যারা নিয়মিত বই পড়ে, তাদের মনে লেখক হওয়ার একটা সুপ্ত ইচ্ছে তৈরি হয়। ছোট বেলায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর বই খুব ভালো লাগত। কি সুন্দর করে গ্রাম্য চিত্র ফুটিয়ে তুলত। আমার নিজের ও লিখতে ইচ্ছে করত। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে মনে হত এত সহজ করে মানুষ লিখে কিভাবে। আমাকে বেশি টানত সাইন্স ফিকশন গুলো। একটু আধটু লেখার চেষ্টাও করতাম।
লেখার পর ইচ্ছে হলো পত্রিকায় পাঠাবো। পত্রিকা থেকে ইমেইল গুলো নিয়ে ইমেইল করলাম। কয়েকটা পত্রিকায় এক সাথে। কোন রিপ্লাই আসল না। তখন মাত্র সাউথ ইস্টে ভর্তি হয়েছি। ইউনিভার্সিটিতে শাহরিয়ার মঞ্জুর স্যারের কাছে সি কোর্স করছি। একদিন স্যারের রুমে কোন কাজে যাওয়ার পর স্যার ঐ কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করল, আপনি লেখা লেখিও করেন নাকি? ঐ সময় কি যে লজ্জা লাগছিল। স্যারকে অনেক কষ্টে হ্যাঁ বললাম। কিন্তু বুঝে ফেলাম না কিভাবে স্যার জানল। পত্রিকায়ও তো বের হয় নি। কোন ভাবে কাজ সেরে স্যারের রুম থেকে বের হয়ে এসেছি। পরে অনেক ভেবে বের কলাম পত্রিকায় পাঠানোর সময় ভুলে স্যারের ইমেইলটাতেও লেখা গুলো চলে গিয়েছে। স্টুপিডিটি।
প্রোগ্রামিং শুরু করার পর থেকে এটা ভালো লাগতে শুরু করল। ভালো লাগত প্রোগ্রামিং সম্পর্কে জানতে, লিখতে। দুই একটা গল্প লিখতাম মাঝে মাঝে। যে গুলোতে অনেক বানান ভুল থাকত। সেগুলো ব্লগেই প্রকাশ করতাম। সাইন্স ফিকশন ও লিখেছি কয়েকটা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি লিখেছি প্রোগ্রামিং নিয়ে।
পত্রিকায় একবার বা দুইবারই লেখা পাঠিয়েছি। কোন রিপ্লাই না আসায় আর ট্রাই করি নি। ব্লগে লিখে মজা পেতাম। অনলাইনে তখন অনেক জনপ্রিয় লেখক ছিল। তাদের কাছে চুনোপুঁটি। তারপর ও ভালো লাগত। আমি প্রোগ্রামিং ও প্রযুক্তি নিয়ে লেখায় বেশির ভাগ লেখা লিখতাম টেক টিউন্সে। সামহওয়ার ইনে গল্প এবং সাইন্স ফিকশন গুলো প্রকাশ করতাম। টেক টিউন্স লিখতে লিখতে এক সময় ইচ্ছে হোল নিজের ব্লগে লিখি। এরপর jakir.me তে লেখা শুরু করি। লিখতে লিখতে অনেক লেখা জমা হয়েছে। ৬০০ এর মত আর্টিকেল। ব্লগে লিখতে লিখতে পত্রিকার কথা ভুলে গেলাম। পত্রিকায় লিখতে অনেক কিছু ম্যান্টেইন করতে হয়। ব্লগে পুরো স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাটা ভালো লাগত। এই ছাড়া ভালো লাগত পাঠকের সাথে সরাসরি কানেকশনের সুবিধাটি। যদিও পরে পত্রিকায় অনেক লেখা প্রকাশ হয়েছে।
অনলাইনে লেখা লেখির কারণেই হয়তো আদর্শ প্রকাশনী থেকে মাহাবুব ভাই বলল সি প্রোগ্রামিং নিয়ে একটা পাণ্ডুলিপি দিতে। প্রমি নাহিদ ভাই যোগাযোগ করে দিয়েছেন। আমি রাজি হলাম। অনলাইনে সি প্রোগ্রামিং নিয়ে লেখা গুলো সাজিয়ে দিলাম। এরপর বই হিসেবে প্রকাশ হলো। প্রথম বই। প্রথম ভালো লাগা। ধন্যবাদ আদর্শ প্রকাশনী এবং মাহাবুব ভাইকে।
সাইন্স ফিকশন নিয়ে বই লিখতে খুব ইচ্ছে করত। এখনো করে। আমি ভাবতাম আমি যদি বই লিখি, প্রকাশনী প্রকাশ করবে তো? কাছের যাদের বই প্রকাশ হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, আমি যদি বই লিখি তাহলে প্রকাশ করতে কি কি লাগবে ? বই না লিখেই চিন্তা। বোকামি চিন্তা ভাবনা। আসলে বই লেখার পর যদি ভালো হয়, প্রকাশ করা নিয়ে কোন চিন্তা নেই। কোন না কোন ভাবে প্রকাশ হবে। জীবনে কত বোকামিই না করেছি। বেঁচে থাকলে হয়তো আরো করব। যে যে ভুল করেছি, সেগুলোর লিস্ট করলেই বিশাল একটা বই হয়ে যাবে।
যদিও লিখতে লিখতে এক সময় প্রকাশ হওয়ার চিন্তা মাথা থেকে চলে গিয়েছে। কোন লেখা লিখতে পারলতে নিজের কাছেই একটা ভালো লাগা কাজ করে। আমার নোটে/ডায়েরিতে অনেক অনেক লেখা জমা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। লেখা লেখির প্রতি এই ভালো লাগা থাকলে হয়তো সামনে আরো লিখতে পারব। ভালো লাগার সাথে যদিও আরো অনেক গুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। সময় খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর। রয়েছে দৈনন্দিন অন্যান্য কাজ। সব কিছু সামলিয়ে ভালো লাগার কোন বিষয়তে সময় দেওয়ার মত সময় হাতে খুব কম সময়ই পাওয়া যায়। দেখা যাক সামনে কি হয়। 🙂