মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাটে একদিন

মৈনট ঘাটটি ঢাকার দোহারে অবস্থিত। পদ্মা নদীর পাড়ে। মূল শহর থেকে খুব একটা দূরে নয়। ঢাকা শহর থেকে একটু বের হলেই দেখা মিলবে সুন্দর সবুজ ধানের খেত। সবুজের মাঝ দিয়ে রাস্তা। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বাজার গুলো। কিছু রাস্তা অনেক সোজা। আবার কিছু রাস্তায় অনেক বাঁক। সুন্দর এসব রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে এক সময় পৌঁছে যাই মৈনট ঘাটে।

আমি রওনা দেই বসুন্ধরা থেকে। সকাল ছয়টার দিকে। মোহাম্মদপুর থেকে সুহৃদকে নিয়ে বসিলা হয়ে রওনা দেই দোহারের দিকে। গুগল ম্যাপ উল্টা প্লাটা ডিরেকশন দেখালে লোকাল মানুষকে জিজ্ঞেস করতে করতে যেতে থাকি। এক সময় একটা ছোট্ট বাজারে থেমে সকালের নাস্তা করে নেই। এরপর আবার রওনা দেই। সকাল বেলা প্রচুর ঠান্ডা লাগছিল বাইক চালাতে। আস্তে আস্তে সূর্য উঠতে শুরু করার পর ঠান্ডা লাগাও কমে এসেছিল।

কোন কিছুকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করতে কেন জানি আমার ভালো লাগে না। মৈনট ঘাটকে মিনি কক্সবাজার বলার কারণে আমি ঐখানে গিয়ে কক্সবাজারের মত কিছু খোঁজা শুরু করেছি। নদীর তীর আর সমুদ্রের তীর এক রকম হয় না। সমুদ্র সৈকত যেমন ঢালু, নদীর তীর ঠিক উল্টো। অনেক খাড়া। মৈনট ঘাট সুন্দর তার নিজের মত করে। ঘাট থেকে অপর পাড়ে যাওয়া যাওয়া যায়। ঐটা হচ্ছে গোপালপুরের চরভদ্রাসন নাম। নামের সাথে মিল রয়েছে। চরভদ্রাসন চর এলাকা। যাওয়া যায় স্পিডবোর্ড অথবা ট্রলারে করে। ট্রলারে করে যেতে নাকি এক ঘণ্টার মত লাগে। আর স্পিড বোর্ডে ১৫-২০ মিনিটের মত। আমরা গিয়েছি স্পিডবোডে করে। কিছুক্ষণ চরভদ্রাসনে থেকে আবার ফিরে এলাম মৈনট ঘাটে।

চরভদ্রাসন

ফিরে এসে আমরা মৈনট ঘাটের বাম দিকে গেলাম বাইক চালিয়ে। বালির উপর দিয়ে। ঐ দিকে অনেক গুলো খাবার হোটেল রয়েছে। কিছু কিছু হোটেলের সামনে হেলান চেয়ার রয়েছে। একটাতে গিয়ে বসলাম। অনেক রিলাক্সিং। ভালো লাগছিল। সামনে অনেক ট্রলার, নৌকা আসা যাওয়া করছিল। আকাশ মেঘলা থাকায় গরম তেমন একটা লাগছিল না, তার উপর ছিল সুন্দর বাতাস। পুকুরে যেমন জাল ফেলে মাছ ধরে, তেমনি দেখলাম নদীতেও জাল ফেলা হয়েছে। অনেক বিশাল এরিয়া নিয়ে। কেউ কেউ ছোট ছুড়ে মারা জাল দিয়েও মাছ ধরতেছিল।

মৈনটঘাট এবং নদী ভাঙ্গন

 

পদ্মায় মাছ ধরা

এখানে একটা হোটেলে আমরা খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম। প্যাকেজ খাবার। ইলিশ মাছ অথবা মুরগির প্যাকেজ মাত্র একশ টাকা। যেখানে ভাত, ডাল আর ইলিশে ভর্তা ফ্রি। প্যাকেজের বাহিরে এক্সটা ইলিশ নিয়েছি ৬০ টাকা দিয়ে। খাবার প্রস্তুত হওয়ার পর খেয়ে নিলাম। ইলিশ ভাজি থেকেও ইলিশ ভর্তাটা বেশি ভালো লেগেছিল। খাওয়া দাওয়া করে আবার নদীর পাড়ে এসে বসলাম। ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেই। মামা কিছুক্ষণ পর এসে বলল কফি আছে। কফি দেই? কম করে রাখব। ৩০ টাকা বিক্রি করি, ২০ টাকা রাখব। আমি বলি চিনি কম দিয়ে দুইটা দিয়ে যান। মামা কিছুক্ষণ পর নিয়ে আসল। অনেক ছোট্ট ছোট্ট কাপে করে। চিনি বেশি করে দিয়ে। পদ্ম পাড়ে বসে ঐ অখাদ্য খেলাম।

পদ্মা পাড়ে

কিছুক্ষণ থেকে রওনা দেই ঢাকার দিকে। সকালে রাস্তায় মানুষ জন কম থাকলেও ফেরার সময় ছিল প্রচুর মানুষ এবং ঘাড়ি ঘোড়া। ঢাকায় পৌঁছার পর পেলাম জ্যাম। গুলিস্থান থেকে টিএসসি হয়ে ফিরি। টিএসসিতে এসে কিছুক্ষণ বসে চা খেয়ে নেই।  বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হলো। যদিও ঢাকা থেকে মৈনটঘাট খুব একটা দূরে নয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে প্রায় ৬০ কিলো মিটারের মত। ঢাকা থেকে সরাসরি বাস যাতায়ত করে গুলিস্থান থেকে। এক দিনে ঘুরে আসার জন্য দারুণ একটা জায়গা। সাথে তো পদ্মা পাড়ের পদ্ম ইলিশ আছেই।

Leave a Reply