হাতে একটি লাল গোলাপ নিয়ে বসে আছি ক্যাম্পাসের গেটে। সেই সকালে এসে বসে আছি। ছেলে মেয়েরা যাওয়ার সময় কৌতুহল দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে ক্লাসে চলে যায়। কেউ আবার ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে আমাকে একটি গোলাপ হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখে ডাবল কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাসায় ফিরে। আমি বসে আছি।।
আমি বসে আছি ঐ সাদা পরীর জন্য। সাদা পোশাক পরা একটা সাদা পরী। গত পরশু ক্যাম্পাসে দেখেছিলাম। হয়তো নতুন ব্যাচ এর ছাত্রী। হয়তো এর আগে দেখা হয় নি। হয়তো অন্য কিছু। অতিরিক্ত সুন্দর কিছুর কাছে বাকি সব মলিন মনে হয়। নিজেকে খুব মলিন মনে হয়েছে তখন। দেখার পর আমার হার্ট একটি কিংবা দুটি পালস মিস করেছে। মুখ আটকে গিয়েছিল। সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার কাছ থেকে মূল্যবান কিছু নিয়ে গিয়েছে। আমি শত চিন্তা করেও বের করতে পারি নি কি নিয়েছে। সারাক্ষন মনে হচ্ছিল আমি কিছু হারিয়ে ফেলছি। খুবি মূল্যবান কিছু।
মনে হয় দিল যদি কিছু চায়, তাহলে তা দেখলে নিজেই আচার্য হয়। আর তাই হয়তো নিজেই দুই একটা পালস মিস করে।
গত কাল ও আমি আসছিলাম ক্যাম্পাসে। সারা ক্যাম্পাস ঘুরেও আবার দ্বিতীয় বারের মত দেখি নি। হয়তো আসে নি। আজ ও আসবে কিনা জানি না। তবে আজ আসার সময় পথে ফুলের দোকান দেখে কেন জানি মনে হয়েছিল একটা ফুল কিনতে। গোলাপই পছন্দ হয়েছে। সাদা পরীর জন্য সাদা গোলাপ না কিনে লালটাই কেন বেছে নিয়েছি আমি নিজেও জানি না।
আমার লাল গোলাপটি আস্তে আস্তে নেতিয়ে গেলো। লাল গোলাপটি হয়ে গেলো কালো। সূর্য মামা পূর্ব দিক থেকে আস্তে আস্তে মাথার উপর এসে পড়ল। তাই শরীর থেকে ঘাম বের হতে লাগল এবং ডিওডোরেন্ট এর গন্ধ ঘামের গন্ধ দ্বারা রিপ্লেস হতে লাগল। আর আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়তে লাগলাম। অপেক্ষা করার ক্লান্তিই মনে হয় সব চেয়ে বড় ক্লান্তি।
দুপুরের কোন এক সময় আমি আবার সাদা পরীকে দেখতে পেলাম। আজ সে একা নয়। সাথে অন্য আরেক জন রয়েছে। এক জন আরেক জনের হাত ধরে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে। আর সাথের জন্য এক জন ছেলে। আজ দুই জনের কাছেই আমাকে মলিন মনে হচ্ছে।
আমার হাতের গোলাপের মত আমিও তখন নেতিয়ে পড়লাম। নিজের প্রতি নিজেরই করুনা হচ্ছিল। আমার হারিয়ে যাওয়া জিনিসটি অন্য কেউ নিয়ে গিয়েছে। আমি আর চাইলেও পাবো না। না পাওয়ার ব্যথা নিয়ে, নেতিয়ে পড়া গোলাপ হাতে আমি আস্তে আস্তে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে পড়লাম। জানি না আমাকে কোথায় যেতে হবে। যেতে থাকি ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষন না কেউ বলে অনেক হয়েছে আর যেতে হবে না…