বাংলাদেশের অনেক জায়গায়ই আমার ঘুরা হয়েছে, শুধু মাত্র সুন্দরবন ছাড়া। অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল সুন্দরবন ঘুরব, কিন্তু কোন সুযোগ পাই নি। সুন্দরবন একা একা ঘুরা যায় না। ঘুরতে হলে টিম নিয়ে লঞ্চে করে তারপর ঘুরতে হয়। বাংলাদেশের অন্য যে কোন জায়গায় একা একা ঘুরা যায়, শুধু মাত্র সুন্দরবন ছাড়া। এবার সুযোগ হয়েছে এই অসাধারণ জায়গাটি ঘুরার। আপন ভাই একটা ট্যুরের আয়োজন করেছে সুন্দরবনে। আপন ভাই এর সাথে এর আগেও কয়েকটা ট্যুরে গিয়েছি।
তিনদিন ছুটি থাকায় সহজেই সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে বের হতে পারলাম। ২৮ তারিখ অফিস করে রওনা দিয়েছি আমরা। ঢাকা থেকে আমার সাথে এসেছে সোহান এবং শরীফ ভাই। উনারা দুইজন আমার কলিগ। আমরা এক সাথে P1, বসুন্ধরা গ্রুফে জব করি। গ্রিনলাইন থেকে টিকেট আগেই কিনে রেখেছে শরীফ ভাই। খুলনা আসার জন্য। ২৮ তারিখ সন্ধ্যা ৯টায়। খুলনা থেকে এরপর সবাই একসাথে লঞ্চে করে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। ৯টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও বাস ছেড়েছে ১১টা ১০ এ। বিজনেস ক্লাসের টিকেট কিনেও এ অবস্থা। ভয়াবহ!
আমরা এসেছি আরিচা হয়ে। ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে কিছুক্ষণ। ঢাকা কুমিল্লা বা চট্রগ্রাম হাইওয়েতে যেমন যাত্রা বিরতি দেওয়া হয়, এ রুটে সম্ভবত তেমন বিরতি দেওয়া হয় না। আমরা খুলনা পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল ৮টা বেজে গিয়েছে। আমাদের আগেই প্রায় সবাই চলে এসেছিল।
বাস থেকে আমরা নেমে এসেছি জেলে ঘাটে। এখানে এসে লিচু দেখে লিচু কিনেছি। আপন ভাই এর জন্য অপেক্ষা করতে করতে লিচু খেয়েছি। এরপর এখানে একটা দোকানে পরটা খেতে বসার পরই আপন ভাই এসেছে আমাদের লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আপন ভাই বলল লঞ্চে আমাদের জন্য সকালের নাস্তা রয়েছে। তারপর ও আমরা একটা করে পরটা খেয়ে নিলাম। এরপর লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চ ঘাট থেকে একটু দূরে ছিল। তাই লঞ্চে উঠার জন্য প্রথমে ট্রলারে উঠতে হয়েছে। ঐ ট্রলারে করে পরে আমরা লঞ্চের কাছে গিয়ে লঞ্চে উঠেছি।
আমাদের সাথে টুরিস্ট ছিল প্রায় ৩০ জনের মত। এর মধ্যে চারজন ছিল ইংল্যান্ড থেকে। ওরা হচ্ছে টিম, লরা, ম্যারি এবং তার মেয়ে জুলিয়েট। দেরি করা আসায় লঞ্চের সামনের দিকের সব গুলো রুম বুকড হয়ে গিয়েছে। আমাদের জন্য পেছনের দিকে দুইটা রুম ছিল। পেছনের দিকে সমস্যা হচ্ছে ইঞ্জিনের শব্দ। একটাতে ব্যাগ রেখে লঞ্চের ছাদে উঠলাম। গিয়ে দেখি প্রায় সবাই ছাদে। লঞ্চের ছাদে অনেক রোদ। রোদ থেকে বাঁচার জন্য কাপড়ের ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লঞ্চের ছাদে বসার জায়গা ও খাওয়ার জায়গা তৈরি করা হয়েছে।
