এ ট্যুরের প্রথম দিনের গল্পঃ
রংপুর ঘুরার মত অনেক জায়গা রয়েছে। আমি কোন প্ল্যান করি নি। কিন্তু দেখার মত কি কি রয়েছে, তার লিস্ট তৈরি করেছি। অনলাইনে একটু সার্চ করলেই পাওয়া যায়। তাছাড়া Travelers of Bangladesh ফেসবুক গ্রুপটি দারুণ। রংপুরে যত শত দেখবেন, ঘুরবেন নামে একটি লেখা পেয়েছি। ঐটা থেকে আইডিয়া নিয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে ৮টার দিকে উঠেছি। রাতে উঠে ফ্যান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারণ ঠান্ডা। ঢাকায় যথেষ্ট গরম আর এখানে ঠান্ডা! গোসল করতে গিয়ে গরম পানির অভাব অনুভব করলাম। ফ্রেশ হয়ে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হয়ে গিয়েছি হোটেল থেকে। এরপর একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে নাস্তা করে নিলাম। কোথায় কোথায় যাবো, আগের রাতে ঠিক করে রেখেছি। নাস্তা খাওয়ার সময় একবার রিভিশন দিচ্ছিলাম। রেস্টুরেন্টে যে সার্ভ করছিল, তাকে জিজ্ঞেস করলাম টাউন হলে কোন দিকে যাবো। আমাকে বলে দিল।
রংপুর কি পাইপের গ্যাস আছে? জানি না, তবে দেখলাম রেস্টুরেন্ট গুলোতে রান্না কাজে খইড়/তুষ/ধানের উপরের অংশকে প্রসেস করে এক ধরনের জ্বালানি তৈরি করা হয়, সে গুলো ব্যবহার করে। আমি আসল নাম জানি না। চায়ের দোকান সহ সব জাগায় একই জিনিস ব্যবহার করা হয়। পুরো উত্তর বঙ্গে প্রায় সব জাগায় দেখলাম এটি।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে প্রথমে গেলাম টাউন হলে। টাউন হল অনেক পুরাতন স্থাপনা। তাই দেখতে যাওয়া। মূলত একটা বিল্ডিং। আর কিছু না… আসে পাশে অন্যান্য বিল্ডিং রয়েছে, পাঠাগার রয়েছে।
টাউন হলের অপর পাশেই জেলা পরিষদ। সুন্দর একটা বিল্ডিং। জেলা পরিষদের সামনে এক পাশে কাঁঠাল বাগান। এর কিছুদূর পরেই হচ্ছে কেরামতিয়া এর মাজার। ঐখানে গিয়েছি। মাজার আমার পছন্দ না। তারপর ও দেখতে যাওয়া। মাজার থেকে এসেছি চিড়িয়াখানায়। এটা জেলা পরিষদ এর কাছেই। মূল শহরের ভেতর।
চিড়িয়াখানায় ঘুরে বের হলাম। এটাকেচিড়িয়া খানা থেকে পার্ক বলাই ভালো হবে। অল্প কয়েকটা প্রাণী রয়েছে। পার্কের মত বসার জায়গা রয়েছে। পুরাটাই সবুজ। গাছ দিয়ে পূর্ণ। লিচু বাগান ও রয়েছে ভেতরে। যার মধ্যে লিচু পেকে রয়েছে। চিড়িয়াখানার এদিক সেদিক ঘুরে বের হলাম। এর পরের উদ্দেশ্য কারমাইকেল কলেজ।
কারমাইকেল কলেজ অনেক বিশাল এরিয়া নিয়ে। লর্ড ব্যারন কারমাইকেলের নামানুসারে এর নাম। সুন্দর জায়গা। সবুজ অরণ্য বলা যায়। আমি সকালে গিয়েছি। আকাশ মেঘলা ছিল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিল। অসাধারণের থেকেও বেশি ভালো আবহাওয়া। অন্তত ভ্রমণ করার জন্য। সমস্যা একটাই, আমি ছবি তুলতে পারি নি ঠিক মত। অন্ধকার ছবি উঠে। কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশ। ওহ! এখানে নাকি কাইজেলিয়া গাছ রয়েছে, যদিও আমি দেখি নি। পুরো এশিয়ার মধ্যে এ গাছ নাকি রয়েছে মাত্র ৫টি। কারমাইকেল কলেজে রয়েছে দুইটি।
কারমাইকেল কলেজ থেকে গিয়েছি তাজহাট জমিদারবাড়ী। পথে পড়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, তাও ঘুরে গেলাম। এ জমিদার বাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বন্ধ থাকার কারণে আমি ভেতরে ঢুকে কিছু দেখতে পারি নি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ রাজবাড়িটি ব্যবহৃত হয় রংপুর হাইকোর্ট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একটি শাখা বা বেঞ্চ হিসেবে। যার উদ্ভোদন করেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। এটির চারপাশ দারুণ। পার্কেত মত। প্রেম করার জন্য সুন্দর জায়গা। অনেক জুড়িকে হাঁটতেও দেখেছি -_-
জমিদার বাড়ি থেকে গিয়েছি ঘাঘট নদীর তীরে। সেখানে প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক রয়েছে। সুন্দর জায়গা। এখনো কাজ চলছে। প্রায় সময় নাকি ঐখানে মেলা হয়। পার্কটা দারুণ। ভেতরে সুন্দর সুন্দর বসার যায়গা রয়েছে। বিনোদনের জন্য সত্যিই চমৎকার জায়গা। সেনাবাহিনী রক্ষাণাবেক্ষণ করে। ঐখানে গিয়ে আমি সাধারণ কোন মানুষ দেখিনি। সব গুলো এক জোড়া, একটি ছেলে একটি মেয়ে। আমার মতে এটা প্রেম করার জন্য আদর্শ স্থান, যেখানে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে প্রেম করা যায়। তাই করে ছেলে মেয়েরা।
