শুক্রবারে ক্যাফে ট্যারেসে আমরা কফি খাওয়ার জন্য একত্রিত হয়েছি। শরীফ ভাই, সাইদুর ভাই, রুবেল আর আফরিন আপু। গল্প করার ফাঁকে শরীফ ভাই বলল উনারা কয়েক জন বন্ধু ঘুরতে যাবে। উনার আরেক বন্ধু ফরহাদ ভাই এর দাওয়াতে। আমাকে জিজ্ঞেস করল যাবো কিনা। ঘুরাঘুরির ব্যপারে আমার উত্তর সব সময়ই হ্যাঁ, যদি না ইমার্জেন্সি কোন কাজ থাকে।
সারা রাত জেগে ছিলাম। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে গেলাম। এলার্ম দিয়েছি সাড়ে আটটার দিকে। সাড়ে দশটার দিকে উত্তরা থাকতে হবে। আমার ঘুমের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। কখনো কখনো যখন ইচ্ছে, যত ইচ্ছে ঘুমাতে পারি। আবার মাঝে মাঝে ঘুম আসতে চায় না। ঘুমাতে গিয়ে ঘুম না আসার মত যন্ত্রণা খুব কমই রয়েছে। আজ ঘুম যাওয়া দরকার ছিল, তাই হয়তো ঘুম আসেনি। শুয়ে ছিলাম। ঘুম না আসায় কিছুক্ষণ মোবাইলে এটা ওটা দেখি। এভাবে করতে করতে দেখলাম প্রায় ৭টা বেজে গেলো। একটুর জন্য ঘুম এসেছে। সাড়ে আটটায় এলার্ম ছিল। সাড়ে আটটাই আবার শরীফ ভাই কল দিল। আরো কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হলাম।
উত্তরায় দশটার দিকে এসে পৌঁছিয়েছি। শরীফ ভাই এর বন্ধু ব্লু প্ল্যানেট নামক একটা কোম্পানির ডিরেক্টর। উনারা এখানে আসবে। আমি আগে আসার কারণে অফিসে বসে অপেক্ষা করলাম। চা দিল, খেলাম।
শরীফ ভাইয়েরা আসতে আসতে ১১টা ভেজে গেলো। অফিসে বসে চা কফি খেয়ে আমরা রওনা দিলাম। গন্তব্য ব্লু প্ল্যানেট এর ফ্যাক্টরি পরিদর্শন। ফ্যাক্টরি হচ্ছে গাজীপুর। আমরা পৌছিয়েছি দেড়টার দিকে। দুপুরের খাওয়ার সময় হয়েছে যাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের জন্য খাবার দিল। বলা যায় ছোট খাটো একটা দেশি খাবারের ব্যুফে। খাওয়ার পর ছিল মিষ্টি এবং দই। খাওয়ার পর আমরা বের হলাম ফ্যাক্টরি দেখতে। মোটামুটি বড় সড় একটা ফ্যাক্টরি। বিভিন্ন রকম গার্মেন্টস আইটেম তৈরি করে।
শরীফ ভাই এর নদীর পাড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল। নদীর পাড়ে বসে চাঁদ দেখবে। তাই ময়মনসিং ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। আমরা রওনা দিলাম Hiace এ করে। ৭ জন মোট। ৫ জন শরীফ ভাই এর স্কুল ফ্রেন্ড। উনারা উনাদের ছোট বেলার গল্প করা শুরু করল। কি ভাবে স্কুল ফাঁকি দিত, কে ভালো ছাত্র ছিল, কার ক্র্যাশ কে ছিল আরো কত গল্প।
রিসোর্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সিলভার ক্যাসেলে উঠেছি আমরা। রিসোর্টের পাশেই ব্রহ্মপুত্র। সন্ধ্যার আলোতে ব্রহ্মপুত্রের তীরে ঘুরাঘুরি করলাম আমরা। ফ্যাক্টরি থেকে আমাদের জন্য দুই প্যাকেট টিসার্ট এবং পোলো সার্ট দিল। যার ভেতর বিভিন্ন সাইজের অনেক গুলো সার্ট ছিল। আমরা যার গায়ে যেটা লাগে, পছন্দ মত সেটা নিলাম। সবাই নতুন জামা গায়ে দিয়ে বের হয়েছি শহরের দিকে। শহরে গিয়ে সারিন্দা রেস্টুরেন্টে বসলাম। বসে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম আমরা। বিভিন্ন কাবাব, নান, বোরহানি ইত্যাদি। দুইরকমের নান দেখেছি। একটা হচ্ছে বাটার নান। আরেকটা অনেক নরম এবং একটু মোটা নান। দারুণ টেস্টি। সারিন্দার সব গুলো আইটেমই দারুণ ছিল।
ফরহাদ ভাই ময়মনসিং ছিল অনেক দিন। কোথায় কি ভালো, সব ভালো করে জানেন। এরপর আমাদের নিয়ে গেলেন একটা মিষ্টির দোকানে। মনটানা নামক একটা মিষ্টি খাওয়ালেন। মিষ্টি খেয়ে বের হয়ে আমরা একটু হাঁটাহাঁটি করেছি। এবং পরে রিসোর্টে ফিরে এসেছি। রিসোর্টে এসে বসে আবার গল্প শুরু।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বের হলাম নদী ভ্রমণে। নদীতে পানি অনেক কম। ছোট্ট ট্রলারে করে আমরা এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করলাম। নদীর অপরপাশে গিয়ে বসলাম কিছুক্ষণ। এরপর রিসোর্টে ফিরে হোটেল চেকআউট করে গিয়েছি শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান ময়মনসিংহ এ। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরই করে আবার গিয়েছি সারিন্দা রেস্টুরেন্টে। সেখানে বসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে। এটা ঘুরাঘুরির ট্যুর ছিল নাকি খাবার খাওয়ার ট্যুর ছিল, আমি এখনো কনফিউসড!
আরো কিছু ছবিঃ ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে একদিন