সকালের খাবার হিসেবে ছিল ব্রেড, জেলি, মধু এবং চা বা কফি। লঞ্চে আমরা সবাই উঠার পর ছেড়ে দিল সুন্দবনের উদ্দেশ্যে। আমরা খাওয়া দাওয়া করে যে যার মত করে চারপাশ দেখতে লাগলাম। ছাদে গরম লাগায় আমি লঞ্চের ক্যাপ্টনের রুমে গিয়ে বসলাম। অনেকক্ষণ দেখে একটা রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম । এরপর আবার খাবার দেওয়া হলো। কেক এবং পেঁপে। খেয়ে আবার ঘুমালাম। ঘুম থেকে যখন উঠেছি, তখন দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে। ততক্ষণে আমরা সুন্দরবন চলে এসেছি।
দুপরের খাবারে ছিল বড় টেংরা মাছ, সবজি এবং মুরগি। সবাই খাওয়া দাওয়া করে আমরা একটা পয়েন্টে নামলাম। নাম হাড়বাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র। হাড়বাড়িয়া তে নামার জন্য প্রথমে লঞ্চ থেকে ট্রলারে নামতে হয়েছে এরপর ট্রলারে করে হাড়বাড়িয়া। হাড়বাড়িয়া পর্যটকরা যেন সহজেই হাঁটতে পারে, এ জন্য পুল করে দেয়া হয়েছে। পুলের উপর দিয়ে আমরা হাঁততে লাগলাম।
সুন্দরবন ঘুরতে অনেক সিকিউরিটি মেন্টেইন করতে হয়। অনেক প্রকারের পারমিশন লাগে। এরপর বন বিভাগ থেকে সাথে দুইজন গার্ড দেওয়া হয়। তারপর ঘুরার পারমিশন দেওয়া হয়। আমাদের এসব কিছু আগে থেকেই ম্যানেজ করে রাখা ছিল। বন বিভাগ থেকে আমাদের সাথে দুইজন সিকিউরিটি দেওয়া হয়েছে। উনারা আমাদের সাথে পুরো সময়টাতে থাকবে। আমরা কোথাও গেলে একজন সিকিউরিটি সামনে থাকবে, একজন পেছনে। মাঝখানে আমরা সারি বদ্ধ ভাবে হাঁটব।
এছাড়া সুন্দরবনের প্রায় প্রতিটা পয়েন্টে মানুষ হাঁটার জন্য উঁচু সেতুর মত রাস্তা তৈরি করা রয়েছে। যেন জোয়ারের সময় পানি উঠলেও পর্যটকরা সুন্দর মত বন ঘুরে দেখতে পারে। আবার সুন্দরবনের শ্বাস মূলের ভেতর দিয়ে হাঁটা কষ্টকর। এ জন্য এই সেতুর মত রাস্তা গুলো দিয়ে হাঁটতে সহজ হয়। ভালো ভাবে সব ঘুরে ঘুরে দেখা যায়।
হাড়বাড়িয়াতে নেমেই আমরা হরিণ দেখতে পারলাম। এখানে একটা পুকুর রয়েছে। পুকুরের পানি হচ্ছে মিঠা পানি। মিঠা পানি খেতে বনের প্রাণীরা অনেক দূর থেকে চলে আসে। আমরা হাঁটতে লাগলাম এরপর আরো হরিণ চোখে পড়ল। সামনে একজন সিকিউরিটি, পেছনে একজন সিকিউরিটি। পুকুর পাড়ে এসে বসলাম কিছুক্ষণ। এদিক সেদিক হাঁটলাম। এরপর ট্রলারে করে লঞ্চে ফিরে আসলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমরা সন্ধ্যার নাস্তা খেলাম, চা বা কফি খেয়ে সবাই মিলে এক সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। এখানে অনেকেই অনেক জায়গা থেকে এসেছে। কেউ কাউকে আমরা ঠিক মত চিনি না। তাই পরিচয় পর্ব হলো প্রথমে। এরপর কালচারাল প্রোগ্রাম। গান সহ অন্যান্য কিছু যে যার মত করে পারফর্ম করল।
রাতে লঞ্চের ছাদের দারুণ বাতাস বইছিল। আমি রুমে না ঘুমিয়ে লঞ্চের ছাদে বসার জন্য রাখা সোফার উপর ঘুমিয়ে পড়লাম। দারুণ ঘুম হলো। সকালে উঠতে হবে সাড়ে পাঁচটায়। সকালে আমরা কটকা, জামতলা একটা পয়েন্টে নামব।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই শুভাষ ভাই উইশ করল। আজ ত্রিশ এ এপ্রিল। আমার জন্ম দিন। এরপর আরো একজন দুইজন উইশ করল।