ঘাঘট থেকে রংপুর ক্যান্টনম্যান্ট এর ভেতর দিয়ে এসেছি রংপুর মেডিকেল কলেজ। মেডিকেল কলেজের ভেতর দিয়ে ঘুরে এসেছি বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এর এখানে। এর পাশেই বাংলাদেশ বেতারের রংপুর কেন্দ্র। রাজবাড়ি এবং ঘাঘটের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর রংপুর থেকে কয়েকজন বলল আমার সাথে দেখা করবে। উনাদের আমি কোথায় আছি বললাম। উনারা আস্তে আস্তে আসল। আমরা এক সাথে সবাই চিকনির বিল গেলাম। ঐখানে হাঁটাহাঁটি করলাম। আরেকটি সুন্দর জায়গা। যেটা আমার কাছে ঘাঘট থেকেও সুন্দর মনে হয়েছে। সাথে ছিল AL Mamun, Ahosanuddin Noman, Mohammad Al Walid, Ariful Islam Shaon, Swapno Swapon, Md Moshiur Rahman। উনারা আলাদা আলাদা করে আমাকে ফোন দিয়েছে। পরে সবাইকে চিকনির বিল আসতে বললাম। সবাই একই সময় একই জায়গায় আসার কারণে একসাথে সবার সাথে কথা হয়েছে। দারুণ লেগেছে।
চিকনির বিল থেকে আমরা সবাই রংপুরের কফি হাউজে এসেছি। গল্প গুজব করেছি কিছুক্ষণ। এরপর আমার যাওয়ার প্ল্যান হচ্ছে ভিন্ন জগত। রংপুর শহরের বাহিরে। আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে Md Moshiur Rahman, মোটরসাইকেলে করে। সাথে ছিল Mohammad Al Walid।
ভিন্ন জগত অনেক সুন্দর জায়গা। দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। এখানের একটা আকর্ষণ হচ্ছে প্ল্যানেটেরিয়াম। কিন্তু ঐটা দেখার ভাগ্য হয়নি। কারণ মিনিমাম ২০ জন লাগে ঐটা দেখতে হলে। আমরা তিন জন ছাড়া আর কেউই ছিল না দেখার মত। তাই দেখা হয় নি।
ভিন্ন জগতে অনেক মজা হয়েছে। ছবি তুলেছি অনেক মজা করে। ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় আরকি। ছবি গুলো আমি ম্যাকে কপি করে রেখেছি মনে করে ক্যামেরার মেমরি কার্ড ফরমেট দিয়ে দিয়েছি। দুই দিন পর টের পেলাম ছবি গুলো ঠিক মত কপি হয় নি। ভিন্ন জগতের একটা ছবিও নেই। আহারে! অথচ সেখানেই অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলেছি।
ভিন্ন জগৎ থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমি এরপর নীলফামারীর বাসে উঠেছি। নীলফামারী নেমে সবার আগে যেটা দরকার, তা হচ্ছে হোটেল। যেখানে রাতে থাকব।
সহজেই পেয়ে গেছি। হোটেল অবকাশে এসে উঠেছি। একটি সিঙ্গেল রুম। ভাড়া মাত্র ২৫০ টাকা। যথেষ্ট ভালো রুম। সার্ভিস ও ভালোই। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছি। নামাজ পড়ার জন্য। এশার নামাজ পড়ে তারপর অবকাশের নিচেই একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে, সেখানে এসে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর আবার হোটেলে।
ক্লায়েন্টের কিছু কাজ ছিল, সেগুলো করলাম। ট্যুর সম্পর্কে লিখলাম। তারপর ঘুম। রাতে AL Mamun, Mohammad Al Walid, Md Moshiur Rahman সহ অনেকেই জিজ্ঞেস করল ঠিক মত নীলফামারী এসেছি কিনা, রুম পেয়েছি কিনা। তাছাড়া এখানের AL Mamun ভাই এখানের স্থানীয় এক জনের কাছে আমার কথা বলল। কোন সমস্যা হলে যেন জানাই। এভাবে সবার আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করল।
আবার রংপুর এবং রাজশাহীর অনেকে জানালো যেন তাদের এলাকায় গেলে যোগাযোগ করি। সত্যিই দারুণ কেটেছে পুরো দিন। নীলফামারী ঘুরার গল্প পরের লেখাতে 🙂
অনেক গুলো ছবি তুলেছি। সব গুলো ছবি দেখা যাবে ফেসবুক এলবাম থেকে।
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, তৃতীয় দিনঃ নীলফামারী, তেঁতুলিয়া, বাংলাবান্ধা, পঞ্চগড়
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, চতুর্থ দিনঃ ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, পঞ্চম দিনঃ দিনাজপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমন, ষষ্ঠ দিনঃ দিনাজপুর, বগুড়া
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, সপ্তম দিনঃ বগুড়া, রাজশাহী
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, অষ্টম দিনঃ রাজশাহী
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, নবম দিনঃ রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