিনে আনলো, আমাদের জন্য। সেগুলো রান্না করে রাখবে আমাদের জন্য। এরপর রুমে ফিরলাম।
কিছুক্ষণ রুমে থেকে বের হলাম খাবারের জন্য। দ্বীপে কোন বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটর দিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া হোটেল গুলোও ১১টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়। তাই আমাদের ১০টার দিকেই খেতে হলো। খাওয়া দাওয়া করে আবার গেলাম ব্রিজ এর দিকে। অনেক সুন্দর আবহাওয়া ছিল। অনেকক্ষণ থেকে রুমে ফিরলাম। এরপর গান শুনে, মুভি দেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
শুক্রবার, আরেকটি নতুন দিন। নয়টায় জেগে গেলাম। এরপর ফেসবুক চেকিং, গান শুনা, অলসতা করতে করতে খেতে বের হলাম ১১টার দিকে। সকালের নাস্তার সাথে পানি কিনার পরিবর্তে ডাব কিনে নিলাম। করণ ডাবের পানি থেকে মিনারেল পানির দাম বেশি। এমনিতেও আমার ডাব খেতে ভালো লাগে।
খাওয়ার পর কিছুক্ষণ এদিক সেদিক হাঁটা হাঁটি করলাম। তারপর রুমে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। এরপর বিছানায় বসে ফেসবুকিং, ইমেইল চেকিং, গান শুনা ইত্যাদি করে সময় কাটালাম। জুমা বার। তাই ১টার দিকে রুম চেক আউট করে ব্যাগ নিয়ে মসজিদের দিকে গেলাম। নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য খাবারের হোটেলের দিকে গিয়েছি। রূপচাঁদা মাছ খেতে চেয়েছি। বড় গুলো না পাওয়ার কারণে আমাদের জন্য লবস্টার নিয়ে আসল আড়ৎ থেকে। জীবিত।
৩টায় লঞ্চ ছেড়ে দিবে। দুইটা ১৫ দিকে মাছ গুলো নিয়ে আসলো। এর পর কেটে কুটে রান্না করল। আমাদের হাতে সময় নি। খেতে পারবো তো? চিন্তা করতে লাগলাম। আমাদের ভাত, ডাল আর আলুর ভর্তা দিল। তা দুইটা ৩০ এর দিকে। এখনো লবস্টার রান্না হচ্ছে। আমাদের সামনেই…
দুইটা ৪০ এর দিকে আমাদের লবস্টার দেওয়া হলো। গরম, খেতে পারছি না। লঞ্চ ছাড়বে ৩টায়। একেবারে ঘড়ি ধরেই ছাড়বে। তাই দ্রুত খেতে লাগলাম। সাইফুল সবার আগে খেতে পারল। যদি সে সব সময় একটু রিলাক্স মুডে খাবার খায়। অনেক দেরি করে। কিন্তু আজ সবার আগে কিভাবে খেলো আমরা বুঝতে পারি নি। এরপর খাওয়া শেষ হলো আনিসুরের।
আমি তখনো খাচ্ছি। মাত্র লবস্টারের মাংসল গুলো খেলাম। এখনো অনেক বাকি। কিন্তু সময় নেই। সাইফুল বিল মিটাচ্ছে, আমি তখনো চিংড়ি থেকে মাংস বের করে খাওয়ার চেষ্টা করছি। টাকা দেওয়া শেষ, আমি হাত একটু মুছেই দিলাম দৌড়। আমার ব্যাগ তার আগেই গাইড নিয়ে দৌড় দিয়েছিল।
আমরা বের হওয়ার পর পরই বৃষ্টি শুরু হলো। হাতে সময় একটু নেই। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ঘাটের দিকে দৌড়ালাম। নাহ, লঞ্চ ছাড়ে নি এখনো। টিকেট কাটা ছাড়াই উঠে গেলাম। কারণ লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছে। লঞ্চে উঠে টাকা দিলাম টিকেটের জন্য, সাথে সাথেই লঞ্চ ছেড়ে দিল। আর যদি ৩০ সেকেন্ড ও দেরি করতাম আমরা, লঞ্চ মিস করতাম। পরের দিন আসা ছাড়া উপায় ছিল না। তাও ট্রলারে করে।
লঞ্চে উঠে শাকিল ভাই কে বললাম আমরা আসতেছি। উনি বলল হোটেল বুক দিয়ে রাখবে। টেকনাফ পৌছালাম। এরপর মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজারে রওনা দিলাম। মাইক্রোটি লোকাল ছিল। জাগায় জাগায় থামিয়ে লোক উঠাচ্ছিল নামাচ্ছিল। ভয়াবহ জার্নি। কক্সবাজার পৌছার কিছুক্ষণ আগে শাকিল ভাইকে কল দিলাম। উনি হোটেলের ঠিকানা দিল। AB Garden। আমদের জন্য পুরো ফ্ল্যাট বুকিং দিয়ে রাখল। বিশাল বিশাল রুম। সাথে হোম থিয়েটার আরো কত কিছু…