ফ্রেশ হয়ে চা এবং বিস্কিট খেয়ে আমরা ট্রলারে করে নামলাম কটকাতে। ট্রলার থেকে নামার সময় আমাদের হাতে একটা করে আপেল এবং পানির বোতল দেওয়া হলো। কটকাতে সমুদ্র সৈকত রয়েছে। যেখানে আমরা নেমেছি, সেখান থেকে সৈকতে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিটের মত লাগবে। আমরা হাঁটা শুরু করলাম। সকাল সকাল হওয়াতে সূর্য উঠেনি। তাই হাঁটতে সমস্যা হয় নি। কটকাটে এত গুলো হরিণ চোখে পড়ল। একদম কাছ থেকে হরিণ দেখতে পেলাম। অনেক গুলো হরিণ। এক সাথে তারা ঘাস খেতে লাগল। আমাদের দেখেই সজাগ হয়ে গেলো। এবং এক সময় বনের ভেতর ঢুকে গেলো।
সৈকত গিয়ে আমরা কেউ কেউ ফুটবল খেললাম। কেউ কেউ বসে প্রকৃতি দেখলাম। কেউ কেউ হাঁটাহাঁটি করলাম। এরপর ফিরে আসলাম। ফেরার সময় আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করে পথ খুঁজে পেয়ে এরপর আস্তে আস্তে ফিরে আসতে লাগলাম। ততক্ষণে সূর্য নিজের তেজ দেখানো শুরু করল।
যাওয়ার সময় আগের পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক এবং অনেক পানির বোতল দেখতে পেলাম। আমাদের সাথে ইংল্যান্ড থেকে আসা টিম ঐ প্লাস্টিক গুলো কুড়িয়ে নিজের পকেটে রাখল। বোতল গুলো তুলে হাতে নিল। পুরো এলাকায় একটা মাত্র বিন ছিল। বিনটা পড়ে ছিল। বিনের চারপাশে অনেক গুলো বোতল পড়ে ছিল। কারণ হচ্ছে বানররা বিনের সব কিছু ফেলে খাবার খোঁজে, তাই। পরে বিদেশী ওরা বিনকে বসিয়ে সব গুলো বোতল বিনের ভেতর রাখল। ওরা বিনে বোতল রাখা শুরু করলে আমাদের সাথের অন্যারাও হেল্প করা শুরু করে।
সকালেই এত হাঁটা হাঁটি করে আমরা অনেক টায়ার্ড হয়ে পড়লাম। লঞ্চে ফিরে আসলাম সবাই। এপর সকালের খাবার খেয়ে নিলাম। সকালের খাবার হিসেবে ছিল খিঁচুড়ি, ডিম আর বেগুণ ভাজি। খেয়ে আবার আরেকটা পয়েন্টে গেলাম। পাশেরই আরেকটা পয়েন্ট। এটাও কটকা। এখানেও অনেক হরিণ ছিল। পর্যটকরা সহজেই যেন হাঁটতে পারে, তার জন্য পথ করা ছিল। আমরা হেঁটে হেঁটে সব দেখলাম। অনেক আগে ঘটে যাওয়া সিডরে সব ভেঙ্গে চুরে ফেলে গিয়েছিল, তা এখনো রয়েছে। অনেক গাছ ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। আমরা এসব দেখে আবার ফিরে এসেছি লঞ্চে।
লঞ্চে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। আমাদের সরবত এবং সিঙ্গারা খেতে দিল। আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে দুপুরের খাবার খেলাম। সবাই এক সাথে। লঞ্চের ছাদে বসে। সবজি, রুই মাছ আর কালো হরিণ [ছাগল] এর মাংস ছিল। খাওয়া দাওয়া করে কথা বলতে বলতে ৪টা বেজে গেলো। আমরা এরপর চলে গেলাম অন্য আরেকটা পয়েন্টে। নাম কচিখালি। কচিখালির এখানে একটা ক্যানেল ছিল। ঐ ক্যানেল ধরে আমরা অনেক ভেতরে গিয়েছি ট্রলারে করে। ভালোই লাগছিল। এরপর কচিখালি নামলাম আমরা। সবচেয়ে বেশি হরিণ দেখেছি এই কচিখালিতে। অনেক বড় হরিণের ঝাঁক।
এত হরিণ দেখলাম, অনেক কাছ থেকে। অনেক ভালো লেগেছে। এর আগে নিঝুম দ্বীপ গিয়েছি হরিণ দেখতে। অনেক হেঁটেও হরিণের দেখা পাওয়া কষ্ট কর। দেখলেও অনেক দূর থেকে দেখতে হয়েছে। সুন্দরবন এসে ইচ্ছে মত হরিণ দেখতে পেরেছি।
