নিকলি হাওরের ছবি দেখেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে হাওরের মাঝের বাঁধের ছবি। গত কয়েক বছর ধরে এটা খুব জনপ্রিয় একটা ট্যুরিস্ট ডেসটিনেশন। এই নিকলি হাওরে যাবো যাবো করে যাওয়া হয়ে উঠেনি। তো আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং করি, আমাদের একটা বাইকার গ্রুপ আছে PPC Bikers নামে, সেখানে জিজ্ঞেস করলাম কে কে যাবেন। অনেকেই যাবো বলল। বাইক নিয়েই যাওয়ার প্ল্যান ছিল। পরে নাঈমা বলল সেও যাবে। তাই আমাদের ট্রেনে যেতে হয়েছে। বাকিরা বাইকে। ট্রেনে গিয়েছি আমরা আর মিজান ভাইয়েরা। বাইকে শাহরিয়ার ভাই, মেহেদি ভাই, সোহেল ভাই, বুলবুল ভাই।
মিজান ভাই ট্রেনের টিকেট কেটে নিয়েছিল। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের ট্রেন। প্রভাতি এগারসিন্দুর ট্রেন কমলাপুর থেকে সকাল 7.15 এর দিকে ছাড়ে। আমাদের বাসা থেকে বিমানবন্দর স্টেশন কাছে হয়। ট্রেন এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ৮টা বেজেছে। লোকাল ট্রেন। প্রচুর যাত্রী। সিট খুঁজে বসলাম। আমাদের প্ল্যান ছিল সরারচর নেমে যাওয়া। সেখান থেকে অটোতে করে কুর্শা মোড় যাওয়া। কুর্শা মোড় মিঠামাইন যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। বাইকার গ্রুপ আমাদের আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। তারা গিয়ে ঐ এলাকা ঘুরে দেখছিল।
কুর্শা মোড় গিয়ে ঐখানে নাস্তা করতে রেস্টুরেন্ট খুঁজছি। একটু দূরে ছিল রেস্টুরেন্ট। অটোতে করে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি নাস্তা নেই। বলল দুপুরের খাবার রেডি। আমরা চাইলে ভাত খেতে পারব। পরে ভাত খেয়ে নিলাম। খুবি চমৎকার রান্না ছিল। বিভিন্ন প্রকারের মাছ দিয়ে খেয়ে নিলাম। দামও খুবি বেশি রাখেনি।
আবার কুর্শা মোড় ফিরে আসলাম। বাইকার ভাইয়েরা নৌকা ঠিক করল। এরপর নৌকায় বাইক উঠিয়ে আমরা রওনা দিলাম মিঠামাইনের দিকে। নৌকার ছাদে বসে কার্ড খেললাম আমরা। প্রায় দুই ঘণ্টা দূরত্ব। আড্ডা দিতে দিতে এবং কার্ড খেলে সময় পার হয়ে গেলো। এর মাঝে ছাতিয়ার চর নামে এক জায়গায় আমাদের নৌকা থামানো হলো। এখানে অল্প কিছু রাতাগাছ বা মূর্তা গাছ রয়েছে। সিলেটের রাতারগুলে যে গাছ গুলো পাওয়া যায়, সেগুলো। খুব বেশি না। আমরা ঐখানে গোসল করলাম। অনেকটা ছোটেবেলায় ফিরে যাওয়ার মত করে গোসল করলাম। এত বেশি ভালো লাগল।
মিঠামাইন পৌঁছে হোটেল খুঁজলাম। এখানে খুব ভালো একটা হোটেল নেই। নতুন একটা তৈরি করছে হাওর রিসোর্ট নামে। ওভার প্রাইসড। পরে দেখলাম ওরা ওভার প্রাইসডের পাশা পাশি আনপ্রফেশনালও। আর মিঠামাইন বাজারে কিছু হোটেল আছে, ঐ গুলোতে সব কমন বাথরুম। পরে হাওর রিসোর্টে একটা রুম নিয়েছি নাঈমাদের জন্য। আর আমরা বাজারের দিকে একটা হোটেল ঠিক করে নিলাম। এরপর ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। যদিও তখন বিকেল। এখানে কাঁচা লংকা নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। খুবি ভালো লেগেছে এদের খাবার। খাওয়া দাওয়া করে বাঁধের দিকে গেলাম। এত সুন্দর ভিউ। হাওরের মাঝ দিয়ে সোজা রাস্তা। মিঠামাইন থেকে একটা রাস্তা গিয়েছে ইটনার দিকে। আরেকটা রাস্তা গিয়েছে অষ্টগ্রামের দিকে। আমরা অষ্টগ্রামের দিকে গেলাম। সন্ধ্যার পর ঐখানে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিলাম। এত প্রাণ খুলে আড্ডা খুব কমই দেওয়া হয়। রাতের খাবার সেখানে খেয়ে তারপর আস্তে ধীরে মিঠামাইনে ফিরে এলাম।
রাত তখন ১১টা। আমরা মিঠামাইন রাষ্টপ্রতির ঘাটে চলে এলাম আবার গোসল করার জন্য। গোসল করা বলতে পানিতে শরীর ডুবিয়ে রাখা। অসাধারণ লাগছিল। অনেকক্ষণ ঘাটে থেকে এরপর হোটেলে ফিরলাম।
সকাল ৫টার দিকে উঠে পড়লাম ঘুম থেকে। উদ্দেশ্য হচ্ছে হাওরে সূর্যদয় দেখা। সবাইকে ঘুম থেকে তুলে রওনা দিলাম হাওরের দিকে। কি যে বাতাস বইছিল। আকাশ মেঘলা থাকায় সূর্যদয় খুব একটা দেখা যায়নি। তবে বাতাসের কারণে হাওরে সমুদ্রের মত ঢেউ দেখা যাচ্ছিল। বাইক ড্রাইভ করে আমরা আবারও অষ্টগ্রামের দিকে গেলাম। অসাধারণ লাগছিল সব কিছু।
মিঠামাইন ফিরে এসে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তার ব্যবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। ঐখানে আসলে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট কম। যেটা আছে, সেখানে আবার নাস্তা তৈরি করে না। আমাদের প্ল্যান ছিল ৯টার দিকে মিঠামাইন থেকে রওনা দেওয়া। নাস্তা করে রেডি হয়ে রওনা দিলাম। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই নৌকার ভেতরে বসতে হয়েছে। নৌকার খাটে ঘুমাতে ঘুমাতে পৌঁছে গেলাম আবার কুর্শা মোড়ে। ঢাকা ফিরতে হবে। এখান থেকে প্রথমে অটো নিয়ে কটিয়াদি আসি। তারপর সেখান থেকে একটা প্রাইভেট কার নিয়ে ঢাকা ফিরি। খুব কম খরচে অসাধারণ একটা ট্যুর হয়ে গেলো আমাদের। ট্যুরের ভিডিও দেখা যাবে এখানে। কিছু শট মোবাইলে নেওয়া, কিছু ড্রোনে নেওয়া। ভালোই লাগবে আশা করি।
হাওরে পূর্ণ বর্ষাকালে গেলে মনে হয় আরো বেশি মজা হত। এখন পানি কিছুটা কমে গিয়েছে। ইনশাহ আল্লাহ হয়তো অন্য কোন বর্ষাকালে আবার যাবো, সেই আশায়🙂
আনন্দ ভ্রমনের জন্য খুবই সুন্দর একটি জায়গা
আসলেই।