মেহেরাব নামের ছেলেটি তার সকল বন্ধুদের সারপ্রাইজ দিয়ে বেড়াতো। বিশেষ দিন গুলো আর বন্ধুদের জন্মদিন সহ অন্যান্য স্পেশাল দিন গুলো ছিল তার মুখস্ত। আর এই স্পেশাল সব দিনে একজনকে এক এক ভাবে সারপ্রাইজ দিত। তাকে তখন সারপ্রাইজ দিত পরীক্ষার রেজাল্ট। অল্প কিছুক্ষণের জন্য মনটা তখন খারাপ হয়ে যেতো। ক্লাস থেকে বের হয়েই আবার যে মেহেরাব সেই হয়ে যেত, সবচেয়ে হাসি খুশি। সবচেয়ে মিশুক ছেলেটি সবার সাথে সমান ভাবে আড্ডা দিয়ে বেড়াতো।
টেনেটুনে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে যখন, তখন দেখল সবার চাকরি হচ্ছে, শুধু তার চাকরি হচ্ছে না। এক সময় প্রিয় মানুষটিও একটা সারপ্রাইজ দিল। পূর্বাবাস আগেই পেয়েছিল, কিন্তু প্রচণ্ড বিশ্বাস করত মেয়েটিকে। শেষ বার দেখা করতে এসেছে হাতে রিং নিয়ে। অন্য কারো সাথে এঙ্গেজমেন্ট রিং। অবিশ্বাস্য চোখে পিট পিট করে তাকিয়েছিল শুধু। কিছু বলতে পারে নি। বলার যোগ্যতা ছিল না। নিজেকে নিজে ব্লেম করল, পছন্দের মানুষটাকে কাছে না রাখতে পারার কারণে।
বন্ধুদের আড্ডা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে গেলো। সবাই যে যার কর্ম জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নিউজ ফিডে বন্ধু সহ অন্যান্য ক্লাসমীটদের এঙ্গেজমেন্ট বা বিয়ের ছবি দেখে দেখে নিজের হতাশা বাড়ল। এক সময় সম্পুর্ণ একা হয়ে গেলো, কোন বন্ধুর হাতেই আর সময় নেই। সবাই ব্যস্ত। এক সময় সবাইকে সে সময় দিয়েছে, আর এখন সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
খারাপ সময় সব সময় থাকে না, পরিবর্তন হয়। কারো কারো সুযোগ আসে একটু দেরি করে। মাছ উড়তে চাইলে উড়তে পারে না, সারাজীবন সে উড়তে চাইলেও পারবে না। পাখি আবার পানির ভেতর সাঁতার কাটতে পারে না। যখন তার এ উপলব্ধি হল, তখন ভাবতে লাগল কি করা যায়।
একটা কমিউনিটি সেন্টারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথায় ছোট্ট একটা আইডিয়া এসেছে। সে সব কিছু সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করতে পারে, সবাইকে সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করতে পারে। কেন সে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছে না। অন্তুত শুরু তো করা যেতে পারে। নিজের ক্ষমতা টেস্ট করা যেতে পারে। সে একটা আশা দেখতে পেলো।
তারপর শুরু ও করল। প্রথমে ছোট ছোট ইভেন্ট গুলো কভার করত। সবাই তার কাজে সন্তুষ্ট হত। নিজের কনফিডেন্স ফিরে পেলো সে। টিম মেম্বার বাড়াল। বড় বড় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ হাতে নিল। এক সময় বড় বড় কোম্পানি গুলোর সকল ইভেন্ট ম্যানেজ করার দ্বায়িত্ব মেহেরাবের কাছে আসতে লাগলো। তত দিনে তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম সবার কাছে জনপ্রিয়, সবার কাছে জনপ্রিয় সেও। তত দিনে সেও ব্যস্ত। নতুন কাউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ভাবছে কাকে দেওয়া যায়?