কচিখালি অনেকক্ষণ হাঁটার পর আবার ফিরে আসলাম লঞ্চে। ততক্ষণে সূর্য ডুবতে শুরু করছে। সুন্দরবনে দ্বিতীয় বারের মত সূর্যাস্ত দেখা। সন্ধ্যার পর নাস্তা করে আমরা যে যার মত করে আড্ডা দিতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পড় শুরু হলো কালচারাল প্রোগ্রাম। কালচারাল প্রোগ্রামের শুরু হলো আমাকে উইশ করে। সবাই মিলে জন্মদিনের গান গাইলো। সবার গান বন্ধ হওয়ার পর পরই বিদেশী ওরা গান গাওয়া শুরু করল আমাকে উদ্দেশ্য করে। কি যে ভালো লাগছিল, বোঝাতে পারব না।
এরপর কিছুক্ষণ বাংলাদেশীরা গান গাইলো। কিছুক্ষণ লন্ডনের ওরা গান গাইলো। ওরা বাংলা ভাষায় গান গাইলো। ‘বন্দে মায়া লাগাইছ’, ‘আমরা করব জয়’ ইত্যাদি গাওয়ার চেষ্টা করল। ইংরেজীতে অনেক গুলোই গাইলো তারা। তার মধ্যে আমার একটা মনে আছে। তা হচ্ছে Yellow Submarine। কিছুক্ষণ গেম খেলা হলো। কৌতুক পরিবেশ হলো। এভাবে করতে করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে আমাদের জন্য বার-বি-কিউ তৈরি হচ্ছিল। রাতের খাবারের জন্য। চিকেন বার-বি-কিউ এবং পরোটা। আমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা বড় কোরাল মাছের বার-বি-কিউ তৈরি করা হয়েছিল। ঐটা আবার কেকের মত সবাই মিলে কেটেছি। অন্য রকম একটা জন্মদিন গিয়েছে আমার।
রাতের খাবার খাওয়ার পর আমরা অনেকেই লঞ্চে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। কি সুন্দর বাতাস। ভালো লাগছিল আমাদের। লন্ডনের ওদের সাথেও কথা হলো। তারা তাদের কালচার সম্পর্কে বলল। আমরা আমাদের। গত রাতের মত আমি এ রাতেও লঞ্চের ছাদে ঘুমাবো বলে প্ল্যান করেছি। পরে দেখলাম টিম, ম্যারি আর তার মেয়ে জুলিয়েট ছাদে ঘুমাবে বলে ঠিক করল।
সোফার উপর চিৎ হয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়েছি। আকাশে কি সুন্দর তারা। অনেক উপর দিয়ে একটা বিমান যাচ্ছিল, তারার মত জ্বলতে জ্বলতে। ছোট বেলায় যেমন একটা বিমান কোন দিকে যায়, তা দেখতাম, শুয়ে শুয়ে তাই করলাম। কানে ছিল হেডফোন। গান শুনতে শুনতে আর তারা দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙ্গেছে সূর্যের তাপ গায়ে পড়ে। আমাদের আজ সকালে কোন প্ল্যান নেই। তাই আবার রুমে গিয়ে আরেক বার ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম থেকে উঠেছি প্রায় দশটার দিকে। এরপর নাস্তা করলাম। নাস্তা করার পর আমরা নেমেছি করমজল নামক স্পটে। করমজল না আসলে বুঝতে পারতাম না বানরের বান্দারামি কাকে বলে। এখানে এত বেশি বানর। বানরকে ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই ভয়ে দৌঁড় দিয়েছি। ওদের জন্য বাদাম কিনলাম। আমার হাত থেকেই নিয়ে যাবে, এমন অবস্থা। করমজলে ছোটখাটো একটা চিড়িয়াখানা রয়েছে। এ চিড়িয়াখানাতে হরিণ, কুমির ইত্যাদি রয়েছে। করমজল ঘুরে দেখলাম। সুন্দরবনের ভেতরে ঢুকতে হলে পারমিশনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু করমজল যে কেউ আসতে পারে। মংলা বন্দর থেকে কাছে।