আমরা হোটেলে উঠে রেস্ট নিলাম কিছুক্ষণ। এরপর শাকিল ভাই আসলো। কথা বলে বের হলাম। তারপর বিচে গেলাম। কলাতলি বিচের দিক দিয়ে নেমে লাবনী বিচের দিক দিয়ে উঠলাম। এরপর কলাতলি ফিরে আসলাম। ধানসিঁড়ি রেস্তরাতে। ঐখানে রাতের খাবার খেলাম। ধানসিঁড়িতে ভালো কাস্টার্ড পাওয়া যায়। এর আগে অনেক বার ঐখানে খেয়েছি। মূলত কাস্টার্ডটি খাওয়ার জন্যই সেখানে যাওয়া।
রাতের খাবার খেয়ে আবার বিচে গেলাম। ঐখানে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে বসে চাঁদের আলো, সমুদ্রের ঢেউ আর শব্দ উপভোগ করলাম। তারপর ১২টার দিকে হোটেলে ফিরলাম।
শনিবার, কক্সবাজারে আরেকটি দিন। ঘুম থেকে একটু দেরি করে উঠেছি। এসি দিয়ে রুম ঠাণ্ডা করে কম্বল গায়ে গিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। শীতকালের মত। রুম থেকে বের হয়ে সকালের নাস্তা করলাম। আগের দিন শাকিল ভাই সার্ফিং করার জন্য জুয়েল ভাইকে বলে রাখল। এর আগেও জুয়েল ভাই আমাকে সার্ফিং করতে হেল্প করছিল। উনাকে ফোন দিলাম।
জুয়েল ভাই বলল সার্ফিং ক্লাবে গিয়ে বসতে। সার্ফিং ক্লাবটি যথেষ্ট সুন্দর। ঐখানে গিয়ে কিছুক্ষণ পর জুয়েল ভাই আসলো। সার্ফ বোর্ড নিয়ে সমুদ্রে নামলাম। সার্ফিং করতে যতটা না মজা লাগে তার থেকে বেশি ভালো লাগে সার্ফিং বোর্ডে বেসে বেসে সমুদ্রের গভীরে যাওয়া।
এর আগে দুই বার সার্ফিং করতে গিয়েছি কক্সবাজার। প্রতিরবারই জুয়েল ভাই ছিল সাথে। হেল্প করত। আজ কিছুক্ষণ উনি থাকার পর একা একা সার্ফিং করতে গেলাম। সফলও হয়েছি। ভালো লেগেছে 🙂
সার্ফিং করার পর জুয়েল ভাই চলে গেলো। এরপর ও কিছুক্ষণ সমুদ্রের পানিতে থেকে রুমে ফিরলাম। রুমে ফিরার পথে টিকেট কিনলাম। BRTC তে। ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করার জন্য বের হলাম। লাঞ্চ করতে করতে আসরের নামাজের সময় হলো। নামাজ পড়ে আবার বীচে গেলাম। আকাশে মেঘ ছিল। কিছুক্ষণ সূর্য উকি দেয়ে, কিছুক্ষণ লুকোয়। ভালো লাগে। সূর্য আস্তে আস্তে লাল হতে লাগল। কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করার পর সন্ধ্যা হলো। বীচে থাকা সিট গুলোতে বসে সময় কাটালাম। কিছুক্ষণ পর BRTC থেকে ফোন। ওদের ম্যানেজম্যান্টের সমস্যার কারণে আজ বাস ছাড়বে না।
এর আগে ও একবার BRTC তে টিকেট কেটে এমন হয়েছে। পর্যাপ্ত টিকেট বিক্রি না হওয়ার কারণে ওরা যাবে না বলেছিল। এবার ও হয়তো তেমনি কিছু। আমাদের টিকেট ছিল ১০টার। উনারা ৭টায় ফোন করে বলে যাবে না। কেমন লাগে?!
দ্রুত বীচ থেকে এসে অন্য বাসের টিকেট দেখলাম। TR, Green Line এগুলোতে। কিন্তু সিট অনেক পেছনে, তাই আর কাটি নি। Yollow Line নামে নতুন সার্ভিস ছেড়েছে। চিন্তা করতে লাগলাম কেমন হবে সার্ভিস? ওদের ঐখানে ভালো সিট পেলাম। বাস ছাড়বে সাড়ে আটটায়। হাতে সময় অনেক কম। দ্রুত রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে আসতে আসতেই সাড়ে আটটা ভেজে গেলো। এসে দেখি বাস ছেড়ে দিচ্ছে!
বাসে উঠে খারাপ লাগে নি। ভালোই। গান শুনে আর কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমুতে ঘুমুতে ঢাকায় ফিরলাম। তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। নতুন আরেকটি দিন। রবিবার। …
আফসোস হচ্ছে কেন গেলাম না। 🙁
এত সুন্দর করে কেউ লিখে মিয়া??? তাও আবার ছবি দিয়া!
সময় করে এক সময় ঘুরে আসিয়েন 🙂
ভাই খরচ কেমন পরবে ৪/৫ দিন থাকলে?
৫-৮ হাজার টাকার মত।
ভাই আমি চট্টগ্রাম আছি। ভাবছি কক্সবাজার যাব। কম খরচে কিভাবে ঘুরে আসতে পারব বিস্তারিত জানাবেন plz
চট্রগ্রাম থেকে বাসে করে কক্সবাজার যাবেন, ঘুরে চলে আসবেন। এখানে শুধু বাস বাড়া আর থাকা খাওয়া… সিম্পল।
যত দোষ রুবেলের! -_-
অফকোর্স রুবেলের দোষ!
A great explanation. A tour by Jakir, it would be the great name. Thanks Bro