পৃথিবীর অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ হচ্ছে মেয়ে বা নারী। এই অংশকে পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। বলা যায় অসম্ভব।
মেয়েদের শারীরিক গঠন এবং ছেলেদের শারীরিক গঠনে অনেক পার্থ্যক্য রয়েছে। পৃথিবীর কিছু কাজ মেয়েদের জন্য সহজ, কিছু কাজ ছেলেদের জন্য। আর কিছু কাজ করতে ছেলে মেয়েকে আলাদা করতে হয় না। যে কোন মানুষই করতে পারে।
সারা পৃথিবীর অনেক মানুষ মনে করে মেয়েদের অগ্রগতি মানেই হচ্ছে ছেলেদের অনূকরণ। Ishtiaque Ahmed ভাই কাল একটা লিঙ্ক শেয়ার করছিল, সাথে কথা গুলোঃ
” আমাদের অনেক বাবা-মাই গর্ব করে বলেন, তাদের মেয়েকে তাঁরা একদম “ছেলেদের মত” করে মানুষ করেছেন। অনেক মেয়েকেও এমনকি আমি গর্ব করে বলতে শুনেছি – “আমি তো ছেলেদের মত”। এই ছেলেদের মত জামা-কাপড় পরা থেকে শুরু করে ছেলেদের মত চুলের কাট দেওয়া – এইসবগুলোকেই নারীবাদের সপক্ষে প্রগতিশীলতা বলে আমরা অনেকে অনুভব করি।
কিন্তু অন্যদিকে “মেয়েদের মত” হওয়া কিন্তু এখনও গর্ব করার মত কিছু না। আমি কখনও শুনি নাই কোন বাবা-মা গর্ব করে বলছেন, আমাদের ছেলেটাকে আমরা “মেয়ের মত” করে মানুষ করেছি। অথবা ছেলেরা মেয়েদের কোন একটা পোশাক পরে গর্ব অনুভব করছে। এমনকি আমি অনেক মেয়েদেরকেই হাসাহসি করতে দেখেছি কোন ছেলে “মেয়েলি” আচরণ করলে। অর্থাৎ, অনেক মেয়ের কাছেও মেয়েদের মত হওয়া ভাল কিছু না।
আপনারা কি বুঝতে পারছেন, সমস্যা কোথায়? সমস্যা আপনি কী পরছেন, কীভাবে চুল কাটছেন, আর কীভাবে কথা বলছেন তাতে নয়। এই যে “মেয়েদের মত” ব্যাপারটার চেয়ে “ছেলেদের মত” হওয়াকে আপনি নিজের অলক্ষ্যে ভাল বলে মনে করছেন – সমস্যাটা ঠিক ঐ জায়গাটাতে। সমস্যাটা কিছু জিনিসকে “ছেলেদের” আর কিছু জিনিসকে “মেয়েদের” বলে আলাদা করার মধ্যে। … আমার মনে হয় এর থেকে বের হতে আমাদের সমাজের ভালই সময় লাগবে।”
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের গল্প যখন পড়ি, তখন আমার তার মত হতে ইচ্ছে করে। উনি কি ছেলের মত হতে চেয়েছিলেন? স্টিভ জবসকে আমরা সবাই মোটামুটি চিনি। কোরাতে একটা প্রশ্ন দেখলাম, গ্রেটেস্ট মানুষ হিসেবে ১-১০ এর মধ্যে আপনি কত দিবেন? উত্তরটা চমৎকার ছিল।
He doesn’t qualify at all. He ran a company, arrogantly and sometimes cruelly, that made some nice computers and other gadgets. … If you’re looking for great human beings, try Florence Nightingale, who fought tirelessly for better hygiene and better nursing in hospitals. …. এরকম আরো কিছু মানুষের নাম।
মেরি কুরির কথা মনে আছে? কত কিছুতেই না উনি প্রথম নারী ছিলেন। প্রথম নোবেল বিজয়ী নারী এবং দুইটা বিষয়ে দুইবার নোবেল বিজয়ী নারী, এমন আরো কত কিছু।
বর্তমান বিশ্বটা পুরোটা নির্ভর করে রয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামের উপর। প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেছেন একজন নারী, অ্যাডা লাভলেস।
অ্যাপোলো ১১ এর অন-বোর্ড ফ্লাইট সফটওয়্যার তৈরি করার নেতৃত্বে ছিলেন মার্গারেট হ্যামিলটন, একজন নারী।
র্যাঙ্কের দিক থেকে ফেসবুক এবং গুগলের পরেই হচ্ছে ইউটিউবের স্থান। সুসান ওজস্কি হচ্ছে বর্তমানে ইউটিউবের CEO। সুসান ওজস্কি গুগলের সাথে অনেক দিন থেকেই রয়েছেন। গুগলের ক্যাশ কাউ, এডসেন্স, এটার আইডিয়া কিন্তু সুসান ওজস্কির। উনি কি ছেলে হতে চেয়েছিল? উনি সেরা হতে চেয়েছিলেন, সেরা হয়েছেন।
শেরিল স্যান্ডবার্গ হচ্ছেন ফেসবুকের Chief Operating Officer। তিনি যদি চেষ্টা করতেন ছেলের মত হতে, তাহলে কি হতো? বা যদি ছেলে মেয়ে সমান অধিকার আন্দোলোন করে সময় নষ্ট করত, তাহলে এই পজিশনে যেতে পারত? উনাকে সমতা আন্দোলন করতে হয় নি, নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন। সব ছেলেকে পেছনে ফেলে সেরাদের স্থানে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।
এমন অনেক সেরা নারী রয়েছে। এরা কেউ ছেলেদের মত হওয়ার চেষ্টা করেন নি। কিন্তু ছেলেদের থেকেও সেরা হয়েছেন। আপনি মেয়ে হলে মেয়ের মত হয়ে সেরা হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। সেরা হতে হলে ছেলেদের মত হতে হয় না। ছেলে মেয়ের আগে আমরা সবাই মানুষ। আমাদের সবার নিজস্ব সত্ত্বা রয়েছে। আমাদের ইচ্ছে রয়েছে, ভালো লাগা রয়েছে। নিজের যা ভালো লাগে, তা করার জন্য ছেলে মেয়ে আলাদা ভাবে চিন্তা করতে হয় না। আমরা এক সাথেই পৃথিবীর অংশ। পৃথিবীটাকে সুন্দর করতে হলে আমাদের এক সাথেই করতে হবে। সুন্দর একটা পৃথিবীর প্রত্যাশায় 🙂
কিন্তু ভাই পর্দাটা তো একটা বড় বিষয় না? উপরোক্ত মেয়েগুলো তো পর্দা করে না!
পর্দা করেও নরী উপরে উঠতে পারে। পার্দা নরীর শালীনতা বজায় রাখার জন্য, gender discrimination এর জন্য নয় 🙂
পর্দা*
lekhata sundor hoyeche. 🙂