করমজল ঘুরে দেখার পর আবার লঞ্চে ফিরলাম। তখন দুপুর হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর যে যার মত করে রেস্ট নিলাম। লঞ্চ খুলনা শহরের দিকে ফেরা শুরু করল। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সূর্য ঢুবে ঢুবে করছে। আমরা লঞ্চ থেকে ট্রলারে উঠলাম। জেলেঘাট নামার জন্য। রাতের খাবার আমাদেরকে প্যাকেট করে দিয়ে দেওয়া হলো। তখন চারদিক কালো হয়ে ঝড় উড়ল। ঝড় বাড়তে বাড়তে আমরা তীরে এসে পৌছালাম। ততক্ষণে ঝড়ের বেগ আরো বাড়তে লাগল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমরা সুন্দর ভাবে সুন্দরবন ঘুরে তীরে ফিরলাম।
তীরে যখন পৌঁছিয়েছি, তখন যেহেতু অনেক ঝড় শুরু হয়েছে, সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। যে যার মত করে দৌঁড়ানো শুরু করল। আমরা ব্যাটারি চালিত একটা গাড়িতে উঠেছি। রয়েলের মোড় যাওয়ার জন্য। ঐখানে আমাদের বাস কাউন্টার। ঢাকা ফেরার টিকেট আমাদের অরগানাইজার আপন ভাই আমাদের জন্য ম্যানেজ করে রেখেছিল। ঐ গাড়ির ড্রাইভার এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল যে উল্টা পাল্টা চালানো শুরু করল। একটা স্পিড ব্রেকার তার চোখে পড়ে নি। খুব ভয়ঙ্কর ভাবে গাড়িটি জাম্প করল। আমি ব্যালেন্স হারিয়ে বলা যায় রাস্তায় পড়ে গিয়েছি। তেমন কিছু হয় নি। ভয়াবহ কিছু হতে পারত।
বাস কাউণ্টারে গিয়ে দেখলাম আমাদের হাতে এখনো প্রায় এক ঘণ্টার মত সময় রয়েছে। পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট দেখলাম। আমি, সোহান আর শরিফ ভাই ঐখানে গিয়ে নাস্তা খেলাম। ঠিক সময় বাস ছাড়ল। সাড়ে আটটায়। তাই খুশী হলাম। হানিফ পরিবহণ। খুশী বেশিক্ষণ টিকল না। কারণ এত খারাপ ভাবে গাড়ি চালানো শুরু করল। রাস্তায় গর্ত বা ভাঙ্গা হলেও স্পিড কমানোর কোন লক্ষণ নেই। পেছনে যারা বসেছে তারা রোলার কোস্টারের ফিলিং পেতে শুরু করল। পেছন থেকে যত বলা হলো স্পিড কমাতে, ড্রাইভার কানেই নিল না। এরপর আবার অনেকক্ষণ জ্যামে বসে থাকতে হলো। যখন গাবতলি এসে নামালো, তখন সকাল আটটা। তাও ভালো, পৌঁছাতে পেরেছি।
খুলনা যাওয়া আসা ছাড়া বাকি সময়টা ভালো কেটেছে। যাদের সাথে গিয়েছি, তারা খুব হেল্পফুল ছিল। মিশুক ছিল। এই গরম কালে যাওয়ার কারণে একটু বেশি গরম লেগেছে, এই যা। এটা ঢাকা থাকলেও হয়তো লাগত। সুন্দরবন ভ্রমণের সঠিক সময় সম্ভবত নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী। আমরা বলা যায় গিয়েছি অফ সিজনে। অফ সিজনে যাওয়াতে একটা ভালো হয়েছে, কোন মানুষের ভিড় নেই। আমরা একা একা সব কিছু সুন্দর মত উপভোগ করতে পেরেছি। নিরিবিলি পেয়েছি সব কিছু। সিজনের সময় গেলে হয়তো একটা দল হরিণ দেখল। পরে যারা যাবে, তারা কেউই আর দেখোতে পাবে না। কারণ প্রথম দলকে দেখেই হরিণ গুলো বনের ভেতর ঢুকে যাবে। সুন্দরবনে তিন দিন সুন্দর সময় কেটেছি আমরা সবাই মিলে।
ভ্রমণের আরো কিছু ছবি পাওয়া যাবে আমার ফেসবুকে শেয়ার করা এলবামে।
খুব গোছানো ছিলো। 🙂